কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী

নবাব স্যার কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী (১৮৯১ - ৪ এপ্রিল ১৯৮৪) ছিলেন একজন জমিদার, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবক যিনি ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত শাসন আইনের অধীনে স্বায়ত্তশাসন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, সমবায় ও গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন।

কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী
বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও মন্ত্রী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৮৯১
কুমিল্লা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৪ এপ্রিল ১৯৮৪(1984-04-04) (বয়স ৯২–৯৩)
কলকাতা
জাতীয়তাবাংলাদেশি
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা কলেজ
পেশারাজনীতিবিদ

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

মহিউদ্দিন ১৮৯১ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম কাজী রিয়াজুদ্দিন আহমদ ফারুকী যিনি একজন সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন। মহিউদ্দিনের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে। ছোটবেলায় তিনজন ইংরেজি গৃহ শিক্ষকের হাত ধরে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকেএফ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

মহিউদ্দীন নওয়াব স্যার কে,জি,এম, ফারুকী১৯১৬ সালে জাতীয়তাবাদী মধ্যপন্থী রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯১৭ সালে তিনি ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের সদস্য এবং কুমিল্লা পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। পরে ১৯২৫ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯২১ সালে ত্রিপুরার মুসলিম অধ্যষিত এলাকা থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত চিফ হুইপ পদে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর তাকে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, সমবায় ও গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসময় তার মাধ্যমে ১৯৩১ সালে ‘শিল্প খাতে সরকারি সাহায্য বিল’ পাস হয় এবং কৃষকের সমস্যা সমাধানে তিনি ‘কো-অপারেটিভ মর্টগেজ ব্যাংক’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

১৯৩৪ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নেতা মনোনীত হন। ১৯৩৭ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পুনরায় বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটেরও সদস্য ছিলেন।[১]

অবদান সম্পাদনা

মহিউদ্দীন সমাজসেবায়ও নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তার জন্মস্থান কুমিল্লায় তার পিতা ও পিতামহের নামে দুটি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যার একটি হলো কাজী রিয়াজউদ্দিন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় এবং অপরটি আফতাবিয়া মাদ্রাসা। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। চিকিৎসালয়, ডাকঘর, থানা ও সাবরেজিস্ট্রার অফিস স্থাপনসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে অবদান রাখেন। ১৯২০ সালে দুর্ভিক্ষ শুরু হলে তিনি ত্রিপুরা জেলায় দুর্ভিক্ষে ভূক্তভূগীদের সাহায্যে কাজ করেন। তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করেন।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

সমাজসেবায় অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকারে মহিউদ্দীনকে ১৯২৪ সালে ‘খান বাহাদুর’ ১৯৩২ সালে ‘নবাব’ এবং ১৯৩৬ সালে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

মহিউদ্দীন ১৯৮৪ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ফারুকী, নবাব স্যার কে.জি.এম"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"সরাইল উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২০