খন্দকার ফারুক আহমদ

খন্দকার ফারুক আহমদ (১ জানুয়ারি ১৯৪০ - ১১ জুলাই ২০০১) ছিলেন একজন প্রথিতযশা বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

খন্দকার ফারুক আহমদ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল, রাঙ্গামাটি জিলা স্কুলজগন্নাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। তার প্রিয় সংগীতশিল্পী ছিলেন মান্না দে। ওস্তাদ মিথুন দের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সংগীতেও তিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন।[১]

শিল্পীজীবনসম্পাদনা

জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়ন শেষে খন্দকার ফারুক আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তার বন্ধু পারভীন বেগম তার অনন্য সংগীতপ্রতিভা আবিষ্কার করেন এবং তাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ান। এরই মাধ্যমে তিনি কণ্ঠশিল্পী আনোয়ার উদ্দীন খানের নিকট হতে সংগীতজগতে প্রবেশের আশীর্বাদ লাভ করেন। নাট্যশিল্পী নাজমুল হুদাও তাকে অনুপ্রেরণা দেন। মুম্বাইয়ের এক অনুষ্ঠানে গান গাইতে গেলে শচীন দেববর্মণ তার গানের বিশেষ প্রশংসা করেন।[২]

১৯৬১ সালে ঢাকা রেডিওতে অডিশন দিয়ে তিনি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত চলচ্চিত্র "চাওয়া পাওয়া"-তে কণ্ঠ দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। আবির্ভাব, এতটুকু আশা, দীপ নেভে নাই, নীল আকাশের নীচে, জীবন সাথী, আলোর মিছিল, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, অশিক্ষিত সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন তিনি।[১]

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কোথায় যেন দেখেছি ছবিতে "রিকশাওয়ালা বলে তুমি কারে আজ ঘৃণা কর" গানটির জন্য জনসম্মুখে খন্দকার ফারুক আহমেদকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন। গানটি শ্রমজীবীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।[৩]

খন্দকার ফারুক আহমেদের কণ্ঠে ফজল-এ-খোদা রচিত ও ধীর আলী মিয়ার সুরারোপিত 'বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে কোন বধূয়া চলে যায়' গানটি আশির দশকে অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ গানটি বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ড করা হয়েছিল।

উল্লেখযোগ্য গানসম্পাদনা

  • নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা
  • আমি নিজের মনে নিজেই যেন গোপনে ধরা পড়েছি
  • নীল নীল আহা কত নীল
  • রিকশাওয়ালা বলে কারে তুমি আজ ঘৃণা করো
  • বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে কোন বধূয়া চলে যায়
বছর চলচ্চিত্র গান সুরকার গীতিকার সহশিল্পী
১৯৬৮ চোরাবালি "আর কত দূরে, উড়ে যাব ওরে" সত্য সাহা কাজী লতিফা হক একক
১৯৭০ ছদ্মবেশী "জেনো কত পথ ওগো চলেছি" সত্য সাহা সৈয়দ শামসুল হক সাবিনা ইয়াসমিন
দীপ নেভে নাই "আমার এ গান তুমি শুনবে" সত্য সাহা গাজী মাজহারুল আনোয়ার একক
জীবন থেকে নেয়া "ও আমার স্বপ্ন ঝরা" খান আতাউর রহমান খান আতাউর রহমান আব্দুল জব্বার, মাহমুদুন নবী, সাবিনা ইয়াসমিন, নিলুফার ইয়াসমিন
কোথায় যেন দেখছি "কোথায় তোমায় যেন দেখেছি" একক
১৯৭১ শেষ রাতের তারা "নাহয় কিচ্ছু ওগো বলো" গাজী মাজহারুল আনোয়ার একক
১৯৭৩ স্বপ দিয়ে ঘেরা "নীল নীল আহা কত নীল" সত্য সাহা গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাবিনা ইয়াসমিন
১৯৭৪ মালকা বানু "আমি জানতাম তুমি আইবা" নৃপেন চৌধুরী, আনোয়ার পারভেজ, সত্য সাহা অচিন্ত্য কুমার চক্রবর্তী সাবিনা ইয়াসমিন
১৯৭৬ জীবন সাথী "ওওও জীবন সাথী আমার" সত্য সাহা গাজী মাজহারুল আনোয়ার রুনা লায়লা
১৯৭৭ আমার প্রেম "আমি করো জন্য পথ চাই রবো" সত্য সাহা গাজী মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌসী রহমান
"প্রিয়তম একা একা চলে যেওনা" একক
১৯৭৯ যৌতুক "ঝড় নেই তবু দুচোখে যেন" নিজাম-উল-হক নিজাম-উল-হক একক
১৯৮১ মহানগর "যদি ঘোড়ার গড়ি আমার" সত্য সাহা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান একক
"বলো মুরগির আগে ডিম আইলো" সাবিনা ইয়াসমিন

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী খন্দকার ফারুক আহমদ-এর আজ ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী - নিরাপদ নিউজ"www.nirapadnews.com। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২১ 
  2. "খন্দকার ফারুক আহমেদ : শুধুই স্মৃতি"www.shomoyeralo.com 
  3. "কিংবদন্তি শিল্পী খন্দকার ফারুক আহমদ"। দৈনিক আজাদী। ১১ জুলাই ২০১৯। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]