ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশের জমিদার বাড়ি

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ী ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে পূর্নভবা নদীর তীরে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ির অবস্থান। [১][২][৩][৪]

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ী
ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর প্রবেশ পথ
সাধারণ তথ্য
অবস্থাসংরক্ষিত
অবস্থানঘুঘুডাঙ্গা
ঠিকানাআউলিয়াপুর ইউনিয়ন, কোতয়ালী থানা
শহরদিনাজপুর
দেশবাংলাদেশ
নির্মাণকাজের প্রাক্কলিত সমাপ্তি(১৭৭১-১৭৮৯)
ভূমিমালিকফুল মোহাম্মদ চৌধুরী
পরিচিতির কারণঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বংশের রাজকীয় বাড়ি

ইতিহাস সম্পাদনা

ঘুঘুডাঙ্গা থেকে মাত্র ১২মাইল দক্ষিণে পূর্নভবা নদীর পূর্বতীরে ছিল গুপ্ত পাল শাসনামলের কোটিবর্ষ নগরী; যা পরবর্তীতে বানগড় বা দেবকোট নামেও পরিচিত ছিল। ১২০৪-০৫ বাংলা সালে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজী বাংলার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল অধিকারের পর প্রথমে লখনৌতি নামক স্থানে তার রাজধানী স্থাপন করলেও পরবর্তীকালে তিনি এই দেবকোটে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। দেবকোট থেকে তিনি ব্যর্থ তিব্বত অভিযানে গিয়ে ফিরে আসেন এবং এ দেবকোটেই তিনি নিহত হন। এ স্থানেই মুসলিম আমলে দমদমা দুর্গও নির্মিত্ত হয়েছিল। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীর নিকট এখন রয়েছে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর থানা সদর।

বর্তমান ঘুঘুডাঙ্গার প্রাচীন নাম ‘‘একবারপুর’’ [৫] প্রায় শতবছর পূর্বে, ব্রিটিশ শাসনের সময় তৎকালীন ভারতের জলপাইগুড়ির অধিবাসী নবীর মোহাম্মদ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এই একবারপুরে এসে এর নৈসর্গিক সৌন্ধার্যে মুগ্ধ হয়ে এখানেই থেকে যান। [১]

নবীর মোহাম্মদের পুত্র ফুল মোহাম্মদ চৌধুরী ক্রমান্বয়ে বহু জমিদারী ক্রয় করেন এবং পাথর ঘাটা হতে ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার বাড়ি নির্মান করেন।

১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি পর্যন্ত বংশ পরম্পরায় ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারি টিকে ছিল।

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় জমিদারবাড়িটি মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। [৬] পাকহানাদার বাহিনী বাড়িটি মর্টার শেল দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। [৭]

সমাজ কল্যাণমূলক কাজ সম্পাদনা

ঘুঘুডাঙ্গার জমিদাররা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন। বর্তমান ঘুঘুডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান ভারতের গঙ্গারামপুরের খোজাপুরেও তারা ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত একটি এম ই স্কুল করেছিলেন। ঘুঘুডাঙ্গায় গরিব মানুষের রোগ মুক্তি কামনায় তারা একটি হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই চিকিৎসালয়টি বর্তমানে সরকারী ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পল্লী মঙ্গল সমিতি নামে একটি জনকল্যাণ মূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার পরিবারের সদস্যরা। ঘুঘুডাঙ্গার বর্তমান পোস্ট অফিস তাদের উদ্যোগেই ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত হয়েছিল। ঘুঘুডাঙ্গায় একটি ফুরকানিয়া মাদ্রাসা স্থাপন, মসজিদ নির্মাণ, দিনাজপুর স্টেশন রোড জামে মসজিদের নির্মাণ, বর্তমান দিনাজপুর জেলা জজকোর্ট এলাকায় ২টি মসজিদ নির্মাণ, কাচারীতে কপিকল সহ কূয়া স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার পরিবার। সাধারণ মানুষের পানি সমস্যা মোকাবেলায় জমিদারগণ ঘুঘুডাঙ্গা এষ্টেটে পীরপুকুর, বঁচাপুকুর, ঝাড়–য়ানী দিঘী সহ বেশ কয়েকটি বড় দিঘি খনন করেছিলেন। [১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "পুরাকীর্তির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা / দিনাজপুর জেলা"। দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। ২০১৬-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০৩ 
  2. "ইতিহাসের সাক্ষী ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি"banglanews24.com। ২০১৮-০৩-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৮ 
  3. "দিনাজপুরে অযত্ন-অবহেলায় বধ্যভূমি, রণাঙ্গন এখন আবাদি জমি! | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২০২০-১২-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৮ 
  4. "Ghughu-danga Zamindar Bari"Combster.tv। ২০২২-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৮ 
  5. hrsoftbd। "ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ী | Dinajpur Bazar"dinajpurbazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "BDLive24"bdlive24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "একাত্তরে প্রতিরোধের সাক্ষ্য দিচ্ছে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়ি"Newsbangla24। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা