কাজী ফজলুর রহিম
কাজী মোহাম্মদ ফজলুর রহিম (৩১ ডিসেম্বর ১৯১৭ - ২ জুন ২০০৪) ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রাণিবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে তাকে তমঘা-ই-কায়েদ-ই-আজম পুরস্কারে ভূষিত করে কিন্তু তিনি পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর নির্যাতন ও বৈষম্যের প্রতিবাদে পুরস্কারটি প্রত্যাখান করেন।[১]
কাজী মোহাম্মদ ফজলুর রহিম | |
---|---|
উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় | |
কাজের মেয়াদ জানুয়ারি ১৯৭২ – নভেম্বর ১৯৭৩ | |
কাজের মেয়াদ জানুয়ারি ১৯৭১ – জুলাই ১৯৭১ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ধনবাড়ী, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি | ৩১ ডিসেম্বর ১৯১৭
মৃত্যু | ২ জুন ২০০৪ | (বয়স ৮৬)
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | আনন্দ মোহন কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাফজলুর রহিম ১৯১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ধনবাড়ী গ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলা) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কাজী মোহাম্মদ আব্দুর রউফ এবং মাতার নাম আমেনা বেগম। তিনি ময়মনসিংহের ফুলপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৩ সালে প্রবেশিকা (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও ১৯৩৫ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৩৭ সালে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ফুল-ব্রাইট কার্যক্রমের আওতায় বৃত্তি নিয়ে টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোয়ানটিটেটিভ জেনেটিক্সের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাফজলুর রহিম অবিভক্ত বাংলার নদিয়া জেলায় সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ভারত ভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে তেজগাঁও ইষ্ট বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন তৎকালীন ময়মনসিংহে ভেটেরিনারী কলেজে যোগদান করে। এরমধ্যে কিছু দিন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর ১৯৫৮ সালে পুনরায় পূর্বের কর্মস্থলে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৬২ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলি বিজ্ঞান ও প্রাণী প্রজনন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এ অনুষদের ডীন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে করেন।
১৯৬৮ সালে তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অবসর নিয়ে শিক্ষকতায় পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই এবং ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ২৬ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।[২] তার নেতৃত্বে ময়মনসিংহে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।[৩] স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কৃর্তক লাঞ্ছিত ও শরীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন।[৩] ২০০৪ সালের ২ জুন বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার গুলশানের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৪]
সম্মাননা
সম্পাদনাতৎকালীন পাকিস্তান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ও জাতীয় উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ফজলুর রহিমকে পুরস্কারে ভূষিত করে কিন্তু পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানিদের (বর্তমান বাংলাদেশ) উপর নির্যাতন ও বৈষম্যের প্রতিবাদে তিনি পুরস্কার প্রত্যাখান করেন।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "রহিম, কাজী মোঃ ফজলুর"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ পাক্ষিক আহ্মদী - নব পর্যায় ২৬ বর্ষ, ১ম ও ২য় সংখ্যা, ১৫ই ও ৩০শে মে, ১৯৭২ইং, মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্
- ↑ ক খ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, (পঞ্চদশ খণ্ড), ৩৩৪ পৃষ্ঠা
- ↑ "The Daily Star Web Edition Vol. 5 Num 7"। archive.thedailystar.net। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯।