করুণারত্ন তুলাধর

নেপালি ব্যবসায়ী

করুণারত্ন তুলাধর (নেপালি: करुणारत्न तुलाधर) (২৩ অক্টোবর ১৯২০ – ১৯ জুলাই ২০০৮) ছিলেন নেপালি গণপরিবহণ খাতের অগ্রদূত।[১] তিনি ছিলেন নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের অন্যতম সত্ত্বাধিকারী। তিনি ও তার ভাই লুপৌরত্ন তুলাধর ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।[২][৩] এটি ছিল নেপালের প্রথম গণপরিবহণ পরিষেবা। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী অমলেখগঞ্জ পর্যন্ত বাস সার্ভিসটি পরিচালনা করা হতো।[৪][৫]

করুণারত্ন তুলাধর, ১৯৬৩
নেপাল বাস সার্ভিসের শেভরোলে ভাইকিং ১৯৫৯ মডেলের বাস, ১৯৬১
২০১২ সালে জারিকৃত ডাকটিকিটে করুণারত্ন ও লুপৌরত্ন তুলাধর

একই বছর কাঠমান্ডু থেকে উপত্যকার তিনটি মহানগরের অন্যতম পাটনে (ললিতপুর) শাটল সার্ভিস চালু করে।[২][৬]

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

করুণারত্ন তুলাধর কাঠমান্ডুর অসনের ধলাসিক্বে এক তুলাধর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন পুষ্পসুন্দর তুলাধর এবং মাতা ধনমায়া। তিনি তার পিতা-মাতার তিন পুত্রের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। পুষ্পসুন্দর তুলাধর তিব্বতের লাসায় একটি বাণিজ্যকুঠি পরিচালনা করতেন, যা খচ্চরচালিত গাড়িতে হিমালয় পাড়ি দিয়ে নেপাল, তিব্বত ও ভারতের মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়া করতো।[৪][৭]

লাসায় বাণিজ্যযাত্রা সম্পাদনা

জগৎলাল মাস্টারের নিকট সংক্ষিপ্ত শিক্ষাজীবন শেষে করুণারত্ন লাসায় গমন করেন এবং পৈতৃক ব্যবসায় যোগদান করেন।[৮] তিনি ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো তিব্বতে গমন করেন।[৯] সে সময় প্রথমে দুইদিন হেঁটে, লরিতে চেপে এবং এরপর ভারতের সীমান্তবর্তী শহর রক্সৌল থেকে ভারতীয় রেলওয়ের বাষ্পচালিত লোকোমোটিভে করে সিক্কিম পৌঁছাতে হতো। সিক্কিম থেকে তৎকালীন বণিকেরা খচ্চরটানা গাড়িতে করে ২০ দিনে লাসায় পৌঁছাতেন। এই পথটি প্রাচীন সিল্করোডের একটি পার্শ্বশাখা ছিল।

এরপর করুণারত্ন তুলাধর আরও দুইবার লাসায় গমনাগমন করেন এবং মোট ১৭ বছর তিব্বতের এই রাজধানী শহরে কাটান।[৯] দ্বিতীয় যাত্রা থেকে ফেরার পর তৃতীয় যাত্রার পূর্বে ১৯৪৮ সালে তিনি তাম্রকার পরিবারের কন্যা হীরাশোভা তাম্রকারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫২ সালে তিনি লাসার নেপালি বাণিজ্য সঙ্ঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১০] ১৯৫৪ সালে তিনি শেষবারের মতো তিব্বত থেকে ফিরে আসেন এবং কাঠমান্ডু ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কালিম্পং (লাসায় যাত্রা শুরুর বিন্দু) থেকে বাণিজ্য পরিচালনা করেন।[৯][১১]

নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস সম্পাদনা

১৯৫৬ সালে জিপ গাড়ির জন্য নেপালের প্রথম মহাসড়ক ত্রিভুবন রাজপথ খুলে দেওয়ার পর করুণারত্ন লাসার ব্যবসা গুটিয়ে দেশে নজর দেওয়ার চিন্তা করেন। রাস্তাটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করার পর ১৯৫৯ সালের মার্চ মাসে দুইটি টাটা মার্সিডিস-বেঞ্জ ট্রাকে পণ্য আনা-নেওয়ার মাধ্যমে নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়।[২][১২]

সেই বছরেই জুলাই মাসে একটিমাত্র গাড়ি নিয়ে কোম্পানির গণপরিবহণ পরিষেবা চালু হয়। ধীরে ধীরে ১১টি টাটা মার্সিডিস-বেঞ্জ, শেভরোলে এবং বেডফোর্ড বাস পরিষেবায় যুক্ত হয়।[২][৫] এর প্রধান কার্যালয় কাঠমান্ডুর ১২২ অসন তিয়ৌদা টোলে তার পৈতৃক বাড়িতে অবস্থিত ছিল।[১৩]

কোম্পানি প্রথমদিকে বেশ ভালো লাভ করেছিল। কিন্তু মেরামতের জন্য স্থানীয় জনবলের অভাবে ঘনঘন ভারতে আনা-নেওয়ার ফলে দীর্ঘসময় পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে ধীরে ধীরে ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকে। অবশেষে ১৯৬৬ সালে নেপাল ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। করুণারত্ন তুলাধর ২০০৮ সালে কাঠমান্ডুতে মৃত্যুবরণ করেন।[১৪][১৫]

স্মারক সম্পাদনা

২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নেপাল সরকারের ডাক পরিষেবা বিভাগ জাতির প্রতি অবদানের জন্য করুণারত্ন ও লুপৌরত্ন তুলাধরের ছবিসম্বলিত স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। ডাকটিকিটে তাদের ছবির সাথে নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের একটি শেভরোলে বাসের ছবিও ছিল।[১৬]

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "First motorcycle importer to Tibet, Lhasa Newah passes away!"। The Newah (नेपाल भासँ थःगु बिचाः प्वन्केगु हलिमे छगुहे जक नेवाः ब्लग्)। ২০ জুলাই ২০০৮। ৮ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১১ 
  2. Tuladhar, Kamal Ratna (২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Nepal took the bus half a century ago"The Kathmandu Post। ২৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১১ 
  3. Shrestha, Krishna। "Time For Comprehensive Urban Transport Policy"Gorkhapatra Online। জুন ২৪, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৪, ২০১৩ 
  4. Shrestha, Bijaya Lal (11 August 1989). "All Those Years Ago: A trip through the early days of bus transport", The Rising Nepal.
  5. "1959 Chevrolet Viking Bus – Nepal Transport"। Classic Bus Depot.com। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১১ 
  6. Poudel, Keshab (নভেম্বর ২০০৩)। "Big Wheels Keep on Turnin'"ECS NEPAL। ২৪ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  7. Tuladhar, Prem Hira (2009) The Past Lives of the Buddha. Kathmandu: Hira Shobha Tuladhar. আইএসবিএন ৯৭৮-৯৯৩৭-২-১৪৯৭-১. Pages 9–11.
  8. Bajracharya, Himesh (১৬ জুন ২০১২)। "Lhasa legacy"Kantipur। ২২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১২ 
  9. Tuladhar, Kamal Ratna (৯ জানুয়ারি ২০১০)। "Merchants of yore"The Kathmandu Post। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১১ 
  10. Tuladhar, Kamal Ratna (2011) Caravan to Lhasa: A Merchant of Kathmandu in Traditional Tibet. Kathmandu: Lijala & Tisa. আইএসবিএন ৯৯৯৪৬-৫৮-৯১-৩. Page 107.
  11. Kalimpong. New Delhi: Nest & Wings. আইএসবিএন ৮১-৮৭৫৯২-০১-X. Page 20.
  12. Yoon, Sungoh। "Newar Merchants of Kathmandu in Traditional Tibet"Tibetan Biographies। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৪ 
  13. Bajracharya, Himesh (২৩ জানুয়ারি ২০১০)। "Bas Yatayatko 50 Barsha" [Fifty Years of Bus Transport]। Kantipur (Nepali ভাষায়)। Kathmandu। ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ 
  14. "Post staffer bereaved"The Kathmandu Post। ২২ জুলাই ২০০৮। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১১ 
  15. Sandhya Times (19 July 2008). Page 1.
  16. "Commemorative stamps issued"The Kathmandu Post। ১ জানুয়ারি ২০১৩। ২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৩