কোটা রামস্বামী

ভারতীয় ক্রিকেটার

কোটার রামস্বামী (উচ্চারণ; তামিল: கோட்டா ராமசுவாமி; জন্ম: ১৬ জুন, ১৮৯৬ - মৃত্যু: জানুয়ারি, ১৯৯০) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

কোটা রামস্বামী
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামকোটার রামস্বামী
জন্ম১৬ জুন, ১৮৯৬
মাদ্রাজ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যুআনুমানিক জানুয়ারি, ১৯৯০
অজ্ঞাত
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাব্যাটসম্যান, প্রশাসক
সম্পর্কএম ভেঙ্কটারমনজুলু (ভ্রাতা), এম বালিয়া (ভ্রাতা), সি রামস্বরূপ (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৫)
২৫ জুলাই ১৯৩৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৫ আগস্ট ১৯৩৬ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৫৩
রানের সংখ্যা ১৭০ ২,৪০০
ব্যাটিং গড় ৫৬.৬৬ ২৮.৯১
১০০/৫০ ০/১ ২/১২
সর্বোচ্চ রান ৬০ ১২৭*
বল করেছে ১,৬৯১
উইকেট ৩০
বোলিং গড় ৩৩.০৬
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/২৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/০ ৩৩
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মাদ্রাজ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিং করতেন কোটাহ রামস্বামী নামে পরিচিত কোটা রামস্বামী। ক্রিকেটের পাশাপাশি টেনিস খেলায়ও দক্ষতা ছিল তার। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেট ও টেনিস - এ দ্বৈত ক্রীড়ায় অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করেন।

শৈশবকাল সম্পাদনা

ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়ামোদী পরিবারে কোটা রামস্বামী’র জন্ম। দক্ষিণ ভারতের ক্রিকেটের জনক হিসেবে প্রায়শঃই বিবেচিত হয়ে আসা বুচি বাবু নায়ডু’র কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। তার অপর দুই ভাই, পুত্র ও চার ভাইপো’র সকলেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মায়ের একমাত্র ভাই কিশোর অবস্থায় মারা যাবার পর রামস্বামী মাতৃসম্পর্কীয় পিতামহের আদরযত্নে লালিত-পালিত হন। ফলশ্রুতিতে, অপর ভাইদের সাথে তার পারিবারিক নামের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।[১]

ওয়েসলি হাই স্কুল, ওয়েসলি কলেজ ও প্রেসিডেন্সিতে পড়াশুনো করেন। ওয়েসলিতে থাকাকালীন একটি খেলায় শেষ উইকেট জুটিতে দুই শতাধিক রানের সাথে নিজেকে জড়িত করেন ও দলকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। দলের সংগ্রহ ৫০/৯ থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নামেন ও ১৮৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তিনি ১৯১৯ সালে রামস্বামী কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং কৃষিবিদ্যা নিয়ে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি ক্রিকেট খেলার পাশাপশি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। ভারতে সবুজ বিপ্লবের সূচনাকারী কৃষি বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন তার ছাত্র ছিলেন।

টেনিসে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

১৯১৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯২০ সালের গ্রীষ্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রদের জন্যে উন্মুক্ত ডোহার্টি কাপ টেনিস প্রতিযোগিতার একক খেলায় শিরোপা জয় করেছিলেন। ঐ বছর তিনি অর্ধ-ব্লুধারী হন। কেমব্রিজের পক্ষে দ্বৈত খেলায় অবতীর্ণ হবার পর ১৯২১ সালে ব্লুধারী হন। হল্যান্ডের ঐ সফরে তিনি একক শিরোপা পান ও ভবিষ্যতের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার এস. এম. হাদী’র সাথে দ্বৈত জুটি গড়ে শিরোপা লাভ করেন।

১৯২২ সালে ড. এ. এইচ. ফাইজি ও এ. এ. ফাইজি’র সাথে ডেভিস কাপ প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। ব্রিস্টলে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডে রোমানিয়াকে পরাভূত করে তার দল। তবে, বেকেনহামে অনুষ্ঠিত খেলায় স্পেনের কাছে পরাজিত হয়। ড. ফাইজি’র সাথে কেবলমাত্র একবারই খেলতে নেমে উভয় খেলায় জয়ী হয়েছিলেন। ১৯২২ সালে রামস্বামী উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপের পুরুষ এককে খেলেন। তিনি দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। ১৯২৩ সালে ইংল্যান্ড সাউথ চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় গর্ডন লোকে তিন সেটে পরাজিত করে একক শিরোপা লাভ করেছিলেন।

মাত্র তিনজন ভারতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী দ্বৈত খেলোয়াড়দের অন্যতম তিনি। বাদ-বাকীরা হচ্ছেন - এম. জে. গোপালনযুজবেন্দ্র চাহাল। ১৯২৪ সালে কোটা রামস্বামী মাদ্রাজে ফিরে আসেন। কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী ২৪ বছর মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছিলেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯১৫-১৬ মৌসুম থেকে ১৯৪১-৪২ মৌসুম পর্যন্ত কোটা রামস্বামী’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। দীর্ঘদেহী ও বলিষ্ঠ গড়নের অধিকারী ছিলেন। বামহাতি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি। বামহাতে মুক্তভাবে শক্তিশালী মারে উইকেটের উভয়দিকেই বল ঠেলে দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। বোম্বে চতুর্দলীয় ও পঞ্চদলীয় প্রতিযোগিতায় হিন্দু দলের পক্ষে খেলতেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন কোটা রামস্বামী। ২৫ জুলাই, ১৯৩৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ১৫ আগস্ট, ১৯৩৬ তারিখে ওভালে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৩৬ সালে ৪০ বছর ৩৭ দিন বয়সে ইংল্যান্ডের মাটিতে দুই টেস্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারতের দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলন কোটা রামস্বামী। পরবর্তীকালে স্বীয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে উল্লেখ করেছিলেন যে, ক্রিকেট বহির্ভূত কারণে তাকে দলে নেয়া হয়েছিল। তবে, নিজের স্বর্ণালী সময়ে অভিষেক টেস্টে ৪০ ও ৬০ রান তুলেন। অভিষেক টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

ওভালের চূড়ান্ত টেস্টে আরও দুইবার মূল্যবান অবদান রেখেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ২৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৪১ রান তুলে এ সিরিজে ৫৬.৬৬ গড়ে ১৭০ রান তুলেন। ঐ সফরে তাকে বিস্ময়করভাবে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে, সামগ্রীকভাবে তিনি দূর্দান্ত খেলেছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় ৩০.৭০ গড়ে ৭৩৭ রান তুলেন। এছাড়াও, টেস্ট গড়ে দলের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় বিজয় মার্চেন্ট, মুশতাক আলীসি. কে. নায়ডু’র তুলনায় ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক ঘটে তার।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে স্বীয় টেস্ট গড়কে ৫৬তে নিয়ে যান। ১৯২৬-২৭ মৌসুমে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে হিন্দু দলের সদস্যরূপে খেলেন। এছাড়াও, ১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে জ্যাক রাইডারের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস একাদশ দলের বিপক্ষে ৮৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

অবসর সম্পাদনা

এ দুই টেস্টে অংশগ্রহণ শেষে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনেরও ইতি ঘটে। তবে, রঞ্জী ট্রফি প্রবর্তনের পর থেকে বেশ কয়েক বছর মাদ্রাজ দলের অন্যতম তারকা খেলোয়াড় ছিলেন।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ষাট বছর পূর্তির পূর্বে ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে ভারতের প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারতীয় দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেছিলেন তিনি। তার রচিত ‘র‍্যাম্বলিংস অব এ গেমস এডিক্ট’ শিরোনামীয় গ্রন্থটি ভারতীয় ক্রিকেটের শুরুরদিকের অন্যতম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন কোটা রামস্বামী। রামস্বরূপ ও লক্ষ্মণস্বরূপ নামীয় দুই পুত্র এবং সান্ত্বনা দেবী নাম্নী এক কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, রামস্বরূপ তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জানুয়ারি, ১৯৯০ সালে ৯৩ বছর বয়সে কোটা রামস্বামী’র দেহাবসান ঘটে। ১৫ আগস্ট, ১৯৮৫ তারিখে চেন্নাইয়ের অদ্যার থেকে সকালে গৃহত্যাগ করেন ও আর বাড়ি ফিরে আসেননি।[২] মাঝে-মধ্যেই তাকে দেখার কথা গুজব আকারে ছড়িয়ে পড়তো। উইজডেনে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে খুব সম্ভবতঃ মৃতরূপে তালিকাভূক্ত করে।[২] কিন্তু, ক্রমাগত তার ভাগ্যের বিষয়ে সন্দিহান হওয়ায় ১৯৯২ সালে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। তবে, সাম্প্রতিক সংস্করণগুলোয় তার নামের পাশে মৃত্যু অজানা হিসেবে লেখা হচ্ছে।

বিবিধ সম্পাদনা

রামস্বামী’র পারিবারিক নামকে কোটা, কোটাহ ও কোটার নামে লেখা হয়েছে। তন্মধ্যে, কোটা নামটিই সর্বাধিক প্রচলিত। অত্র নিবন্ধ কোটা নামে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, রামস্বামী তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে কোটাহ ব্যবহার করেছেন।[১] ক্রিকেটআর্কাইভে সাম্প্রতিক সময়ে রামস্বামী’র বিষয়ে পরিমার্জন করেছে ও মৃত্যুর মাস হিসেবে জানুয়ারি, ১৯৯০ সালকে নথিভূক্ত করেছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Cotah" 
  2. "Long Tom"ESPN Cricinfo। ১৬ জুন ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৭ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা