কুরআনের সমালোচনা

কুরআন সম্পর্কিত বিতর্ক
এটি একটি পরীক্ষিত সংস্করণ, যা ১১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে পরীক্ষিত হয়েছিল।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মতে কুরআন ইসলামের প্রধানতম ধর্মগ্রন্থ এবং পুরো নির্ভুল কিতাব। এটি বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ এর উপর অবতীর্ণ হয় বলে মুসলিমগণ বিশ্বাস করেন। ইসলামের সকল আইনের মূল উৎস এবং প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কুরআনের অবস্থান সর্বাগ্রে। ইসলামের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, কুরআন সকল প্রকার বিতর্ক, সন্দেহ, সংশয় ও ত্রুটির ঊর্ধ্বে। তবে, অবতরণের পর থেকেই সর্বযুগেই বিরুদ্ধবাদীরা কুরআনের বিভিন্ন সমালোচনা করে আসছেন। কুরআন সংরক্ষণে বিশুদ্ধতা, ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনায় বাইবেলের নবীদের সাথে সাদৃশ্য, কুরআনে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের বিশুদ্ধতা, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, কুরআনে প্রদত্ত বিধি-বিধান ও কুরআনের বর্ণিত নৈতিক মূল্যবোধের মানদণ্ড প্রভৃতি নানা বিষয় সমালোচনার মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

ঐতিহাসিক বিশুদ্ধতা

সমালোচনার বিষয়

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ধর্ম এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ফ্রান্সিস পিটারস এর মতে,

"ঐতিহাসিকদের নিকট কুরআন পর্যালোচনার ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হচ্ছে এর ঐতিহাসিক বিশুদ্ধতা। যদিও মুসলিমদের নিকট কুরআন মহান ঈশ্বরের বাণী হিসেবে স্বীকৃত, নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের জন্য একে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পর্যালোচনা ও সমালোচনা অনুচিত ও অধিকার বহির্ভূত। ঐতিহাসিকগণের কাছে মুখ্য বিষয় হওয়া উচিৎ যে, কুরআন একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা সপ্তম শতকে মক্কায় মুহাম্মাদ কর্তৃক প্রচারিত হয়েছিল। এটি অবশ্য কোন লিখিত পাণ্ডুলিপি ছিল না। আমাদের কাছে যে কুরআনের অনুলিপি আছে, তা খলিফা উসমান এর নির্দেশে প্রথম সংকলন করা হয়। উসমানের পূর্বে কুরআনের যে সব আংশিক পাণ্ডুলিপি ছিল, সেগুলোর সাথে উসমান কর্তৃক সংকলিত পাণ্ডুলিপি খুব একটা পার্থক্য দেখা যায় না। তবে উসমানীয় সূত্রগুলো ভাঙা ভাঙা, এবং সে কারণে হতে পারে, তার সময়ে সংকলিত পাণ্ডুলিপিতে একটি বড় অংশ হয়তো সংযোজন করা হয়েছে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কিছু আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে। তাই কেউ কেউ, যারা উসমানের আমলে সংকলিত কুরআনের অনুলিপির বিভিন্ন অংশের তথ্যসূত্র বা সনদ বা নবীজী থেকে কোন যোগসূত্র খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা অভিযোগ তুলেছেন যে, কুরআনের মূল পাণ্ডুলিপির সাথে সংকলিত বর্তমান পাণ্ডুলিপির মধ্যে গরমিল রয়েছে।"[][যাচাই প্রয়োজন]

মুসলিম সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামের অনুসারীদের মতে, কুরআন সংকলন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

মহানবী মুহাম্মাদের বয়স যখন চল্লিশ বছর, তখন থেকে কুরআন অবতরণ শুরু হয়। এটি ছিল ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ। এরপর সুদীর্ঘ প্রায় ২২ বছর যাবৎ এর অবতরণ অব্যাহত থাকে এবং ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ হয়। যখনই কুরআন নাজিল হতো, মুহাম্মাদ এবং তার অনুসারীবৃন্দ তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। প্রাথমিকভাবে, কুরআনের নাজিলকৃত অংশে মুখস্থকরণের মাধ্যমে তা সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে, লিখনীর মাধ্যমে তা হিফাজতের ব্যবস্থা করা হয়।

এভাবে, মুহাম্মাদের মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত কুরআন নবীজীর সহচরদের দ্বারা মুখস্থ ও লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। নবী মুহাম্মাদ তার জীবনের শেষ রমজান মাসে সম্পূর্ণ কুরআন ধারাবাহিকভাবে ফিরিশতা জিবরাঈল এর কাছে থেকে শুনে নেন এবং সম্পূর্ণ কুরআন তিনি নিজেও জিবরাঈল কে পাঠ করে শোনান। এতে পুরো কুরআনের বিন্যাসের চূড়ান্ত প্রতিরূপ স্পষ্ট হয়ে যায়। নবী মুহাম্মাদের তিরোধানের পর ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর এর সময়ে অহি লিখক জায়েদের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ কুরআনের একটি লিখিত পান্ডুলিপি তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে তৃতীয় খলিফা উসমান এর সময় পুনরায় সকল সাহাবীর পরামর্শ, তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে কুরআনের চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হয় এবং এই পাণ্ডুলিপি থেকে আরো সাতটি অনুলিপি প্রস্তুত করে সাতটি প্রদেশে প্রেরণ করে দেয়া হয়। কুরআন সংকলনের কাজে এই মহান অবদানের জন্য উসমানকে 'জামেউল কুরআন' বা 'কুরআন একত্রকারী' বলে অভিহিত করা হয়।

বৈজ্ঞানিক অসংগতিসমূহ

সমালোচনাকারীগণ কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন বক্তব্য ও ঘটনার বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা যাচাই করার প্রয়াস পান। আধুনিক যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ বলে, বর্তমান শতকে এসে কুরআনকে বৈজ্ঞানিক অসঙ্গগতির অভিযোগ তোলা হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জ্যোতির্বিদ্যা

ভূ-কেন্দ্রিক মতবাদ

কুরআনের সমালোচনাকারীদের অভিযোগের মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে, কুরআনে ভূ-কেন্দ্রিক মতবাদের প্রতিফলন হয়েছে। আগে মনে করা হতো, পৃথিবী হচ্ছে সৌরজগতের কেন্দ্র। পৃথিবী স্থির; সূর্য, চন্দ্রসহ সকল প্রকার গ্রহ-উপগ্রহ ও জ্যোতিষ্কমণ্ডলি এই স্থির পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে এ মতবাদ ভুল প্রমাণিত হয় এবং নিকোলাস কোপারনিকাসের সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ গৃহীত হয়।

কুরআন প্রচারের সময় সপ্তম শতাব্দীতে টলেমির ভূ-কেন্দ্রিক মতবাদ প্রচলিত ছিল। বাস্তব চোখেও এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পৃথিবীর চারিদিকে সূর্য ঘোরে, এবং পৃথিবী নিজে স্থির। তাই, মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থে কুরআনে চন্দ্র ও সূর্য গতিশীল এ কথা বারংবার বলা হলেও পৃথিবী যে গতিশীল তার উল্লেখ পাওয়া যায় না।

তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। সূর্য তার নির্ধারিত অবস্থানের দিকে সন্তরণ করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। (কুরআন, ৩৬ঃ ৩৭-৪০)

তবে, কুরআনের সমালোচনার বিপরীতে মুসলিম ব্যাখ্যাকার ও আধুনিক ভাষ্যকাররা উপর্যুক্ত আয়াতের ভিন্নতর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। জাকির নায়েক কিংবা আহমেদ দিদাত এবং এমন আরো প্রাজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিগণ বিজ্ঞানের আলোকে কুরআনের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে সমালোচকগণের বক্তব্যের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ভূ-কেন্দ্রিক মতবাদ বিষয়ক অভিযোগ খণ্ডনে মুসলিমদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়।

প্রথমত, পৃথিবী স্থির এবং সৌরজগতের কেন্দ্র, ফলে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে- এমন কথা কুরআনে সরাসরি বলা হয়নি।

দ্বিতীয়ত, কুরআনে এমন অনেক আয়াত আছে, যা থেকে বোঝা যায় পৃথিবী গতিশীল। যদি ধরেও নেয়া যায় যে, কুরআনে পৃথিবীর গতি নিয়ে কিছু বলা হয় নি, তবুও তা ভুল হতে পারে না। কারণ, কুরআন বিজ্ঞানের কিতাব নয় যে, এখানে সব তথ্যই পুংখানুপুংখরূপে থাকতে হবে।

তৃতীয়ত, কুরআনে সূর্যের গতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও বলা হয় নি পৃথিবীর চারিদিকে সূর্য গতিশীল।

চতুর্থত, কুরআনে সূর্যের জন্য একটি নির্ধারিত গন্তব্যস্থানের কথা বলা হয়েছে। বুকাইলি বলেন, এ ধারণা বিজ্ঞান বিরোধী হতে পারে না। কারণ, বিজ্ঞানেও স্বীকার করা হয়েছে, আমাদের সূর্য তার পুরো সৌরজগত সহ একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ গন্তব্যস্থানের নামও বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই দিয়েও ফেলেছেন, Solar Apex বা সৌরশীর্ষ।

সূর্যের উদয়াচল ও অস্তাচল

কুরআনে বর্ণিত হয়েছেঃ

অবশেষে তিনি (যুলকারনাইন) যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌছলেন...... (কুরআন, ১৮ঃ৮৬)

অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন...... (কুরআন, ১৮ঃ৯০)

কোনো কোনো মুসলিম পন্ডিতের মতে, অস্তাচলের অর্থ হলো জুলকারনাইন পশ্চিম দিকে দেশের পর দেশ জয় করতে করতে স্থলভাগের শেষ সীমানায় পৌঁছে যান, এরপর ছিল সমুদ্র।[]

অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্নরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি। (কুরআন, ১৮ঃ৯০)

মুসলিম ব্যাখ্যাকারগণ উপর্যুক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুরআনের আয়াতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর আভিধানিক ও ব্যাকরণগত বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে অভিযোগ খণ্ডন করে থাকেন।

এখানে 'সূর্যের অস্তাচল' অনুবাদটি করা হয়েছে আরবি 'মাগরিব' শব্দ থেকে। 'মাগরিব' শব্দটি দ্বারা পশ্চিম দিক (পাশ্চাত্য) বুঝানো হয়। অন্যদিকে, সূর্যের উদয়াচল শব্দটি আরবি 'মাতলিয়াউস শামস' এর অনুবাদে করা হয়েছে, যার পরোক্ষ উদ্দেশ্য পূর্বদিক (প্রাচ্য) বুঝানো। মূলত, জুলকারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ, পরাক্রমশালী, ভুবনজয়ী সম্রাট। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সব দিক জয় করে ফেলেছিলেন। পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব ছিল তার ক্ষমতার অধীন। এ বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে আলোচ্য আয়াতগুলোতে।

মূলত, ভাষাগতভাবে বোঝা ও বোঝানোর সুবিধার্থে 'উদয়াচল' ও 'অস্তাচল' শব্দগুলো প্রায় ভাষাতেই প্রচলিত। আমরা যখন বলি, 'সূর্যোদয়ের দেশ জাপান', তখন কিন্তু এটা বোঝানো হয় না, যে জাপানের ভূখণ্ড চিরে সূর্যোদয় ঘটে। বরং এ কথার অর্থ এই যে, জাপান পৃথিবীর পূর্বভাগে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

জাকির নায়েকের মতে, ব্যাকরণগতভাবে, এই আয়াত দুটোতে সূর্যের উদয় ও অস্ত সম্বন্ধে যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছে, তা ইসমে যরফ (স্থান বা সময়বাচক বিশেষ্য) এর শব্দ। ফলে সূর্যের অস্তাচল বলতে 'মাগরিব' নামে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার অর্থ যেমন বৈয়াকরণিকভাবে 'সূর্য অস্ত গমনের স্থান বা অস্তাচল' হতে পারে তেমনি, 'সূর্য অস্ত গমনের সময় তথা সান্ধ্যকাল' বোঝাতেও পারে। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই 'মাগরিবের নামায' বলে যে নামায প্রচলিত আছে, তা দ্বারা সূর্যের অস্তাচলের নামায বোঝানো হয় না, বরং সান্ধ্যকালীন নামায বোঝায়।

তাই, উপর্যুক্ত আয়াত দুটোতে ব্যবহৃত 'মাগরিব' ও 'মাতলিয়া' এর অর্থ হতে পারে, 'সূর্যাস্তের সময়' এবং 'সূর্যোদয়ের সময়'।

কুরআন সংরক্ষণে সংশয়

বিরুদ্ধবাদীদের সমালোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কুরআনের প্রামাণিকতা এবং মৌলিকত্ব। নবী মুহাম্মাদের সময়ে যে কুরআন তিনি প্রচার করে গেছেন, তা থেকে অনেক আয়াত পরবর্তীতে হারিয়ে গেছে অথবা নতুন করে যোগ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এ দাবির প্রেক্ষিতে ইসলামি আইনের দ্বিতীয় উৎস হাদিস শাস্ত্র, তাফসীর ও ইতিহাসের দলিল থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়।

এসব অভিযোগের একটি হচ্ছে, কুরআনের কিছু আয়াত চিরতরে হৃত হয়ে যাওয়া। সুনানে ইবনে মাজাহ এ বিবৃত তথ্যানুসারে, কুরআনের কিছু আয়াত সংবলিত পাতা ছাগল এসে খেয়ে ফেলায় ঐ আয়তগুলো চিরতরে হারিয়ে যায় এবং পরে উসমান কর্তৃক সংকলিত কুরআনের অনুলিপিতেও এই আয়াতগুলো উহ্য করা হয়। এ দাবি কুরআনের সংরক্ষণকে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সুনানে ইবন মাজাহ এ বর্ণিত আছে:

আয়িশা থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, “রজমের ও বয়স্কদের দশ ঢোক দুধপানের আয়াত নাযিল হয়েছিল এবং সেগুলো একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রাসুলুল্লাহ ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে।” (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নং ১৯৪৪)

ইসলামি উসূলুল ফিকহ বা মূলনীতি অনুসারে, কোন দাবি পেশ করতে হলে সবার আগে যাচাই করা জরুরি যে এর দলিল হিসাবে পেশকৃত রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধতা কতটুকু।

মুহাদ্দিস বা হাদিস বিশারদদের মতে উপর্যুক্ত হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রশ্নাতীত নয়। এই রেওয়ায়েতের একজন বর্ণণাকারী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক এটি বর্ণণা করছেন عن(থেকে) শব্দ ব্যবহার করে যে কারণে বর্ণণাটি যয়িফ(দুর্বল) হয়ে গেছে। কেননা তিনি একজন তাদলিসকারী। যেসব বর্ণণাকারী তাদের ঊর্ধ্বতর বর্ণণাকারীর পরিচয়ের ব্যাপারে ভুল তথ্য দেন তাদেরকে তাদলিসকারী বলা হয়।[] [মুফতি তাকি উসমানী, ‘তাকমালা ফাতহুল মুলহিম’ ১/৬৯, দারুল আহইয়া আত তুরাছুল ‘আরাবী, বৈরুত]

মুসনাদ আহমাদেও একই রেওয়ায়েত পাওয়া যায়। শায়খ শু’আইব আরনাউত(র) তাঁর মুসনাদ আহমাদের তাহকিকে একে যঈফ(দুর্বল) বলে মন্তব্য করেছেন।[]

মুসলিম ব্যাখ্যাকারগণ আরো দাবি করেন যে, এই সনদ কোন উপায়েই কুরআনের বিশুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। এই রেওয়ায়েতটি যদি সহীহও হত, তাহলেও এ দ্বারা প্রমাণ হত না যে কুরআন সংরক্ষিত নেই।

রজমের বিধান সংক্রান্ত কথিত আয়াত

মুসলিম ভাষ্যকারগণ বলেন, রেওয়ায়েত অনুসারে দাবিকৃত ‘হারিয়ে যাওয়া’ আয়াত দুটির একটি আয়াত ছিল রজমের ব্যাপারে। কিন্তু অন্য একাধিক বর্ণনাতে দেখা যায়, রজমের ব্যাপারে হুকুম নাজিল হয়েছিল কিন্তু নবী সেটিকে কুরআনের অংশ হিসাবে লিপিবিদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে এটি কুরআনের অবিচ্ছেদ্য কোন অংশ ছিল না। বর্ণণাগুলো এরূপ:

ক)

কাসির বিন সালত থেকে বর্ণিত। জায়েদ ইবনে সাবিত বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, “যখন কোন বিবাহিত পুরুষ অথবা মহিলা ব্যভিচার করে, তাদের উভয়কে রজম কর।”(এটি শুনে)আমর বলেন, “যখন এটি নাজিল হয়েছিল, আমি নবী এর নিকট আসলাম এবং এটি লিপিবদ্ধ করব কিনা তা জানতে চাইলাম। তিনি তা অপছন্দ করলেন।” []

খ) এই আয়াতের ব্যাপারে কাসির বিন সালত বলেনঃ তিনি (কাসির), জায়েদ ইবনে সাবিত ও মারওয়ান বিন হাকাম আলোচনা করছিলেন কেন একে কুরআনের মুসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। উমর ইবনুল খাত্তাব তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং তাদের আলোচনা শুনছিলেন।তিনি বললেন যে তিনি এ ব্যাপারে তাদের থেকে ভালো জানেন। তিনি তাদের বললেন যে উমার রাসুলুল্লাহএর নিকট গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন,

হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে রজমের আয়াতটি লিখে দেওয়া হোক। নবী মুহাম্মাদ বললেন, 'আমি তা করতে পারব না।' "[]

উপর্যুক্ত দলিল থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি ছিল সেই সমস্ত মানসুখ বা রহিত আয়াতের একটি যা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে নাজিল হয়েছিল। এটি পরে রহিত হয়েছে। কাজেই সাহাবীগণ বা উম্মুল মুমিনীনগণ এই আয়াত ‘হারিয়ে ফেলেছেন’ তা নিতান্তই অসার কথা।

দশ বার ও পাঁচ বার দুগ্ধ পানের বিধান সংক্রান্ত কথিত আয়াত

দ্বিতীয় যে আয়াত “হারিয়ে গেছে” বলে দাবি করা হয়, সেটি বয়স্কদের দশ ঢোক দুধপান সংক্রান্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটিও মানসুখ বা রহিত আয়াত।সহীহ মুসলিমে এ সংক্রান্ত একটি বর্ণণা নিম্নরূপঃ

আয়িশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে নাযিল হয়েছিল যে, দশবার দুধপানে বিবাহ হারাম হওয়া/মাহরাম হওয়া সাবিত হয়। তারপর তা পাঁচবার দুধপান দ্বারা রহিত হয়ে যায়। তারপর রাসুলুল্লাহ ইন্তিকাল করেন আর সেগুলো তো কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৩৪]

পাঁচবার দুধপানের বিধানটিও একটি মানসুখ বা রহিত বিধান। এ ব্যাপারে উম্মুল মু’মিনিন তথা মহানবী মুহাম্মাদ এর সহধর্মিনীগণ থেকে একটি বর্ণণা রয়েছে।

সাহলা বিনতে সুহাইল ছিলেন আমির ইবনে লুয়াই গোত্রের, তিনি রাসুল এর কাছে আসলেন এবং বললেন,

"হে আল্লাহর রাসুল, সালিমকে আমরা পুত্ররূপে গ্রহণ করেছিলাম। সে আমার কক্ষে প্রবেশ করে এই অবস্থায় যখন আমি একটি কাপড় পরিধান করে থাকি (অর্থ্যাৎ মাথা খালি থাকে)। আর আমার ঘরও মাত্র একটি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?" তখন রাসুল বললেন, "এ বিষয়ে আমাদের কথা হল তাকে পাঁচবার দুধপান করাও।" নবী এর অন্যান্য সহধর্মিণী এই প্রকার দুধপানের দ্বারা কোন পুরুষের তাদের নিকট প্রবেশ করাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতেন। তারা বলতেন (আয়শাকে উদ্দেশ্য করে) আল্লাহর কসম, আমরা মনে করি রাসুল সাহলা বিনতে সুহেইল কে যে অনুমতি দিয়েছিলেন তা কেবলমাত্র সালিম এর জন্য রাসুল এর পক্ষ থেকে রুখসত ছিল। কসম আল্লাহর, এইরূপ দুধপান করানোর দ্বারা কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবেনা। নবী করীম এর সকল সহধর্মিণী এই মতের উপর অটল ছিলেন। [ সুনানে আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ ১০৪, হাদিস ২০৫৭]

এই বিবরণগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে পাঁচবার ও দশবার দুধপানের বিধান রহিত হয়েছিল।

এছাড়া উল্লেখ্য যে, যতদিন ধরে কুরআন সংকলন হয়েছে, আয়িশা তার পূর্ণ সময় জীবিত ছিলেন। আবু বকর কর্তৃক সংকলন ও উসমান কর্তৃক সংকলন উভয় সময়েই আয়িশাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদানকারী ছিলেন। বিশেষত উসমান কর্তৃক কুরআন সংকলনের সময়ে আয়িশা এর নিকট থেকে সংকলনকর্ম যাচাই করা হত।[] যদি সত্যি সত্যিই কুরআনের আয়াত হারিয়ে যাবার কোন ঘটনা ঘটত, তাহলে আয়িশা অবশ্যই সে ব্যাপারে সাহাবীগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। সে সময়ে প্রচুর পরিমাণে হাফিজ সাহাবী জীবিত ছিলেন যাঁরা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ এর কাছ থেকে কুরআন শিখেছেন। কিন্তু আয়িশা কখনোই এমন কিছু করেননি।

পঙ্কিল জলাশয়ে সূর্যের অস্তগমন

ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল তার 'কুরআন ও বাইবেলঃ ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে' বইতে উল্লেখ করেছেন যে, কুরআনে বলা হয়েছে যে, 'সূর্য পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যায়।' তিনি দলিল হিসেবে কুরআনের সূরা কাহাফের উদ্ধৃতিটি তুলে ধরেনঃ

অবশেষে তিনি যখন সুর্য অস্তমিত হবার সময়ে উপনীত হলেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন। (কুরআন, ১৮ঃ৮৬)

উপরের আয়াতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সূর্য পংকিল জলাশয়ে অস্ত যায় বলা হয়েছে। কোন বৃহৎ জলাশয় যেমন নদী বা সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত অবলোকন করলে মনে হয় সূর্য পংকিল জলাশয়ে ডুবে যাচ্ছে। উইলিয়াম ক্যাম্পবেল অভিযোগ করেন, মুহাম্মাদ তার বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তা-ই কুরআনে লিখে রেখেছেন। অথচ, পৃথিবী সূর্য থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পৃথিবী সূর্য অপেক্ষা প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তাই, সূর্য পংকিল জলাশয়ে অস্ত যায়, এরকম ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্য কুরআনের ঐশ্বরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ইসলামপন্থী যুক্তিবিদদের দ্বারা উপর্যুক্ত অভিযোগ খণ্ডিত হয়েছে। জাকির নায়েক অভিযোগের জবাবে বলেন, কুরআন বলে নি যে, সূর্য পংকিল জলাশয়ে অস্ত যায়। বরং কুরআন কেবল বলেছে যে, জুলকারনাইন নামের ব্যক্তিটি কী দেখেছেন, জুলকারনাইনের কাছে কী অনুভূত হয়েছে। আয়াতটিতে আরবিতে 'ওয়াজাদা' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা Verb of Perception বা অনুভূতিসূচক ক্রিয়াপদ হিসেবে পরিচিত। জুলকারনাইন যখন কোন এক পংকিল জলাশয়ের পাড়ে এসে দাঁড়ালেন, তখন তিনি সূর্যাস্ত অবলোকন করলেন আর দেখতে পেলেন যে, সূর্য যেন ঐ জলাশয়টিতে ডুবে যাচ্ছে। কুরআন একথা বলছে না যে, সূর্য প্রকৃতই জলাশয়ে ডুবে যায়, বরং কুরআন কেবল যুলকারনাইনের সূর্যাস্ত দর্শনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তার দৃষ্টিতে কী গোচরীভূত হয়েছে, তা বর্ণনা করছে।

নক্ষত্রের পূর্বে পৃথিবীর সৃষ্টি

আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর ভূত্বক ও ভূগর্ভের উপাদান মৌলগুলো বিভিন্ন নক্ষত্রের অভ্যন্তরে নিউক্লীয়-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর কালের ব্যবধানে, সেই সব নক্ষত্র যখন সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হয়, তখন নক্ষত্রগুলো থেকে বিভিন্ন মৌল ও উপাদান ছিটকে বেরিয়ে আসে এবং তা থেকেই পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ-গ্রহাণুপুঞ্জ ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। তাই, আমরা বলতে পারি, পৃথিবী ও নক্ষত্রাদির আদি উৎস সৃষ্টি সমসাময়িক ঘটনা, আর নক্ষত্রের বিস্ফোরণের পর পৃথিবীর সৃষ্টি অর্থাৎ পৃথিবী নক্ষত্রের পরে সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে কুরআনে বলা হয়েছে যে, নক্ষত্রের পূর্বে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে।

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু'দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (কুরআন, ৪১:১১-১২)

উপর্যুক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুরআনের ভাষ্যকারগণ বলেন যে, সমালোচনার আয়াতটিতে কোথাও বলা হয় নি যে, পৃথিবী নক্ষত্রের পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে। বরং এ কথা বলা হয়েছে। আকাশ ও পৃথিবী আগে থেকেই সৃষ্টি করা ছিল, এবং সেই আকাশে বিভিন্ন নক্ষত্র সৃষ্টি করা হয়েছিল। পৃথিবীকে স্থিতকরণের পাশাপাশি সাত (বহু) আকাশ সৃষ্টির কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছিল। এ বর্ণনা বিজ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয় মুসলিম ভাষ্যকারগণ উপসংহার টানার চেষ্টা করেছেন।

আকাশের সংখ্যা

বিজ্ঞান বলে যে, আমাদের এই বিশ্বজগতে কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে এবং প্রত্যেক গ্যালাক্সিতে অসংখ্য তারকা, নক্ষত্র রয়েছে। কিন্তু কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় আকাশের সংখ্যা বলা হয়েছে সাত।

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ কীভাবে আসমানকে স্তরে স্তরে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেছেন? (কুরআন, ৭১ঃ১৫)

মরিস বুকাইলি তার বইতে মন্তব্য করেছেন, সম্ভবত 'সাত' সংখ্যা দ্বারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় 'অগণিত', 'বহু', 'অনেক' ইত্যাদি বুঝানো হয়। আরবি ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। বুকাইলির মতে, 'সাত আকাশ' দ্বারা কুরআনে 'বহু সংখ্যক আকাশ' বুঝানো হতে পারে।

কুরআনের অন্যত্রও এমন অর্থ প্রকাশ পেয়েছেঃ

......... আপনি যদি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করবেন না। (কুরআন)

উপরের আয়াতে বলা হয়েছে, নবী মুহাম্মাদ যদি মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট সত্তরবারও ক্ষমা চান, তবুও মুনাফিকদের পাপ রাশি মাফ করা হবে না। এর অর্থ এই নয় যে, নবী মুহাম্মাদ যদি একাত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। বরং, আয়াতে 'সত্তর বার' বলতে 'অসংখ্য বার' অর্থ নির্দেশ করা হয়েছে।

নিম্নতম আকাশে নক্ষত্ররাজির অবস্থান

বিশ্বজগতে রয়েছে অসংখ্য গ্যালাক্সি এবং প্রতিটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে শত কোটি তারকা, নক্ষত্র। কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে, নিকটবর্তী আসমান বা দুনিয়ার আসমানকেই কেবল প্রদীপমালা তথা তারকারাজি দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়েছে।

আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (কুরআন, ৪১:১২)

'আসমান' বলতে কুরআন যদি গ্যালাক্সি বুঝিয়ে থাকে, তবে উপরের আয়াতটির অর্থ, যে আসমান আমাদের দুনিয়া থেকে দেখা যায়, সেই আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজানো হয়েছে। অর্থাৎ, কেবল আমাদের ছায়াপথেই কেবল নক্ষত্র ও তারকারাজি আছে, অন্যান্য গ্যালাক্সিতে কোন তারকা নেই। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এমন তথ্য নিতান্তই অসংগতিপূর্ণ।

কুরআনের সমালোচকদের এই সমালোচনার জবাবে মুসলিম ব্যাখ্যাকারগণ বলেন যে, নিকটবর্তী আসমান ছাড়া অন্য কোন আসমানে তারকা বা নক্ষত্র নেই, এমন দাবি কুরআনের কোথাও করা হয় নি। আসমান বলতে গ্যালাক্সি বুঝায় এমনটাও বলা হয়নি।

সূর্য ও চন্দ্রের আলো

তিনিই সেই সত্তা, যিনি সূর্যকে করেছেন তেজস্ময়; আর তিনি চন্দ্রকে করেছেন জ্যোতির্ময়, এর জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনজিল (রাশি) যাতে করে তোমরা বর্ষ সংখ্যা জানতে পারো এবং তা গণনা করতে পারো। (কুরআন, ১০ঃ৫)

আর চন্দ্রকে স্থাপন করেছেন আলোক রূপে আর সূর্যকে প্রদীপরূপে। (কুরআন, ৭১ঃ১৬)

কুরআনের ভাষ্যকারগণ দাবি করেন, কুরআনে সূর্য ও চন্দ্রের আলোর প্রকৃতি নিয়ে বিজ্ঞানবিরোধী কোন বক্তব্য নেই, বরং এ বিষয়ে চমকপ্রদ তথ্য বর্ণিত আছে, যা সপ্তম শতকের কোন গ্রন্থের কাছ থেকে জানতে পারাটা অলৌকিক বিষয়।

কুরআনে সূর্যকে 'প্রদীপ' হিসেবে উপমিত করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। একথা সর্বজন বিদিত যে, প্রদীপ একটি ভাস্বর বস্তু, যার নিজস্ব আলো থাকে। সূর্যকে বারংবার 'প্রদীপ' হিসেবে উপমিত করার অর্থঃ সূর্য আলোর প্রকৃত উৎস এবং এটি প্রদীপের মত একটি ভাস্বর বস্ত, যা নিজেই আলো বিকিরণ করে।

অন্যদিকে, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চন্দ্র আলোর গৌণ উৎস হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর মানুষজন ও পশুপাখি রাতের বেলায় চাঁদের আলোর উপর নির্ভর করে। মুসলিম ভাষ্যকারগণ বলেন যে, আলোর পরোক্ষ উৎস বা গৌণ উৎস হিসেবে চন্দ্রের ভূমিকা রয়েছে, তা সত্ত্বেও, কুরআন কোথাও চন্দ্রকে 'আলোর উৎস' হিসেবে ঘোষণা দেয় নি।

কুরআনে সূর্যের আলো বোঝাতে 'দিয়াউন' 'ওয়াহাজ' প্রভৃতি শব্দ নির্দেশিত হয়েছে, যাদের অর্থ 'তেজস্ময় রশ্মি', 'জ্বলন্ত প্রভা'। এই শব্দগুলো যথার্থই সূর্যের আলোর প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, চাঁদের আলো বোঝাতে আরবিতে 'নূর' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ প্রতিফলিত আলো, আলো, উজ্জ্বল আলো ইত্যাদি। চন্দ্রের আলোর প্রকৃতির চরিত্র বর্ণনায় এ শব্দটিও যথার্থ।

কুরআনে সূর্য ও চন্দ্র এবং এদের আলো নির্দেশ করতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শব্দ ও উপমা ব্যবহার করেছে। সূর্যকে বোঝাতে 'প্রদীপ' (যা নিজে থেকে আলো বিকিরণ করে) উপমাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও চন্দ্রের ক্ষেত্রে কখনোই এই উপমাটি ব্যবহার করা হয় নি। অন্যদিকে, সূর্যের আলোর প্রকৃতি বোঝাতে 'দিয়াউন', 'ওয়াহাজুন' প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করলেও চাঁদের আলো বোঝাতে যে 'নূর' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেই 'নূর' শব্দটি কখনোই সূর্যের আলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করে নি। এ থেকে বোঝা যায়, কুরআন সচেতনভাবেই শব্দগত পার্থক্যের মধ্য দিয়ে সূর্য ও চন্দ্রের আলোর প্রকৃতিগত পার্থক্য নির্দেশ করেছে। মরিস বুকাইলি, সূর্য ও চন্দ্রের জন্য ব্যবহৃত উপমা এবং এদের আলোর স্বরূপ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত শব্দের ভিন্নতা সচেতনভাবে কুরআন পাঠক সমীপে তুলে ধরায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং কুরআনকে ঐশীগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

প্রখ্যাত আলোকশাস্ত্র বিজ্ঞানী আল-হাসান (আল-হ্যাজেন নামে সমধিক পরিচিত) কর্তৃক ১৫৭২ সালে প্রকাশিত 'কিতাব-আল-মানাযির' (আলোকবিদ্যা সংক্রান্ত পুস্তক) এ জানিয়েছেন, আরবি 'দিয়াউন' দ্বারা 'আবশ্যকীয় মৌলিক আলো' বোঝানো হয়; অন্যদিকে, 'নূর' দ্বারা 'অস্বাভাবিক বা কৃত্রিম আলো' বোঝানো হয়। আর আরবি অভিধান মতে, সূর্যের আলোকে 'দিয়াউন' বলা হয়, আর চন্দ্রের আলোকে 'নূর' বলা হয়। মুসলিমগণ বলেন, কুরআন সূর্যের আলোকে 'দিয়াউন' আর চন্দ্রের আলোকে সর্বদা 'নূর' বলে অভিহিত করণের মাধ্যমে অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে ও বিস্ময়কর ভাবে নির্দেশ করেছে যে, সূর্যের আলো এর নিজস্ব আলো, অন্যদিকে, চন্দ্রের আলো কৃত্রিম আলো।

চন্দ্র বিদারণ

চন্দ্র পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। সৃষ্টির আদিকালে পৃথিবী সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রচণ্ড দ্রুত গতিতে ঘূর্ণায়মান থাকায় এর একটি অংশ ছিটকে বেরিয়ে আসে এবং মহাকর্ষ নিয়মানুযায়ী পৃথিবীর চারিদিকে আবর্তন করতে থাকে। এ আবর্তন কোটি কোটি বছর যাবৎ চলে আসছে, এতে কোন বিঘ্ন ঘটে নি।

কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। (কুরআন, ৫৪ঃ১)

যদি সপ্তম শতকে চাঁদ বিদীর্ণ হবার কোন ঘটনা ঘটত, তবে এ ঘটনার সাক্ষী পুরো বিশ্ব প্রত্যক্ষ করত। ঐতিহাসিকভাবে এ ঘটনার দলিল থাকত। কিন্তু এ ধরনের কোন দলিল প্রমাণ বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। জ্যোতির্বিদ্যার সাধারণ নীতি অনুযায়ীও এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক।

সমস্যার সমাধানে কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চন্দ্রের বিদারণ কোন সাধারণ ঘটনা ছিল না; বরং এটি ছিল নবী মুহাম্মাদ কর্তৃক অনুষ্ঠিত একটি মুজিযা বা অলৌকিক ঘটনা। সাধারণ অভিজ্ঞতা, নীতি, তত্ত্ব দ্বারা কোন অলৌকিক ঘটনাই ব্যাখ্যা করা যায় না। জাকির নায়েকের মতে, যেহেতু ঘটনাটি অতীতে সংঘটিত একটি অস্বাভাবিক ঘটনা তা-ই ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করা সম্ভবপর নয়। তবে, কোন গ্রহ বা উপগ্রহে ফাটল সৃষ্টি হওয়া এবং পরে তা জোড়া লেগে ঠিক হয়ে যাওয়া জ্যোতির্বিদ্যার নিয়ম অনুযায়ী, অস্বাভাবিক হলেও কোন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এধরনের ঘটনার সম্ভাব্যতাও নাকচ করেন নি। তাই, কুরআনের চন্দ্র বিদীর্ণ হবার দাবি অবৈজ্ঞানিক হতে পারে না। অন্যান্য ঐতিহাসিক সূত্রের অভাবে এ ঘটনাকে মিথ্যে সাব্যস্ত করা অসমীচীন বলে মনে করেন মুসলিম মনীষীগণ।

ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতা তুলে ধরে ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলেন, যখন মক্কায় চন্দ্র বিদারণের ঘটনাটি ঘটে, তখন স্থানীয় সময় ছিল রাত। বিশ্বের সর্বত্র একই সময় রাত থাকে না বলে, চন্দ্র দ্বিখণ্ডনের ঘটনা পুরো বিশ্ব কর্তৃক পর্যবেক্ষিত হওয়া সপ্তম শতকের মত সময়ে সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া বিশ্বের যেসব জায়গায় রাত ছিল, সেখানকার সবাই-ই এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, বিষয়টা তা-ও না। কারণ, ভূ-পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্দিষ্ট কোন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারার বিষয়টি বীক্ষণ কোণের উপর নির্ভর করে। বর্তমান বিশ্বেও চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হলে, বিশ্বের তাবৎ মানুষ সেই ঘটনা একই সাথে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, ঘটনাটি বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন সভ্যতার মানুষদের দ্বারা পর্যবেক্ষিত হলেও তা লিপিবদ্ধ হবার সম্ভাবনা কম। কেননা, তৎকালীন যুগের বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাস ও উল্লেখযোগ্য সব ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ আকারে পাওয়া যায় না।

তৃতীয়ত, ভারতবর্ষের কেরালা অঞ্চলের মালাবার প্রদেশের রাজা চক্রবতী ফারমা সপ্তম শতকে চন্দ্র বিদারণের এরূপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বলে লন্ডনকেন্দ্রিক ভারতীয় কার্যালয় পাঠাগারের এক নথিতে পাওয়া যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বর্ণিত আছে যে, উক্ত বিস্ময়কর ঘটনা পর্যবেক্ষণপূর্বক রাজা চক্রবতী স্বীয় পুত্রকে রাজ দায়িত্ব অর্পণ করে আরবদেশে নিজে গমণ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মালাবার রাজা আরবদেশে যান, নবী মুহাম্মাদের সাথে সাক্ষাৎকারপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে নিজ দেশে যাত্রা শুরু করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পথিমধ্যে তার অকস্মাৎ মৃত্যু হয় এবং ইয়েমেন এর বন্দর নগরী জাফরে তাকে সমাহিত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভারতবর্ষের রাজার সাথে নবী মুহাম্মাদের সাক্ষাতের ঘটনা ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় ধর্মশাস্ত্র হাদিসে এসেছে।

এরূপ বিভিন্ন তথ্যাদি পেশ করে, মুসলিম বিশারদগণ চন্দ্র বিদারণের একটি ঐতিহাসিক গ্রহণযোগ্যতা ব্যাখ্যা করবার প্রয়াস করেন। তবে, সমালোচকগণ পুনরায় এরূপ জবাবের সমালোচনা পেশ করে বলেছেন যে, উপর্যুক্ত দলিলাদি নিতান্তই অগ্রহণযোগ্য। অত্যন্ত নড়বড়ে দলিলাদি দ্বারা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ঐতিহাসিক সত্যতা প্রমাণ করা যায় না। তাছাড়া, সমালোচকগণ বলেন, ইসলামেও দুর্বল তথ্যসূত্র দ্বারা বর্ণিত কোন বিবৃতি হাদিস বলে স্বীকার হয় না।

মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির সময়কাল

আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, এই মহাবিশ্ব, আমাদের সৌরজগৎ, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি কোটি কোটি বছর সময়কাল যাবৎ পর সৃষ্টি হয়েছে। অথচ, কুরআনে বলা হয়েছে, মহাকাশ ও পৃথিবী মাত্র ছয়দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ধারণা কুরআন নাজিলের সমসাময়িক যুগে প্রচলিত ছিল। ফলত, তৎকালীন যুগে প্রচলিত এ ভুল ধারণাই কুরআনেও প্রতিফলিত হয়েছে।

আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি। (কুরআন, ৫০:৩৮)

বিজ্ঞানীদের মতে, ২৪ ঘণ্টার ছয় দিনে এই মহাবিশ্ব মোটেও সৃষ্টি হয় নি। বরং তা কোটি কোটি বছর যাবৎকালের জটিল ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট হয়েছে।

কুরআনের কোন কোন ব্যাখ্যাকার এখানে ব্যবহৃত 'আইয়াম' শব্দের অর্থ করে থাকেন 'সময়কাল', ২৪ ঘণ্টার দিন নয়। অথচ, কুরআনের যেসব জায়গায় 'মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ছয় আইয়াম সময় লেগেছে' এমন তথ্য আছে, কেবল সে সব জায়গায় তারা 'আইয়াম' শব্দের অর্থ করে থাকেন 'সময়কাল'। আর বাকি যত জায়গায় সাধারণ 'ইয়াওম' বা 'আইয়াম' শব্দটি এসেছে, তার সবক্ষেত্রেই এর অর্থ করে থাকেন 'দিন'। অনুবাদের এ রকম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পার্থক্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

ড মরিস বুকাইলি তার বিখ্যাত 'বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান' বইতে উপর্যুক্ত বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আরবিতে 'দিন' বোঝাতে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে- তা হচ্ছে, 'আইয়্যাম'। 'আইয়াম' শব্দটি আরবি 'ইয়াওম' শব্দের বহুবচন।

'ইয়াওম' শব্দের অর্থ 'দিন'। এটি হতে পারে ২৪ ঘণ্টার একেকটি দিন, আবার হতে পারে ২৪ ঘণ্টার চেয়ে বেশি দীর্ঘ বা সুদীর্ঘ সময়। 'ইয়াওম' এর বহুবচন হিসেবে 'আইয়াম' এর অর্থ দাঁড়ায়, প'দিনসমূহ', যা কমপক্ষে তিন দিন থেকে শুরু করে সুদীর্ঘকালের সমষ্টি হতে পারে। 'আইয়াম' শব্দের অর্থঃ যুগ হিসেবেও ব্যাপক প্রচলিত। যেমনঃ বলা হয়, 'আইয়ামে জাহিলিয়্যাহ' তথা 'অজ্ঞতার যুগ'। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে, 'আইয়াম' শব্দটি আরবিতে সুদীর্ঘসময় নির্দেশ করে।

আর মহাবিশ্ব ও পৃথিবী ছয়টি সুদীর্ঘ সময়ের মেয়াদে সৃষ্টি হয়েছে- এমন মন্তব্য বিজ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে না।

কুরআনে দিন শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। 'দিন' শব্দটি সময়ের বিভিন্ন দৈর্ঘ্যকে নির্দেশ করে বিভিন্ন আয়াত উপস্থাপিত হয়েছে।

সাত পৃথিবী

কুরআন বিভিন্ন জায়গায় সাত আকাশের দাবি করার পাশাপাশি এক স্থানে এটিও দাবি করেছে যে, আমাদের পৃথিবীর মতো মোট ৭ টি পৃথিবী আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সমালোচকগণের দ্বারা এই আয়াত বৈজ্ঞানিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত। (কুরআন, ৬৫ঃ১২)

পৃথিবীর সংখ্যা সাত এর ব্যাখ্যাস্বরূপ মুসলিম ভাষ্যকারগণ বলেন, আমাদের পৃথিবীর মত হয়তো মোট সাতটি গ্রহ আছে, যার পরিবেশ-প্রতিবেশ ঠিক পৃথিবীর মতোই এবং সেখানেও পৃথিবীর মতই প্রাণ আছে। বিজ্ঞান এমন বিষয়ের সত্যতা নিরূপণ করতে না পারলেও একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে নি। বরং, বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে পৃথিবীর বাইরে প্রাণির অস্তিত্ব নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গবেষণা বিজ্ঞানিদের মনে এই বিশ্বাস জন্মিয়েছে যে, আমাদের পৃথিবীর বাইরেও মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব নয়। কেবল প্রাণের অস্তিত্বই নয়, বরং বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মহাবিশ্বে মানুষের মতই আরো বিচিত্র ধরনের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণির অস্তিত্ব আছে।

কুরআনের যে আয়াতটি নিয়ে অভিযোগ পেশ করা হয়েছে, সে আয়াতটি থেকেও এমন ধারণা পাওয়া অমূলক নয় যে, পৃথিবী সদৃশ অন্যান্য গ্রহগুলোতেও প্রাণের অস্তিত্ব আছে এবং বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আয়াতটি সংকেত দিচ্ছে, কারণ, কুরআন বলছে যে, ঐসব গ্রহেও আল্লাহর আদেশ জারি হয়। এথেকে বুঝা যায়, ঐসব গ্রহে প্রাণ এবং বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

মেরুতে ইসলামি বিধান পালন অসম্ভব

কুরআনের সমালোচকদের মতে, কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যা রচিত হয়েছিল আরবি ভাষায় কেবল আরবদেশের মানুষ দের জন্য কেবল সপ্তম শতাব্দীর জন্য। যে সকল বক্তা দাবি করেন, কুরআন এসেছে সমগ্র বিশ্বের মানুষদের জন্য, তাদের সমালোচনা করে তারা বলেন, কুরআন যদি সারা বিশ্বের মানুষদের জন্য পালনীয় বলে দাবি করে, তাহলে সেখানে এমন কোন বিধান থাকা উচিৎ নয়, যা আদৌ পালনযোগ্য নয়।

ইসলামের হুকুম অনুযায়ী, ইসলামে বিশ্বাসীগণকে দৈনিক পাঁচ বার সালাত বা নামায আদায় করতে হয়। এ পঞ্চোপাসনা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে অস্বীকার করলে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হয়ে যায়। দিনের কোন অংশে, কখন নামায আদায় করতে হবে তার নির্দেশনা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ও হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এ সময়গুলো বলা হয়েছে, দিনের বিভিন্ন সময় সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে।

যেমনঃ ভোরবেলার ফজরের নামাযের সময়সীমা সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত, মাগরিবের নামাযের সময় শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে ইত্যাদি।

ভূগোল শাস্ত্র বলে যে, পৃথিবীর উত্তর মেরুতে বছরের অর্ধেক সময় যাবত ছয় মাস ব্যাপী দিন বিরাজ করে। এ সময় অপর মেরুতে অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুতে রাত বিরাজ করে ক্রমাগত ছয় মাস। আবার, বছরের বাকি অর্ধেক সময়, উত্তর মেরুতে ছয় মাস ব্যাপী রাত ও দক্ষিণ গোলার্ধে ছয় মাস ব্যাপী দিন বিরাজ করে। তাই, পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মত ২৪ ঘণ্টার দিনের বিভিন্ন সময় সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থান দেখে যেভাবে সময় নির্ধারণ করা যায়, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে সেভাবে করা যায় না। তাই, ওই সব স্থানে নামায আদায় করার জন্য নির্ধারিত সময় নির্ণয় করা অসম্ভব। অথচ, নামাজ ব্যতিরেকে মুসলিম ব্যক্তি গুরুতর পাপের অংশীদার বিবেচিত হবেন।

কুরআন প্রচারিত হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে। সেখানকার মানুষ উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর এই দীর্ঘ দিবস ও দীর্ঘ রজনী সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল না। তাই, কুরআনে এমন পরস্পর বিরোধী উপাসনার আদেশ দেখতে পাওয়া যায়, যেসব উপাসনা মেরু অঞ্চলের কোন বাসিন্দাদের জন্য পালন করা অসম্ভবপর।

উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে মুসলিম উলামাবৃন্দ তাদের সুস্পষ্ট গবেষণা ও ফতওয়া প্রদান করেছেন । এসকল গবেষণা ও ফতওয়া কুরআন ও হাদিসের সার নির্যাস থেকে গৃহীত। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে কীভাবে নামাজের সময় নিরূপণ করা হবে, তা 'ইজতিহাদ' এর মাধ্যমে আলিমগণ সমাধা করেছেন। তাই, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে নির্ধারিত সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করা অসম্ভব - এমন বক্তব্যকে মুসলিম ভাষ্যকারগণ নাকচ করে দিয়েছেন।

এ কথা সত্য যে, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাসিন্দাগণ কীভাবে নামাজের সময় নিরূপণ করবেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা কুরআনে নেই। কিন্তু মুসলিম ভাষ্যকারগণ বলেন যে, এ কথা জানলে অনেকেই বিস্মিত হবেন যে, নামাজ কীভাবে আদায় করা হবে তার বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যাও কুরআনে নেই। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামে পালনীয় মৌলিক উপাসনাগুলোর অনেক কিছুই কুরআনে বিস্তারিত নেই। মুসলিম আলিম ও গবেষকগণ কুরআনের সংক্ষিপ্ত দিক নির্দেশনা, সংশ্লিষ্ট হাদিসের পর্যালোচনা ও যুক্তিভিত্তিক অভিজ্ঞতার আলোকে উপাসনা বিস্তারিত কর্মপদ্ধতি বিশ্লেষণ করেন। তাই, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে কীভাবে নামাজের সময় নিরূপিত হবে, সে ব্যাপারেও আলিমগণ বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবার ইখতিয়ার রাখেন।

এরপরও যারা কুরআনে এরূপ বিধান নিয়ে সমালোচনা করেন, তাদের ব্যাপারে মুসলিম ভাষ্যকারগণ বলেন, কুরআন একজন মুসলিমকে পঞ্চোপাসনার আদেশ দিলেও, সেটা পালন যদি ব্যক্তির জন্য সাধ্যাতীত হয়, তবে তার বাধ্যবাধকতা ব্যক্তির উপর থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ফলে, কেউ যদি উত্তর বা দক্ষিণ মেরুতে নামাজের সময় নিরূপণে অপারগ হন, তবে তিনি তার অনুমেয় সময়েই নামাজ আদায় করে নিতে পারেন। কুরআনের মূলনীতিও এটিই যে, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কাজের বোঝা চাপান না।

আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। (কুরআন, ২ঃ২৮৬)

কাজেই ইসলামের প্রত্যহ পালনার্হ নামাজ বা পঞ্চোপাসনার সাথে বৈজ্ঞানিক কোন অসংগতি থাকতে পারে না অভিযোগটি খণ্ডনের চেষ্টা করেন ইসলাম বিশারদগণ।

রোজা পালনে বিঘ্ন

সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বা রোজা বলে। রোজা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। রোজাকে অস্বীকার করলে বা অবহেলাবশত পালন না করলে একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত গণ্য হন।

মুসলিমদের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার বিধান আছে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া, এ বিধান অনাদায় রাখা গুরুতর পাপ।

আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। (কুরআন, ২ঃ১৮৪)

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোজা পালন সম্ভবপর। নরওয়ের মত দীর্ঘ সময়ব্যাপী দিন বিরাজ করে যে সব দেশে, সে সব দেশের জন্য রোজা পালন অতীব কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব নয় বা তাতে প্রাণ হানির শংকা থাকে না।

কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে রমজান মাসের রোজা পালন অসম্ভব একটি বিষয়। কারণ,

ক) মেরু অঞ্চলে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত একাধারে বিরাজ করায় আরবি বর্ষপঞ্জির নিয়মানুযায়ী মাস সংখ্যা হিসেব করা অসম্ভব। তাই, রমজান মাস নিরূপণ করাও অসম্ভব।

খ) উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে একাধারে ছয়মাস ব্যাপী দিন থাকায় এ অঞ্চলের রোজাদার বাসিন্দাকে ক্রমাগত ছয় মাস পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। নিঃসন্দেহে এই উপাসনা তার মৃত্যুর কারণ হবে। অথচ, কুরআন দাবি করেছে যে, রোজার বিধান মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে।

মূলত, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সম্বন্ধে অজ্ঞতার দরুন এমন অসংগতিপূর্ণ বিধান কুরআনে এসেছে বলে সমালোচকরা মন্তব্য করেছেন।

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে সৃষ্ট এ জটিলতা নিরসনে মুসলিম আলিমগণ কুরআন ও হাদিসের আলোকে যথার্থ বিধান দিয়েছেন, যে বিধান অনুযায়ী এ অঞ্চলের কোন বাসিন্দা রোজাব্রত পালন করলেও প্রাণ সংশয়ে পড়বেন না। তাই, উপর্যুক্ত অভিযোগের সত্যতা ভিত্তিহীন বলে মুসলিম ভাষ্যকারগণ দাবি করেন।

এছাড়া, ক্রমাগত ছয় মাস যাবৎ কোন ব্যক্তির পক্ষে রোজা রাখা তার সাধ্যাতীত। আর কুরআনের মূলনীতি হচ্ছে, আল্লাহ্‌ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজ বাধ্যবাধক করেন না।

আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। (কুরআন, ২ঃ২৮৬)

তাই, সে দিক বিবেচনায়, ইসলামি মনীষীগণ বলেন, কুরআন ব্যক্তিকে রোজা পালনে শৈথিল্যের সুযোগ দিয়েছে। তারা বলেন, সামগ্রিকভাবে কুরআনে কোন অবৈজ্ঞানিক বা ভুল বা অসম্পূর্ণ বিধান জারি করা হয় নি।

ছায়ার অবস্থান পরিবর্তন

তুমি কি তোমার পালনকর্তাকে দেখ না, তিনি কীভাবে ছায়াকে বিলম্বিত করেন? তিনি ইচ্ছা করলে একে স্থির রাখতে পারতেন। এরপর আমি সূর্যকে করেছি এর নির্দেশক। (কুরআন, ২৫ঃ৪৫)

ড ক্যাম্পবেল বলেন,

"যদি কুরআন এই দাবিই করে যে, সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীসহ সব গ্রহ ঘোরে; তাহলে, কুরআনের বলা উচিৎ ছিল যে, 'আমি পৃথিবীকে করেছি ছায়ার নির্দেশক।"

ড নায়েক এর মতে, আলোচ্য আয়াতে কোথাও বলা হয় নি, ছায়ার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে সূর্যের আবর্তনের কারণে।

পৃথিবীতে কোন ব্যক্তি বা বস্তুর ছায়া যে সূর্যের কারণে সৃষ্টি হয়, এটি সাধারণ অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। ছায়া সৃষ্টি হয় আলোক উৎসের সম্মুখে কোন প্রতিবন্ধক থাকার কারণে। আর এই আলোক উৎস এক্ষেত্রে সূর্য। তাই, সূর্যই হচ্ছে ছায়ার নির্দেশক- বক্তব্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যথাযথ।

আকাশ মাথার উপর ভেঙে পড়া

বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে কুরআনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হল, কুরআন আকাশকে কঠিন বস্তু বলে মনে করেছে। এবং তাই একে ছাদ হিসেবে উপমিত করেছে। অন্যদিকে, ছাদের কিয়দংশ যেমন ভেঙে পড়তে পারে, তেমনই কুরআনও দাবি করেছে যে, আকাশ বা এর অংশবিশেষ ভেঙে পড়তে পারে।

তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিলক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের উপর পতিত করব। আল্লাহ অভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সুরা সা’বা ৩৪:৯)

মুসলিম ভাষ্যকারগণের মতে, উপরের আয়াতে ‘আকাশের কোন খণ্ড বলতে যা বোঝানো হয়েছে, তা আরবি ‘কিসাফাম মিনাস সামায়ী’ এর অনুবাদ। মূল আয়াতে ‘মিন’ নামে যে অব্যয় ব্যবহার করা হয়েছে, ‘থেকে’, ‘হতে’, ‘পক্ষ থেকে’। তাই, ‘কিসাফাম মিনাস সামাই’ বাক্যাংশের অর্থ ‘আকাশ হতে কোন বস্তু খণ্ড’।

মহাকাশে পৃথিবীর বাইরে বিভিন্ন বস্তুখণ্ড, গ্রহাণু ইত্যাদি ঘূর্ণায়মান। যেকোন সময় এগুলোর কোনটি পৃথিবীতে আঘাত হানলে, পৃথিবীর ভারসাম্য চরমভাবে ব্যহত হতে পারে। ইসলামি ব্যাখ্যাকারগণ তাই বলেন, মহান আল্লাহ্‌ উপর্যুক্ত আয়াতে এটিই বলেছেন যে, অহংকারকারী অবিশ্বাসী, পাপাচারীদের উপর আল্লাহ্‌ আকাশস্থিত কোন বস্তু খণ্ড ফেলতে পারেন, তাই, তারা যেন দর্প না করে।

নক্ষত্র শয়তানের প্রতি নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র

নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি। এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা ঊর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে। (কুরআন, ৩৭ঃ ৬-১০)

আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি। (কুরআন, ৬৭ঃ৫)

কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সূর্যকে প্রদীপ বলা হয়েছে, এছাড়াও প্রদীপ বলতে নক্ষত্রও বোঝানো হয়। তাই, শেষোক্ত আয়াতের অর্থ, শয়তান দের জন্য বিভিন্ন সময় নক্ষত্রকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে নিক্ষেপ করা হয়।

উপর্যুক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসলামের ধ্রুপদি পণ্ডিতগণও তাদের সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। আধুনিক জ্যোতির্শাস্ত্রবিদ্যায় 'নাজম' বলতে তারকা বা নক্ষত্র, 'কাওকাব' বলতে 'গ্রহ', 'শিহাব' বলতে 'জ্বলন্ত বস্তু' বুঝানো হয়। কিন্তু সাধারণ আরবি ভাষীগণ শব্দগুলোকে ঠিক ঠিক এই অর্থেই সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করেন না। কুরআন অবতরণে সময় তো শব্দগুলোর অর্থ আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার পরিভাষা হিসেবে কখনোই সুনির্দিষ্ট বা সীমিত অর্থে ব্যবহৃত হতো না। বরং উল্লেখিত শব্দগুলোর অর্থ 'আম', যা ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক।

সাধারণ আরবি ভাষায় 'কাওকাব' বলতে যে কোন ধরনের জ্যোতিষ্ককে বোঝানো হয়। তাই, উল্কাপিণ্ড এক প্রকারের কাওকাব। এমনকি সে অর্থে তারকা বা নক্ষত্রও এক প্রকারের 'কাওকাব'। আর, 'নাজম' শব্দটির অর্থও তা-ই। বিভিন্ন ধরনের জ্যোতিষ্ক বোঝাতে শব্দটির ব্যবহার প্রাচীন ও বর্তমান আরবি ভাষীদের মধ্যে দেখা যায়। এ অর্থে 'নাজম' শব্দটি অর্থও হতে পারে 'উল্কাপিণ্ড'। তাই, ঊর্ধ্বজগত থেকে যে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড বা উল্কাপিণ্ড কিংবা ধূমকেতু পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে পতিত হয়, তাকে আরবি ভাষায় 'শিহাব', 'নাজম' বা 'কাওকাব' যে কোন শব্দ ব্যবহার করে জানানো যেতে পারে।

তাই, বিদ্রোহী শয়তানকে 'নাজম' নিক্ষেপে ধাওয়া করা হয়, কুরআন একথা বলার অর্থ এটা নয় যে, কুরআন বলছে কোন নক্ষত্রকে শয়তানের পেছনে ছুড়ে মারা হয়েছে।

এভাবে, ইসলাম ধর্ম বিশারদগণ উপসংহার টানেন যে, আলোচ্য আয়াতগুলোতে 'নাজম' দ্বারা নক্ষত্র বোঝানো হয় নি, বরং জ্বলন্ত কোন জ্যোতিষ্ক তথা উল্কা বোঝানো হয়েছে। হাদিস শাস্ত্রেও নবী মুহাম্মাদ আলোচ্য আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যাই করেছেন যে, শয়তানের প্রতি ঊর্ধ্বজগতে যে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়, তা উল্কা।

জীববিদ্যা

ভ্রুণবিদ্যা

শুক্র নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষ-পিঞ্জরের মধ্য থেকে

পুরুষের বীর্য উৎপন্ন হয় অণ্ডকোষে আর অণ্ডকোষ থেকে তা বের হবার পথ মূত্রথলির পিছনভাগ ও নিচ থেকে। বীর্যের উৎপাদন বা পরিক্রমণের পথ কোনটিই মেরুদণ্ড ও বক্ষ পাঁজরের মধ্যবর্তী কোন স্থান নয়। কুরআনের পর্যালোচকগণ দাবি করেন, কুরআনে এমন একটি অবৈজ্ঞানিক কথাই লিপিবদ্ধ আছে।

অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে।সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে। (৮৬ঃ ৫-৭)

কুরআন সবেগে স্থলিত তরল সম্বন্ধে যা বলেছে, তার বৈজ্ঞানিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ইসলাম বিশারদগণের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয়। অভিযোগ খণ্ডনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মুসলিম মনীষীর দেওয়া জবাবের ভিন্নতা ব্যাপক দ্ব্যর্থবোধকতার সৃষ্টি করেছে।অনেকগুলো মতের মধ্য থেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হলো, আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অন্ডকোষে বীর্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত রক্ত ও স্নায়ুর সংযোগ। অন্ডকোষের রক্ত সন্চালন হয় Testicular Artery নামক রক্ত নালীকা দ্বারা যা লাম্বার লেভেল থেকে তৈরী হয় যা মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী একটি স্থান। ঠিক একই ভাবে অন্ডকোষের স্নায়ুর সংযোগ আসে Paraaortic ganglia থেকে যা অবস্থান করে মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী একটি স্থানে।

হৃদপিণ্ডের কার্যাবলি

সমালোচকগণ বলেন যে, আধুনিক বিজ্ঞানে এটি সতত প্রমাণিত একটি বিষয় যে, মানুষের বোধশক্তি, চিন্তাভাবনা করে তার মস্তিষ্ক। এতদসত্ত্বেও কুরআন বারবার হৃদয়কে তথা হৃদপিণ্ডকে নির্দেশ করেছে চিন্তাভাবনা ও বোধশক্তির ব্যাপারে।

আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দেই, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি কোরআনে পালনকর্তার একত্ব আবৃত্তি করেন, তখন ও অনীহাবশতঃ ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়। (কুরআন, ১৭:৪৬)

অভিযোগের প্রত্যুত্তরে, মুসলিম মনীষীগণ আরবি অভিধানের সহায়ত নিয়েছেন। তাদের ব্যাখ্যা অনুসারে, মূলত কুরআন চিন্তাশক্তির জন্য যে শব্দটির কথা বলেছে সেটি হলোঃ 'ক্বালব'। একই ধরনের কার্যাবলি ব্যাখ্যার জন্য কুরআন অন্যত্র বিভিন্ন আয়াতে 'সদর' শব্দটি ব্যবহার করেছে। কুরআনের আয়াতসমূহের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হিসেবে মুসলিমগণের মাঝে স্বীকৃত পদ্ধতি হলো কুরআনকে কুরআন দ্বারা ব্যাখ্যা করা। অর্থাৎ, কুরআনের একটী আয়াতকে অন্য আয়াতের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা। ফলে, মুসলিম তাফসীরকারকগণের কাছে এটি সুস্পষ্ট যে, 'কালব' এর অর্থ 'সদর'। আর আরবিতে 'সদর' শব্দের অর্থ বক্ক, বুক, হৃদয়, অন্তর, কেন্দ্র, প্রধান ইত্যাদি।

কাজেই চিন্তাভাবনা ও উপলব্ধির জন্য কুরআন যে 'কালব' বা 'সদর' শব্দ ব্যবহার করেছে তার অর্থঃ কেন্দ্র তথা মস্তিষ্ক।

ভূতত্ত্ববিদ্যা ও আবহাওয়াবিদ্যা

পৃথিবী সমতল

কুরআন প্রচলনের যুগে মানুষের মাঝে এ ধারণাই প্রচলিত ছিল যে, পৃথিবী সমতল[]। গ্রিক দার্শনিক টলেমি থেকে শুরু করে তৎকালীন যুগের বড় বড় মনীষীগণ সবাই এ নীতিতে বিশ্বাস করতেন। কুরআনও অনুরূপ ধারণাই ব্যক্ত করেছে পৃথিবীর আকৃতির ব্যাপারে।

আর (অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আল্লাহ্‌ )কীভাবে পৃথিবীকে সমতল করেছেন? (কুরআন, ৮৮ঃ২০)

পর্বতমালা ভূমিকম্প প্রতিরোধ করে

আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, পৃথিবী পৃষ্ঠে ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে। এসকল পর্বতমালা মোটেও ভূমিকম্প প্রতিরোধ করার কোন কাজে আসে না। উপরন্তু দেখা যায়, যেসব অঞ্চলে পাহাড়-পর্বত বেশি আছে, ঐসব অঞ্চলে ভূমিকম্প বেশি হয়।

এবং তিনি পৃথিবীর উপর এমনভাবে পর্বতকে গেঁথে দিয়েছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও। (সুরা নাহল ১৬:১৫)

মুসলিম ভাষ্যকারগণ এরূপ অভিযোগের কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, কুরআন এখানে কোথাও বলে নি যে, পাহাড়-পর্বতের কাজ ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা। বরং পাহাড়-পর্বত এজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে করে পৃথিবী মানুষদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়, বা হেলে না পড়ে। পাহাড়-পর্বতের কারণে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা বেড়েছে। ফলে, পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট স্থানে কোন নির্দিষ্ট মূহুর্তে ওজন বেশি জড় হওয়ায় পৃথিবী ঐদিকে ঘুরে যাওয়া, হেলে যাওয়া বা নড়ে পড়া এসব কিছুই হয় না। অতএব, কুরআনের এই বক্তব্য বিজ্ঞানের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়, বরং বিজ্ঞানের সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পর্বতমালা পেরেকের মতো, একে উপর থেকে গেঁথে দেওয়া হয়েছে

সমালোচকগণ বলেন যে, কুরআন পর্বতকে পেরেক হিসেবে উপমা পেশ করেছে। ফলে এটা উল্লেখ থাকা কুরআনে অস্বাভাবিক নয় যে, এই পেরেকরূপী পর্বতকে পেরেকের মতই হাতুড়ি সদৃশ বস্তু দিয়ে আঘাত করে করে পৃথিবীর মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে।

অথচ আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে, ভূ-পৃষ্ঠে বিভিন্ন প্লেটের মধ্যকার সংঘর্ষের কারণে পর্বতমালা গড়ে উঠেছে। উপর থেকে গেঁথে দেবার তত্ত্বে বিজ্ঞান বিশ্বাসী নয়।

আমি পৃথিবীকে করেছি কীলক। (কুরআন ৭৮ঃ৬)

এবং তিনি পৃথিবীর উপর এমনভাবে পর্বতকে গেঁথে দিয়েছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও। (সুরা নাহল ১৬:১৫)

মুসলিম ভাষ্যকারগণ বলেছেন যে, কুরআন যখন পৃথিবীর উপরস্থিত পর্বতের সাথে পেরেকের উদাহরণ দেয়, তখন এর অর্থ পর্বতকে পেরেকের মতো পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়েছে তা বুঝানো নয়। বরং পৃথিবীর পাহাড়-পর্বতের কাজের ধরন কেমন সেটি বুঝানো। কুরআন বলছে যে, পেরেক যেমন অন্য বস্তুর মধ্যে এমন ভাবে ঢুকানো হয় যে, এর সামান্য একটি অংশই কেবল বাহির থেকে দেখা যায়, আর বড় অংশ দেখা যায় না- পর্বতের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।

বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, মাটির উপরে পর্বতের যতটুকু দৃশ্যমান হয়, তা পুরো পর্বতের কিয়দংশ মাত্র। পর্বতের দীর্ঘ একটি অংশ মাটির সুগভীরে প্রোথিত থাকে এবং ভূ-পৃষ্ঠের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত করে, যেমনটী করে থাকে কীলক বা পেরেক। কাজেই কুরআনে পর্বতমালাকে পেরেকের সাথে তুলনা করা অতি যথার্থ বলে মন্তুব্য করেন ইসলামি ভাষ্যকারগণ।

বৃষ্টির পানির বিশুদ্ধতা

সমালোচকগণ বলেন যে, কুরআনে বৃষ্টির পানিকে বিশুদ্ধ বলা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের তথ্যানুযায়ী, বৃষ্টির পানি সব সময় দূষণমুক্ত থাকে না। বিশেষত, শিল্পাঞ্চলীয় এলাকায় বৃষ্টির পানি অত্যন্ত দূষিত থাকে। এসব জায়গায় বৃষ্টি পতিত হলে পানি বাতাসে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাসের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অম্ল বা এসিড উৎপন্ন করে, যা এসিড বৃষ্টি নামে পরিচিত।

আর আমি মেঘমালা থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। (কুরআন, ২৫ঃ৪৮)

ইসলামি ব্যাখ্যাকারগণ উপর্যুক্ত আয়াতের জবাবে বলেন যে, কুরআনে বৃষ্টির পানির মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভূ-পৃষ্ঠস্থ দূষিত ও ময়লাযুক্ত পানি বাষ্পীভূত হয়। এ সময় সূর্যালোকের তাপে কেবল পানিই বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়, ময়লা-ধুলি-মাটি ইত্যাদি জলাশয়ে পড়ে থাকে। বাষ্পীভূত হবার পর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন ধুলি-বালির সাথে জলীয় বাষ্পে মিশে যায় বটে, তবে ঊর্ধ্বস্থানে উঠে আবার ঘনীভূত হবার সময় কেবল জলীয় বাষ্পই ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে। ফলে, মেঘ থেকে যখন বৃষ্টি হয়, তখন এই অতি সামান্য ধুলোবালি বাদ দিলে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি অতি বিশুদ্ধ।

আধুনিক যুগে মানুষের অসচেতনতা, প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকরণের দরুন বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, সালফার-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস ইত্যাদির পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে, পতনশীল বৃষ্টির পানি এসবের সাথে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন ধরনের অম্ল বা এসিড উৎপন্ন করে। এ থেকে বোঝা যায়, বৃষ্টির পানি সহজাতভাবে বিশুদ্ধ। যদি মানুষের হস্তক্ষেপের দরুন বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস অস্বাভাবিক মাত্রায় বায়ুমণ্ডলে নির্গত না হতো তবে বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ রূপেই ভূ-পৃষ্ঠে এসে পতিত হতো।

ফলে, মুসলিম ব্যাখ্যাকারদের মতে, কুরআন বৃষ্টির পানিকে বিশুদ্ধ বলে যথেষ্ট বিজ্ঞানমনস্কতার প্রমাণ দিয়েছে।

অসম্পূর্ণ পানিচক্র

কুরআনের সমালোচকগণ বলেন যে, কুরআন বিভিন্ন স্থানে পানির প্রবাহ, সাগর-নদী-জলাশয়ে পানি জমা হওয়া, মেঘ সৃষ্টি হওয়া, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়া ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা করেছে। এসব আয়াত থেকে কুরআন পানিচক্র সম্বন্ধে কী ধারণা পোষণ করে, সে সম্বন্ধে একটি মোটামুটি ধারণা লাভ করা যায়। এসকল বিচ্ছিন্ন আয়াতগুলোকে জড়ো করে কিছু মুসলিম ব্যাখ্যাকার দাবি করেন যে, বিজ্ঞান আবিষ্কারের অনেক আগেই কুরআন পানিচক্রের পূর্ণাংগ ধাপে ব্যাখ্যা করেছে।

তাদের এ দাবিকে অসার মন্তব্য করে সমালোচকগণ বলেন যে, পানি চক্রের ধাপগুলো হচ্ছে, (১) মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে নেমে আসা (২) ভূ-পৃষ্ঠ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে কিছু পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করা এবং কিছু পরিমাণ ভূপৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাল-বিল-পুকুর-নদী-সাগর ইত্যাদি জলাশয়ে মিলিত হওয়া, (৩) বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠস্থ জলাশয়ের পানি জলীয় বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যাওয়া (৪) জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি হওয়া।

সমালোচকগণ বলেন, পানি চক্রের এ প্রধান চারটি ধাপের মধ্যে ১, ২, ও ৪ নম্বর ধাপ তিনটি আমাদের অতি পরিচিত এবং খালি চোখেই দেখা যায়। বাষ্পীভবনের ধাপটি চোখে দেখা যায় না এবং চিন্তা করাও অত্যন্ত দুষ্কর। আশ্চর্যজনকভাবে, কুরআন বিভিন্ন স্থানে পানি চক্রের ১, ২, ও ৪ নম্বর ধাপগুলো পুংখানুপুংখরূপে বর্ণনা করেছে, যা সহজেই চোখে দেখা যায় এবং সপ্তম শতকের একজন মানুষের জন্য খুবই সাধারণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু যেটি সাধারণ অভিজ্ঞতা নয়, সেটি হলো বাষ্পীভবন। এটি খালি চোখে দেখা যায় না এবং এ সম্বন্ধে পূর্ব থেকে জ্ঞান না থাকলে এটি কল্পনা করাও দুরূহ। কুরআন খুবই বিস্ময়করভাবে বাষ্পীভবনের এ ধাপটি নিয়ে মৌনতাবলম্বন করেছে, যা এটিই নির্দেশ করে যে, কুরআনের রচয়িতা সাধারণ অভিজ্ঞতালব্ধ বহির্ভূত এ ঘটনাটি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলো না।

মুসলিম ব্যাখ্যাকারগণ উপর্যুক্ত সমালোচনার জবাবে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করেন।

শপথ আকাশের, যা প্রত্যাবর্তককে (পানিচক্র) ধারণ করে। (সূরা ত্বারিক)

উপরের এ আয়াতটি প্রকৃতই বাষ্পীভবনের ধাপটি সম্বন্ধে পাঠককে প্রকৃত তথ্য প্রদান করে। ফলে, মুসলিম মনীষীগণ বলেন, কুরআনে পানিচক্রের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে ।

আকাশস্থিত পর্বত হতে শিলা আসে

আবহাওয়াবিদ্যা অনুসারে, মেঘখণ্ডের মধ্যে শিলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে, শিলা সৃষ্টি হয় পাহাড় হতে। আর সেই পাহাড় কিনা আবার আকাশে অবস্থিত।

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা, তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎঝলক দৃষ্টিশক্তি যেন বিলীন করে দিতে চায়। (কুরআন,২৪:৪৩)

তাফসীরে জালালাইন উপরের আয়াতের অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেছে, এর দ্বারা আকাশের পর্বত বোঝানো হয়েছে।'

প্রকৃতপক্ষে, আলোচ্য আয়াতে 'আকাশের পর্বত' দ্বারা আকাশস্থিত 'মেঘ' বোঝানো হয়েছে। তাফসীরে ইবনে কাসীর এই মত ব্যক্ত করেছেন যে, হতে পারে, 'পর্বত' শব্দটি দ্বারা আকাশে অবস্থিত শিলার পাহাড়কে বোঝানো হয়েছে; আবার এও হতে পারে যে, এর দ্বারা রূপকার্থে 'মেঘ' বোঝানো হয়েছে। তাফসীরকারকদের ব্যাখ্যানুযায়ী, আলোচ্য আয়াতে বিজ্ঞানবিরোধী কিছু নেই।

প্রাণিবিদ্যা

কুরআন প্রাণি বিষয়ে কিছু আয়াত উপস্থাপন করেছে, প্রাণিবিদ্যার দৃষ্টিতে যা গুরূত্বের সাথে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে।

পিঁপড়ার মানুষের মত বৃহৎকায় প্রাণি সনাক্তকরণ ও নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তা

কুরআন নবী সুলাইমানের কিছু ঘটনা প্রসংগে পিঁপড়ার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, পিঁপড়া সুলাইমান ও তার ধেয়ে আসা দলকে দেখতে পেল। এমনকি, পিঁপড়াদের মধ্যে একটি পিঁপড়া সুলাইমানকে চিনতেও পারল। মানুষ যেভাবে মানুষের সাথে উন্নত পদ্ধতি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে, পিঁপড়ারাও একই রকমভাবে উন্নত যোগাযোগ করে। বিজ্ঞান যদিও নিশ্চিত হয়েছে যে, পিঁপড়েরা এক ধরনের তাড়িত-রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বটে, কিন্তু তাদের এ যোগাযোগ মানুষের কথা-বার্তা বা ভাষার মত এত উন্নত নয়। সমালোচকগণ এ ঘটনাকে "রূপকথার গল্প" (Fairy Tale) হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। (সুরা নামল ২৭:১৮)

কুরআনের ব্যাখ্যাকারগণ উপরের সমালোচনার জবাবে বলেন, আধুনিক বিজ্ঞান মোতাবেক প্রাণিকুল পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম, এমনকি উদ্ভিদগুলোও পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। আধুনিক বিজ্ঞানের এই তথ্য জানবার আগে কুরআনে বর্ণিত সুলাইমান ও পিঁপড়ার গল্পটি অলীক মনে হতে পারে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের সুপ্রতিষ্ঠিত তথ্য কুরআনের দেওয়া তথ্যেরই সমর্থন করছে।

ঐতিহাসিক তথ্য

খ্রিষ্টধর্মের ত্রিত্ববাদ

কুরআন খ্রিষ্টধর্মের ত্রিত্ববাদের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছে, খ্রিষ্টানগণ ত্রিত্ববাদের অংশ হিসেবে মরিয়মকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সমালোচকগণ বলেন, খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদের ভিত্তি হলো সর্বশক্তিমান পিতা, পুত্রপবিত্র আত্মা- এই তিন সত্তা ঈশ্বরেরই তিন রকম প্রকাশ। এখানে, যিশুর মাতা মেরি বা মরিয়মের কোন অংশ নেই। ত্রিত্ববাদ নিয়ে কুরআন স্পষ্ট কোন ধারণা রাখত না বলেই এ ধরনের অসঙ্গতি কুরআনে লক্ষ্য করা যায়।

তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। (সুরা মায়েদা ৫: ৭২,৭৩)

যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা বলবেন; আপনি পবিত্র! আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই পরিজ্ঞাত; আপনি তো আমার মনের কথা ও জানেন এবং আমি জানি না যা আপনার মনে আছে। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত। (সুরা মায়েদা ৫:১১৬)

কুরআনের তাফসীরকারকগণ বলেন, অভিযোগের সপক্ষে যে দুটি আয়াত পেশ করা হয়েছে, তাতে প্রথম ক্ষেত্রে ত্রিত্ববাদের স্পষ্ট উল্লেখ আছে কিন্তু মরিয়মকে উপাস্য দাবি করা হয় নি। অন্যদিকে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, মরিয়মকে খ্রিষ্টানগণ উপাসনা করেন এ মর্মে উল্লেখ আছে। কিন্তু এখানে ত্রিত্ববাদের কোন উল্লেখ নেই। কাজেই, সমালোচকদের করা এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

মরিয়ম ও মিরিয়ামের মধ্যে সংশয়

মুসা (আ) এর এক বোন ছিল যার নাম মিরিয়াম বা মরিয়ম। তিনি সম্পর্কে হারূন (আ) এরও বোন ছিলেন। জানা যায়, মুসা, হারুন ও তাদের ভগ্নী মিরিয়ামের পিতার নাম ইমরান। তাদের হাজার বছর পরে পৃথিবীতে আসেন ঈসা (আ)। আর তার মায়ের নাম মরিয়ম। কাকতালীয়ভাবে, ঈসার মা মরিয়মেরও পিতা ইমরান বলে কুরআন উল্লেখ করেছে। উল্লেখ্য, মিরিয়াম ও মরিয়ম সমোচ্চারিত শব্দ এবং উভয়ের ব্যুৎপত্তিস্থল একই। একারণে, খুব সহজেই কুরআনের লেখক বিভ্রান্ত হয়ে ঈসার মা মরিয়মকে হারুন ও মুসার বোন মিরিয়ামের সাথে মিলিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগকারীরা বক্তব্য দিয়ে থাকেন।

আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন। [ সুরা তাহরীম ৬৬:১২ ]

অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে হারূণ-ভাগিন ী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। (সুরা মারঈয়াম ১৯: ২৭, ২৮)

এখানে, দেখা যাচ্ছে, কুরআন ঈসার জননী মরিয়মকে 'হারূন ভগ্নী' বলে সম্বোধন করছে। অথচ, ঈসার মা মরিয়মের হারূন নামে কোন ভাই ছিল না, অন্যদিকে মুসার বোন মরিয়মের হারূন নামে ভাই ছিল। সমালোচকরা বলেন, এখানে স্পষ্টতই কুরআন ঈসার মাকে মূসার বোন ভেবে পুরো বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছে।

এ প্রশ্নের জবাব স্বয়ং মুহাম্মাদ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, ঈসা (আ) এর জননী মরিয়ম (আ) এর সহোদর বা কোন গোত্রীয় ভাই থেকে থাকতে পারে, যার নাম ছিল হারুন। আর ঈসা (আ) এর মা মরিয়ম (আ) এর সেই ভাইয়ের নামটি 'হারুন' রাখা হয়েছিল পূণ্যবান ব্যক্তি হারূন (আ) এর নামে। কেননা, তৎকালীন যুগে মানুষ নেককার মানুষদের নামে নাম রাখতো।

উপরন্তু, ঈসা(আ) এর মা মরিয়ম (আ)এর যে বংশ তালিকা বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, মরিয়ম (আ) ছিলেন, হারূন (আ)এর বংশধর। ফলত, ঈসা (আ) এর মা মরিয়ম (আ) কে 'হারুন ভগ্নী' বলা অসংগত নয়, কারন আরবিতে 'উখতুন' বা 'ভগ্নী' শব্দটি 'বোন', 'কন্যা' বা 'বংশধর' অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

মসজিদুল আকসা সংক্রান্ত ইতিহাস

কুরআন দাবি করেছে যে, মুহাম্মাদ তার জীবদ্দশায়, বিশেষত ৬২০-৬২২ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালের মধ্যে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা নামের ঐতিহাসিক মসজিদটি ভ্রমণ করেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, এই মসজিদটি সুলাইমান (আ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদের ভ্রমণের অনেক আগেই সেটি রোমানদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

'পবিত্র সেই সত্তা যিনি তার বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত'। (কুরআন, ১৭ঃ১)

ইসলামি চিন্তাবিদগণ মসজিদের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা থেকে লক্ষণীয় যে, "মসজিদ" হচ্ছে এমন স্থান, যা ইবাদাত ও সেজদার জন্য উতসর্গীকৃত হয়েছে, হোক সেটা প্রাচীরবেষ্টিত, অথবা প্রাচীরহীন কোন জায়গা।' সুলাইমান (আ) কর্তৃক পুনপ্রতিষ্ঠিত মসজিদুল আকসার অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও উক্ত স্থানটি তখনও চিহ্নিত ছিল এবং উপাসনাকারীগণ সেখানে নামাজ ও অন্যান্য উপাসনা করতেন। ফলে, কুরআন এখানে কোন ঐতিহাসিক অসত্য উপস্থাপন করে নি বলে ইসলামি ব্যাখ্যাকারগণ সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Francis E. Peters (1994). Muhammad and the Origins of Islam. SUNY Press. pp. 257–. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৯১৪-১৮৭৫-৮. 
  2. ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া। কুরআনুল কারীম (অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর)। বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। 
  3. http://www.islamic-awareness.org/Ha[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]... }}
  4. [দেখুনঃ মুসনাদ আহমাদ ৬/২৬৯, হাদিস নং ২৬৩৫৯]
  5. মুসতাদরাক আল হাকিম, হাদিস ৮১৮৪; ইমাম হাকিম(র) একে সহীহ বলেছেন 
  6. সুনানুল কুবরা বাইহাকী ৮/২১১ এবং সুনানুল কুবরা নাসাঈ হাদিস নং ৭১৪৮।আলবানী(র)এর মতে সহীহ 
  7. তারিখুল মাদিনাহ। ইবন শাব্বাহ। পৃষ্ঠা ৯৯৭। 
  8. Medieval science, technology, and medicine : an encyclopedia। Glick, Thomas F., Livesey, Steven John, 1951-, Wallis, Faith.। New York: Routledge। ২০০৫। আইএসবিএন 0415969301ওসিএলসি 61228669