কমলা সুরাইয়া

ভারতীয় লেখক

কমলা সুরাইয়া (১৯৩৪ – ২০০৯), যিনি তার ছদ্মনাম মাধবীকুট্টি নামে পরিচিত একজন ভারতীয় লেখক যিনি ইংরেজি ও মালয়লাম ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেছেন। তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নারী, শিশু, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। কেরালায় তার লেখা ছোটগল্প ও আত্মজীবনী ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে জন্মেছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ও নিজের নাম পরিবর্তন করে কমলা সুরাইয়া রাখেন। তাকে তার প্রজন্মের নারীমুক্তি আন্দোলননের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] ২০০৯ সালের ৩১ মে পুনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।[২] তাকে নিয়ে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুগল ডুডল প্রকাশ করে সার্চ ইঞ্জিন গুগল[৩] ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র আমি মুক্তি পায়।[৪]

কমলা সুরাইয়া
জন্মকমলা
(১৯৩৪-০৩-৩১)৩১ মার্চ ১৯৩৪
পুন্নায়ুরকুলাম, পোনানী তালূক, মালাবার জেলা, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩১ মে ২০০৯(2009-05-31) (বয়স ৭৫)
পুনে, মহারাষ্ট্র, ভারত
ছদ্মনামমাধবীকুট্টি
পেশাকবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার
জাতীয়তাভারতীয়
ধরনকবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, স্মৃতিকাহিনি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএঝুথাচান পুরস্কারম, ভায়ালার পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, আসান ওয়ার্ল্ড পুরস্কার, এশিয়ান পোয়েট্রি পুরস্কার, কেন্ট পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীকে. মাধব দাস
সন্তান
আত্মীয়

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

১৯৩৪ সালের ৩১ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের মালাবার জেলার পুন্নায়ুরকুলাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম ভি. এম. নায়ার এবং মাতার নাম বালামণি আম্মা। তিনি জন্মেছিলেন রাজকীয় নায়ার পরিবারে। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল কমলা।

তার পিতা ছিলেন বিখ্যাত মালয়লাম সংবাদপত্র দৈনিক মাতৃভূমির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও মাতা ছিলেন মালয়ালম ভাষার বিখ্যাত কবি।

তার শৈশব কেটেছে তার বাবার কর্মস্থল কলকাতায়, যেখানে ওয়ালফোর্ড ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন, এবং পুন্নায়ুরকুলাম গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে।

তিনি তার লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার মা বালামণি আম্মা ও নালাপত নারায়ণ মেননএর কাছ থেকে, যিনি তার সম্পর্কে নানা হন।

১৫ বছর বয়সে ব্যাংক কর্মকর্তা মাধব দাসের সাথে বিয়ে হয় তার। মাধব দাসের সাথে বিয়ের পর তার নাম হয় কমলা দাস। মাধব দাস তাকে লেখালেখি করতে অনুপ্রেরণা দিতেন।

তাদের তিনটি ছেলে ছিল।[৫] তাদের নাম: মাধব দাস নালাপত, চেন্নান দাস ও জয়সূর্য দাস। তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বড় ছেলে মাধব দাস নালাপত। তিনি মণিপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূরাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। এছাড়াও তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়ার আবাসিক সম্পাদক।

সাহিত্যজীবন সম্পাদনা

তিনি মালয়ালম ভাষায় ছোটগল্প ও ইংরেজিতে কবিতা রচনার জন্য বিখ্যাত। তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কলাম লিখেছেন। তার লেখা কলামে ফুটে উঠেছে নারীদের বঞ্চনার কথা, ফুটে উঠেছে শিশু অধিকারের কথা, ফুটে উঠেছে রাজনীতির কথা। তিনি কলাম লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ সামার ইন ক্যালকাটা ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। বইটি সমালোচক ও পাঠকমহলে সমাদৃত হয়।

তিনি ৪২ বছর বয়সে তার আত্মজীবনী এন্তে কথা রচনা করেন। লেখনীটি বেশ সাহসিকতাপূর্ণ ছিল। মালয়লাম ভাষায় লিখিত বইটি পরে মাই স্টোরি শিরোনামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। বইটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তার রচনায় ফুটে উঠেছে সমাজের বিভিন্ন প্রান্তের নারীদের বঞ্চনার কথা। ফুটে উঠেছে সমাজের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কথা।

তিনি মালয়লাম ভাষায় বহু ছোটগল্প লিখেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: থানুপ্পু, পাকশিউদে মানাম, চান্দানা মারাঙ্গাল প্রভৃতি।

তিনি মালয়লাম ভাষায় উপন্যাসও লিখেছেন। তন্মধ্যে নিরামান্থালাম পুথা কালাম সবচেয়ে বিখ্যাত।

তার রচিত সাহিত্যকর্ম ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, রাশিয়ান, জার্মান ও জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

তিনি কেরালা সাহিত্য আকাদেমির ভাইস চেয়ারপার্সন ছিলেন। এছাড়াও তিনি কেরালা ফরেস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারপার্সন, কেরালা চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি, পোয়েট সাময়িকীর সম্পাদক ও ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়ার পোয়েট্রি এডিটর হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।[৬]

প্রথম দিকে তাকে 'মনোযোগ আকর্ষণকারী' হিসেবে ধরা হলেও, বর্তমানে ভারতীয় ইংরেজি কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে ধরা হয় তাকে।[৭] ২০০৯ সালে দ্য টাইমস তাকে দ্য মাদার অব মর্ডান ইংলিশ ইন্ডিয়ান পোয়েট্রি বলে অভিহিত করে।[৮]

তার মৃত্যুর পর, তার রচিত ছোটগল্পগুলোর ইংরেজি অনুবাদ, দ্য কেপ্ট ওম্যান অ্যান্ড আদার স্টোরিজ বইতে সংকলিত হয়।[৯]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০০৯ সালের ৩১ মে পুনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মৃত্যুর পর তাকে তিরুবনন্তপুরমের পালায়াম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।[১০][১১][১২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এগুলো হল:

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

ইংরেজি সম্পাদনা

উপন্যাস
  • ১৯৭৬: অ্যালফাবেট অব লাস্ট
আত্মজীবনী
ছোটগল্প
  • ১৯৭৭: আ ডল ফর দ্য চাইল্ড প্রস্টিটিউট
  • ১৯৯২: পদ্মাবতী দ্য হার্লট অ্যান্ড আদার স্টোরিজ
কবিতার বই
  • ১৯৬৪: দ্য সাইরেন্স
  • ১৯৬৫: সামার ইন ক্যালকাটা
  • ১৯৬৭: দ্য ডিসেড্যান্টস
  • ১৯৭৩: দ্য ওল্ড প্লেহাউস অ্যান্ড আদার পোয়েমস
  • ১৯৭৭: দ্য স্ট্রেঞ্জার টাইমস'
  • ১৯৭৯: টুনাইট, দিস স্যাভেজ রাইট
  • ১৯৮৪: কালেক্টেড পয়েমস
  • ১৯৮৫: দ্য অ্যানামালাই পোয়েমস
  • ১৯৭৭: ওনলি দ্য সোল নোজ হাউ টু সিং
  • ১৯৯৯: মাই মাদার এট সিক্সটি সিক্স
  • ২০০১: ইয়া আল্লাহ

মালয়ালম সম্পাদনা

  • ১৯৬৪: পাকশিইউদে মানাম (ছোটগল্প সংকলন)
  • ১৯৬৬: নারিচিরুকাল পারাক্কুম্বল (ছোটগল্প সংকলন
  • ১৯৬৮: থানুপ্পু (ছোটগল্প)
  • ১৯৮২: এন্তে কথা (আত্মজীবন)
  • ১৯৮৭: বাল্যকাল স্মরণকাল (ছোটবেলার স্মৃতি)
  • ১৯৮৯: ভারাশংকুল মুম্বু (উপন্যাস)
  • ১৯৯০: পলায়ন (উপন্যাস)
  • ১৯৯১: নেয়াপায়াসাম (ছোটগল্প)
  • ১৯৯২: দায়ারিক্কুরিপ্পুকাল (উপন্যাস)
  • ১৯৯৪: নীরামাথালাম পুথা কালাম (উপন্যাস)
  • ১৯৯৬: কাদাল মায়ূরাম (উপন্যাসিকা)
  • ১৯৯৬: রোহিণী (উপন্যাসিকা)
  • ১৯৯৬: রাথ্রিয়ুদে পাদাভিন্যাসাম (উপন্যাসিকা)
  • ১৯৯৬: আত্তুকাত্তিল (উপন্যাসিকা)
  • ১৯৯৬: চেক্কেরুন্না পাকশিকাল (ছোটগল্প সংকলন)
  • ১৯৯৮: নাশতাপেত্তা নীলাম্বরী (ছোটগল্প সংকলন)
  • ২০০৫: চন্দনা মঙ্গল (উপন্যাস)
  • ২০০৫: মাধবীক্কুতিইউদে উন্মাক্কাধাকাল (ছোটগল্প সংকলন)
  • ২০০৫: ভান্দিক্কালাকাল (উপন্যাস)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Rediff Interview/ Kamala Suraiya"Rediff.com। ১৯ জুলাই ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৩ 
  2. "PM mourns Kamala Das's death, praises her sensitive"। Chennai, India: The Hindu। ৩১ মে ২০০৯। ৬ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০০৯ 
  3. https://www.ndtv.com/india-news/google-doodle-1807084
  4. https://m.imdb.com/title/tt6689734/
  5. "Kamala Das passes away - Times of India"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৮ 
  6. "Love and longing in Kerala - Times of India"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৮ 
  7. The histrionics of Kamala Das ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ জুন ২০০৮ তারিখে The Hindu, 6 February 2000
  8. Booth, Jenny (১৩ জুন ২০০৯)। "Lalit shakya: Indian poet and writer"The Times। London। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১১ 
  9. Pisharoty, Sangeeta Barooah (২০১০-১০-২৭)। "Thus spake Das"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-০৮ 
  10. "Kerala pays tributes to Kamala Surayya"। Chennai, India: The Hindu। ১ জুন ২০০৯। ৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০০৯ 
  11. "Tributes showered on Kamala Suraiya"। Chennai, India: The Hindu। ২ জুন ২০০৯। ৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০০৯ 
  12. http://archive.indianexpress.com/news/kamala-surayya-dies-at-75-will-be-buried-a-muslim/468940/
  13. "Literary Awards"kerala.gov.inGovernment of Kerala। ১১ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ 
  14. Amar Nath Prasad, Rajiv K. Mallik (২০০৭)। Indian English Poetry and Fiction: Critical ElucidationsNew Delhi: Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 100। আইএসবিএন 81-7625-730-3 
  15. "AKADEMI AWARDS (1955-2016)"sahitya-akademi.gov.inSahitya Akademi। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ 
  16. "Honorary degree by Calicut University" (পিডিএফ)। ৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৯ 
  17. "Literary Awards – official website of Onformation and Public Relation Department"। ২৪ মে ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৯ 
  18. "Writer Kamala Surayiya receives Ezhuthachan prize"The Times of India। ১ জানুয়ারি ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৮