কমলনগর হত্যাকাণ্ড
১৪ই আগস্ট ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরার কমলনগর গ্রামে ১৪ জন নিরস্ত্র বাঙালি হিন্দুকে নিখিল ত্রিপুরা ব্যাঘ্র বাহিনীর বিদ্রোহী বন্দুকবাজরা গুলি করে হত্যা করে যা ত্রিপুরা কমলনগর গণহত্যাকাণ্ড নামে কুখ্যাত৷
কমলনগর গণহত্যাকাণ্ড | |
---|---|
স্থান | কমলনগর, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা, ত্রিপুরা, ভারত |
তারিখ | ২৮শে শ্রাবণ ১৪১০ বঙ্গাব্দ (১৪ই আগস্ট ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ) (UTC+5:30) |
লক্ষ্য | বাঙালি হিন্দু |
হামলার ধরন | গণহত্যা |
ব্যবহৃত অস্ত্র | একে ৩৭ |
নিহত | ১৪ |
হামলাকারী দল | বিদ্রোহী নিখিল ত্রিপুরা ব্যাঘ্র বাহিনী (এ.টি.টি.এফ.) |
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৪৯ এর পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরাতে বাঙালি তথা বাঙালি হিন্দুদের ওপর বিভিন্ন হামলার দায়ভার এ.টি.টি.এফ. নিয়ে এসেছে৷ ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে ৩০ জন বাঙালি হত্যার পেছনে রাষ্ট্রীয় ত্রিপুরা জনমুক্তি মোর্চা ও এ.টি.টি.এফ. এর নাম জড়িত৷
কমলপুর গ্রামটি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার কল্যাণপুর থানার অধীনস্থ ও আগরতলা-খোয়াই সড়কের ওপর অবস্থিত৷[১] এটি জনবিরল ও আম-কাঁঠালগাছে পরিপূর্ণ গ্রাম, যেখানে মুলত হতদরিদ্র বাঙালি হিন্দু কৃষকদের বসবাস,[১] অধিকাংশ বাড়িই মাটির ও বিদ্যুৎ সংযোগ অপ্রতুল৷[২] গ্রামের বেশকিছু আবাসিক ২০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীর ভয়ে গ্রাম ছেড়ে কল্যাণপুর এলাকাতে বসতি গড়েছে৷
হত্যাকাণ্ড
সম্পাদনা২০০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাক-স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন কালে রাত ৯:৪৫ নাগাদ নিখিল ত্রিপুরা ব্যাঘ্র বাহিনী কমলনগর গ্রামে হামলা চালায়৷ হামলাকারীরা প্রথমে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে ও ঘরে অগ্নিসংযোগ করে দেয়৷ ফলে বাসরতরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ও তখনই বন্দুকবাজরা তাদের উদ্দেশ্য করে এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে৷ পরে তারা ঘর থেকে লুক্কাইতদের ও বের করে আনে৷
হামলাকারীরা সেখানে মোটামুটি আধঘণ্টা যাবৎ অত্যাচার চালাতে থাকে৷[৩] অপ্রকাশিত সূত্র থেকে জানা যায় পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরী গ্রামগুলি থেকে বন্দুকবাজরা বিভিন্নভাবে সাহায্য পেতে থাকে৷[২] একই পরিবারের সাতজন সদস্য সহিত মোট চৌদ্দজনকে হত্যা করা হয় ও বহুলোক আহত হয়৷ পুলিশ সুপার টি.বি. রায় তৎক্ষণাৎ গ্রামে এসে উপস্থিত হন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷
ঘটনা পরবর্তী প্রভাব
সম্পাদনাকমলনগর হত্যাকাণ্ড-এর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কল্যাণপুর থানা সহ সমগ্র এলাকাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় ৩০০ নিঃস্ব বাঙালি হিন্দু পরিবার কমলপুর ও আশেপাশের নিজবাস ছেড়ে কমলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়৷ ত্রিপুরী উপজাতিভুক্ত সরকারী চাকুরীরত, ছাত্র, মহিলা ও চিকিৎসাধীন সকলেই আগামী সময়ে ধেয়ে আসা বিপত্তির কথা মাথায় রেখে ঐ অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে যায়৷ স্থানীয়রা রাস্তা অবরোধ করে ও স্থায়ী নিষ্পত্তি চেয়ে আন্দোলনে নামে৷ কমলনগরের পরিস্থিতি পর্যালোচনে যাওয়া পাঁচজন মন্ত্রীসদকে আটক করেন স্থানীয়রা৷[৪]
তদন্ত
সম্পাদনাপরের দিন, প্রত্যক্ষদর্শী একজন কল্যাণপুর থানাতে সমস্ত ঘটনা নথিভুক্ত করেন৷ ৫ই জানুয়ারী ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জিরানিয়া উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তার হাতে এ.টি.টি.এফ. এর দুজন মাইকেল ও রয়্যাল দেববর্মা আত্মসমর্পণ করে৷[৫] পুলিশ প্রশাসন ৩৮ জনের সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে তদন্তের মাধ্যমে চৌদ্দ জনের বিরূদ্ধে খোয়াই আদালতে চার্জশিট গঠন করেন৷ তদন্ত শেষে ধৃত ১৭ জনের মধ্যে কার্তিক দেববর্মা, ব্রজেন্দ্র দেববর্মা, অশোক দেববর্মা দোষী সাব্যস্ত হয় ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড পায়, বাকী ১৪ জনকে প্রমাণের অভাবে খালাস করে দেওয়া হয়৷
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Paul, Manas (২০০৯)। The Eyewitness: Tales from Tripura's Ethnic Conflict। New Delhi: Lancer Publishers। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 9781935501152। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৬।
- ↑ ক খ Ray Chaudhuri, Amit (২৪ আগস্ট ২০০৩)। ""They asked no question. They simply killed""। assam.org। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৬।
- ↑ "Kamalnagar massacre: Three awarded life term"। tripuravision.com। ২৩ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "5 ministers heckled at carnage site"। The Telegraph। ১৯ আগস্ট ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১২।
- ↑ "Incidents and Statements involving All Tripura Tiger Force: 1990-2012"। South Asia Terrorism Portal। Institute for Conflict Management। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৬।