কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়
কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয় বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি এমপিওভুক্ত কলেজ।[১] ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[১][২] কলেজটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা মহানগরের ধর্মপুর এলাকায় অবস্থিত। ২০২১ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখানে মোট ৮৯০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে।[৩]
কুমিল্লা মহিলা কলেজ | |
![]() প্রাতিষ্ঠানিক মনোগ্রাম | |
অন্যান্য নাম | কুমিল্লা মহিলা কলেজ |
---|---|
নীতিবাক্য | জ্ঞানই আলো |
ইআইআইএন | ১০৫৮২৩ |
কলেজ কোড | ৭৯০০ |
ধরন | এমপিও-ভুক্ত বেসরকারি কলেজ |
স্থাপিত | ১৯৮৪ |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা |
অধ্যক্ষ | মোঃ আসাদুর রশিদ |
শিক্ষার্থী | ৮৯০ |
ঠিকানা | ধর্মপুর, আদর্শ সদর , , ৩৫০০ , ২৩°২৭′৫৪″ উত্তর ৯১°০৯′৫২″ পূর্ব / ২৩.৪৬৪৯৬০৩° উত্তর ৯১.১৬৪৪০২৩° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে |
পোশাকের রঙ | সাদা |
![]() |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৮০-এর দশকে কুমিল্লা শহরে নারীদের জন্য মানসম্মত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কুমিল্লা শহরের একমাত্র নারী শিক্ষার্থীদের কলেজ কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে আসন স্বল্পতার কারণে অনেক ছাত্রী মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। এই প্রেক্ষাপটে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিকল্প কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর উদ্যোগে এবং কুমিল্লার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার মূল ধারায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সমাজে তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করা।[৪][৫] প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে অস্থায়ী অনুমোদন লাভের পর কুমিল্লার ফরিদা বিদ্যায়তনের কয়েকটি অব্যবহৃত কক্ষে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজের অধ্যাপক ও সাংবাদিক দেলোয়ার জাহিদের অনুরোধ ও প্রচেষ্টায় কলেজের স্থায়ী অনুমোদন লাভের বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান এবং কয়েকজন মন্ত্রী সুপারিশপত্র (ডি.ও লেটার) প্রেরণ করেন ফলে কলেজের স্থায়ী অনুমোদন প্রাপ্তি সম্ভব হয়। কুমিল্লা মহিলা কলেজের সহায়তায় তৎকালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সমাজকণ্ঠ পত্রিকায় একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়।[৬] পরবর্তীতে কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের সন্নিকটে ঐতিহ্যবাহী ধর্মসাগরের দক্ষিণ পাড়ে বাদুরতলায় কলেজের জন্য সরকারের মালিকানাধীন একটি ভবন ও জমি লিজ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এই লিজকৃত ক্যাম্পাসেই ১৯৯৩ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত শিক্ষকবৃন্দ এবং কুমিল্লার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহায়তায় সেসময় প্রতিষ্ঠানটির লিজকৃত জরাজীর্ণ ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে ধর্মসাগরের দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত লিজকৃত সরকারি জমিতে বহু বছর ধরে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অবশেষে ২০২০ সাল থেকে শহরের ধর্মপুর এলাকায় কলেজের নিজস্ব মালিকানাধীন জমিতে গড়ে তোলা স্থায়ী ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়।[৭]
অবস্থান
সম্পাদনাকলেজটির স্থায়ী প্রাঙ্গণ কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকায়, শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০ গজ দক্ষিণে কোল্ডস্টোরেজ সড়কে অবস্থিত। সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নে কলেজের নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমির ওপর আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করে এই প্রাঙ্গণ গড়ে তোলা হয়েছে। স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকায়, ঐতিহ্যবাহী ধর্মসাগর এর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত অস্থায়ী প্রাঙ্গণ থেকে।[৮]
শিক্ষাক্রম ও প্রশাসন
সম্পাদনাকলেজটি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠদান করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করার সময় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক—এই তিনটি বিভাগের যেকোন একটি নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক। নির্ধারিত শর্ত পূরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজ পছন্দমত বিভাগ নির্বাচন করে ভর্তি হন।[৯]
কলেজের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, কুমিল্লা এর অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কলেজটিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ চালু রয়েছেঃ
আবশ্যিক
- বাংলা
- ইংরেজি
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিজ্ঞান
- রসায়ন
- জীববিজ্ঞান
- পদার্থবিজ্ঞান
- উচ্চতর গণিত
মানবিক
- পৌরনীতি ও সুশাসন
- অর্থনীতি
- যুক্তিবিদ্যা
- ইসলামের ইতিহাস
- সমাজকর্ম
ব্যবসায় শিক্ষা
- হিসাববিজ্ঞান
- ব্যবস্থাপনা
- পরিসংখ্যান
- উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন[২]
কলেজ পরিচালনার জন্য ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি গভর্নিং বডি রয়েছে, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর বিধি ও প্রবিধান অনুসরণ করে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা এর অনুমোদনে গঠিত।
বর্তমানে কলেজে ১ জন অধ্যক্ষ, ৭ জন সহকারী অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক এবং ১১ জন প্রভাষক নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।[১০] শিক্ষকগণ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক নিবন্ধিত ও সুপারিশপ্রাপ্ত।[১১]
অধ্যক্ষবৃন্দের তালিকা
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন যে ব্যক্তিবর্গ:[৭]
ক্রম | নাম | মেয়াদকাল | |
---|---|---|---|
শুরু | পর্যন্ত | ||
১ | জনাব মোহাম্মদ আলী | ০২-০৭-১৯৮৪ | ১৫-১১-১৯৮৫ |
২ | জনাব মোসলেহ উদ্দিন | ১৬-১১-১৯৮৫ | ২৯-০৫-১৯৯০ |
৩ | জনাব আফরোজা খানম (ভারপ্রাপ্ত) | ১৮-০৬-১৯৯০ | ২৪-০৫-১৯৯১ |
৪ | জনাব সিদ্দিকুর রহমান | ২৫-০৫-১৯৯১ |
২৩-০১-১৯৯৮ |
৫ | জনাব আফরোজা খানম | ২৪-০১-১৯৯৮ | ০১-০৯-২০০৪ |
৬ | জনাব রাফেয়া আক্তার (ভারপ্রাপ্ত) | ০২-০৯-২০০৪ | ২২-০২-২০০৮ |
৭ | জনাব রাফেয়া আক্তার | ২৩-০২-২০০৮ | ০৬-০৩-২০১৫ |
৮ | জনাব ফাতেমা বেগম (ভারপ্রাপ্ত) | ০৬-০৩-২০১৫ | ০৭-০৩-২০১৫ |
৯ | জনাব মো: আসাদুর রশিদ | ০৮-০৩-২০১৫ | বর্তমান |
সহশিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাপাঠদানের পাশাপাশি কলেজে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশ গবেষণা, বিজ্ঞানচর্চা, বিতর্কসহ নানা সংঘ গড়ে তোলা হয়েছে। বছরজুড়ে কলেজে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসবসহ বিভিন্ন উৎসব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে পালন করা হয়। পাশাপাশি প্রতি বছর শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়।
কলেজের একটি পাঠাগার রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বইসহ নানা প্রকাশনা সরবরাহ করা হয়। এছাড়া আধুনিক সরঞ্জামসমৃদ্ধ একটি সুসজ্জিত কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক শিক্ষার জন্য পৃথক আধুনিক ল্যাব রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য এসব ল্যাব ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড অধিভুক্ত কলেজ তালিকা" (পিডিএফ)। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ "কুমিল্লা জেলার সরকারি ওয়েবসাইট"। cumilla.gov.bd। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের তথ্যাবলী" (পিডিএফ)। চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি পোর্টাল। ১১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২৫।
- ↑ "সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত"। রূপালী দেশ। ২৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "দেলোয়ার জাহিদ ও একাত্তরের একটি সংগ্রামী জীবনের গল্প"। দৈনিক আমাদের কুমিল্লা। ১৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০২৫।
- ↑ জাহিদ, দেলোয়ার। "আমার জীবন আমার বার্তা"। বিডিনিউজ টুয়েন্টি-ফোর ডট কম। ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০২৫।
- ↑ ক খ "History of College"। কুমিল্লা মহিলা কলেজ।
- ↑ "কুমিল্লা মহিলা কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন"।
- ↑ "একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা, ২০২৪" (পিডিএফ)। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট। ১৮ মে ২০২৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২৫।
- ↑ "তথ্য কমিশন, আরটিআই বাংলাদেশ"।
- ↑ "নতুন নিয়মে এমপিওভুক্তি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ"। সাম্প্রতিক দেশকাল। ৩ আগস্ট ২০২১। ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২৫।