কুতুবদিয়া উপজেলা
কুতুবদিয়া বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি একটি দ্বীপ, যা কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।
কুতুবদিয়া | |
---|---|
উপজেলা | |
বাংলাদেশে কুতুবদিয়া উপজেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২১°৪৯′০.১২″ উত্তর ৯১°৫১′২৯.৮৮″ পূর্ব / ২১.৮১৬৭০০০° উত্তর ৯১.৮৫৮৩০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | কক্সবাজার জেলা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯১৭ |
সংসদীয় আসন | ২৯৫ কক্সবাজার-২ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | আশেক উল্লাহ রফিক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ২১৫.৮০ বর্গকিমি (৮৩.৩২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ১,৩৩,৮৮৮ |
• জনঘনত্ব | ৬২০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৭৭% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৪৭২০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ২২ ৪৫ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
আয়তনসম্পাদনা
কুতুবদিয়া উপজেলার আয়তন ২১৫.৮০ বর্গ কিলোমিটার।[২]
অবস্থানসম্পাদনা
কক্সবাজার জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশে ২১°৪৩´ থেকে ২১°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৯১°৫০´ থেকে ৯১°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে কুতুবদিয়া উপজেলার অবস্থান। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। এর উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ তিন দিকেই বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত এবং পূর্ব দিকে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মহেশখালী উপজেলা, পেকুয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা অবস্থিত।[৩]
প্রশাসনিক এলাকাসম্পাদনা
১৯১৭ সালে মহেশখালী থানা থেকে পৃথক করে কুতুবদিয়া থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।[৩] এ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে এবং এ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কুতুবদিয়া থানার আওতাধীন।
ইতিহাস ও নামকরণসম্পাদনা
দীর্ঘদিন ধরে কুতুবদিয়া দ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ দ্বীপ সমুদ্রের বুক থেকে জেগে উঠে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ধারণা করা হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ দ্বীপে মানুষের পদচারণা। হযরত কুতুবুদ্দীন নামে এক কামেল ব্যক্তি আলী আকবর, আলী ফকির, এক হাতিয়া সহ কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজ বিতাড়িত করে এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। অন্যদিকে আরাকান থেকে পলায়নরত মুসলমানেরা চট্টগ্রামের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ভাগ্যান্বেষণে উক্ত দ্বীপে আসতে থাকে। জরিপ করে দেখা যায়, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া অঞ্চল থেকে অধিকাংশ আদিপুরুষের আগমন। নির্যাতিত মুসলমানেরা কুতুবুদ্দীনের প্রতি শ্রদ্ধান্তরে কুতুবুদ্দীনের নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ করেন কুতুবুদ্দীনের দিয়া, যা পরবর্তীতে কুতুবদিয়া নামে স্বীকৃতি লাভ করে।[৫] দ্বীপকে স্থানীয়ভাবে দিয়া বা ডিয়া বলা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে (২০১৭) এই দ্বীপের বয়স ৬০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এই দ্বীপের আয়তন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে এবং এখনও সাগরের ঢেউয়ের প্রভাবে ভেঙ্গে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি।
জনসংখ্যার উপাত্তসম্পাদনা
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুতুবদিয়া উপজেলার লোকসংখ্যা ১,৩৩,৮৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৯,৭৩৮ জন এবং মহিলা ৬৪,১৫০ জন।[১] এ উপজেলার মোট জনসংখ্যার ৯৩% মুসলিম, ৬.৯৬% হিন্দু এবং ০.০৪% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে।[৩]
শিক্ষাসম্পাদনা
কুতুবদিয়া উপজেলার সাক্ষরতার হার ৭৭%।[৩] এ উপজেলায় ১টি সরকারি কলেজ, ১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বালিকা), ১টি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি আলিম মাদ্রাসা, ২টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,৭টি দাখিল মাদ্রাসা,১টি নিম্ন মাধ্যমিক (বালিকা) বিদ্যালয় ও ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে,৩২টি কিন্ডারগার্টেন
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
স্বাস্থ্যসম্পাদনা
কুতুবদিয়া উপজেলায় ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৬টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে।[৩]
যোগাযোগ ব্যবস্থাসম্পাদনা
কক্সবাজার জেলা সদর বা বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চল থেকে কুতুবদিয়া উপজেলায় একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা নৌপথে। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম লঞ্চ, স্টীমার, ছোট ডেনিস বোট।
খাল ও নদীসম্পাদনা
কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ তিন দিকেই বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল।[৩]
হাট-বাজারসম্পাদনা
কুতুবদিয়া উপজেলায় মোট হাট-বাজার ১২টি। এর মধ্যে বড়ঘোপ বাজার এবং ধুরুং বাজার উল্লেখযোগ্য।[৩]
দর্শনীয় স্থানসম্পাদনা
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পাদনা
- কুতুবউদ্দিন (রহ.) [যার নামে কুতুবদিয়া দ্বীপের নামকরণ]
- আলী আকবর (রহ.)
- আলী ফকির (রহ.)
- শাহ্ আবদুল মালেক আল কুতুবী
- মাষ্টার তালেব উল্লাহ
- মাস্টার আহমদ উল্লাহ
- মৌলানা আফজল আলম
- এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী
প্রাকৃতিক দুর্যোগসম্পাদনা
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কুতুবদিয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। ১৫৬৯ সালের জলোচ্ছ্বাস, ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প, ১৭৯৫ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৮৭২ সালের মহাপ্রলয়, ১৮৯৭ সালের জলোচ্ছ্বাস (মগীর তুফান), ১৯০৫ সালের টর্নেডো, ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসে এ এলাকার বেশ সংখ্যক মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। একসময় এ উপজেলার একটি বিরাট অংশ সাগর বক্ষে বিলীন হয়ে যায়।[৩]
জনপ্রতিনিধিসম্পাদনা
- সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৭] | সংসদ সদস্য[৮][৯][১০][১১][১২] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৯৫ কক্সবাজার-২ | কুতুবদিয়া উপজেলা এবং মহেশখালী উপজেলা | আশেক উল্লাহ রফিক | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
জেলা পরিষদ সদস্যঃ মাস্টার আহমদ উল্লাহ [১৩] , সাবেক সভাপতি, কুুুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, সাবেক চেয়ারম্যান, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ।
- উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান[১৪] | ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান[১৫] | হুমায়ুন কবির হায়দার |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান[১৬] | হাসিনা আক্তার বিউটি |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা[১৭] | নুরের জামান চৌধুরী |
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "এক নজরে সাগরকন্যা কুতুবদিয়া"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "ভৌগোলিক পরিচিতি"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "কুতুবদিয়া উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org।
- ↑ "ইউনিয়ন সমূহ - কুতুবদিয়া উপজেলা - কুতুবদিয়া উপজেলা"। www.kutubdia.coxsbazar.gov.bd। ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "কুতুবদিয়া উপজেলার পটভূমি - কুতুবদিয়া উপজেলা - কুতুবদিয়া উপজেলা"। www.kutubdia.coxsbazar.gov.bd। ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "দর্শনীয়স্থান - কুতুবদিয়া উপজেলা - কুতুবদিয়া উপজেলা"। www.kutubdia.coxsbazar.gov.bd। ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- ↑ "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জেলা পরিষদ নির্বাচনে মাষ্টার আহমদ উল্লাহ সদস্য পদে বিজয়ী ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬"। ১১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২১। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 59 (সাহায্য) - ↑ "জনাব ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী - কুতুবদিয়া উপজেলা - কুতুবদিয়া উপজেলা"। www.kutubdia.coxsbazar.gov.bd। ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "কুতুবদিয়া উপজেলা মাসিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত"। ৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান - কুতুবদিয়া উপজেলা - কুতুবদিয়া উপজেলা"। www.kutubdia.coxsbazar.gov.bd। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "- কুতুবদিয়া উপজেলা - কুতুবদিয়া উপজেলা"। www.kutubdia.coxsbazar.gov.bd। ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।