গয়াল (বৈজ্ঞানিক নাম: Bos frontalis) বন্য গরুর একটি প্রজাতি। ভারতে এরা মিথুন নামে পরিচিত। এরা চিটাগাং বাইসন নামেও পরিচিত।[]

গয়াল
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে গয়াল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Artiodactyla
পরিবার: Bovidae
উপপরিবার: Bovinae
গণ: Bos
প্রজাতি: B. frontalis
দ্বিপদী নাম
Bos frontalis
Lambert, 1804

বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[]

নামকরণ

সম্পাদনা

গয়াল বন্যগরুর একটি প্রজাতি কি না, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এরা কোনো বিলুপ্ত প্রজাতির বন্যগরুর পোষা বংশধর বা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের পোষা গরু ও গৌরের সংমিশ্রণে সৃষ্ট সংকর গরু। যারা প্রজাতি হিসেবে গণ্য করেন, তাঁরা গয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Bos frontalis বলে উল্লেখ করেছেন।[]

তবে গৃহপালিত গরু, বুনো মহিষ ও বিশেষত গৌরের সাথে গয়ালের লক্ষণীয় তফাৎ রয়েছে। গৌরের দুই শিঙের মধ্যে ঢিবির মতো আছে, যা গয়ালের নেই। গৌরের শিং অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ওপরের দিকে ভেতরমুখী বাঁকানো। গয়ালের শিং দুই পাশে ছড়ানো, সামান্য ভেতরমুখী বাঁকানো। শিঙের গোড়া অত্যন্ত মোটা। গয়াল পোষ মানলেও গৌর পোষ মানে না।[]

 
গয়াল

গয়াল প্রায় আমাদের গৃহপালিত প্রাণী গরুর মতোই দেখতে। এ জন্য এদের বনগরু বলা হয়। বিরাট আকৃতির এই প্রাণীটির ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে । উচ্চতা দুই-তিন মিটার। গায়ের রং কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক গয়ালের রং সামান্য বাদামি। পূর্ণবয়স্ক ও মাদি গয়ালের রং সামান্য লালচে হয়ে থাকে। এদের হাঁটুর নিচ থেকে ক্ষুর পর্যন্ত সাদা লোমে আবৃত। মনে হয়, সাদা মোজা পরানো। গয়ালের মাথার ওপরের কিছু অংশ এবং কপালেও রয়েছে সাদা লোম। এদের কপালের দুই পাশে দুটি বিশাল শিং থাকে। গরুর কাঁধে সাধারণত একখণ্ড উঁচু মাংসপিণ্ড থাকে যাকে কুঁজ বলে। গয়ালের সেই মাংসপিণ্ড এত বড় যে তার অবস্থান কাঁধ থেকে পিঠের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিস্তৃত।[]

বুনো গয়াল দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের নেতৃত্বে থাকে একটি বড় ও শক্তিশালী ষাঁড়। সাধারণত, ১০-১১ মাস গর্ভধারণের পর স্ত্রী গয়াল একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। গয়াল বাঁচে ১৫-১৬ বছর।

খাদ্যাভ্যাস

সম্পাদনা

এরা তৃণভোজী। এরা সাধারণত হাতির সহবাসী। গহিন বনের যেখানে ছোট ছোট ঝোপের কচিপাতা ও ডালপালা আছে তেমন জায়গা গয়ালের বেশ পছন্দ। শক্ত ও কর্কশ ঘাস খাওয়ায় এদের দাঁত দ্রুত ক্ষয় হয়। এই ক্ষয় পূরণে এদের ক্ষার ও লবণযুক্ত মাটি খেতে হয়। অবশ্য অন্ত্রের পোকা কমানোর জন্যও এরা লবণ খায়।[] গয়ালের এই অভ্যাসের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে লবণের টোপ ফেলে গয়াল ধরা হয়।

আবাসস্থল

সম্পাদনা

বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়াচীনে গয়াল দেখতে পাওয়া যায়। চীনের ইউনান প্রদেশের দুলংনিজিয়াঙ নদীর উপত্যকা ও সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকায় গয়াল দেখা যায়। সেখানে এরা দুলং গরু নামে পরিচিত।[] বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাবলাখালী, সাজেক ভ্যালি ও মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ি বনে গয়ালের বিচরণ রয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে গয়ালের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপিত হলেও অব্যবস্থাপনা এবং পৃষ্ঠপোষকতা, কর্মচারী সংকট ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে প্রকল্পটি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে সফলভাবে গয়ালের কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এখানে পূর্ণবয়স্ক তিনটি পুরুষ গয়াল ও একটি স্ত্রী গয়াল রয়েছে। অতিরিক্ত মেদ এবং বয়সের কারণে এরা মিলিত হতে আগ্রহী নয়। ফলে এখানেও প্রজাতিটি বিলুপ্ত হতে চলেছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], কেমন আছে গয়াল?- আ ন ম আমিনুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলো, ১ নভেম্বর, ২০১১।
  2. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: স্তন্যপায়ী, খণ্ড: ২৭ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৬৯-১৭০।
  3. [২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], পাহাড়ি বনের বিপন্ন গয়াল- খসরু চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলো, ২০ আগস্ট, ২০০৯।
  4. [৩] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ জুলাই ২০২১ তারিখে, নিশ্চিহ্ন গয়াল- আজিজুর রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৯ ডিসেম্বর ২০১১।
  5. [৪], গয়াল বিষয়ক প্রবন্ধ।