খ্রো-ফু-লো-ত্সা-বা-ব্যাম্স-পা-দ্পাল

খ্রো-ফু-লো-ত্সা-বা-ব্যাম্স-পা-দ্পাল (ওয়াইলি: khro phu lo tsA ba byams pa dpal) (১১৭২-১২৩৬) ছিলেন তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মসম্প্রদায় ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের খ্রো-ফু-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ (ওয়াইলি: khro phu bka' brgyud) ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা।

শাক্যশ্রীভদ্র ও খ্রো-ফু-লো-ত্সা-বা-ব্যাম্স-পা-দ্পাল

জন্ম ও শিক্ষা সম্পাদনা

খ্রো-ফু-লো-ত্সা-বা-ব্যাম্স-পা-দ্পাল ১১৭২ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য তিব্বতের নিম্ন শাব উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল জো-ফান (ওয়াইলি: jo phan) এবং মাতার নাম ছিল ব্স্রেগ্স-মো-গ্সাল-ব্যেদ (ওয়াইলি: bsregs mo gsal byed)। আট বছর বয়সে তিনি তার খুল্লতাত গ্যাল-ত্শা-রিন-ছেন-ম্গোনের নিকট দীক্ষালাভ করেন এবং তার নতুন নাম রাখা হয় ত্শুল-খ্রিম্স-শেস-রাব (ওয়াইলি: tshul khrims shes rab) এরপর তিনি সা-স্ক্যা বৌদ্ধবিহারে ঝাং-দ্গে-বা (ওয়াইলি: zhang dge ba) নামক পণ্ডিতের নিকট সংস্কৃত শিক্ষালাভ করেন। উনিশ বছর বয়সে ভিক্ষুর শপথ গ্রহণের সময় তার নাম রাখা হয় ব্যাম্স-পা-দ্পাল। গ্যাল-ত্শা-রিন-ছেন-ম্গোনের মৃত্যুর পর তিনি নেপাল যাত্রা করে ভারতীয় পণ্ডিত বুদ্ধশ্রীর নিকট সূত্রতন্ত্র অধ্যয়ন করেন।[১]

অনুবাদ সম্পাদনা

শিক্ষাশেষে তিনি মিত্রযোগী নামক এক ভারতীয় তন্ত্র সাধককে তিব্বতে নিয়ে যান, যার শিক্ষা তিব্বতী বৌদ্ধধর্মে প্রচুর প্রভাব বিস্তার করে। দেড় বছর পরে মিত্রযোগীকে নেপাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তিনি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে বুদ্ধশ্রীকে তিব্বতে আমন্ত্রণ জানান। উভয়ে মধ্য তিব্বতে দুই বছর বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র অনুবাদকর্মে ব্যস্ত থাকেন। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাম্স-পা-দ্পাল চুম্বী উপত্যকা হয়ে অসম প্রবেশ করে বিখ্যাত ভারতীয় বৌদ্ধ পন্ডীত শাক্যশ্রীভদ্রকে তিব্বত যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এক দশক ধরে তিনি শাক্যশ্রীভদ্রকে অনুবাদে সহায়তা করেন এবং লো-ত্সা-বা বা অনুবাদক হিসেবে খ্যাত হন।[১]

মৈত্রেয় মূর্তি সম্পাদনা

খ্রো-ফু-লো-ত্সা-বা-ব্যাম্স-পা-দ্পাল শাব উপত্যকায় তামা দিয়ে তৈরী চল্লিশ মিটার উচ্চ একটি মৈত্রেয় বুদ্ধ নির্মাণ করান। ১২০১ খ্রিষ্টাব্দে এই মূর্তি নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়, ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে কাজ শুরু হয় এবং আরো দশ বছর পরে এই নির্মাণ সম্পন্ন হয়। শাক্যশ্রীভদ্রবুদ্ধশ্রীকে দর্শন করতে আসা অসংখ্য পুণ্যার্থীদের উপহার সামগ্রী থেকে এই মূর্তি নির্মাণের খরচ উঠে আসে। ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোল আক্রমণে এই মূর্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[১]

খ্রো-ফু-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ সম্পাদনা

খ্রো-ফু-লো-ত্সা-বা-ব্যাম্স-পা-দ্পাল তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের একটি নতুন শাখা সম্প্রদায় স্থাপন করেন। এই নতুন ধর্মীয় গোষ্ঠী খ্রো-ফু-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ নামে পরিচিত হয়। এই গোষ্ঠীর সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন বু-স্তোন-রিন-ছেন-গ্রুব যার প্রভাবে এই গোষ্ঠীর শিক্ষাপদ্ধতি সা-স্ক্যাদ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ে প্রবেশ করে।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Martin, Dan (আগস্ট ২০০৮)। "Tropu Lotsāwa Jampa Pel"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-১০