ডাঃ কৃষ্ণধন ঘোষ (কেডি ঘোষ নামেও পরিচিত) (১৮৪৪-১৮৯২) একজন বাঙালী ডাক্তার যিনি ব্রিটিশ ভারতের বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পৈতৃক নিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোন্নগর[১] তিনি কলকাতা থেকে ডাক্তারি পাস করে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা নেন। তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[২] কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি অধুনা বাংলাদেশের রংপুর ও খুলনা জেলায় অতিবাহিত করেন। খুলনা শহরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার নামে খুলনা শহরের প্রধান একটি সড়কের নামকরণ করা হয় কেডি ঘোষ সড়ক। বিপ্লবী ও ঋষি শ্রী অরবিন্দ ঘোষ[৩] ও ‘অগ্নিযুগের সাগ্নিক পুরোহিত’ বারীন্দ্রকুমার ঘোষ[৪] তার দুই সন্তান।

কৃষ্ণধন ঘোষ
ড. কে.ডি. ঘোষের সাথে তাঁর স্ত্রী স্বর্ণলতা দেবী এবং চার সন্তান: বাম ডান থেকে: বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, সরোজিনী, শ্রী অরবিন্দ এবং মনমোহন ঘোষ
জন্ম১৮৪৪
মৃত্যু১১ নভেম্বর ১৮৯২(1892-11-11) (বয়স ৪৭–৪৮)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয়
পেশাডাক্তারী
পরিচিতির কারণচিকিৎসক, সমাজসেবক
দাম্পত্য সঙ্গীস্বর্ণলতা দেবী
সন্তানশ্রীঅরবিন্দ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, সরোজিনী, এবং মনমোহন ঘোষ

ব্যক্তিজীবন সম্পাদনা

কৃষ্ণধন ১৮৪৪ সালে পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কোন্নগর ৷ তিনি এই কোন্নগর এর প্রাচীন ঘোষবংশের সন্তান৷[৫] তাঁর পিতার নাম ছিলো কালীপ্রসাদ (অথবা কালীচরণ) যিনি কোলকাতা থেকে আট মাইল দূরে হুগলী জেলার কোন্নগরের বসবাস করতেন। এরপরে কর্মজীবন কাটান পাটনায় যেখানে কৃষ্ণধন জন্মগ্রহণ করেন।[৬]

১৮৫৮ সালে কোন্নগরের উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ঘোষ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর চার বছর পর কলকাতা মেডিকেল কলেজে চতুর্থ বর্ষে পড়া অবস্থায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত রাজনারায়ণ বসুর জ্যেষ্ঠা কন্যা স্বর্ণলতা দেবীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৮৬৯ সালে ডাঃ ঘোষ ইংল্যান্ড যান এবং স্কটল্যান্ডের এ্যাবার্ডিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেসময়কার দুর্লভ এম.ডি (ডক্টর অব মেডিসিন) ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি প্রথম বাঙালি যিনি এম.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

ঘোষ বিলেত থেকে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে রংপুর জেলার সিএমও (চীফ মেডিকেল অফিসার) হিসাবে যোগ দেন। ১৮৭২ সালে জেলা শহর রংপুর থেকে তৎকালীন মহকুমা শহর খুলনায় বদলি হয়ে আসেন। এই বছরেই কলকাতায় স্বর্ণলতা দেবীর এক বান্ধবীর বাড়িতেই ১৫ আগস্ট শ্রীঅরবিন্দের জন্ম হয় এবং তার অব্যবহিত পরেই কে ডি ঘোষ সপরিবারে খুলনায় চলে আসেন। ১৮৮২ সালে খুলনা মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হবার পর ১৮৮৮ সালে ডাঃ কৃষ্ণধন ঘোষ খুলনা পৌরসভার সরকার-মনোনীত চেয়ারম্যান হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সে দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। খুলনার এই নতুন মর্যাদার ফলশ্রুতিতে ডাঃ ঘোষ সিএমও থেকে সিভিল সার্জন পদে অভিষিক্ত হন।

মৃত্যু সম্পাদনা

ডা. ঘোষ ১১ নভেম্বর ১৮৯২ সালে খুলনা শহরে মৃত্যুবরণ করেন।

সমাজসেবা সম্পাদনা

পৌর এলাকার ভৌত কাঠামো, বিশেষ করে রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য দক্ষ ও বলিষ্ঠ শ্রমিক এতদাঞ্চলে সহজলভ্য ছিল না সেদিন। এই সমস্যার সমাধানে ডাঃ ঘোষ সুদূর বিহার অঞ্চল থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু আদিবাসী পরিবারকে খুলনায় নিয়ে আসেন। এরা পরবর্তীতে এই অঞ্চলে ‘বুনো’ নামে পরিচিতি পায়। কথিত আছে পথ্য হিসাবে গরুর দুধ সংস্থানে অক্ষম দরিদ্র জনের অসহায়ত্ব মোচনে তিনি খুলনায় আশি তোলার পরিবর্তে একশত কুড়ি তোলায় সের-এর প্রচলন করেন।

কেডি ঘোষের নামে রংপুরের কে ডি ক্যানাল (যা পরবর্তীকালে সংস্কার করে নামান্তরিত হয়েছে) এবং খুলনার কে ডি ঘোষ রোড নামকরণ করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ঋষি অরবিন্দ, অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বাস পাবলিশিং হাউস, কলিকাতা, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৬
  2. "ডাঃ কৃষ্ণধন ঘোষ নামে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন"। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৮ 
  3. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=ঘোষ,_অরবিন্দ
  4. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=ঘোষ,_বারীন্দ্রকুমার
  5. ঋষি অরবিন্দ, অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বাস পাবলিশিং হাউস, কলিকাতা, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৬
  6. "Personalia / Krishna Dhan Ghose"www.aurobindo.ru [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]