খগেন্দ্র চন্দ্র দাশ

খগেন্দ্র চন্দ্র দাশ হলেন ভারতের একজন বিশিষ্ট শিল্পদ্যোক্তা এবং ক্যালকাটা কেমিক্যাল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী।[১] তাঁর নেতৃত্বে এই কোম্পানি ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের একটি সর্বাধিক পরিচিত কোম্পানি হয়ে ওঠে। মার্গো (সাবান) এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি পণ্যের জন্য তাঁর নেতৃত্বাধীন এই কোম্পানি সুপরিচিত ছিল।[২]

খগেন্দ্র চন্দ্র দাশ
Khagendra Chandra Das, co-founder of Calcutta Chemical Company.jpg
খগেন্দ্র চন্দ্র দাশ
জন্ম
মৃত্যু১৯৬০ এর দশক
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারত
পেশাবাঙালি ব্যবসায়ী, স্বদেশী আন্দোলনকারী
পরিচিতির কারণক্যালকাটা কেমিক্যাল কোম্পানি

জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

কে.সি. দাস বাংলার এক সমৃদ্ধ বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা রায় বাহাদুর তারক চন্দ্র দাশ ছিলেন একজন বিচারক। তাঁর মাতা মোহিনী দেবী ছিলেন একজন কট্টর গান্ধীবাদী এবং স্বাধীনতা কর্মী।[৩]মোহিনী দেবী ছিলেন মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির সভাপতি। কে. সি. দাশের ভাইবোনদের মধ্যে ডাঃ প্রভাবতী দাশগুপ্ত ছিলেন হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।

শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি শিবপুর কলেজ (বর্তমানে ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান, শিবপুর) এর প্রভাষক হয়েছিলেন। এই সময়ে, বাংলায় ব্রিটিশবিরোধী ক্রিয়াকলাপে যথেষ্ট পরিমাণে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলে তিনি বিপ্লবী চিন্তাধারা ও কর্মবর্ধনের দ্বারা আলোকিত হয়ে কয়েকজন বিপ্লবীদের সঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হন। তাঁর পিতা, যিনি ব্রিটিশ ভারত সরকারের কিছু কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, জানতে পেরেছিলেন যে, তিনি যদি শীঘ্রই তাঁর ছেলেকে ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে এন্টেনা পারেন তাহলে অনতিবিলম্বে তাঁর ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হবে। তখন তিনি তাঁর ছেলেকে উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্য বিদেশ যেতে উৎসাহিত করেন। কে. সি. দাস, যিনি ব্রিটিশদের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি করেন, পরবর্তীতে তিনি আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য পারি দেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষাসম্পাদনা

আমেরিকাতেসম্পাদনা

দাশ ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর দ্য অ্যাভান্সমেন্ট অফ সায়েন্টিফিক ইন্ডাস্ট্রির বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করেন এবং সেখানে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে তিনি এবং এবং অপর ছাত্র এস. এম. বোস (পরবর্তীকালে ডাকব্যাক ওয়াটারপ্রুফের প্রতিষ্ঠাতা) পরবর্তীতে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন।[৪] দুজনেই ১৯১০ সালে রসায়নে ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[৫][৬] এই সময়ে, দাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় স্বাধীনতা কার্যক্রমের সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। সর্বোপরি তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা লীগের ক্যালিফোর্নিয়া অধ্যায়টি গঠন করেছিলেন এবং লালা হার দয়ালের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।

জাপানেসম্পাদনা

ভারতে ফিরে আসার আগে বোস ও দাস দুজনেই জাপানে আরো উচ্চশিক্ষার জন্য যান এবং সেখানেই তাদের প্রত্যেকের পরবর্তী ব্যবসায়গুলি নির্ধারণ করেন।

ক্যালকাটা কেমিক্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠাসম্পাদনা

দাশ, আর.এন. সেন এবং বি.এন. মৈত্র একসঙ্গে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা কেমিক্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতার ৩৫ পান্ডিতিয়া রোডের উপর এই কোম্পানির প্রধান দপ্তর ছিল এবং তিলজলায় একটি সহযোগী অফিস ছিল। স্বদেশপ্রেমী দাশের নেতৃত্বে সংস্থাটি স্বদেশী আন্দোলনের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি বুঝেছিলেন যে ব্রিটিশরা অন্যান্য শিল্পগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ছিল ওষুধ শিল্প।

জনপ্রিয়তাসম্পাদনা

টয়লেট পণ্যের উৎপাদনের জন্য এই কোম্পানি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, যার মধ্যে মার্গো (সাবান) ও নিম টুথপেস্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। দাশ এগুলির মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করেছিলেন যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ সেটি গ্রহণ করতে সক্ষম হন। এছাড়াও তিনি ল্যাভেন্ডার শিশির গুঁড়ো এবং কয়েকটি পণ্য তৈরি ও বিপণন করেছিলেন।

১৯৬০-এর দশকে দাশের মৃত্যুর সময় সংস্থাটি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সর্বাধিক পরিচিত এবং স্বীকৃত কোম্পানিতে পরিণত হয়েছিল। এটি শিল্প প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক যৌগ উইপাদন করার জন্যও পরিচিত ছিল।

তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র সমরেন্দ্র চন্দ্র দাশগুপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

ব্যক্তিত্বসম্পাদনা

কে.সি. দাস কলকাতার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আজীবন স্বদেশী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও তিনি ব্রিটিশবিরোধী মনোভাবাসম্পন্ন ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান থেকে ফিরে আসার পর থেকে তিনি কেবল খাদির পোশাক পরার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর চাকরি করা সম্পর্কে অনীহা থাকায় তিনি প্রথম থেকেই শিল্পদ্যোগী মনোভাব নিয়েই অগ্রসর হয়েছিলেন।[৭]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Kolkata's comeback brands"@businessline (ইংরেজি ভাষায়)। The Hindu Business Line। ২০২০-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪ 
  2. Singh, K. K. (২০০৯)। Neem, a Treatise (ইংরেজি ভাষায়)। I. K. International Pvt Ltd। আইএসবিএন 978-81-89866-00-6 
  3. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯কলকাতা: র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ৭১-৭২। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0 
  4. "San Francisco Call 17 January 1907 — California Digital Newspaper Collection"cdnc.ucr.edu। ২০২০-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪ 
  5. Dasgupta, Soumya (২০১৯-০৫-২৭)। "Bengal's Long Lost Entrepreneurial Spirit"Medium (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৩-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪ 
  6. "Bengal's Long Lost Entrepreneurial Spirit"www.scribbler.co। ৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৯ 
  7. "Bengal's Long Lost Entrepreneurial Spirit"128.199.169.58। ২০২০-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪