শাহ্‌ আব্দুর রউফ

রংপুর জেলার একজন সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তি।
(খান বাহাদুর শাহ্‌ আব্দুর রউফ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শাহ্‌ আব্দুর রউফ ছিলেন রংপুর জেলার একজন সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তি।[১] তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে সমধিক প্রসিদ্ধ। ইংরেজ আমলে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন।[২] তিনি ১৯২০ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এম. এল.সি) নির্বাচিত হন। তাঁর নামে পীরগঞ্জে শাহ্‌ আব্দুর রউফ কলেজ ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয়[১] এবং ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি হয়।[৩][৪]

শাহ্‌ আব্দুর রউফ
শাহ্‌ আব্দুর রউফ
রংপুর জেলা বোর্ড
কাজের মেয়াদ
১৯২২ – ১৯৩৩
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৮৮৯
রংপুর, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু১ জানুয়ারি ১৯৬৯
মকিমপুর গ্রাম, পীরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর জেলা
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয়-পাকিস্তান
রাজনৈতিক দলমুসলিম লীগ
পেশাসরকারি চাকরি
জীবিকারাজনীতি

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

শাহ্‌ আব্দুর রউফ ১৮৮৯ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শাহ কলিমউদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট পুঁথিকার। যোগ্য পিতার যোগ্য সমত্মান শাহ্‌ আব্দুর রউফ। তিনিও সাহিত্যপ্রতিভার অধিকারী ছিলেন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকলেও সাহিত্যচর্চার সঙ্গে তিনি সর্ম্পকরহিত ছিলেন না।[১]

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন রংপুরে। এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় গমন করেন। আলীগড় কলেজ থেকে প্রথমে তিনি বি. এ. এবং পরে বি. এল. ডিগ্রী অর্জন করেন।[৫]

কর্মজীবন সম্পাদনা

রংপুর সদর ও নীলফামারী মহকুমার মুসলামান ভোটদাতাগণের ভোটে তিনি ১৯২০ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এম. এল.সি) নির্বাচিত হন। শাহ্‌ আব্দুর রউফের দ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র রংপুর জেলাবোর্ড। ১৯২২ সালে তিনি রংপুর জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে রংপুর জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার প্রথম সুযোগ লাভ করেন। ১৯৪০ সালে তিনি পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন।[৬] তিনি দীর্ঘ নয় বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর তৃতীয় কর্মস্থল ছিল রংপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকে। তিনি এ ব্যাংকের সম্মানিক সচিব (অনারারী সেক্রেটারী) ছিলেন। এরপরে ব্যাংকের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে জনসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৩৫ সালে তিনি জুবিলী পদকসহ জুবিলি কো-অপারেটিভ সার্টিফিকেট লাভ করেন। তিনি তার জনহিতকর কাজের জন্য ১৯৩৭ সালে তৎকালীন বড় লাট বাহাদুরের কাছে থেকে করোনেশন পদক লাভ করেন এবং ১৯৩৯ সালে তিনি সরকার কর্তৃক খাঁন বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন।

তিনি রংপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে অনেক ভূমিকা রাখেন।[৭] দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৭ সালে জেলা বিদ্যালয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

১৯১৯ সালে রংপুর জেলায় শুরু হয় রায়াত আন্দোলন। রংপুরের রায়াত ও প্রজাসাধারণ জমিদারদের নির্মম শোষণে ছিল অত্যাচরিত ও নিপীড়িত। রংপুর জেলায় গঠিত রায়াত সমিতির তিনি সম্পাদক ছিলেন। তার নেতৃত্বে রায়াত আন্দোলন বেগবান হয়েছিল।[৮] ১৯১৯ সালের শাসন সংস্কার আইন অনুযায়ী বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। ১৯২০ সালে সেই নির্বাচনে তিনি রংপুর সদর ও নীলফামারী মহকুমার (বর্তমান জেলা) মুসলিম ভোটারদের ভোটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এম.এল.সি) নির্বাচিত হন। তিনি মুসলিমলীগের একজন বড় নেতা ছিলেন। ১৯৪০ সালে লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের কাউন্সিলে আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। তিনি রংপুর মুসলিমলীগের একজন প্রবীণ নেতা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রাজশাহী বিভাগীয় কাউন্সিলের তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইয়ূব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্রের’ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন।

সাহিত্য চর্চা সম্পাদনা

শাহ্‌ আব্দুর রউফ শুধু রাজনীতি, সমাজসেবা এবং শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে তাঁর বহুমুখী প্রতিভাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি নিজে সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত ছিলেন এবং সাহিত্যচর্চায় তিনি পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছেন। তাঁর রচিত ‘‘চতুর্দশী’(১৯৬৭) নামে একটি কাব্য ও ‘‘আমার কর্মজীবন নামে দুই খন্ডের একটি গদ্যপুস্তিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁর রচিত ‘‘চর্তুদশী’’ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশকাল জুন,১৯৬৭ সাল। হজরত মাওলানা শাহ আফতাবুজ্জামান পীর সাহেব রচিত‘‘বরকতের নূর’’ ও ‘‘নাতে রসূল মকবুল’’ গ্রন্থ দুটি তাঁর আর্থিক সহযোগিতায় প্রকাশিত হয়েছিল।[১]

খেতাব সম্পাদনা

সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বৃটিশ সরকার কর্তৃক ১৯৩৫ সালে ‘জুবিলী পদক’, ১৯৩৭ সালে ‘করোনেশন পদক’ ১৯৩৯ সালে ‘খান বাহাদুর’ খেতাব লাভ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমঘায়ে কায়েদে আজম’ সম্মানসূচক উপাধি লাভ করেন।[৯] [১০]

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে রংপুর শহরের লিচু বাগান এলাকায় (সালেক পাম্প) তার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। শহীদ শংকু সরণীস্থ (স্টেশন রোড) আলমনগর পানামা মোড়ে ধলা পীর সাহেবের "বরকতিয়া দরবার শরীফ" সংলগ্ন এলাকায় তাকে দাফন করা কয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"pirgonj.rangpur.gov.bd। ৬ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  2. রঙ্গপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্পাদনা পরিষদ, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, ২০০৭ খৃ., পৃ. ৭৯।
  3. "সরকারি হলো দুই কলেজ"বাংলাদেশ জার্নাল। ২৩ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২০ 
  4. "সরকারি হচ্ছে ১৯৯ কলেজ"বাংলাদেশ প্রতিদিন 
  5. রংপুর জেলার ইতিহাস, সম্পাদনা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, ২০০০খৃ. পৃ. ৪৮৮।
  6. রংপুর জেলার ইতিহাস, সম্পাদনা পরিষদ, পৃ. ৪৮৮-৪৮৯।
  7. রঙ্গপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্পাদনা পরিষদ, পৃ. ৭৯-৮০।
  8. রঙ্গপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্পাদনা পরিষদ, পৃ. ৭৯।
  9. রংপুর জেলার ইতিহাস, সম্পাদনা পরিষদ, পৃ. ৪৮৯।
  10. রঙ্গপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্পাদনা পরিষদ, পৃ. ৮০।