ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ভেজা এবং শুষ্ক জলবায়ু এক প্রকার জলবায়ু যা কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাসের এ ডব্লু (শুস্ক শীত ঋতুর সময়) এবং এ এস (শুষ্কতম মাস যখন বৃষ্টিপাতের পরিমান ৬০ মিলিমিটার (২.৩৬ ইঞ্চি)-রও কম এবং -বৃষ্টিপাতেরও কম)[১]:২০০–১ শ্রেণীর অন্তর্গত। এই পরবর্তী বৈশিষ্ট্যটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্ষার জলবায়ুর সাথে সরাসরি বিপরীত, যার শুষ্কতম মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬০ মিলিমিটারের চেয়ে কম তবে বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি।সংক্ষেপে, একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাভানা জলবায়ুতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমী জলবায়ুর চেয়ে কম বৃষ্টিপাত দেখা যায় বা শুকনো মরসুমে বেশি হয়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাভানা জলবায়ুতে, শুকনো মরসুম তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এবং বছরের বিভিন্ন সময় প্রায়শই খরার পরিস্থিতি বিরাজ করে। ক্রান্তীয় সাভনা জলবায়ু প্রায়শই ঘন জঙ্গলের পরিবর্তে আগাছাযুক্ত লম্বা ঘাসের বিস্তৃত তৃণভূমি দেখা যায়। এই লম্বা ও মোটা ঘাসের (যাকে বলা হয় সাভানা) প্রাচুর্যের জন্য এ ডব্লু বা এ এস জলবায়ুকে প্রায়শই ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু হিসাবে উদ্ধৃত করা হয়। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তৃণভূমিকে কোনো বিশেষ জলবায়ু দ্বারা চিহ্নিত করা যায় কিনা তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। অতিরিক্তভাবে, বড় গাছের উপস্থিতি ছাড়া খাঁটি বিশুদ্ধ সাভানার খোঁজ পাওয়া এখনো পর্যন্ত বিরল।
ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু প্রধানত ৪ প্রকারের দেখা যায়:
তুলনামূলকভাবে সমান সময়কালের স্বতন্ত্র শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং আর্দ্র বর্ষাকাল। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ বার্ষিক বৃষ্টিপাত বর্ষার সময় হয় এবং শুষ্ক মরসুমে খুব কম বৃষ্টিপাত হয়।
দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল এবং তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত বর্ষাকাল। এই সংস্করণে সাত বা ততোধিক শুকনো মরসুমের মাস এবং পাঁচ বা তার চেয়ে কম সময় আর্দ্র মরসুমের মাস। এই সংস্করণটির মধ্যেও বিভিন্নতা রয়েছে:
এই সংস্করণের একটি বিভাগে স্বল্প সময়ের বর্ষাকালে সারা বছরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান বৃষ্টিপাত হয় যা তাকে আধা-শুষ্ক জলবায়ুর থেকে আলাদা করে। এই প্রকার জলবায়ু সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি সাধারণত আধা-শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলের নিকটে অবস্থান করে।
এই সংস্করণের অপর একটি বিভাগে দীর্ঘ শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং খুবই স্বল্প সময়ের কিন্তু অত্যন্ত আর্দ্র বর্ষাকালের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।তবে জলবায়ুর এই প্রকরণের অঞ্চলগুলিতে বর্ষার সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়না এবং তাই তাজলবায়ুর এই বৈশিষ্টযুক্ত অঞ্চলগুলিকে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি জলবায়ুর অন্তর্গত করা সম্ভব হয়না।
দীর্ঘ সময়ের আর্দ্র বর্ষাকাল এবং তুলনামূলকভাবে স্বল্প সময়ের শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। এই সংস্করণে সাত বা তার বেশি মাস বর্ষাকাল এবং পাঁচ বা তার চেয়ে কম মাসে শুষ্ক গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।
শুষ্ক গ্রীষ্মকালে লক্ষ্যণীয় পরিমাণ বৃষ্টিপাত এবং তারপরে অতি বৃষ্টির বর্ষাকাল।
ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ুর সর্বাধিক প্রভাব দেখা যায় আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে। এছাড়াও মধ্য আমেরিকা, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর আমেরিকার কয়েকটি অঞ্চল ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি অঞ্চলও এই জলবায়ুর আওতায় পরে। ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু অঞ্চলগুলি বেশিরভাগ সময় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু অধ্যুষিত অঞ্চলের সীমানার বাইরে অবস্থান করে কিন্তু বিকল্পভাবে কিছু কিছু স্থানেও (যেমন, সান মার্কোস, এন্টিওকুইয়া, কলম্বিয়া) সাভানা জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায়, যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু সীমানার ভেতরে অবস্থিত। একইভাবে কলম্বিয়া-পানামা সীমান্তের উরবা উপসাগর থেকে ওরিনোকো নদী ব-দ্বীপ অবধি, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল (৪,০০০ কিমি বিস্তৃত)-এ দীর্ঘ শুকনো মরসুম(চরমতম অবস্থা হয় বিএসএইচ জলবায়ুর (নিচে দেখুন)) স্থায়ী হয় যার বৈশিষ্ট্যই হল অবিশ্বাস্য কম পরিমানের বৃষ্টিপাত, উদাহরণস্বরূপ, গুয়াজিরা, কোরো, পশ্চিম ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর প্রান্তের জলবায়ুর পর্যালোচনা করলে দু থেকে তিন মাসের হিসাবে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩০০ মিলিমিটারেরও কম। এই পরিস্থিতি ক্ষুদ্র অ্যান্টিলিস এবং বৃহৎ অ্যান্টিলিস -ও দেখা যায় যা ক্যারিবিয়ান বেষ্টনকারী শুস্ক বলয় গঠন করেছে। অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে (দক্ষিণ দিকে)-র দিকে এই শুস্ক মরসুমের স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে কম হয়, বিশেষত আমাজন নদীর অক্ষাংশে - যা নিরক্ষীয় রেখার ঠিক দক্ষিণে পূর্ব দিকে প্রবাহিত — এই অঞ্চলের জলবায়ু এ এফ প্রকৃতির। আন্দিজ -এর পূর্ব দিকে, শুষ্ক ক্যারিবিয়ান এবং সদা ভেজা অ্যামাজনের মধ্যবর্তী হচ্ছে অরিনোকো নদীর অববাহিকাস্থিত তৃণভূমি যা ল্যানোস বা সাভানাস নাম পরিচিত যা থেকে এই জলবায়ুর বিশেষ নামকরণ হয়েছে।
কখনও কখনও যেমন এ ডব্লু এর জায়গায় এ এস ব্যবহার করা হয় যখন শুকনো মরসুম সূর্যের উত্তরায়নের সময় এবং দিনের অবধি রাত্রিকালের থেকে দীর্ঘ হওয়ার সময় ঘটে যেমন যেমন হাওয়াইয়ের হোনোলুলুতে।[২] এটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের প্রভাবের কারণেও হতে পারে যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতকে হ্রাস করে। পূর্ব আফ্রিকার (মোম্বাসা, কেনিয়া, সোমালিয়া), শ্রীলঙ্কা (ট্রিনকোমালি) এবং উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের উপকূলীয় অঞ্চলে (ফোর্তালিজা থেকে নেটাল হয়ে ম্যাসেইয়াস পর্যন্ত) এই জলবায়ু পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই স্থানগুলিতে গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুর পার্থক্য এতটাই কম যে এ ডব্লু বা এ এস -এর পার্থক্য এড়ানো যায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ভেজা এবং শুকনো জলবায়ু রয়েছে এমন বেশিরভাগ জায়গায় শুকনো মরসুম সূর্যের দক্ষিণায়ন এবং সংক্ষিপ্ত দিনের সময়কালে আসে যা প্রধানত আন্তঃপ্রান্তিক রূপান্তর অঞ্চল বা ইন্টারট্রপিক্যাল কনভার্জেন্স জোনের মধ্যরেখা অনুসারে বার্ষিক স্থানান্তরের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাভানা জলবায়ু অন্তর্ভুক্ত শহরগুলির নাম