খতমে নবুয়ত আন্দোলন ১৯৭৪

১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে সংঘটিত একটি ধর্মীয় আন্দোলন

খতমে নবুয়ত আন্দোলন ১৯৭৪ হলো ১৯৭৪ সালের ২৯ মে কাদিয়ানী বা আহ্‌মদীয়াদের অমুসলিম বা কাফের ঘোষণার দাবিতে পাকিস্তানে শুরু হওয়া একটি আন্দোলন, যা ১৯৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে আহ্‌মদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। ইউসুফ বানুরীর নেতৃত্বে আলমি মজলিস তাহাফফুজ খতমে নবুয়ত প্রবল আন্দোলন শুরু করে, যাতে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম সহ আরও রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন অংশগ্রহণ করেছিল। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করেন। তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষ থেকে তাদের দাবির সপক্ষে যুক্তি প্রমাণ আহ্বান করেন। মুসলিমদের পক্ষে তাকি উসমানিসামিউল হক যৌথভাবে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান রচনা করেন। অবশেষে ১৯৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী কার্যকর হয়। তখন থেকে পাকিস্তানে কাদিয়ানী বা আহমদিয়ারা অমুসলিম হিসেবে পরিচিত। ১৯৫৩ সালে এরকম আন্দোলন হলেও তা সফল হয় নি।

খতমে নবুয়ত আন্দোলন ১৯৭৪
সংবিধান সংশোধনের পরের দিন খবরের প্রচ্ছদ
তারিখ২৯ মে ১৯৭৪ – ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪
অবস্থান
লক্ষ্যসমূহআহ্‌মদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণা
ফলাফলপাকিস্তানের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আহ্‌মদীয়ারা অমুসলিম ঘোষিত
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
নেতৃত্ব দানকারীগণ

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাকি উসমানি বলেন, "চেনাব নদীর তীরে কাদিয়ানী সম্প্রদায় রবওয়া নামে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন এ নগরে কেবল কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকজনই বসবাস করত। একবার ‘নাশতার মেডিকেল কলেজ মুলতান'-এর একদল শিক্ষার্থী এখানকার রেলস্টেশন দিয়ে যাচ্ছিল। কাদিয়ানীগণ তাদের উপর হামলা চালায়। তাতে বহু সংখ্যক লোকের প্রাণহানি ঘটে। চরম ধৃষ্টতা ও উস্কানিমূলক এ ঘটনায় সারাদেশে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে। পুনরায় তাদেরকে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করার দাবি জোরদার হয়ে ওঠে। হযরত মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মাদ ইয়ূসুফ বানূরী রহ. ‘মজলিসে তাহাফ্‌ফুজে খতমে নবুওয়াত'-এর আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। দেশের কোণায় কোণায় এ দাবির পক্ষে মিটিং-মিছিল হতে থাকে।"[১]

প্রস্তাব উত্থাপন সম্পাদনা

আন্দোলনের এক পর্যায়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ৩৮ জন সাংসদ এ দাবির অনূকূলে একটি প্রস্তাব পেশ করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন:[২]

  • মৌলভী মুফতী মাহমূদ
  • আব্দুল মুস্তফা আযহারী
  • শাহ্ আহমাদ নূরানী সিদ্দীকী
  • সায়্যিদ মুহাম্মাদ আলী রেজভী
  • আব্দুল হক (আকূড়া খটক)
  • চৌধুরী জহুর এলাহী
  • যফর আহমাদ আনসারী
  • আব্দুল হামীদ জেতুঈ
  • গফুর আহমাদ
  • সরদার শেরবাজ খান মাযারী
  • আহমাদ রেযা খান কাসূরী
  • মাহমূদ আ'যম ফারূকী
  • মাওলানা সাদরুশ শহীদ
  • জনাব উমর খান
  • মাখদূম নূর মুহাম্মাদ
  • জনাব গোলাম ফারূক
  • সরদার মাওলা বখ্শ সোমরো
  • সরদার শওকত হায়াত খান
  • হাজী আলী আহমাদ তালপুর
  • রাও খুরশীদ আলী খান
  • রঈস আতা মুহাম্মাদ খান
  • মিয়া মুহাম্মাদ যাকির কুরায়শী
  • গোলাম হাসান খান ধান্দলা
  • করমবখ্শ আ‘ওয়ান
  • মুহাম্মাদ নযীর সুলতান
  • মেহের গোলাম হায়দার ভারওয়ানা
  • মিয়া মুহাম্মাদ ইবরাহীম বার্ক
  • সাহেবযাদা সফিয়্যুল্লাহ
  • সাহেবযাদা নি‘আমাতুল্লাহ খান
  • শিনওয়ারী
  • মালিক জাহাঙ্গীর খান
  • আব্দুস সুবহান খান
  • আকবার খান মামান্দ
  • মেজর জেনারেল জামালদার
  • হাজী সালেহ খান
  • আব্দুল মালিক খান
  • খাজা জামাল মুহাম্মাদ কোরীজা

ঘটনাপ্রবাহ সম্পাদনা

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর সেটি বাস্তবায়নের জন্য দরকার ছিল সংবিধান সংশোধন। কারণ এই প্রস্তাবটি শুধুমাত্র একটি দাবির মূল্য রাখতো। জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় ইউসুফ বানুরী তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৩] পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এই বিষয়ে স্বীদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেন।[৪] ১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত উভয় পক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে কাটে। জেরা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াহইয়া বখতিয়ার।[৫] অবশেষে ১৯৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী কার্যকর হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. উসমানি, মুহাম্মদ তাকি (২০২১)। আমার জীবনকথা। মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আবুল বাশার কর্তৃক অনূদিত। বাংলাবাজার, ঢাকা: মাকতাবাতুল আশরাফ। পৃষ্ঠা ৩২১। আইএসবিএন 9789849173038। ২২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০২২ 
  2. উসমানি ২০২১, পৃ. ৩২২।
  3. উসমানি ২০২১, পৃ. ৩২৪।
  4. উসমানি ২০২১, পৃ. ৩২৭।
  5. উসমানি ২০২১, পৃ. ৩৪৩।