কুজকো ঘরানা
কুজকো ঘরানা (স্পেনীয়: Escuela cuzqueña) পেরুর কুজকো এলাকায় রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা শিল্পকলাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ১৬শ, ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক আমলে এটি গঠিত হয়েছিল। তবে কেবলমাত্র কাজকো শহরেই এর কার্যক্রম থেমে থাকেনি। আন্দেজের বিভিন্ন শহরেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। পাশাপাশি ইকুয়েডর ও বলিভিয়ায় বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে।[১]
১৫৩৪ সালে স্পেনীয়দের মাধ্যমে ইনকা সাম্রাজ্য দখলের পর এর প্রচলন শুরু হয়।[১] একে প্রথম শিল্পকলায়ধর্মী কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে যাতে আমেরিকায় ইউরোপীয় শিল্পকলার কৌশল পদ্ধতিগতভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।[১]
উদ্দেশ্য সম্পাদনা
কাস্কুইরা চিত্রকর্ম ধর্মীয় চিত্রের একটি ঘরানা ও উপদেশ প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছে।[১] স্পেনীয়দের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইনকাদের ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত করা।[১] তারা একদল ধর্মীয় চিত্রশিল্পীকে কাস্কোয় প্রেরণ করেছিল। ঐ সকল চিত্রশিল্পী কিউচুয়া জনগোষ্ঠী ও মেস্তিজোসদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। তাদেরকে তারা অঙ্কন ও তৈলচিত্র সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করেন।[১] কাস্কুইরা পদবী শুধুমাত্র কাস্কো শহরের অধিবাসী বা আদিবাসী চিত্রশিল্পীদের জন্যেই প্রযোজ্য ছিল না, বরঞ্চ স্পেনীয় ক্রিয়োলেসদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল।
ইতিহাস সম্পাদনা
বিশপ ম্যানুয়েল দে মলিনেদো ওয়াই অ্যাঙ্গুলো কাজকো চিত্রশিল্পীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। তিনি ইউরোপীয় চিত্রকর্ম ও তার তৈরী চিত্রকর্ম পেরুভীয় চিত্রশিল্পীদেরকে দান করেন। তিনি উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করেন এবং বাসিলিও সান্তা ক্রুজ পুমাকলাও, অ্যান্টোনিও সিঞ্চি রোকা ইনকা ও মার্কোস রিভেরা'র ন্যায় চিত্রশিল্পীদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন।[২]
১৬৮৮ সালে স্পেনীয় বংশোদ্ভূত ও কাজকে অঙ্কনশিল্পের মেসতিজো সম্প্রদায়ের সদস্যরা ভারতীয় চিত্রশিল্পীদেরকে শিক্ষা প্রদান করেন। এরফলে অগণিত কুইচুয়া ভারতীয় চিত্রশিল্পীরা নিজেদের রূপরেখা নিয়ে নিজেকে তৈরী করেন। এতে তারা সর্বশেষ ইউরোপীয় চিত্রকর্মগুলোকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন। এছাড়াও তারা ইনকা সাম্রাজ্যের চিত্রকর্মকেও উপজীব্য করে চিত্রকর্ম তৈরী করেন যা খ্রিস্টান ধর্মের ভিত্তি ও সাংস্কৃতিক গৌরবের মিশেল ছিল।[৩] কাস্কুইনা ধরনের চরিত্রে কুইচুয়া চিত্রকর দিয়েগো কুইস্পে টিটোর শিল্পকর্মকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে।[৪][৫]
রঙের ব্যবহার সম্পাদনা
কাস্কুইনা চিত্রকর্মে ধর্মীয় বিষয়, পরিপ্রেক্ষিতসহ লাল, হলুদ ও মৃত্তিকা রঙের আধিপত্য ছিল।[১] এছাড়াও, সোনালী পাতার ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য ছিল;[৬] বিশেষ করে কুমারীমাতা মেরির চিত্রকর্মে এর ব্যবহার সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। কাস্কুইনো চিত্রকরেরা বাইজেন্টেনীয়, ফ্লেমীয় ও ইতালীয় রেঁনেসার চিত্রকর্মের সাথে মিল রেখে চিত্র অঙ্কন করতেন। তবে, ইউরোপীয় শিক্ষকদের কাছ থেকে গৃহীত শিক্ষা থেকে নিজেদেরকে অনেকাংশেই মুক্ত রাখতে পেরেছেন। তারা উজ্জ্বল রং ও নাটকীয় চিত্র উপস্থাপন করতো। এছাড়াও, নিজস্ব উদ্ভিদ ও প্রাণীকে চিত্রকর্মে প্রচ্ছদপটে ব্যবহার করা হতো।[১]
ওয়ারিয়র অ্যাঞ্জেলস কাস্কুইনা চিত্রকর্মের বিখ্যাত উপাদান ছিল।[২]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
গ্রন্থপঞ্জী সম্পাদনা
- Bakewell, Peter J. A History of Latin America: C. 1450 to the Present. Blackwell Publishing, 2003. আইএসবিএন ০-৬৩১-২৩১৬১-৭.
- Bethell, Leslie. The Cambridge History of Latin America. Cambridge University Press, 1995. আইএসবিএন ০-৫২১-২৪৫১৬-৮.
- Fane, Diana, ed. Converging Cultures: Art & Identity in Spanish America. New York: Harry N. Abrams Inc., 1996. আইএসবিএন ০-৮৭২৭৩-১৩৪-০.
আরও পড়ুন সম্পাদনা
- Phipps, Elena; ও অন্যান্য (২০০৪)। The colonial Andes: tapestries and silverwork, 1530-1830। New York: The Metropolitan Museum of Art। আইএসবিএন 1588391310।
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- Cuzco School: Painters of Peru(ইংরেজি)