গাগাউজিয়া
গাগাউজিয়া বা গাগাউজ ইয়েরি (গাগাউজ:Gagauz Yeri বা Gagauziya; রোমানীয়: Găgăuzia; রুশ: Гагаузия, Gagauzija), সরকারিভাবে গাগাউজিয়া স্বায়ত্তশাসিত প্রাদেশিক অঞ্চল (গাগাউজ:Avtonom Territorial Bölümlüü Gagauziya; রোমানীয়: Unitatea Teritorială Autonomă Găgăuzia; রুশ: Автономное территориальное образование Гагаузия, Avtonomnoje territoriaľnoje obrazovanije Gagauzija), হল মলদোভার একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এর স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে ঐ অঞ্চলে গাগাউজ জাতিগোষ্ঠী, যারা মূলত অর্থোডক্সীয় খ্রিষ্টান এবং তুর্কীয় ভাষাভাষী ব্যক্তিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। গাগাউজ ইয়েরির অর্থ "গাগাউজদের ভূমি"।
গাগাউজিয়া স্বায়ত্তশাসিত প্রাদেশিক অঞ্চল | |
---|---|
নীতিবাক্য: "গাগাউজিয়া দীর্ঘজীবী হোক!" ("Yaşasın Gagauziya!") | |
জাতীয় সঙ্গীত: "Tarafım" ("আমার ভূমি") | |
গাগাউজিয়া স্বায়ত্তশাসিত প্রাদেশিক অঞ্চল
মলদোভার বাকি অংশ | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | কমরাত ৪৬°১৯′ উত্তর ২৮°৪০′ পূর্ব / ৪৬.৩১৭° উত্তর ২৮.৬৬৭° পূর্ব |
সরকারি ভাষা | গাগাউজ, রোমানীয়, রুশ |
সরকার | |
• গভর্নর | ইরিনা ভ্লাহ (১৫ এপ্রিল ২০১৫ থেকে) |
• গণপরিষদ প্রধান | আনা হারলামেনকো (২০০৮–বর্তমান) |
আইন-সভা | গণপরিষদ |
মলদোভার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল | |
• প্রতিষ্ঠিত | ২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৪ |
আয়তন | |
• মোট | ১,৮৩২ কিমি২ (৭০৭ মা২) |
• পানি (%) | ০.৩৬ |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৪[১] আদমশুমারি | ১,৩৪,৫৩৫ |
• ঘনত্ব | ৭৩.৪৩/কিমি২ (১৯০.২/বর্গমাইল) |
মুদ্রা | মলদোভীয় লিউ (MDL) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+২ (ইইটি) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+৩ (ইইএসটি) |
গাড়ী চালনার দিক | ডান |
কলিং কোড | +৩৭৩ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .md |
ইতিহাস
সম্পাদনাকিছু ধারণা অনুসারে গাগাউজরা সেলযুক তুর্কিদের বংশধর, যারা দোবরুজাতে আনাতোলীয় সেলযুক সুলতান দ্বিতীয় কায়কাউসের (১২৩৬–১২৭৬) শাসনামলে বসতি স্থাপন করেছিল। তারা সম্ভবত পেচেনেগ, উজ (ওঘুজ) এবং কুমানদের (কিপচাক) বংশধর ছিল।
আরো বিশদভাবে, ওঘুজ তুর্কদের একটি গোত্র আন্তঃগোত্রীয় সংঘাতের সময় বলকানে অভিবাসিত হয়েছিল বলে জানা যায়। গোত্রটি মধ্যযুগীয় মধ্যযুগীয় বুলগেরিয়ার অবস্থা দেখে ইসলাম ধর্ম থেকে অর্থডোক্সীয় খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে এবং এরা গাগাউজ তুর্ক নামে পরিচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এদের বৃহত্তর অংশ বুলগেরিয়া ত্যাগ করে স্থানীয় বুলগেরীয়দের সাথে বেসারাবিয়ায় গমন করে, যা বর্তমানে মলদোভার আওতাভুক্ত।
রুশ সাম্রাজ্য
সম্পাদনা১৮১২ সালে বেসারাবিয়া, যা পূর্বে মলদোভিয়ার পূর্বাংশ বলে অভিহিত হত, ১৮০৬ সাল থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত সংঘটিত রুশ-তুর্কি যুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য পরাজিত হলে ১৮১২ সালে বুখারেস্ট চুক্তি অনুসারে তা রুশ সাম্রাজ্যের দখলে আসে। এসময়ে, দক্ষিণ বেসারাবিয়ার (বা বুরজাক) বিভিন্ন গ্রামে বসবাসকারী নোগাই উপজাতিকে বের করে দেওয়া হয়। ১৮১২ সাল থেকে ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত রুশরা গাগাউজ জাতিগোষ্ঠীকে বর্তমান পূর্ব বুলগেরিয়া (সেটি তখন অটোমান সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল) থেকে বেসারাবিয়ায় নিয়ে আসে এবং মূলত নোগাই উপজাতিদের ফেলে যাওয়া বাড়িতে পুনর্বাসিত করে। তারা বেসারাবীয় বুলগেরীয়দের সাথে আভদার্মা, কমরাট, কঙ্গাজ, তোমাই, সিসিমিচিওই এবং অন্যান্য প্রান্তন নোগাই গ্রামগুলোতে মিলেমিশে বাস করতে থাকে। তাদের কিছু অংশ মলদোভিয়ায় মূল অংশেও বসবাস আরম্ভ করেছিল, যা ১৮১২ সালে রুশ সাম্রাজ্যের অধীনে এসেছিল না। কিন্তু, তারা শীঘ্রই তাদের স্বজাতিদের সাথে বাস করার জন্য মলদোভিয়া ত্যাগ করে। তাদেরকে একবিংশ শতাব্দীতে বেসারাবিয়ায় দক্ষিণাংশে বাস করতে দেখা যায়।
১৯০৬ সালের শীতে গাগাউজীয়রা "কমরাট প্রজাতন্ত্র" নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তারা "কার্যত" ৫ দিন স্বাধীন ছিল। এই স্বাধীনতা ব্যতিরেকে গাগাউজীয়রা বিভিন্ন দেশ-সাম্রাজ্যের আওতাধীন ছিল: রুশ সাম্রাজ্য (১৮১২–১৯১৭), রোমানিয়া (১৯১৮–১৯৪০ এবং ১৯৪১–১৯৪৪), সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯৪০–১৯৪১ এবং ১৯৪৪–১৯৯১) এবং মলদোভা (১৯১৭–১৯১৮ এবং ১৯৯১–বর্তমান)।
সোভিয়েত ইউনিয়ন
সম্পাদনাগাগাউজ জাতীয়তাবাদ আশির দশকে অতটা শক্তিশালী আন্দোলন ছিল না। আশির দশকের শেষভাগে সোভিয়েত ইউনিয়নে গণতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রভাব বিস্তার শুরু করলে গাগাউজ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শক্তিশালী রূপ লাভ করে। ১৯৮৮ সালে স্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের সাথে একত্র হয়ে "গাগাউজ জাতি" নামের এক আন্দোলন নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। এক বছর পর "গাগাউজ জাতি"র প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার মলদোভার দক্ষিণাংশে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন, যার রাজধানী হিসেবে কমরাটের নাম ঘোষণা করা হয়।
১৯৮৯ সালের আগস্টে মলদোভা প্রজাতন্ত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের রুশ ভাষার পরিবর্তে মলদোভীয় (রোমানীয়) ভাষা সরকারি ভাষার স্বীকৃতি লাভ করলে গাগাউজ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আরো জোরদার হয়। মলদোভার দক্ষিণাংশে অবস্থিত বহুজাতিক জাতিগোষ্ঠীর একাংশ সরকারি ভাষার পরিবর্তনে উদ্বিগ্ন হয়। তাদের চিসিনাউয়ের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আস্থার অভাব ছিল। গাগাউজরা তাদের ভবিষ্যৎ অবস্থা নিয়েও চিন্তিত ছিল কেননা, তখন মনে করা হচ্ছিল যে রোমানিয়ার সাথে মলদোভা একীভূত হবে। ১৯৯০ সালের আগস্টে কমরাটকে স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মলদোভার সরকার এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে এবং ঘোষণাটিকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করে। সে সময়ে, গাগাউজ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা হিসেবে স্টিফেন তোপাল আবির্ভূত হন।
স্বাধীন মলদোভা
সম্পাদনা১৯৯১ সালের মার্চে গাগাউজিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে প্রায় সভাই সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট দেন। অনেক গাগাউজীয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত অভ্যুত্থান চেষ্টার পক্ষে ছিলেন এবং ১৯৯১ সালের ১৯ আগস্ট গাগাউজিয়াকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সেপ্টেম্বর মাসে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া স্বাধীনতা ঘোষণার পর মলদোভীয় সরকারের সাথে সম্পর্ক আরো শীতল হয়। কিন্তু, ১৯৯১ সালের ২৭ আগস্ট মলদোভার আইনসভায় মলদোভার স্বাধীনতার পক্ষে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হলে মলদোভীয় আইনসভার ১২ জন গাগাউজীয় প্রতিনিধির মাঝে ৬ জন স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেন ও ৬ জন ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এরপর, মলদোভার সরকার সংখ্যালঘু অধিকারের দিকে অধিক নজর প্রদান করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মলদোভার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মিরসেয়া স্নেগুর গাগাউজদের স্বায়ত্তশাসন প্রদানের অঙ্গীকার করলেও তাদের স্বাধীনতা প্রদানের বিরোধিতা করেন। তিনি মলদোভাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়ে তাকে মলদোভা, গাগাউজিয়া ও ট্রান্সনিস্ট্রিয়া নামের তিনটি প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত করাত বিরোধী ছিলেন।
১৯৯৪ সালে মলদোভার আইনসভা "গাগাউজিয়ার জনগণ"কে (মলদোভার নতুন সংবিধান গৃহীত হবার মাধ্যমে) "জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার" প্রদান করে। ১৯৯৪ ২৩ ডিসেম্বর মলদোভীয় আইনসভা "গাগাউজিয়ার বিশেষ আইনি মর্যাদা আইন" (গাগাউজ: Gagauz Yeri) পাস করে। এর দরুন, গাগাউজ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ঘটে। এটি বর্তমানে সেদেশের ছুটির তালিকায় গাগাউজীয় ছুটির দিন হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। গাগাউজিয়াকে বর্তমানে সেদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রাদেশিক অঞ্চল বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। গাগাউজিয়ার সরকারি ভাষা তিনটি: রোমানীয়, গাগাউজ এবং রুশ।
৩ টি নগরি এবং ২৩ টি প্রজাসভা গাগাউজ স্বায়ত্তশাসিত প্রাদেশিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়: প্রতিটি এলাকার জনসংখ্যার ৫০% এরও অধিক ব্যক্তি গাগাউজ জাতিগোষ্ঠীর এবং যেসব এলাকায় গাগাউজীয়দের সংখ্যা ৪০% থেকে ৫০% এর মাঝে, সেখানে গণভোটের মাধ্যমে তাদেরকে গাগাউজিয়ার আওতাভুক্ত করা হয়। ১৯৯৫ সালে ঘেওরঘে তাবুন্সচিচ গাগাউজিয়ার গভর্নর (রোমানীয়: Guvernator, গাগাউজ: Başkan) হিসেবে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি গাগাউজীয় গণপরিষদ সভাপতি পিটার পাসালির সাথে গাগাউজিয়ার গণপরিষদ (Gagauz: "Halk Topluşu") প্রতিনিধি হিসেবেও নিযুক্ত হন।
দিমিত্রি ক্রোইটর ১৯৯৯ সালের গভর্নর নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং এবং ১৯৯৪ সালের চুক্তি অনুসারে গভর্নরের কাজের এখতিয়ার সম্পর্কে সোজাসুজিভাবে কথা বলতে শুরু করেন। মলদোভার কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের মাঝে নির্বাচনের ফলাফল সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করার লক্ষণ দেখা যায় নি। ফলশ্রুতিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে গাগাউজিয়ার বিরোধ সৃষ্টি হয়। অবশেষে, মলদোভীয় সরকারের চাপের মুখে ক্রোইটুর ২০০২ সালে পদত্যাগ করেন। মলদোভীয় সরকার তাত বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রাখা সহ অন্যান্য অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল।
গাগাউজিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিশন পরবর্তী নির্বাচনগুলো ক্রোইটরকে গভর্নর পদে প্রার্থিতার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছিল। পরবর্তী নির্বাচনে ঘেরোঘি তাবুশিক গভর্নর হিসেবে নির্বাচন হন, যে নির্বাচনকে বিতর্কিত নির্বাচন বলে অভিহিত করা হয়।[২][৩] এরপর মিহাইল ফরমুজাল ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গাগাউজিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত গভর্নর নির্বাচনে ইরিনা ভ্লাহ ৫১% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।[৪]
২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ইইউতে যোগদানের বিরুদ্ধে এবং রাশিয়ার সাথে আরো দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে রায় প্রদান করেন গাগাউজিয়ার জনগণ। তারা আরো জানায় যে, মলদোভা ইইউতে যোগদান করলে তারা গাগাউজিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন।[৫][৬]
২০১৫ সালের ২৩ মার্চে ইরিনা ভ্লাহ নতুন গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় প্রবলভাবে রাশিয়াপন্থী প্রচারণা চালান এবং তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় রুশ ফেডারেশনের সাথে আরো গভীর সম্পর্ক রাখার অঙ্গীকার করেন।[৭][৮]
ভূগোল
সম্পাদনাগাগাউজিয়া তিনটি জেলায় বিভক্ত। গাগাউজিয়ার চারটি বিচ্ছিন্ন অংশও বিদ্যমান। প্রধান ও কেন্দ্রীয় বিচ্ছিন্ন অংশে কমরাট এবং সিয়াদির-লুঙ্গার মত নগরী বিদ্যমান। এটি দুইটি জেলায় বিভক্ত এবং এই দুইটি নগরীকে জেলাদ্বয়ের প্রশাসনিক কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বিচ্ছিন্ন অংশ ভালকানেস্তি শহরের কাছে অবস্থিত। অপরদিকে, বাকি দুইটি ছোট বিচ্ছিন্ন অংশগুলোর আওতাভুক্ত হল কপকেয়াক এবং কারবালিয়ার গ্রামগুলো। কারবালিয়ার গ্রামগুলো ভালকানেস্তি প্রশাসনের আওতাধীন। অপরদিকে, কপকেয়াকের গ্রামগুলো সিয়াদির-লুঙ্গা জেলার অন্তর্গত।
প্রশাসনিক বিভাগ
সম্পাদনাগাগাউজিয়া একটি পৌরসভা, দুইটি নগর এবং তেইশটি প্রজাসভাসহ মোট ৩২ টি স্থানীয় অঞ্চলে বিভক্ত।[৯]
|
|
|
রাজনীতি
সম্পাদনামলদোভীয় সংবিধান গাগাউজিয়াকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়েছে এবং ১৯৯৪ সালের গাগাউজ স্বায়ত্তশাসন আইন অনুযায়ী গাগাউজিয়ার জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে থাকে। আইন অনুযায়ী, মলদোভা যদি রোমানিয়ার সাথে একীভূত হবার ঘোষণা দেয়, তবে গাগাউজিয়া নিজেদের ইচ্ছামত চলতে পারে।[১০][১১] গাগাউজীয় গণপরিষদের (গাগাউজ: Halk Topluşu; রোমানীয়: Adunarea Populară) নিজস্ব বিচার ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের এখতিয়ার রাখে। তারা শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্থানীয় উন্নয়ন, বাজেট ও কর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে এবং প্রাদেশিক প্রশাসনকে তাদের কাজের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিতে পারে। গণপরিষদের দুইটি বিশেষ ক্ষমতা আছে: এটি মলদোভার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করার কাজে অংশ নিতে পারে; এবং, কেন্দ্রীয় প্রশাসন গাগাউজিয়ার বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে তারা মলদোভার সাংবিধানিক আদালতে এর বিরুদ্ধে আপিল করার এখতিয়ার রাখে।
গাগাউজিয়ার সর্বোচ্চ সরকারি ব্যক্তি, যিনি গাগাউজিয়ার সমগ্র প্রশাসনের প্রধান, গাগাউজিয়ার গভর্নর (গাগাউজ: Başkan; রোমানীয়: Guvernatorul Găgăuziei) বলে পরিচিয়। তিনি জনগণের ভোটে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং তিনি সমগ্র গাগাউজীয় প্রশাসনের উপরে এখতিয়ার রাখেন। তিনি মলদোভা প্রজাতন্ত্রী সরকারের একজন সদস্যও। গাগাউজিয়ার গভর্নর হতে হলে কাউকে গাগাউজ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং অন্যূন ৩৫ বছর বয়স্ক মলদোভীয় হতে হবে।
গাগাউজিয়ায় স্থানীয় কার্যনির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার রাখে সেখানকার কার্যনির্বাহী কমিটি (Bakannik Komiteti/Comitetul Executiv)। এর সদস্যরা গভর্নর কর্তৃক অথবা গাগাউজীয় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পেয়ে নিযুক্ত হয়ে থাকেন। এই কমিটি গাগাউজিয়ায় মলদোভা প্রজাতন্ত্র এবং গাগাউজীয় গণপরিষদ প্রণীত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করে থাকে।
স্বায়ত্তশাসনের অংশ হিসেবে গাগাউজিয়ার নিজস্ব পুলিশবাহিনী আছে।[১২] গাগাউজ হালকি নামের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নির্বাচন
সম্পাদনাগাগাউজিয়ার গভর্নর নির্বাচন, গাগাউজীয় গণপরিষদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে গাগাউজিয়ায়। গাগাউজীয়রা মলদোভীয় জাতীয় নির্বাচনেও ভোট প্রদান করে থাকে।
বছর | ইউরোপীয় অন্তর্ভুক্তিকরণ জোট | মলদোভা প্রজাতন্ত্র সমাজতন্ত্রী দল |
---|---|---|
২০১০ | ২৪.৪৪% ১৩,৩৮০ | ৫৯.৯৭% ৩৪,২২৪ |
জুলাই ২০০৯ | ১১.৩২% ৬,৪৮২ | ৭৭.৭৮% ৪৪,৫৪৯ |
এপ্রিল ২০০৯ | ২.৪৩% ১,৩৭৬ | ৬৩.৬৯% ৩৬,০৯৪ |
দল এবং জোট | ভোট | % | +/− | |
---|---|---|---|---|
মলদোভা প্রজাতন্ত্র সমাজতন্ত্রী দল | ৩৪,২২৪ | ৫৯.৯৭ | −১৭.৮১ | |
মলদোভা গণতন্ত্রী দল | ৯,১২৫ | ১৫.৯৭ | +১০.০৯ | |
মলদোভা মানবতাবাদী দল | ৩,৭২২ | ৬.৫২ | +৬.৫২ | |
সামাজিক গণতন্ত্রী দল | ৩,৬৮৬ | ৬.৪৬ | -৩.৪১ | |
মলদোভা প্রগতিশীল গণতন্ত্রী দল | ৩,৫৮১ | ৬.২৭ | +৪.৯৯ | |
অন্যান্য দল | ২,৭৭০ | ৪.৮১ | -০.৩৮ | |
মোট (ভোট প্রদানের হার ৫১.৩৬%) | ৫৭.৫৯৬ | ১০০.০০ |
|
অর্থনীতি
সম্পাদনাগাগাউজিয়ার অর্থনীতি কৃষি বিশেষত, দ্রাক্ষাচাষের উপরে নির্ভরশীল। এই অঞ্চলের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো হল মদ, সূর্যমুখী তেল, অঅ্যালকোহলীয় পানীয়, উল, লেদার এবং টেক্সটাইল। গাগাউজিয়ার ১২ টি মদ কারখানা ৪,০০,০০০ টনের অধিক মদ প্রতি বছরে উৎপাদন করে থাকে। দুইটি তেল কারখানা, দুইটি কার্পেট কারখানা, একটি মাংস কারখানা এবং একটি অঅ্যালকোহলীয় পানীয় কারখানা গাগাউজিয়ায় বিদ্যমান।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাগাগাউজিয়ায় ৪৫১ কিলোমিটার রাস্তা বিদ্যমান। তন্মধ্যে ৮২% রাস্তাই পাকা।
জনমিতি
সম্পাদনা২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুসারে গাগাউজিয়ার জনসংখ্যা ১,৩৪,১৩২। তন্মধ্যে ৩৬.২% লোক শহরে এবং ৬৩.৮% লোক গ্রামে বাস করে।
- জন্ম (২০১০): ২,০৪২ (প্রতি হাজারে ১২.৭)
- মৃত্যু (২০১০): ১,৮৬৮ (প্রতি হাজারে ১১.৬)
- বৃদ্ধির হার (২০১০): ১৭৪ (প্রতি হাজারে ১.১)
জাতিগোষ্ঠী
সম্পাদনা২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুসারে গাগাউজিয়ায় জাতিগোষ্ঠী সংক্রান্ত পরিসংখ্যান হল:[১৩]
জাতিগোষ্ঠী | জনসংখ্যা | হার |
---|---|---|
গাগাউজ | ১,১২,৪০৩ | ৮৩.৮% |
বেসারাবীয় বুলগেরীয় | ৬,৭৫৩ | ৪.৯% |
মলদোভীয় | ৬,৩০৪ | ৪.৭% |
রুশ | ৪,২৯২ | ৩.২% |
ইউক্রেনীয় | ৩,৩৫৩ | ২.৫% |
অন্যান্য | ১,২০৭ | ০.৯% |
মলদোভায় জাতিগত ও ভাষাগত একটি বিতর্ক চলমান। বিতর্কটি হল, মলদোভীয় এবং রোমানীয়রা একই জাতিগোষ্ঠী কি না। আদমশুমারির নিয়ম অন্যসারে, একজন ব্যক্তি আদমশুমারিতে নিজেকে যেকোন একটি জাতিগোষ্ঠীর লোক হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন। কেউ নিজেকে একসাথে মলদোভীয় এবং রোমানীয় জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন না।
ধর্ম
সম্পাদনা- খ্রিষ্টান – ৯৬.০%
- অর্থোডক্সীয় খ্রিষ্টান – ৯৩.০%
- প্রোটেস্ট্যান্ট – ৩.০%
- ব্যাপ্টিস্ট – ১.৬%
- সেভেন ডে অ্যাডভেন্টিস্ট – ০.৮%
- ইভানজেলিকাল– ০.৪%
- পেন্টেকোস্টাল – ০.২%
- অন্যান্য – ২.২%
- ধর্মহীন – ১.৬%
- নাস্তিক – ০.২%
সংস্কৃতি ও শিক্ষা
সম্পাদনাগাগাউজিয়ায় ৫৫ টি বিদ্যালয় বিদ্যমান, কমরাট শিক্ষাবিজ্ঞান মহাবিদ্যালয় (মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরবর্তী ২ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম বিদ্যমান), এবং কমরাট স্টেট বিদ্যালয় (Komrat Devlet Universiteti [১৪]) তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তুরস্কের অর্থায়নে একটি তুর্কি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (Türk İşbirliği Ve Kalkınma İdaresi Başkanlığı) এবং একটি তুর্কি গ্রন্থাগার (Atatürk Kütüphanesi) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেসালমা গ্রামে গাগাউজ ঐতিহাসিক এবং নৃবিজ্ঞান জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন দিমিত্রি কারা কোবান।
গাগাউজ ভাষাকে ঐ অঞ্চলের জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা প্রদান করা সত্ত্বেও গাগাউজ ভাষার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করে না। অধিকাংশ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই রুশ ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এবং তারা মলদোভীত ভাষা প্রভাবিত রোমানীয় ভাষায় শিক্ষা প্রদানের বিরোধী।[১৫] তা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সব ভাষাই (রুশ, রোমানীয়, ইংরেজি বা ফরাসি, গাগাউজ) শিক্ষা প্রদান করে থাকে এবং স্থানীয় ভাষাই শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিক জনপ্রিয়।[১৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Results of Population and Housing Census in the Republic of Moldova in 2014"। National Bureau of Statistics of the Republic of Moldova। ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-০১।
- ↑ Information on previous elections of Governor of Gagauz ATU ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ জুন ২০১৮ তারিখে (ইংরেজি) (রুশ) (রোমানীয়))
- ↑ Moldova Strategic Conflict Assessment (SCA) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে, Stuart Hensel, Economist Intelligence Unit, Peace Building.
- ↑ "Moldova: Semi-Autonomous Region Elects Pro-Russian Leader", The Moscow Times
- ↑ Dumitru Minzarari: "The Gagauz Referendum in Moldova: A Russian Political Weapon?", in: Eurasia Daily Monitor, Volume: 11, Issue: 23.
- ↑ "Gagauzia Voters Reject Closer EU Ties For Moldova", RFE/RL, February 03, 2014.
- ↑ Elia, Danilo (২৭ মার্চ ২০১৫)। "E la Găgăuzia vota per Mosca"। Osservatorio Balcani Caucaso (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Independent candidate Irina Vlakh elected head of Gagauzia"। TASS – Russian News Agency। ২৩ মার্চ ২০১৫। ২৬ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৫।
- ↑ (রোমানীয়) Organic Law No. 292-XIV (see Annex 4) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে, Republic of Moldova, 19 February 1999.
- ↑ East – West Working Group. Levente Benkö. Autonomy in Gagauzia: A Precedent for Central and Eastern Europe?
- ↑ "Opinion on the Law on Modification and Addition in the Constitution of the Republic of Moldova in Particular Concerning the Status of Gagauzia"। Council of Europe। ২০০২। ২০০৭-১২-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৪।
- ↑ (রোমানীয়) Moldovan law on the special legal status of Gagauzia
- ↑ 2004 census results
- ↑ Comrat, street. Galațan, 17,
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৯।
- ↑ http://www.gagauzi.ru/2009-09-22-17-54-41/65-panorama/75-2009-09-23-00-50-30[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
আরো পড়ুন
সম্পাদনা- Shabashov A.V., 2002, Odessa, Astroprint, "Gagauzes: terms of kinship system and origin of the people", (Шабашов А.В., "Гагаузы: система терминов родства и происхождение народа")
- Chinn, Jeff; Steven D. Roper (মার্চ ১৯৯৮)। "Territorial autonomy in Gagauzia"। Nationalities Papers। 26 (1): 87–101। ডিওআই:10.1080/00905999808408552।
- Delinski, Andrian; Kahl, Thede; Lozovanu, Dorin; Prishchepov, Aleksandr (ed.) 2014: Gagauziya (Gaguz Yeri). Avtonom Bölgesi Atlası. Atlas of ATU Gagauzia (Gagauz yeri). Chișinău: Proart. আইএসবিএন ৯৭৮৯৯৭৫৪১১৬৫৩