খয়েরচক
খয়েরচক(বৈজ্ঞানিক নাম: Elymnias hypermnestra(Linnaeus))এক প্রজাতির মাঝারি আকারের প্রজাপতি। এদের উপরের ডানা গাঢ় বাদামী বর্ণের এবং ডানার কৌনিক প্রান্ত ঘেঁষে একটা সাদাটে ছোপ দেখা যায়। খয়েরচক 'নিমফ্যালিডি' পরিবারের।
খয়েরচক Common palmfly | |
---|---|
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
ডানা খোলা অবস্থায় | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | সন্ধিপদী |
শ্রেণী: | পতঙ্গ |
বর্গ: | লেপিডোপ্টেরা |
পরিবার: | Nymphalidae |
গণ: | Elymnias |
প্রজাতি: | E. hypermnestra |
দ্বিপদী নাম | |
Elymnias hypermnestra (লিনিয়াস, ১৭৬৩) |
আকার
সম্পাদনাখয়েরচকের প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৬০-৮০মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[১]
উপপ্রজাতি
সম্পাদনাভারতে প্রাপ্ত খয়েরচকের উপপ্রজাতিসমূহ হল-[২]
- Elymnias hypermnestra undularis Drury, 1773 – Wavy Common Palmfly
বিস্তার
সম্পাদনাবর্ণনা
সম্পাদনাপ্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিশদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-
পুরুষ
সম্পাদনাপুরুষ খয়েরচকের নিচের পিঠ গাঢ় খয়েরি বর্ণের। ডানার প্রান্তের দিকে হালকা খয়েরি এবং সাদা বর্ণের সূক্ষ্ম আঁচড় দেখা যায়। ডানার শীর্ষের কাছে সাদা তেকোনা দাগ থাকে। সামনের ডানার শীর্ষের কাছে নীল ছোপ এবং একটু ভিতর দিকে কয়েকটি নীল বিন্দুর সারি থাকে। পিছনের ডানার প্রান্তে সামান্য খয়েরি –কমলা রঙের পটি দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে ডানার জমির রঙের সঙ্গে ক্রমশ মিশে যায়। পটির মধ্যে একই রঙের কিন্তু তুলনায় গাঢ় কয়েকটি ছোপ থাকে।
স্ত্রী
সম্পাদনাস্ত্রী খয়েরচকের নিচের পিঠ পুরুষ খয়েরচক এর সাদৃশ্য কিন্তু রঙ অনেকটা ফ্যাকাশে।
আচরণ
সম্পাদনাএদের ডানা খুলে রোদ পোয়াতে দেখা যায় না[৩] তেমন তবে রোদে এদের ওড়াওড়ি করতে দেখা যায়। এরা একটানা বেশিক্ষণ ওড়ে না, ওড়ার খানিক পরেই কাছাকাছি গাছের পাতায় বসে পড়ে। এরা প্রায় দশ-পনেরো ফুট উচ্চতায় বসে থাকে।
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাডিম
সম্পাদনাডিমের বর্ণ সাদা এবং লিচুর শাঁসের মতো সজল ভাব দেখা যায়। এরা সাধারনত পাতার নিচের পিঠে ডিম পাড়ে। পছন্দসই একই গাছে বিভিন্ন পাতায় অথবা একই পাতায় একাধিক ফলকে একাধিক ডিম পাড়তে দেখা যায়।[৪]
শূককীট
সম্পাদনাখয়েরচকের শূককীটগুলি সবুজ বর্ণের তাতে হলুদের ছোঁয়া দেখা যায়। মাথায় দুটি রোঁয়াঅলা লালচে খয়েরি বর্ণের শিং থাকে। মাথাটি চ্যাপ্টা আকৃতির এবং ময়লা সাদা জমির উপর লালচে খয়েরি ছিট যুক্ত। শরীর দু'প্রান্ত বরাবর সরু এবং দেহের শেষাংশে দুটি সরু লালচে বাদামি বর্ণের লেজের মতো অংশ থাকে। দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর অনেকগুলি সরু হলুদ রেখা দেখা যায়। পিঠের মাঝখানে একজোড়া সমান্তরাল হলুদ রেখা আছে যার ওপর জায়গায় জায়গায় কালো এবং লাল বিন্দু আছে। শরীর জুড়ে রোঁয়া দেখা যায়। রোঁয়াগুলি স্বচ্ছ ধরনের। শূককীটগুলি কচি পাতার ধার থেকে খেতে শুরু করে এবং ক্রমশ পাতার ভিতর দিকে এগোতে থাকে। পাতার মধ্যশিরাটি অক্ষত রাখে। পাতার যেখনটায় বসে থাকে সেখানে হালকা রেশমি সুতোর প্রলেপ মাখিয়ে রাখে।
আহার্য উদ্ভিদ
সম্পাদনাএই শূককীট বিভিন্ন ধরনের পাম গাছের নারকেল Cocos nucifera, Calamus pseudo-tenuis, Calamus rotang, Calamus thwaitesii, Areca catechu, Phoenix loureiroi and Licuala sp.[৫] কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে।
মূককীট
সম্পাদনাখয়েরচকের মূককীট হলদেটে সবুজ বর্ণের। রৌদ্রে মনে হয় ফ্লুরোসেন্ট ধর্মী। শরীরের পিছন দিকটা পাতায় আটকিয়ে ঝুলে থাকে। সাধারনত মূককীট তৈরী হয় পাতার বেঁকে ঝুলে পড়া অংশের নিচের দিকে। মূককীটের বক্ষ অংশে একটা থ্যবড়া ঢিপির ওপর থেকে নিচের দিকে মুখ করা একটি লালচে গোলাপি রঙের কাঁটা দেখা যায়। শূককীটের পশ্চাৎবিন্দু থেকে পিঠের ওপর দিয়ে এই কাঁটা পর্যন্ত একটা রেখা দেখা যায়, হলুদ এবং লালচে গোলাপি আভাযুক্ত। একইভাবে আরও দুটো রেখা শরীরের পিছন বরাবর মাথায় পৌঁছেছে এবং এই রেখা বরাবর ছোট ছোট সরু কাঁটা দেখা যায়।
জীবনচক্রের চিত্রশালা
সম্পাদনা-
সংগমরত অবস্থায়
-
ডিম
-
ডিম
-
শূককীট এর প্রথম দশা
-
শূককীট এর প্রথম দশা
-
শূককীট এর পঞ্চম দশা
-
মূককীট
-
মূককীট থেকে সদ্য বের হওয়া পুরুষ খয়েরচক
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১৮৮।
- ↑ "Elymnias hypermnestra Linnaeus, 1763 – Common Palmfly"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ৭৯।
- ↑ Dāśagupta, Yudhājit̲̲̲̲̲̲a (২০০৬)। Paścimabaṅgera prajāpati (1. saṃskaraṇa. সংস্করণ)। Kalakātā: Ānanda। পৃষ্ঠা ১১৯–১২১। আইএসবিএন 81-7756-558-3।
- ↑ Kunte, K. (2006). Additions to known larval host plants of Indian butterflies. Journal of the Bombay Natural History Society 103(1):119-120