কাজী ইমদাদুল হক
কাজী ইমদাদুল হক (৪ নভেম্বর ১৮৮২ – ২০ মার্চ ১৯২৬) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি লেখক ও শিক্ষাবিদ।[১]
কাজী ইমদাদুল হক | |
---|---|
জন্ম | ১৮৮২ গোদাইপুর গ্রাম, খুলনা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ২০ মার্চ ১৯২৬ (বয়স ৪৩–৪৪) কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান ভারত) |
পেশা |
|
ভাষা | বাংলা |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | আবদুল্লাহ (১৯৩২) |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | খান সাহেব, খান বাহাদুর |
সন্তান | কাজী আনোয়ারুল হক |
জন্ম
সম্পাদনাকাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাজী আতাউল হক আসামের জরিপ বিভাগে চাকরি করতে করতেন এবং পরবর্তীতে খুলনার ফৌজদারি আদালতের মোক্তার নিযুক্ত হন।[১]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনা১৯০০ সালে কাজী ইমদাদুল হক কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। ১৯১৪ সালে তিনি বিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[১]
শিক্ষকতা
সম্পাদনা১৯০৪ সালে কাজী ইমদাদুল হক কলকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এর দুই বছর পর ১৯০৬ সালে আসামের শিলং বিভাগে শিক্ষাবিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে যোগ দেন।[১]
১৯০৭ সালে তিনি ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক হন। ১৯১১ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভূগোলের অধ্যাপক হন। এরপর ১৯১৪ সালে ঢাকা বিভাগে মুসলিম শিক্ষা সহকারী স্কুল পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৭ সালে তাকে কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।[১]
১৯২১ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বোর্ডের সুপারিন্টেনডেন্ট হন। আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।[১]
শিক্ষাবিভাগে তার যোগ্যতাপূর্ণ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে তাকে খান সাহেব ও ১৯২৬ সালে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে।[১]
সাংবাদিকতা
সম্পাদনাকাজী ইমদাদুল হক সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। তার সম্পাদনায় নবনূর পত্রিকা প্রকাশিত হত। ১৯০৩ থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকায় তার সাথে মোহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ, মোহাম্মদ আসাদ আলি ও আরো অনেকে জড়িত ছিলেন।[২]
১৯২০ সালের মে মাসে তার সম্পাদনায় শিক্ষাবিষয়ক মাসিক শিক্ষক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পরবর্তী তিন বছর এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে।[১] এছাড়াও বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন।[১] এই পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্যে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিতে তিনি সভাপতি ছিলেন।[৩] কমিটির বাকি সদস্যরা ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (সম্পাদক), মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (সম্পাদক), মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ, মঈনউদ্দীন হোসায়েন ও কমরেড মুজাফফর আহমদ।[৩]
সাহিত্য
সম্পাদনাকাজী ইমদাদুল হক কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। বাংলার মুসলিম সমাজের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে তিনি সাহিত্যকর্মে নিয়োজিত হয়েছিলেন।[১] আবদুল্লাহ উপন্যাসের জন্য তিনি অধিক খ্যাত। তার রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:
- আঁখিজল (১৯০০)
- মোসলেম জগতে বিজ্ঞান চর্চা (১৯০৪)
- ভূগোল শিক্ষা প্রণালী (দু'খণ্ড, ১৯১৩, ১৯১৬)
- নবীকাহিনী (১৯১৭)
- প্রবন্ধমালা (১৯১৮)
- কামারের কাণ্ড" (১৯১৯)
- আবদুল্লাহ (১৯৩২)
- আলেক্সান্দ্রিয়ার প্রাচীন পুস্তকাগার
- আবদুর রহমানের কীর্তি
- ফ্রান্সে মুসলিম অধিকার
- আলহামরা
- পাগল খলিফা
‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসটি লেখকের জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ বা প্রকাশ হয়নি। তিনি এ উপন্যাসটি জীবনের শেষান্তে শুরু করলেও শেষ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে তার খসড়ার ভিত্তিতে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ করা হয় এবং তা ১৯৩২ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৬৮ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (আজকের বাংলা একাডেমি) আবদুল কাদিরের সম্পাদনায় প্রকাশ করে 'কাজী ইমদাদুল হকের রচনাবলি'।
অধুনা সৈয়দ আবুল মকসুদের সম্পাদনায় 'শুদ্ধস্বর' প্রকাশনী তার রচনাবলী প্রকাশ করেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্যক্তিজীবন
সম্পাদনাবাংলাদেশের লেখক, সরকারি কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা কাজী আনোয়ারুল হক (১৯০৯-২০০১) ছিলেন কাজী ইমদাদুল হকের পুত্র।[৪]
মৃত্যু
সম্পাদনাকাজী ইমদাদুল হক ১৯২৬ সালের ২০ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]