কালো হাঁস
কালো হাঁস (বৈজ্ঞানিক নাম: Aythya fuligula) বা ঝুঁটি হাঁস Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্রের অন্তর্গত Aythya গণের মাঝারি আকৃতির এক প্রজাতির ডুবুরি হাঁস।[১] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার।[২] গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. কালো হাঁসকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বিশ্বে ২৬ লাখ থেকে ২৯ লাখ পূর্ণবয়স্ক কাল হাঁস আছে।[২]
কালো হাঁস Aythya fuligula | |
---|---|
![]() | |
পুরুষ ও স্ত্রী কালো হাঁস | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Anseriformes |
পরিবার: | Anatidae |
উপপরিবার: | Aythyinae |
গণ: | Aythya |
প্রজাতি: | A. fuligula |
দ্বিপদী নাম | |
Aythya fuligula (Linnaeus, 1758) |
বিস্তৃতিসম্পাদনা
প্রায় সমগ্র ইউরেশিয়া ও আফ্রিকার কিছু কিছু অঞ্চল পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। স্বভাবে এরা প্রধানত পরিযায়ী। তবে মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে কালো হাঁস সাধারণত স্থায়ী। বাংলাদেশ আর ভারতে যে কালো হাঁস দেখা যায় তারা পরিযায়ী হয়ে আসে। শীতের সময়ে ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ সাগর, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ আর এশিয়ার পশ্চিমাংশে এদের সবচেয়ে বড় দলগুলোর দেখা মেলে।[২][৩]
বিবরণসম্পাদনা
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ কালো হাঁস একমাত্র মাঝারি হাঁস যাকে দেখতে সাদাকালো মনে হয়। পুরুষ হাঁসের সারা দেহ কালো, কেবল পেটের দিক ও ডানার নিচের দিক বাদ দিয়ে যা ধবধবে সাদা। এছাড়া কপোলের ক্ষুদে ক্ষুদে পালকগুলো কাল, তবে রোদ বা আলো পড়লে চিক চিক করে। পুরুষ হাঁসের ঘাড়ের উপর নুইয়ে পড়া ঝুঁটি থাকে। স্ত্রী হাঁসের আকৃতি পুরুষ হাঁসের মতই, তবে পালক বাদামী বা তামাটে মেশানো বাদামী। উভয় হাঁসেরই চঞ্চু নীলচে-ধূসর, চঞ্চুর সম্মুখভাগে ত্রিকোণাকৃতির কালো দাগ থাকে। স্ত্রী হাঁসের চঞ্চুর নিচের কিছু পালক সাদা। এরা দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৪৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়।[১] ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ১.১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়।[৪]
আবাসস্থলসম্পাদনা
তৃণসম্বৃদ্ধ নিম্নভূমি ও জলাশয় কালো হাঁসের প্রিয় আবাস। বিশেষত যেসব জলাশয়ের গভীরতা ৩-৫ মিটার সেসব জলাশয়ে এরা বসবাস করে, ১৫ মিটারের বেশি গভীর জলাশয় এড়িয়ে চলে। মিঠাপানির হ্রদ, বড় বিল ও দিঘী, কম স্রোতসম্পন্ন প্রশস্ত নদী, জনহীন চর, উপযুক্ত আবাসযুক্ত উপকূলীয় এলাকা, সামুদ্রিক দ্বীপ এবং মোহনাগুলোতে এদের প্রায়ই দেখা যায়। স্বাভাবিক বাসস্থানের পানি যদি জমে বরফ হয়ে যায় বা এরকম বড়সড় বিপদের সম্মুখীন হলেই কেবল কালো হাঁস শক্তিশালী স্রোতযুক্ত জলাশয় বা গভীর সমুদ্রে নামে।[২]
আচরণ ও প্রজননসম্পাদনা
কেবল মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে কালো হাঁস সাধারণত স্থায়ী, পরিযায়ী নয়। অন্যান্য অঞ্চলের হাঁস অধিকাংশই পরিযায়ী স্বভাবের। পরিযায়ী হাঁসেরা এপ্রিলের শেষে প্রজনন অঞ্চলে ফিরে আসে। এসময় এরা পৃথক জোড়ায় অথবা ছাড়াছাড়া ভাবে একই দলে ঘুরে বেড়ায়। এসময় এরা বাসা বানায় ও ডিম পাড়ে।[২] স্ত্রী হাঁস বাসায় ৬ থেকে ১৪টি সবজে-ধূসর ডিম পাড়ে। শুধুমাত্র স্ত্রী হাঁস ডিমে তা দেয়। ডিম পাড়ার ২৩-২৫ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়।[৪]
অনেকসময় একই জলাশয়ে শ’খানেক বাসা দেখা যায়, যদিও বাসাগুলো কলোনি করে থাকে না। ডিম ফুটে গেলে পুরুষ হাঁসেরা দল বেঁধে উষ্ণতর অঞ্চলে চলে যায়। এটা জুনের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত ঘটে। স্ত্রী হাঁসের পরিযায়ন প্রায় এক মাস পরে ঘটে। শীতের সময়ে অত্যধীক দলবদ্ধভাবে থাকে, একেকটি দলে হাজারের মত সদস্য একসাথে ঘুরে বেড়ায়।[২]
বাসাসম্পাদনা
কালো হাঁসেরা তৃণ দিয়ে বাসা বানায়। পানিতে ভাসমান অবস্থায়, উঁচু ঘাসসমৃদ্ধ ভূমিতে অথবা দ্বীপে এরা বাসা করে। অনেকসময় গঙ্গাকবুতর ও গাংচিলের সাথে উন্মুক্ত ভূমিতেও বাসা বানায়, বিশেষ করে শিকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। বাসা ডাঙায় হলে তা সাধারণত পানির খুব কাছে হয়।[২]
খাদ্যাভ্যাসসম্পাদনা
কালো হাঁস পানিতে ডুব দিয়ে শামুক, ঝিনুক, গুগলি ও অন্যান্য মলাস্ক খায়, এগুলো এদের প্রধান খাদ্য। এছাড়া এরা জলজ উদ্ভিদের বীজ ও মূলও খায়। পানিতে ভাসমান পোকামাকড়, উদ্ভিদ ও জলজ আগাছা এদের খাদ্য। কালো হাঁস পানির গভীরের জলজ পোকামাকড়, উভচর ও ছোট মাছ খায়।
চিত্রশালাসম্পাদনা
Immature males, Farmoor Reservoir, Oxfordshire
Male, Farmoor Reservoir, Oxfordshire
Female, WWT London Wetland Centre
Eggs in the collection of Museum Wiesbaden
Flock of 2000 tufted ducks in Ystad port, 16 January 2016
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ১১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "BirdLife International এ কালো হাঁস বিষয়ক পাতা"। ৩১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ "Birdguides, Tufted Duck, Aythya fuligula"। ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ ক খ "WAZA, কালো হাঁস বিষয়ক তথ্যাবলী"। ৭ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২।