কলকাতার নাগরিক প্রশাসন

কলকাতার নাগরিক প্রশাসন বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা দ্বারা সম্পাদিত হয় এবং এটি বিভিন্ন অভিলেপিত কাঠামোগত বিভাগ নিয়ে গঠিত। শহরের অন্তত পাঁচটি প্রশাসনিক সংজ্ঞা পাওয়া যায়, যার অনেকগুলি একে অপরকে অভিলেপিত করে।

কলকাতা পৌরসংস্থা

কলকাতা জেলা সম্পাদনা

কলকাতা জেলার জন্য জেলাশাসকের নেতৃত্বে, এটি প্রাথমিকভাবে শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্র এবং শহরের কেন্দ্রস্থলের অংশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি রাজস্ব, জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং আদমশুমারির উদ্দেশ্যে একটি প্রশাসনিক একক হিসাবে কাজ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ভবানীপুরে নতুন কলকাতা জেলা কালেক্টর কার্যালয় স্থাপনের সঙ্গে সমগ্র পৌরসংস্থা এলাকাটি কলকাতা জেলার অধীনে আসে। এটি ২০১২ সালে রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ফলে করা হয়েছিল।[১]

কলকাতা পৌরসংস্থা সম্পাদনা

 
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কলকাতা পৌরসংস্থার ওয়ার্ড স্তরের মানচিত্র। পরে অতিরিক্ত তিনটি ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে, বর্তমানে মোট ১৪৪ টি ওয়ার্ড রয়েছে।

কলকাতা পৌরসংস্থা শহরের ১৬ টি বরোর[২] নাগরিক পরিকাঠামো তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করে, যা একসঙ্গে ১৪৪ টি ওয়ার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে।[৩] পৌরসংস্থা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কাউন্সিলর নির্বাচিত করে। প্রতিটি বরোতে কাউন্সিলরদের একটি কমিটি থাকে, যাদের প্রত্যেকেই একটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হন। বরো কমিটির মাধ্যমে, পৌরসংস্থাটি নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সড়ক, সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও পৌরসংস্থার বাজার রক্ষণাবেক্ষণ করে।[৪] কলকাতার সর্বোচ্চ সংস্থা হিসাবে, পৌরসংস্থা মেয়র-ও-কাউন্সিলের মাধ্যমে তার কার্যাবলী সম্পাদন করে, যার মধ্যে একজন মেয়র, একজন ডেপুটি মেয়র এবং পৌরসংস্থার আরও দশজন নির্বাচিত সদস্য রয়েছে।[৫] পৌরসংস্থার কার্যাবলীর মধ্যে জল সরবরাহ, নিষ্কাশন ও পয়ঃনিষ্কাশন, স্যানিটেশন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তার আলো, এবং ভবন নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৪]

কলকাতা পুলিশ সম্পাদনা

কলকাতা পুলিশের এখতিয়ারের অধীন এলাকাটি ২০১১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে কেএমসি এলাকার সাথে অভিলেপিত হয়।[৬]

কলকাতা মহানগর অঞ্চল সম্পাদনা

 
কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির মুখ্য কার্যালয়

ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কলকাতা মহানগর অঞ্চল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম মহানগর এলাকা। এটি ২ কোটি বাসিন্দার সঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, হুগলি ও হাওড়া জেলা জুড়ে বিস্তৃত। কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) হল আরেকটি আনুষঙ্গিক নাগরিক সংস্থা, যা এই মহানগর এলাকার বিধিবদ্ধ পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য অবদান রাখে।[৭] কলকাতা মহানগর অঞ্চল কলকাতার শহুরে কেন্দ্রগুলির আশেপাশে একটি বৃহৎ শহরতলির পশ্চাৎভূমিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

কলকাতার শেরিফ নামে শহরের একটি অরাজনৈতিক শিরোনামও রয়েছে।[৮] শেরিফ শহর-সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

রাজ্য সরকার সম্পাদনা

 
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভবন
 
কলকাতা উচ্চ আদালত
 
কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত লোকসভার মানচিত্র

রাজ্যের রাজধানী ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আসন হিসাবে, কলকাতায় শুধুমাত্র উপরে তালিকাভুক্ত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরই নয়, রাজ্য স্তরের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাকলকাতা উচ্চ আদালত রয়েছে। কলকাতায় নিম্ন আদালতও রয়েছে; দেওয়ানি মামলার জন্য ক্ষুদ্র কারণ আদালত এবং ফৌজদারি মামলার জন্য দায়রা আদালত।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দ্বারা সংজ্ঞায়িত পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা ও বিধানসভা কেন্দ্রসমূহ ২০০৮ সালে সীমানা নির্ধারণ কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।[৯] কলকাতা জেলা ১৬ টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত (এবং আংশিকভাবে আরও ১ টি) — বিধানসভাগুলি হল কাশীপুর-বেলগাছিয়া, মানিকতলা, শ্যামপুকুর, জোড়াসাঁকো, বেলেঘাটা, এন্টালি, চৌরঙ্গী, কলকাতা বন্দর, মেটিয়াবুরুজ (আংশিকভাবে), ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, রাশবিহারী, কাশীপুর , বেহালা পশ্চিম, টালিগঞ্জ ও যাদবপুর। দুটি সংসদীয় আসন রয়েছে, যাদের সঙ্গে "কলকাতা" নামটি যুক্ত আছে–কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ। চৌরঙ্গী, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা ও কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রগুলি কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, রাসবিহারী, কসবা, বেহালা পূর্ব এবং বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রগুলি কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।[৯]

 

যাদবপুরটালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। কলকাতা পৌরসংস্থার কয়েকটি ওয়ার্ড (ওয়ার্ড নং ১৩৬ থেকে ১৪১) মেটিয়াবুরুজ বিধানসভা কেন্দ্রের অংশ। মেটিয়াবুরুজ বিধানসভা কেন্দ্রে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহেশতলা পৌরসভারও ওয়ার্ড রয়েছে। মেটিয়াবুরুজ বিধানসভা কেন্দ্রটি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/kolkata-district-collector-to-oversee-key-city-services/articleshow/16776041.cms
  2. https://www.kmcgov.in/KMCPortal/jsp/BasicStatistics.jsp
  3. "Basic statistics of Kolkata" (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা পৌরসংস্থা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ 
  4. "KMC functions" (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা পৌরসংস্থা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১১ 
  5. "Legislative structure" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা পৌরসংস্থা। ৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১১ 
  6. "Change of guard brings welcome relief"The Times of India। ২ সেপ্টেম্বর ২০১১। ৭ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১১ 
  7. "About Kolkata Metropolitan Development Authority"Kolkata Metropolitan Development Authority। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 
  8. "New sheriff of Kolkata"। The Telegraph। ২৮ ডিসেম্বর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 
  9. Delimitation Commission (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Notification: order no. 18" (পিডিএফ)। New Delhi: Election Commission of India। পৃষ্ঠা 12–25। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০২১