কিউরিং (খাদ্য সংরক্ষণ)

খাদ্য সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি

কিউরিং হল খাদ্য সংরক্ষণের অন্যতম একটি সংরক্ষণ ব্যবস্থা যেখানে খাদ্যে উপস্থিত পানির কনাসমূহ লবণ (কিউরিং এজেন্ট) দ্বারা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়৷কারণ এ সময় খাদ্যে কঠিন পদার্থের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং পানির ক্রিয়াশীলতা কমে যায়৷ এভাবে খাদ্যে পঁচনকারী অণুজীবের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়। কিউরিং মূলতঃ মাংস, মাছ ও সবজির জন্য করা হয়। কিউরিং শুধু খাদ্য সংরক্ষণই করেনা বরং খাদ্যে সুঘ্রাণও যোগ করে ।কিউরিংকে প্রাচীনকালের সংরক্ষণ ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে এবং উনিশশতকের শেষ পর্যন্ত মাছ ও মাংস সংরক্ষণের জন্য এটা ছিল প্রার্থমিক পদ্ধতি।   ডিহাইড্রেশন  ছিল খাদ্য কিউরিংয়ের একদম আদিরূপ। অনেক ধরনের কিউরিং আছে যেগুলো ধুমায়নমশলাযোগকরণ, কুকিং  অথবা  চিনি, নাইট্রেট, নাইট্রাইট এর একত্রে সংযোজনকে অন্তর্ভুক্ত করে।

কিউরিং

মাংস সংরক্ষণ বলতে সাধারণভাবে (গবাদিপশু, শিকারি প্রাণী এবং পোল্ট্রি এর মাংস) কাঁচা, আংশিক রান্না বা পরিপূর্ণ রান্না মাংসের কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন স্বাদ, রং, গঠন ইত্যাদি ভক্ষণযোগ্য ও নিরাপদ রাখার জন্য কতিপয় ব্যবস্থার সমন্বিতরূপকে বুঝায়। কিউরিং হাজার হাজার বছরধরে মাংস সংরক্ষণের জন্য একটি প্রধানতম ব্যবস্থা হিসেবে চলে আসছে। যদিও আধুনিক উন্নত ব্যবস্থা যেমন রেফ্রিজারেশন (হিমায়ণ), কৃত্তিম সংরক্ষক এর ব্যবহার কিউরিংয়ের পরিপূরক ও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে শুরু হয়েছে ।

মাংস সংরক্ষণ যেমন কিউরিং প্রধানত রোগ প্রতিরোধ ও খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করতে প্রচলন করা হয়েছিল কিন্তু আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা আবিস্কারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বে আজ কিউরিংয়ের দ্বারা মাংস সংরক্ষণের পরিবর্তে এর সাংস্কৃতিক মূল্য এবং কিউরিং করা মাংসের কিছু উন্নত বৈশিষ্ট্য যেমন গ্রহণযোগ্য স্বাদ ও গঠনের কারণে এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। কম উন্নত দেশে কিউরিং মাংস উৎপাদন, পরিবহন ও প্রাপ্যতার প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিছু প্রথাগত কিউরড মাংস (যেমন অথেনটিক পারমা হ্যাম এবং কিছু অথেনটিক স্প্যানিশ চরিজো এবং ইটালিয়ান সালামি) শুধু লবণ দিয়ে কিউরিং করা হয়। বর্তমানে পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং সোডিয়াম নাইট্রাইট (লবণের সাথে) মাংস কিউরিংয়ের অতি সাধারণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কারণ তারা মায়োগ্লোবিন এর সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিজেনের প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করে মায়োগ্লোবিনের বর্ণ লাল করে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে এই ধরনের রাসয়নিক উপাদানগুলি এমন কিছু ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথে বাঁধা দেয় যেগুলো বটুলিজম রোগের জন্য দায়ী। অনেক সময় খাবার লবণের সাথে নাইট্রেট ও নাইট্রাইটের মিশ্রণ (কিউরিং সল্ট) গোলাপি রং দ্বারা রঞ্জিত করা হয় যাতে সাদা খাবার লবণ থেকে একে আলাদা করা যায় । শুধু খাবার লবণ অথবা শুধু নাইট্রেট বা নাইট্রাইট সাধারণত কিউরিংয়ে ব্যবহৃত হয় না। সোডিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রাইট এবং পটাশিয়াম নাইট্রেট প্রাকৃতিকভাবেই গোলাপি ।

কিউরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পাদনা

যদি সংরক্ষণ করা না হয় তাহলে অপরিশোধিত মাংস নষ্ট হয়।