কাজী গোলাম মাহবুব
কাজী গোলাম মাহবুব (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর, ১৯২৭ মৃত্যু: ১৯ মার্চ, ২০০৬) ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের অন্যমত সক্রিয় কর্মী। তিনি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করেছেন। ১৯ মার্চ ২০০৬ সালে ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী গোলাম মাহবুব | |
---|---|
জন্ম | ২৩ ডিসেম্বর ১৯২৭ |
মৃত্যু | ১৯ মার্চ ২০০৬ | (বয়স ৭৮)
পেশা | ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক(২০০২) |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাকাজী গোলাম মাহবুব বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার কসবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশালের টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষা অর্জনের জন্য গিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে কলেজের ছাত্র পরিষদে তিনি ভিপি নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম ছাত্র হিসেবে আইন পরিষদে ভর্তি হন।
ভাষা আন্দোলন ও কর্মজীবন
সম্পাদনাকর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র এডভোকেট ছিলেন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান, খালেক নওয়াজ খান, শামসুল হক সহ অন্যান্য ছাত্রনেতাদের সাথে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই সময় তিনি ছাত্র অ্যাকশন কমিটি যোগ দিয়েছিলেন যে কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটে সহায়তা করার জন্য গ্রেপ্তার হন।
কাজী মাহবুব আওয়ামী লীগ তথা আওয়ামী মুসলিম লীগ-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ৩০ জানুয়ারি ১৯৫২ যখন, সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মীপরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়, কাজী মাহবুবকে সেটার আহ্বায়ক হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারির আমতলা সভায় কাজী মাহবুব উপস্থিত ছিলেন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশে যোগদান করেন। পরে, তিনি গ্রেফতার হন এবং এক বছর কারাগারে অতিবাহিত করেন।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের গর্ণ-অভ্যূত্থানের সময় তিনি মাওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।[১]
১৯৯৩-৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
সম্মাননা
সম্পাদনা- প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম রাষ্ট্রভাষা স্বর্ণপদক (১৯৯৩)
- জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট পদক (১৯৯৮)
- তমদ্দুন মজলিশের মাতৃভাষা পদক (২০০০)
- একুশে পদক (২০০২)
- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাষা সৈনিক পদকে (২০০২)
তার সম্মানে ধানমন্ডি আবাসিক এলকার ১০ নম্বর সড়কটিকে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক হিসাবে নামকরণ করা হয়।
২০০২ সালে গৌরনদী উপজেলা সদরে উপজেলা পরিষদের প্রধান সড়কে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ট্রাস্টের অর্থায়নে “ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ” নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালে তোরণটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।[২][৩]
কাজী গোলাম মাহবুব এর স্মৃতিরক্ষায় ২০০৭ সালে সরকার তার নিজ জন্মস্থান গৌরনদী উপজেলা চত্বরকে 'ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর' নামকরণ করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আহমেদ, মনোয়ার, ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল, পৃঃ ৬৫ আইএসবিএন ৯৮৪-৪০১-১৪৭-৭
- ↑ "ভেঙে ফেলা হয়েছে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ"। দৈনিক ইত্তেফাক। ১৭ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ পুনর্নিমাণে দশ ভাষাসৈনিকের বিবৃতি"। দৈনিক জনকন্ঠ। ২১ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "আওয়ামী লীগ নেতা ভেঙে ফেললেন ভাষা শহীদের তোরণ"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৬ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭।