কাঠালিয়া উপজেলা

ঝালকাঠি জেলার একটি উপজেলা

কাঠালিয়া উপজেলা বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা।

কাঠালিয়া
উপজেলা
মানচিত্রে কাঠালিয়া উপজেলা
মানচিত্রে কাঠালিয়া উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২২°২৪′০″ উত্তর ৯০°৭′৩০″ পূর্ব / ২২.৪০০০০° উত্তর ৯০.১২৫০০° পূর্ব / 22.40000; 90.12500 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
জেলাঝালকাঠি জেলা
আয়তন
 • মোট১৫২.০৮ বর্গকিমি (৫৮.৭২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা []
 • মোট১,২৪,২৭১
 • জনঘনত্ব৮২০/বর্গকিমি (২,১০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৫.৩%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৮৪৩০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ৪২ ৪৩
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ভৌগোলিক অবস্থান

সম্পাদনা

কাঠালিয়া উপজেলার উত্তরে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলাপিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা, পূর্বে বিষখালী নদী, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলামঠবাড়িয়া উপজেলা। বিষখালী এ উপজেলার প্রধান নদী। উপজেলার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত বিষখালী নদী হতে উৎপন্ন অসংখ্য খাল এ এলাকায় জালের মতো ছড়িয়ে আছে। এ উপজেলার অধিকাংশ জমি নিচু যা বিষখালী নদীর জোয়ারে প্লাবিত হয়। ছোনাউটা বিল এ এলাকার উল্লেখযোগ্য একটি বিল।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

জনশ্রুতি আছে যে, বৃটিশ শাসন আমলে কাঠালিয়ায় বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের হাট বসতো। তাই এর নামকরণ করা হয় কাঠালিয়া।[] তবে নামকরণ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। অনেকে মনে করেন এ এলাকায় কাঠ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জায়গা হতে কাঠুরিয়ারারা আসত, কাঠুরিয়া হতে এ এলাকার নাম কাঠালিয়া হয়েছে। এছাড়া এ এলাকার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদীতে প্রাপ্ত হলদে ডিমওয়ালা কাঠালি চিংড়ি হতে কাঠালিয়া উপজেলার নামকরন হয়েছে বলেও অনেক প্রবীণ ব্যক্তি মনে করেন।

এ এলাকা বৃটিশ আমলের পূর্বে মোগল আমলে সৈয়দপুর পরগণার অংশ ছিল। একজন সুপার অব নায়েবের মাধ্যমে কাঠালিয়া, ভান্ডারিয়া, বামনা, বেতাগী, মঠবাড়িয়া ও বাকেরগঞ্জ উক্ত পরগণার অধীনে ছিল। এটি এক সময় কাঠালিয়া-পিরোজপুর মহাকুমার অধীনে ছিল। তখন কাঠালিয়া-ভান্ডারিয়া মিলে একটি নির্বাচনী এলাকা ছিল। পরে ঝালকাঠি মহাকুমা উন্নীত করায় তখন এটি কাঠালিয়া-ঝালকাঠি মহাকুমার অধীনে আসে এবং কাঠালিয়া-রাজাপুর একটি নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচালিত হয়। বর্তমান কাঠালিয়া উপজেলার অধীন আমুয়া ইউনিয়নে একটি জলথানা ছিলো, প্রশাসনিক অফিসগুলোর মধ্যে খাদ্যগুদাম, হাসপাতাল, সাব রেজিষ্ট্রার অফিস আমুয়াতে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস কাঠালিয়া সদরে স্থানান্তর করা হয় এবং খাদ্যগুদাম ও হাসপাতাল আমুয়ায় থেকে যায়। এ এলাকায় চোর ডাকাতের উৎপাত সৃষ্টি হওয়ায় উক্ত জলথানা কাঠালিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৭ সনে কাঠালিয়া পুলিশ স্টেশন স্থাপিত হয়। ১৯৮৬ সনে উপজেলা সৃষ্টি হয়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঠালিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সাংসদ মোঃ এনায়েত হোসেন খান ও মোঃ নুরুল ইসলাম ভান্ডারী কাঠালিয়ার বীরজনতাকে সুসংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে কাঠালিয়ার বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ ভারত ও সুন্দরবনে চলে যান এবং সেখান থেকে গ্রুপ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বেশ কিছু যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে ২ নভেম্বর বীরমুক্তিযোদ্ধারা কাঠালিয়া থানা আক্রমণ করে থানার সকল অস্ত্র নিয়ে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এ উপজেলায় ব্যপক গণহত্যা চালায়। কাঁঠালিয়া উপজেলার বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে রয়েছে: আমুয়ার বাঁশবুনিয়া দাশেরবাড়ি বধ্যভূমি ও আওরাবুনিয়া হাইস্কুল মাঠ বধ্যভূমি। তবে উপজেলার আওরাবুনিয়া হাইস্কুল মাঠ বধ্যভূমির অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা যায়নি।[] ১৯৭১ সালের ২৫ মে আমুয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া এলাকায় ব্যপক গণহত্যায় ৪০ জন লোক শহীদ হন বলে জানা যায়। ১৯৭১ সালের ২৩ জুন কাঠালিয়ার আওরাবুনিয়া এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডে শহীদ হন ২৯ জন। এছাড়াও কাঠালিয়ার চাদের হাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী হামলা আরো ৫ জন শহীদ হন।[]

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

সম্পাদনা

কাঁঠালিয়া উপজেলায় বর্তমানে ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কাঠালিয়া উপজেলার আওতাধীন। কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ এমাদুল হক মনির।

কাঁঠালিয়া উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ:[]

ইউনিয়ন সমূহ
ক্র. নং ইউনিয়নের নাম আয়তন(একর)
চেঁচরীরামপুর ৮৪৪১
পাটিখালঘাটা ৪৪১৪
আমুয়া ৬১৯৪
কাঠালিয়া ৪৩২৪
শৌলজালিয়া ৮৯৮১
আওরাবুনিয়া ৫০৩২

জনসংখ্যার উপাত্ত

সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কাঁঠালিয়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,২৪,২৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬০,৫১৫ জন এবং মহিলা ৬৩,৭৫৬ জন। মোট পরিবার ৩০,৮৫৫টি।[]

ইউনিয়ন ভিত্তিক লোকসংখ্যা
ক্র. নং ইউনিয়নের নাম লোকসংখ্যা
চেঁচরীরামপুর ২৫৬৫৪
পাটিখালঘাটা ১৫৭৯৮
আমুয়া ২২৯৭১
কাঠালিয়া ১৬,২৪১
শৌলজালিয়া ২৪১২৫
আওরাবুনিয়া ১৭৬৮৪

কাঠালিয়া উপজেলার নদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-[]

  • বিষখালী নদী এ উপজেলার প্রধান নদী হল বিশখালীপদ্মা নদীর একটি শাখা নদী ইছামতি হতে এর উৎপত্তি হয়েছে। পদ্মা নদী গোয়ালন্দ ঘাট হতে প্রায় ৫২ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে দ্বি-ধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর একটি ধারা ইছামতি নাম নিয়ে ফরিদপুরমাদারীপুর জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বরিশাল জেলার উত্তর-পূর্বে তেঁতুলিয়া নদীতে পড়েছে। বরিশাল শহরের ৫ কিমি উত্তরে এটা কীর্তনখোলা নাম ধারণ করে নলছিটি উপজেলায় নলছিটি নদী নামে পরিবর্তিত হয়ে ঝালকাঠী সদর উপজেলায় প্রবেশ করে সুগন্ধা নদী নাম ধারণ করেছে। ঝালকাঠী শহরে প্রবেশের পর এটি বিষখালী নাম ধারণ করেছে। মধুমতী ও কটকা নদী হতে যথাক্রমে কৈখালী ও গাবগান খাল দিয়ে এ নদীতে পানি এসে পড়েছে। বিষখালী নদী এরপর ঝালকাঠী জেলা ও বরগুনা জেলাকে ভাগ করে বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বিষখালী নদী রাজাপুর উপজেলার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া হতে আমুয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিমি পূর্ব-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এ অংশে নদীর অপরপাড়ে বরগুনা জেলার বেতাগী ও বামনা উপজেলা অবস্থিত। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৫ কিমি, গড় প্রশস্ততা ১ হতে ২ কিমি। গড় গভীরতা ১৬ মিটার। বঙ্গোপসাগরের স্রোতধারায় এ নদী বেশ প্রভাবিত হয়। ফলে এ নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো ব্যাপক ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়। এ নদীতে বেশ কিছু চরও দেখা যায়, যেমন: ছৈলার চর, শৌলজালিয়ার চর ইত্যাদি।
  • সুগন্ধা নদী

সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্য

সম্পাদনা

ঐতিহ্য

সম্পাদনা

এ নদী তীরে গড়ে ওঠা কাঠালিয়ার সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য ভ্রমণ পিপাসুরা বারবার ছুটে আসে এক অজানা আকর্ষণে। শুধু ভ্রমণ পিপাসুদেরকেই নয়, বিষখালীর সুস্বাদু ইলিশ ভোজন রসিকদেরও সমভাবে আকর্ষণ করে।[]

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, কাঠালিয়ার চেচরীরামপুর ইউনিয়নে টেন্ডুর খা নামে একজন বিখ্যাত জমিদার ছিলেন। তিনি বিহারের সা সা রামের শেরশাহের বংশধর ছিলেন। তিনি বিহার থেকে এসে কাঠালিয়ার চেঁচরীরামপুরে বসতি স্থাপন করেন। মোঘল আমলের বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই উপজেলায়। আওরাবুনিয়ার জমাদ্দার বাড়ির ঐতিহাসিক মসজিদটি মোঘল আমলের প্রতীক হিসেবে আজও মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে।

কাঠালিয়া উপজেলার মানুষ তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে বেশি পছন্দ করে। ভাষাগত ঐতিহ্যে ও স্বাতন্ত্রে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা মানুষের মনকে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করে। এরই ধারাবহিকতায় কাঠালিয়া অধিবাসীরা এ আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলে থাকেন। এ ছাড়াও এ অঞ্চলের অধিবাসীদের সংস্কৃতিতে জারি, সারি, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী, লালন গীতি, পুঁথিপাঠ বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। যা বাংলার লোকজ সাহিত্যের প্রাণ।[]

খেলাধুলা ও বিনোদন

সম্পাদনা

ঐতিহ্যগত কারণে এখানে খেলাধুলা ও বিনোদনে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। ফুটবল, হাডুডু, ক্রিকেট, কাবাডি, কানামাছি খেলার পাশাপাশি স্থানীয় খেলার প্রচলন আছে। এছাড়া নদী প্রধান হওয়ায় নৌকা বাইচ খুবই জনপ্রিয় খেলা।[১০]

শিক্ষা

সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কাঁঠালিয়া উপজেলার সাক্ষরতার হার ৬৫.৩%।[১১]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা

সম্পাদনা
কাঁঠালিয়া উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা[১১]
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরণ সংখ্যা
কলেজ
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৭
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৯
কমিউনিটি প্রাঃ বিদ্যালয়
ফাজিল মাদ্রাসা
মাদ্রাসা ৩০

স্বাস্থ্য

সম্পাদনা

এই উপজেলায় একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।[১২]

প্রাকৃতিক সম্পদ

সম্পাদনা

দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত, নির্মল বায়ু ও দূষণমুক্ত উম্মুক্ত জলাধার-খাল-বিল, নদী-নালা কাঠালিয়া উপজেলাকে প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বিষখালী নদীতে প্রাপ্ত সুস্বাধু ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এ উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদীতে প্রাপ্ত তপসে, পোয়া, কাঠালি চিংড়ি, কৈ, শিং, পাবদা, মাগুর, আইর, বোয়াল ইত্যাদি মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। এ উপজেলার লবণাক্ত মাটিতে বহুল পরিমাণে উৎপাদিত নারিকেল ও সুপারি এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল। এই এলাকার সুগন্ধি ও চিকন জাতের মৌলতা, দুধকলম ও রাজাসাইল চালের চাহিদাও রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।[১৩]

এখানে কৃষি ফসলগুলির মধ্যে ধান উল্লেখযোগ্য। অসংখ্য খাল ও জলাভূমি পরিবেষ্টিত এ উপজেলার আবাদী জমি সীমিত। কাঠালিয়া উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণ দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী নদীর জোয়ারের পানি দিয়ে অনেক জমি প্লাবিত হওয়ায় অধিকাংশ জমিই দো বা এক ফসলা। কৃষিজ উৎপাদনও কাঙ্খিতমাত্রায় নয়। কারেন্ট, চরগড়া, নেট প্রভৃতি জাল দিয়ে মাছ শিকার অব্যাহত থাকায় মৎস্য সম্পদও কমে আসছে। পশুর মধ্যে মহিষ এবং গরু উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ফলের মধ্যে পেয়ারা, আমড়া, কলা উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি বিশখালী নদীতে বেড়ীবাধ নির্মাণ হওয়ায় এবং সরকারীভাবে পাওয়ার টিলার, উন্নতজাতের বীজ, সার, কৃষি উপকরন সরবরাহ করাসহ পরামর্শ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় কৃষিজ উৎপাদন নিত্যদিন বাড়ছে।[১৪]

অর্থনীতি

সম্পাদনা

মূলত হাট-বাজারগুলোই এ এলাকার অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র। প্রধান হাট-বাজারগুলো হলো আমুয়া হাট, আমুয়া মৎস্য আড়ত, কাঠালিয়া বাজার, আউরা গরুর হাট, চেঁচরীরামপুর কৈখালী হাট, আওরাবুনিয়া হাট, সেন্টারের হাট ইত্যাদি। কৃষি কাজ, মৎস্য আহরন এ উপজেলাবাসীর প্রধান জীবিকা। শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে অনেকেই এখন শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন সরকারী–বেসরকারী চাকুরিতে আছেন।[১৫]

ব্যবসা বাণিজ্য

সম্পাদনা

এ উপজেলার অর্থনীতি এখনও গ্রামীণ অবস্থায় রয়েছে। প্রধানত কৃষিজ উৎপাদিত পণ্য ধান, সুপারি, নারিকেল এবং বিভিন্ন শাক সবজি উৎপাদন এবং বিশখালী নদী ও বিভিন্ন খাল হতে প্রাপ্ত মাছ এখানকার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খুব বেশি পরিমানে উৎপাদিত না হলেও সুপারি মূলত এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল। সুপারি, বিশখালী নদীর ইলিশ ও চিংড়ী এ এলাকা হতে দেশের অন্যত্র প্রেরণ করা হয়। এখানকার চাহিদা পূরনের জনা শাক-সবজি সহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাহির হতে আনতে হয়।[১৬]

ব্যাংক ব্যবস্থা

সম্পাদনা

ব্যাংকের শাখা পর্যাপ্ত না হওয়ায় এবং সচেতনতার অভাবে এলাকাবাসীর মাঝে অনানুষ্ঠানিক ও এনজিওর মাধ্যমে উচ্চহার সুদে অর্থ লেনদেন হয় যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।[১৭]

যোগাযোগ

সম্পাদনা

রাজধানী শহর ঢাকা হতে কাঠালিয়ার দূরত্ব ২২৭ কিমি। উপজেলাটি বরিশাল ও ঝালকাঠী হতে যথাক্রমে ৬০ ও ৪৩ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ঢাকা হতে সড়ক পথে বরিশাল, ঝালকাঠী হয়ে এ উপজেলায় আসা যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্টেশন হতে কাঠালিয়াগামী বাস পাওয়া যায়। এছাড়া বিভাগীয় শহর বরিশাল, চট্রগ্রাম, খুলনা হতেও সরাসরি কাঠালিয়া আসা যায়। নৌ পথে ঢাকা জেলার সদরঘাট হতে সরাসরি কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাটে অথবা বরিশাল, ঝালকাঠী অথবা পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া এসে সড়কপথে কাঠালিয়া আসা যায়।[১৮] এছাড়া কাঁঠালিয়ায় কচুয়া-বেতাগী ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় কাঠালিয়া থেকে পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, বরগুনা, বেতাগী, রাজাপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, বেকুটিয়া, খুলনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় খুব সহজে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে।[১৯]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বগন হলেন :[২০]

  • হযরত মাওলানা মাকছুদউল্লা আশ্রাফী শিক্ষাবিদ, গবেষক, দার্শনিক, সাধক, মুহাদ্দিসও সমাজসংস্কারক
  • জনাব বযলুর রহমান (বিটি) বেতাগী হাইস্কুলের রেক্টর, কবি, দার্শনিক, নাট্যকার, সাহিত্যিক ও আধ্যাত্মিক সাধক
  • জনাব নুরুল ইসলাম সিকদার এমএনএ তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
  • জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর কবির জাতীয় সংসদে ১৯৮৬-১৯৮৮ সময়কালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য
  • ডঃ সেকান্দার হায়াত খান ইস্ট–ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
  • জনাব মোঃ ফারুক সিকদার বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ
  • মোঃ শাহজাহান জমাদ্দার,বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
  • মোঃ আবদুল মন্নান সিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাহিত্যিক,প্রভাষক।

দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা

সম্পাদনা
কাঁঠালিয়া উপজেলার দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনাসমূহ[২১]
ক্রমিক নাম অবস্থান
মোগল আমলের মসজিদ আওরাবুনিয়া
হক্কোননূর দরবার শরীফ, শৌলজালিয়া শৌলজালিয়া
বিষখালী নদী কাঠালিয়া
আমুয়া ফেরীঘাট আমুয়া
উপজেলা পরিষদ ঈদগাহ ময়দান কাঠালিয়া
বাশবুনিয়া বদ্ধভূমি বাশবুনিয়া
ছৈলার চর হেতালবুনিয়া

পত্র-পত্রিকা

সম্পাদনা

এ উপজেলা হতে কোন পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় না। ঢাকা হতে প্রকাশিত প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক সকাল ১১:০০ টার মধ্যে পাওয়া যায়। ঝালকাঠী ও বরিশাল হতে প্রকাশিত বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকা সকাল ৯:০০ টার ভিতরেই পাওয়া যায়। বর্তমানে কাঠালিয়ায় “কাঠালিয়া বার্তা” নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা রয়েছে।[২২]

হাট-বাজার

সম্পাদনা
হাট-বাজারের তালিকা [২৩]
ক্রমিক নাম আয়তন অবস্থান
আমুয়া মৎস্য বাজার ০.১০ একর আমুয়া
ঘোষের হাট ১.৬৫ একর ছোনাউটা, আমুয়া
কৈখালী হাট ২.৫০ একর কৈখালী, চেচরীরামপুর
আউরা হাট ০.৩৫ একর আউরা, কাঠালিয়া
মরিচবুনিয়া হাট ০.৯৯ একর মরিচবুনিয়া,পাটিখালঘাটা
সিকদার হাট .৬৬ একর উঃ চেচরী, চেচরীরামপুর, কাঠালিয়া
বানাই হাট .৭৪ একর চেচরীরামপুর, কাঠালিয়া
বিনাপানি হাট ১.০২২৭ একর শৌলজালিয়া, কাঠালিয়া
কচুয়া হাট .৬৬ একর কচুয়া, শৌলজালিয়া
১০ সেন্টারের হাট ১.১৮ একর শৌলজালিয়া, কাঠালিয়া
১১ দোগনা হাট .৪৫ একর বলতলা, শৌলজালিয়া
১২ আওরাবুনিয়া হাট ২.১৯ একর আওরাবুনিয়া
১৩ কাঠালিয়া বাজার ০.৮৮ একর কাঠালিয়া সদর
১৪ আমুয়া হাট ২.৪৪ একর ছোনাউটা, আমুয়া
১৫ তারাবুনিয়া হাট .৬০ একর পাটিখালঘাটা
১৬ সাতনি বাজার ১.১০ একর আওরাবুনিয়া
১৭ আকনের হাট ১ একর আওরাবুনিয়া
১৮ শরীফের হাট ১ একর আওরাবুনিয়া
১৯ পঞ্চায়েতের বাজার .৬০ একর আওরাবুনিয়া
২০ নতুন বাজার .৬৩ একর আওরাবুনিয়া

নতুন বাজার পাটিখালঘাটা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "জনসংখ্যার উপাত্ত"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  2. "ভৌগোলিক পরিচিতি"। ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  3. "নামকরণ"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  4. রহমান, আ স ম মাহমুদুর। "ঝালকাঠির বধ্যভূমিগুলোর শোকগাথা"চিরন্তন ১৯৭১ | প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "মুক্তিযুদ্ধে কাঁঠালিয়া"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  6. "প্রশাসনিক এলাকাসমূহ"। ২৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  7. "নদ-নদী"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  8. "ঐতিহ্য"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  9. "ভাষা"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  10. "খেলাধুলা ও বিনোদন"। ২৮ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  11. "শিক্ষা"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  12. "স্বাস্থ্য"। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "প্রাকৃতিক সম্পদ"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  14. "কৃষি"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  15. "অর্থনীতি"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  16. "ব্যবসা বাণিজ্য"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  17. "ব্যাংক ব্যবস্থা"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  18. "যোগাযোগ"। ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  19. Desk, Dhaka Post। "কাঠালিয়ার কচুয়া-বেতাগী ফেরি সার্ভিস চালু"dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-১৫ 
  20. "উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  21. "দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  22. "পত্র-পত্রিকা"। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 
  23. "হাট-বাজার"। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা