কুড়িমার[১] পান্জাবি বাগধারায় একটি শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ কন্যাঘাতক।[২][৩][৪] “শিখ রিহাত মর্য্যাদা” সহ বিভিন্ন রিহাত-নামা বা নীতি-নির্দেশে এই প্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।[৫][৬] অধুনা প্রথাটি বিলুপ্ত হলেও শব্দটি বর্তমান কন্যাভ্রূণ হত্যার দ্যোতক ধরা যেতে পারে, যার ফলে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে নারী পুরুষের অনুপাত সংকটসীমায় এসে দাঁড়িয়েছে।[২]

পর্যালোচনা সম্পাদনা

মধ্যযুগীয় অতীতে পান্জাবসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু সম্প্রদায়ে কন্যাসন্তান হত্যা ছিল একটি স্বীকৃত প্রথা। কন্যাসন্তানকে ঘিরে নানা আর্থসামাজিক সমস্যা এই বর্বর প্রথার উদ্ভবের কারণ। কোনো ধর্মীয় অনুশাসন, দর্শন বা অধ্যাত্মচিন্তা-ভাবনায় কুড়িমার প্রথার সমর্থন পাওয়া যায় না।[৪][৩][৭] নানক প্রবর্তিত শিখধর্মে পুরোহিততন্ত্র বা পুরুষতন্ত্রের প্রাধান্য নেই[৮]। তবু শিখসমাজ বহুদিন এই ঘৃণ্য প্রথাকে অপসারণ করতে পারেনি।

১৬৯৯ খৃষ্টাব্দে[৬] গুরু গোবিন্দ সিং তাঁর শিষ্যদের দীক্ষিত করার সময় স্পষ্ট আজ্ঞা দিয়েছিলেন তারা যেন সমাজের পাঁচটি বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গে একাসনে উপবেশন, একত্রে আহার ও বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকে। পাঁচটি গোষ্ঠী হল: মিনা ধিরমাল,—যারা গুরু অর্জুন সিংএর জ্যেষ্ঠভ্রাতা ও শত্রু পৃথ্বীমালের বংশধর, মুসান্দিয়া,—যারা নিজেদের গুরু মনে করে ও বিদ্বেষভাব প্রচার করে, রাম রায়ি,—যারা গুরু তেগবাহাদুরের হত্যাকারী রাম রায়ের বংশধর, ভান্ডানি,—যারা মস্তক ও শ্মশ্রূ মুণ্ডন করে এবং কুড়িমার,—যারা নিজেদের কন্যা সন্তানকে হত্যা করে।[৬] অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর রিহাতনামাতেও কন্যাসন্তান হত্যার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অনুমান করা হয় পন্থসমাজে সর্বত্র তখনো সেই প্রথার সম্পূর্ণ দূরীকরণ সম্ভব হয়নি।[৫][৯][১] ১৯৫০ সালে প্রকাশিত শিখ রিহাত মর্যাদায় একে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Horace Hayman Wilson (১৮৬২)। Essays and Lectures Chiefly on the Religion of the Hindus by the Late H. H. Wilson Miscellanuous essays and lectures. 2 (English ভাষায়)। National Central Library of Florence। Trubner। পৃষ্ঠা ১৪৮–১৪৯। 
  2. Patel, Tulsi (২০০৭)। Sex-Selective Abortion in India: Gender, Society and New Reproductive Technologies (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications। পৃষ্ঠা ২৪২। আইএসবিএন 978-0-7619-3539-1 
  3. Oldenburg, Veena Talwar; Talwar, Veena (২০১০)। Dowry Murder: Reinvestigating A Cultural (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Books India। পৃষ্ঠা ২৩। আইএসবিএন 978-0-14-306399-5 
  4. McLeod, W. H. (২০০৯-০৭-২৪)। The A to Z of Sikhism (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা ১১৯। আইএসবিএন 978-0-8108-6344-6 
  5. Craufurd, Q. (Quintin) (১৮১৭)। Researches concerning the laws, theology, learning, commerce, etc. of ancient and modern India। New York Public Library। London, T. Cadell and W. Davies। পৃষ্ঠা ৩৪৪ 
  6. Dahiya, Amardeep S. (২০১৪-০৪-১৪)। Founder of the Khalsa: The Life and Times of Guru Gobind Singh (ইংরেজি ভাষায়)। Hay House, Inc। পৃষ্ঠা ১৪৬। আইএসবিএন 978-93-81398-61-6 
  7. Mohan, Kamlesh (২০০৬)। Towards Gender History: Images, Identities, and Roles of North Indian Women with Special Reference to Panjab (ইংরেজি ভাষায়)। Aakar। পৃষ্ঠা ৫২। আইএসবিএন 978-81-87879-65-7 
  8. Pashaura Singh; Louis E. Fenech (27 March 2014). The Oxford Handbook of Sikh Studies. OUP Oxford. p. 620. ISBN 978-0-19-100411-7. Retrieved 14 November 2015.
  9. Irvine, William (১৯৭১)। Later Mughal (ইংরেজি ভাষায়)। Atlantic Publishers & Distri। পৃষ্ঠা ৮১। 
  10. Singh, Pashaura; Fenech, Louis E. (২০১৪-০৩-২৭)। The Oxford Handbook of Sikh Studies (ইংরেজি ভাষায়)। OUP Oxford। পৃষ্ঠা ৬২০। আইএসবিএন 978-0-19-100411-7