খন্ডোবা

শিবের অবতার

খন্ডোবা (অপর নাম মার্তণ্ডভৈরব, মল্হারি বা মল্হার) হলেন একজন হিন্দু দেবতা। তাঁকে শিবের একটি রূপভেদ মনে করা হয়। ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলে, বিশেষত মহারাষ্ট্র রাজ্যে তাঁর পূজা প্রচলিত। খন্ডোবা হলেন মহারাষ্ট্র অঞ্চলের সর্বাধিক জনপ্রিয় কুলদেবতা (পারিবারিক দেবতা)।[১] এছাড়াও তাঁকে নির্দিষ্ট কয়েকটি যোদ্ধা, কৃষিজীবী বর্ণ, ধাঙড় সম্প্রদায় ও ব্রাহ্মণ (পুরোহিত) বর্ণের এবং সেই সঙ্গে উক্ত অঞ্চলের পার্বত্য ও বনাঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি শিকারী-সঞ্চয়ী উপজাতির পৃষ্ঠপোষক দেবতাও মনে করা হয়। খন্ডোবার কাল্টের সঙ্গে হিন্দু ও জৈন প্রথার একটি যোগসূত্র বিদ্যমান। এই কাল্টটি মুসলমান সহ বর্ণনির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়কে একত্রিত করেছে। খ্রিস্টীয় নবম ও দশম শতাব্দীতে একজন লৌকিক দেবতা থাকে শিব, ভৈরব, সূর্যকার্তিকেয়ের (স্কন্দ) বৈশিষ্ট্য-সমন্বিত একজন যৌগিক দেবতা হিসেবে খন্ডোবার পূজার বিবর্তন ঘটে। তাঁকে লিঙ্গের আকারে অথবা বৃষ বা অশ্বারোহী যোদ্ধার বেশে চিত্রিত করা হয়। খন্ডোবার পূজার প্রধান কেন্দ্রটি হল মহারাষ্ট্রের জেজুরি। খন্ডোবার কিংবদন্তিগুলি পাওয়া যায় মল্হারি মাহাত্ম্য গ্রন্থে এবং সেগুলি লোকসংগীতের মাধ্যমেও বর্ণিত হয়। এই কাহিনিগুলির বিষয়বস্তু খন্ডোবার হাতে মণি-মল্ল দৈত্যদের পরাজয় ও তাঁর বিবাহের কথা।

খন্ডোবা
খন্ডোবা ও মহালসা মণি-মল্ল দৈত্যগণকে বধ করছেন, একটি জনপ্রিয় ওলিওগ্রাফ, আনুমানিক ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ
সংস্কৃত লিপ্যন্তরKhaṇḍobā
কন্নড় লিপিಖಂಡೋಬಾ
দেবনাগরীखंडोबा
অন্তর্ভুক্তিশিবের অবতার
আবাসজেজুরি
মন্ত্রওঁ শ্রীমার্তণ্ডভৈরবায় নমঃ
অস্ত্রত্রিশূল, খড়্গ
বাহনঘোড়া
সঙ্গীমহালসাবানাই

নাম-ব্যুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম সম্পাদনা

"খন্ডোবা" নামটি এসেছে "খড়্গ" (যে অস্ত্র দ্বারা খন্ডোবা অসুর বধ করেন) এবং "বা" (বাবা) শব্দ দু’টি থেকে। তাঁর "খন্ডেরায়" নামটির অর্থ "রাজা খন্ডোবা"। অপর নাম "খন্ডেরাও"-এ একইভাবে "রাও" (রাজা) প্রত্যয়টি যুক্ত হয়েছে।

সংস্কৃত শাস্ত্রে খন্ডোবা মার্তণ্ডভৈরব বা সূর্য নামে পরিচিত। এই নামটির মধ্য দিয়ে সৌরদেবতা মার্তণ্ড ও শিবের উগ্র রূপ ভৈরবের সমন্বয় ঘটেছে। "মল্লারি" বা "মল্হারি" নামটি "মল্ল" ও "অরি" (শত্রু) শব্দ দু’টির সমন্বয়ে সৃষ্ট এবং সেই ক্ষেত্রে নামটির অর্থ দাঁড়ায় "[অসুর] মল্লের শত্রু"। মল্লারি মাহাত্ম্য গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে, মল্ল অসুরের সাহসিকতায় তুষ্ট হয়ে মার্তণ্ডভৈরব "মল্লারি" নাম গ্রহণ করেন।[২] ভিন্ন পাঠে এই নামটিই হয়েছে মলান্না (মল্লান্না) ও মৈলারা (মৈলার)।

কখনও কখনও খন্ডোবাকে চিহ্নিত করা হয় ধর্মপুরীর মুণীশ্বর, তেলঙ্গানার মল্লান্না, অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুনস্বামী এবং কর্ণাটকের মৈলারা হিসেবে। তাঁর অন্যান্য নামগুলি হল খন্ডু গব্দ, মহালসাকান্ত ("মহালসার স্বামী") ও জেজুরিকা বাণী।[৩]

মূর্তিতত্ত্ব সম্পাদনা

 
জেজুরির কাদেপাথরের খন্ডোবার পুরনো মন্দিরের গর্ভগৃহ। এই মন্দিরে খন্ডোবা তিনটি রূপে পূজিত হন: দুই স্ত্রী সহ খন্ডোবার প্রস্তরবিগ্রহ (উপরে), মহালসার মূর্তি সহ খন্ডোবার ধাতুবিগ্রহ (মধ্যে, মাল্যবিভূষিত) এবং খন্ডোবা ও মহালসার প্রতীকস্বরূপ দু’টি লিঙ্গ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Singh p.ix
  2. Sontheimer in Hiltebeitel p.314
  3. Sontheimer in Feldhaus p.115

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা