গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]

গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

গোলাম হেলাল মোর্শেদ খানের পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। তার বাবার নাম গোলাম আরব আলী খান এবং মায়ের নাম আফরোজা খানম। তার স্ত্রীর নাম নাহিদ খান। তাদের এক মেয়ে, এক ছেলে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৫ মার্চের পর ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াহবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই কর্মরত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের যুদ্ধে তিনি আহত হন গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত আশুগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী ভৈরব মুক্ত ছিল। এর পর পাকিস্তানিরা আশুগঞ্জ-ভৈরব দখলের জন্য সড়কপথে ভৈরবে উপস্থিত হলে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে হেলিকপ্টারে কমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্রায় এক কোম্পানি সেনা নামে। সে সময় হেলাল মোর্শেদসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা আশুগঞ্জের দুই মাইল দক্ষিণে লালপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি বহর লালপুরের কাছে মেঘনা নদীতে অবস্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করতে থাকে। তখন একজন মুক্তিযোদ্ধা তার সংকেত বা নির্দেশ ছাড়াই উত্তেজনার বশে গুলি করে বসেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা তাদের প্রতিরক্ষা স্থান চিহ্নিত করে ফেলে এবং ট্যাংকের সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাদের পাল্টা আক্রমণের প্রচণ্ডতায় পাকিস্তানি নৌবহর পিছু হটে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর স্যাবর জেট তাদের অবস্থানে আকাশ থেকে গোলাগুলি শুরু করে। এর ছত্রচ্ছায়ায় পাকিস্তানি সেনারা তাদের প্রায় ঘেরাও করে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৩ মে সীমান্ত এলাকা গোলাম হেলাল মোর্শেদ খানের নেতৃত্বে মাধবপুরে রওনা হন একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাদের লক্ষ্য ছিল সড়কে চলাচলরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অ্যাম্বুশ করা। রেকি তথ্যের ভিত্তিতে হেলাল মোর্শেদ স্থান নির্বাচন করেন ধ্বংসপ্রাপ্ত এক সেতুর পাশে নির্মিত সংযোগ সড়ক। সেখানে দুটি ট্যাংক-বিধ্বংসী মাইন পেতে অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু সেদিন পাকিস্তানিরা আসেনি তবে সহযোদ্ধাদের নিয়ে রাতে সেখানেই থাকেন তিনি। ওই রাতে বৃষ্টি হয় এবং তারা সবাই বৃষ্টিতে ভিজে যান। বেলা আড়াইটার দিকে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় আসে। জিপ, লরি ও পিকআপ মিলে কনভয়ে মোট ২২টি গাড়ি ছিল। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গাড়ি (জিপ) পার হয়ে যায়। মাইন বিস্ফোরিত হয়নি। চতুর্থটি (পিকআপ) পার হওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরিত হয়। সেটি উড়ে গিয়ে কয়েক গজ দূরে পড়ে। দ্বিতীয় গাড়িরও একই ভাগ্য ঘটে। এ সময় গোলাম হেলাল মোর্শেদ খানের সংকেতে সহযোদ্ধা সবার অস্ত্র গর্জে ওঠে। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। অক্ষত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৬-১১-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১০৪। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা