কবির আহম্মদ

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

কবির আহম্মদ (জন্ম: ১৯৪৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২]

কবির আহম্মদ
জন্ম১৯৪৬ (বয়স ৭৭–৭৮)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

কবির আহম্মদের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ধূম ইউনিয়নের মোবারকঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বদিউর রহমান এবং মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম বিবি ফাতেমা। তাঁদের এক মেয়ে, তিন ছেলে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

কবির আহম্মদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ ইউনিটে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের (তখন পশ্চিম পাকিস্তান) ক্যাম্বেলপুরে কর্মরত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে তিন মাসের ছুটিতে বাড়ি আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসে ভারতে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। তাকে হরিণা ক্যাম্পের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিবাহিনীর গোলন্দাজ দলে অন্তর্ভুক্ত হন। তার পরিচালনায় মুজিব ব্যাটারি কয়েকবার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব গোলন্দাজ বাহিনী (আর্টিলারি) ছিল না। এ সময় ভারত মুক্তিবাহিনীকে কয়েকটি ৩.৭ ইঞ্চি প্যাক হাউইটজার (ফিল্ড আর্টিলারি গান) প্রদান করে। তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর ‘কে’ ফোর্সের জন্য ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি (গোলন্দাজ দল) গঠন করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় মুজিব (বা ১ ফিল্ড) ব্যাটারি। এতে অন্তর্ভুক্ত হন কবির আহম্মদ। তিনি একটি কামান পরিচালনার দায়িত্ব পান। মুজিব ব্যাটারিতে ছিল ছয়টি কামান। আর্টিলারি ফায়ার সমর্থন দিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। ব্যাটারি প্রথম যুদ্ধে অংশ নেয় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। ১৪ অক্টোবর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সালদা নদী প্রতিরক্ষায় প্রথাগত আক্রমণ (কনভেনশনাল অ্যাটাক) চালায়। চূড়ান্ত আক্রমণের আগে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে মুজিব ব্যাটারির কামান দিয়ে অসংখ্য গোলা ছোড়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা। সে জন্য কামানগুলো পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার চারদিকে বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে গোলা ছোড়া হয়। এই আক্রমণে কবির আহম্মদও অংশ নেন। তিনি তার নেতৃত্বে পরিচালিত কামান দিয়ে সালদা নদীর বায়েক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেন। সঠিক নিশানায় গোলাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বায়েক এলাকার প্রতিরক্ষার বিশেষত কয়েকটি বাংকারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেখানে মাটির ওপরে ও নিচে ছিল পাকিস্তানিদের তিন স্তরের বাংকার। বাংকারগুলো ছিল রেলের বগি দিয়ে তৈরি। ওপরের স্তর যুদ্ধের জন্য। মধ্যম স্তর গোলাবারুদ রাখাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য। নিচের স্তর ছিল বিশ্রামের জন্য। কবির আহম্মদের দলের ছোড়া কামানের গোলায় দু-তিনটি বাংকার সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোলার আঘাতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও আহত হয়। বায়েক এলাকায় কবির আহম্মদের দলের নিখুঁত গোলাবর্ষণের পর মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানিদের ওপর। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলা অবস্থায়ও তিনি গ্রিড রেফারেন্স (শত্রুর নতুন অবস্থান সম্পর্কে তথ্য) অনুযায়ী গোলাবর্ষণ করেন। এতেও পাকিস্তানি সেনাদের বেশ ক্ষতি হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানিরা বায়েক থেকে পিছু হটে যায়।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-১১-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা