কাজী জাকের হোসেন

বাংলাদেশি প্রাণিবিজ্ঞানী

অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন (১ জানুয়ারি ১৯৩১ - ২১ জুন ২০১১) হলেন বাংলাদেশের একজন প্রাণিবিজ্ঞানী। যথার্থভাবে আখ্যায়িত করা হলে, তিনি ছিলেন একাধারে বন্যপ্রাণী তত্ত্ব, বাস্তুতন্ত্রপ্রাণিভূগোল বিশেষজ্ঞ। তাঁর কর্মপরিধির বৃহৎ অংশ জুড়ে ছিল পক্ষীবিজ্ঞান[১][২]

কাজী জাকের হোসেন

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

১৯৩১ সালের পয়লা জানুয়ারি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পাটোয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে চাঁদপুর ঘনিয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৮ সালে ঢাকা কলেজ‌ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় বিএসসি পাশ করেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি পাস কোর্স ছিল, অনার্স কোর্স ছিল না বিধায় তিনি ১৯৫১ সালে লাহোরে চলে যান। ১৯৫৩ সনে লাহোর সরকারি কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজ তাঁকে 'অ্যাকাডেমিক রোল অব অনার' সনদ প্রদান করে৷ তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পক্ষীবিজ্ঞানে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ডিগ্রি হলো ডক্টরেট-পরবর্তী গবেষণা ডিগ্রি।[২]

কর্ম জীবন সম্পাদনা

১৯৫৩ সালে শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ হিসেবে চালু হয়। ৩৮ বছর অধ্যাপনা করেন। বাংলাদেশে প্রাণিবিদ্যা শিক্ষাকে বিশেষ করে বন্যপ্রাণী বিষয়ক শিক্ষা প্রবর্তনে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে৷ তিনি 'বাংলাদেশে প্রাণী বিজ্ঞান সমিতি'র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে একাধিকবার এ সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তিনি বাংলাদেশ বন্য প্রাণীতত্ত্ব সমিতি ও বাংলাদেশ পাখি সংরক্ষণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে "ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজি" নামক একটি কোর্স চালু করেন ৷ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ প্রণয়নেও তাঁর অবদান ছিল৷ ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যবেক্ষণের নেতৃত্ব দেন। এর আগে ১৯৫৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ব্রিটিশ গায়ানা অভিযানে শামিল হন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে অধ্যাপক জাকেরের বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত ৮০টির বেশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর বইয়ের সংখ্যা ১৮টি। তাঁর অধীনে ১৪ জন পিএইচডি এবং ১০ জন এম.ফিল. ডিগ্রি অর্জন করে।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

  • শিক্ষা ক্ষেত্রে অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেনের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালে তাকে শিক্ষায় স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[৩]
  • বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে উলেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন ১৯৯০ সালে ইউএনইপি (United Nations Environment Programme) কর্তৃক "গ্লোবাল -৫০০ রোল অব অনার" সম্মানে ভূষিত হন এবং ১৯৯১ সারে ইউএনইপি'র পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রমের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
  • তিনি আমেরিকান বায়োলজিক্যাল ইনষ্টিটিউট কর্তৃক "ডিসটিংগুইসড লিডারশীপ এওয়ার্ডে" ভূষিত হন৷

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা