গণপরিষদ হলো কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ যারা কোন একটি দেশের সংবিধান বা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কিংবা সংস্কারের জন্য সমবেত হয়। সংবিধান সভার সদস্যরা সাধারণত জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। তবে পরাধীন উপনিবেশে সংবিধান সভার সদস্যরা সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কিংবা অন্য কোন উপায়ে বাছাইকৃত হতেও পারে। কখনো বা একই সঙ্গে নির্বাচন, নিয়োগ ও দৈবচয়নের সংমিশ্রণেও গণপরিষদ গঠিত হতে পারে। [][] সংবিধান সভার সাধারণত নিয়মিত আইনসভা থেকে আলাদা বলে বিবেচিত হয়, যদিও অনেকে দেশে গণপরিষদ সদস্যরা পরবর্তীতে আইনসভার সদস্য হিসেবেও নির্বাচিত হতে পারে। রাষ্ট্রের গাঠনিক দলিল হিসেবে সাধারণত গঠনতন্ত্র বা সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার আইনসভার থাকে না।[][] তাই উন্নত গণতন্ত্রচর্চাকারী দেশগুলোতে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার করতে নতুন করে সংবিধান সভার আয়োজন করা হয়, যার নিয়ম সাধারণত সংবিধানেই লিপিবদ্ধ থাকে। সাধারণত সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে উক্ত সংবিধানপ্রণয়নকারী সংবিধান সভা ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং প্রবর্তিত সংবিধানের অধীনে নতুন আইনসভা গঠিত হয়।[]

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত চিলির গণপরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন

বিভিন্ন দেশের গণপরিষদ

সম্পাদনা

বাংলাদেশ

সম্পাদনা

বাংলাদেশ গণপরিষদ হলো ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ও এখন পর্যন্ত আয়োজিত একমাত্র গণপরিষদ।[] ঔপনিবেশিক শাসনের ধারাবাহিকতা অবলম্বনে এই সংবিধান সভাকে গণপরিষদ হিসেবে নামাঙ্কিত করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পাকিস্তানের তদানীন্তন সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান কর্তৃক জারিকৃত লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার, ১৯৭০-এর অধীনে নির্বাচনে জয়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল বলে বহু রাজনৈতিক দলসহ মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বদরুদ্দীন উমর, আ. স. ম. আবদুর রব, ফরহাদ মজহার ও আরও অনেকে এই গণপরিষদকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।[][][] কিন্তু বিতর্ক ও বিরোধিতা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের নিরাপস অবস্থানের দরুন এক বছরেরও কম সময়ে গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে তা ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে প্রবর্তন করতে সক্ষম হয়। তবে প্রণয়নকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই সংবিধান বিপুল সমালোচনার মধ্য দিয়ে গেছে। অনেকেই এই সংবিধানকে "ফ্যাসিবাদী" স্বৈরতন্ত্র সৃষ্টিকারী বলে অভিহিত করেছেন।[১০][১১][১২][১৩]

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে গণপরিষদ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।[১৪] সেই লক্ষ্যে একটি সংবিধান সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Oloka-Onyango, Joseph. (২০০১)। Constitutionalism in Africa : creating opportunities, facing challenges। Fountain Publishers। আইএসবিএন 9970-02-271-7ওসিএলসি 849441803 
  2. Ghai, Yash। "The Role of Constituent Assemblies in Constitution Making" (পিডিএফ)। ২০২১-০৩-২৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "3.1.2 Constitutional assemblies"Constitution Making for Peace (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-৩১ 
  4. Macfarlane, Emmett, editor. (২০১৬)। Constitutional Amendment in Canadaআইএসবিএন 978-1-4426-1900-5ওসিএলসি 1046612703 
  5. Newar Bdair. (২০০১)। Newar Bdair – The Constituent Power। Fountain Publishers। আইএসবিএন 9970-02-271-7এসএসআরএন 3286293 ওসিএলসি 3286293 
  6. ইসলাম, কাবেদুল (সেপ্টেম্বর ২০২৩)। গণপরিষদের বিতর্কের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান জন্মকথা। ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ৭। আইএসবিএন 978-984-97686-5-4 
  7. আহমেদ, ফিরোজ (মে ২০১৫)। মুহাম্মদ, আনু, সম্পাদক। "বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রের গতিমুখ: সূচনাকাল" (পিডিএফ)সর্বজনকথা। ঢাকা: ৮৬–৯৮। ২০ মে ২০২৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য)
  8. মজহার, ফরহাদ (আগস্ট ২০২৩)। "গঠন ও গঠনতন্ত্র"। গণঅভ্যুত্থান ও গঠন: বাংলাদেশে গণরাজনৈতিক ধারার বিকাশ প্রসঙ্গে। ঢাকা: রাষ্ট্রচিন্তা। পৃষ্ঠা ১৪৮–১৮০। আইএসবিএন 978-984-97818-0-6 
  9. উমর, বদরুদ্দীন (সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারা"। আহমদ, আহরার। সমাজ রাষ্ট্র বিবর্তন: জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক গুণিজন বক্তৃতামালা (২০১৭-২০১৮)। ঢাকা: বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ১৫৬–১৮২। আইএসবিএন 978-984-93718-7-8 
  10. "Interview: Situation In Bangladesh Challenging, But Happy That A Fascist Rule Has Ended, Cultural Icon Farhad Mazhar To ETV Bharat"ETV Bharat News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৭ 
  11. "আ.লীগের নেতৃত্বে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে: আম্বিয়া"সমকাল। জানুয়ারী ৩১, ২০২২। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪ 
  12. "Constitution needs rewriting to bar autocracy"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৯-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৭ 
  13. Zahid, Selim (২০২১-০৩-২৪)। "JaPa emerges as opposition party"Prothomalo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৮ 
  14. "Constituent assembly to be convened for charter reform: Nahid"। সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।