কনক রেলে (জন্ম: ১১ই জুন, ১৯৩৭) একজন ভারতীয় নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার এবং শিক্ষাবিদ। তিনি মোহিনীঅট্টম নৃত্যধারার একজন মহীরুহ। তিনি নালন্দা নৃত্য গবেষণা কেন্দ্রর এবং নালন্দা নৃত্যকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক। [১][২] মোহিনীঅট্টমে তার অবদানের জন্যে তিনি ভারত সরকার দ্বারা ১৯৯০ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১৩ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।

কনক রেলে
জন্ম (1937-06-11) ১১ জুন ১৯৩৭ (বয়স ৮৬)
পেশাশাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী
কোরিওগ্রাফার
শিক্ষাবিদ
পরিচিতির কারণমোহিনীঅট্টম
পুরস্কারপদ্মভূষণ
পদ্মশ্রী
সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
কালিদাস সম্মান
গৌরব পুরস্কার
কলা বিপাঞ্চী
এম এস সুব্বুলক্ষ্মী পুরস্কার
ওয়েবসাইটnalandadanceeducation.com

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

গুজরাতে জন্মগ্রহণকারী [৩] ড. রেলে তার শৈশবের বেশ কিছুটা সময় শান্তিনিকেতনে এবং কলকাতায় তাঁর মামার সাথে কাটিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনে তিনি কথাকলিমোহিনীঅট্টম নৃত্যাভিনয় দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন যা তাঁর শৈল্পিক সংবেদনশীলতায় রূপদান করতে সহায়তা করেছিল। [৪][৫] তিনি মুম্বাইয়ের গভর্নমেন্ট ল কলেজ থেকে আইনে স্নাতক এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক আইনে ডিপ্লোমা প্রাপ্ত যোগ্য আইনজীবী। তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। [৬]

মোহিনীঅট্টম শিল্পজীবন সম্পাদনা

ড. রেলে প্রধানত একজন প্রশিক্ষিত মোহিনীঅট্টম শিল্পী। এছাড়া তিনি একজন কথাকলি শিল্পীও, যিনি সাত বছর বয়স থেকেই গুরু পাঞ্চালি করুণাকর পানিকারের অধীনে প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন। মোহিনীঅট্টমে তাঁর দীক্ষা কলামন্ডলম রাজলক্ষ্মীর অধীনে। কিন্তু নিজের নৃত্যানুষ্ঠানের পাশাপাশি, কনকের আগ্রহ ছিল মোহিনীঅট্টম চর্চায়।

সংগীত নাটক আকাদেমির অনুদান এবং পরবর্তীতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি তাকে মোহিনিঅট্টমের প্রতি গবেষণায় গভীরভাবে সহায়তা করে এবং ১৯৭০-৭১-য়ের সময়ে, তিনি কুনজুকুট্টি আম্মা, চিন্নাম্মু আম্মা এবং কল্যাণিকুট্টি আম্মার মতো নৃত্যশিল্পীদের চিত্রায়িত করার জন্যে কেরলে গিয়েছিলেন। এই প্রকল্পটি তাকে মোহিনীঅট্টমের সংক্ষিপ্তসারের সাথে পরিচিত করতে এবং এর ঐতিহ্যবাহী এবং প্রযুক্তিগত শৈলীর নথিভুক্তকরণে সহায়তা করেছে এবং তার জন্য এটি একটি শিক্ষণ পদ্ধতির বিকাশ করতেও সক্ষম হয়েছিল। নাট্যশাস্ত্র, হস্তলক্ষনদীপিকা এবং বালারামভারত্মের মতো শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলির পটভূমি তাঁর এই কৌশল অধ্যয়ন তাকে মোহিনীঅট্টমের নিজস্ব রীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যা পরবর্তীকালের শিল্পীদের কাছে 'কনক রেলে ঘরানা' বলেই অভিহিত।

ড. রেলের 'নৃত্যে দেহভঙ্গিমা' একটি অগ্রণী উদ্ভাবন যা একটি স্বরলিপি ব্যবস্থার অনুরূপ। [৪] ড. রেলেকে মোহিনীঅট্টমের পুনর্জাগরণ ও জনপ্রিয়তায় মূল ভূমিকা পালন করতে এবং এতে বৈজ্ঞানিক মেজাজ ও প্রথাগত রীতি এনে দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। [৭]

উল্লেখযোগ্য কোরিওগ্রাফি সম্পাদনা

কনক রেলে তাঁর অভিনয়গুলিতে পৌরাণিক কাহিনী এবং তাঁর মধ্যে দৃঢ়প্রত্যয়ী নারী চরিত্রের চিত্রায়নের জন্য প্রখ্যাত, যা ঐতিহ্যবাহী মোহিনীঅট্টমে নায়িকার প্রেমে চন্দ্রাহতা রূপটির থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। [৩] তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোরিওগ্রাফির মধ্যে রয়েছে কুবজা, কল্যাণী, শিলাপ্পাদিকারাম এবং স্বপ্নবাসবদত্তম

মালয়ালম কবি ও পণ্ডিত কাভালাম নারায়ণ পানিকারের সাথে রেলের যোগাযোগের মাধ্যমে কনক কেরালার ঐতিহ্যবাহী সোপান সংগীতামের সাথে পরিচিত হন এবং সোপানা সংগীতের তালগুলিতে নৃত্যরচনা করেন। [৫][৮] তাঁর নালন্দা স্কুল দ্বারা নির্মিত ভারতের ধ্রুপদী নৃত্য সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্যচিত্র "নৃত্য ভারতী", বিদেশের সমস্ত ভারতীয় মিশনের সরকারি ক্যাপসুল হিসাবে বিদেশ মন্ত্রক দ্বারা অধিগৃহীত হয়েছে। [৯] মুম্বাইয়ের ২৬/১১ হামলার পটভূমিতে রচিত তার নৃত্যানুষ্ঠান দ্য এনলাইটেনড ওয়ান-গৌতম বুদ্ধ দর্শকদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছিল। [১০]

কর্মজীবন সম্পাদনা

মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ শুরু করার জন্য রেলে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং এর ডিন হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রেলে ১৯৬৬ সালে নালন্দা নৃত্য গবেষণা কেন্দ্র এবং ১৯৭২ সালে নালন্দা নৃত্য কলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [৯] নলন্দা নৃত্য গবেষণা কেন্দ্র, মুম্বই যা মোহিনীঅট্টমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়, ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দ্বারা একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত। রেলে ভারত সরকারের সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশনের নৃত্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাঠ্যক্রম বিকাশকারী দলের এবং একাডেমিক নৃত্য কোর্স বিকাশে ভারতীয় ও বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শদাতাও ছিলেন। [১]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৮৯ সালে রেলে গুজরাত সরকার দ্বারা গৌরব পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ১৯৯০ সালে ভারত সরকার দ্বারা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা ভূষিত হন। [১১] ২০০৬ সালে, মধ্যপ্রদেশ সরকার তাকে শাস্ত্রীয় নৃত্যের ক্ষেত্রে অবদান ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কালিদাস সম্মান দিয়েছিল [৩] তিনি সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার এবং এম এস সুবুলক্ষ্মী পুরস্বারেরও প্রাপক। [১২] ২০১৩ সালে, ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। [১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ARTISTE'S PROFILE — Kanak Y. Rele"। Centre for Cultural Resources and Training। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  2. "Imagination unlimited"The Hindu। ২৭ অক্টোবর ২০০৬। ১৩ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  3. "Dr. Kanak Rele gets Kalidas Samman"Narthaki। ৭ মে ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  4. "Dance has its own language: Dr. Kanak Rele"Times of India। ৯ এপ্রিল ২০১১। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  5. "'Dance has to serve more social causes'"The Hindu। ২৮ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "Dancing Queen — Dr.Kanak Rele"। ৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  7. "Lasya unlimited"The Hindu। ২০ মে ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  8. "Art of evolution"The Hindu। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  9. "Tryst with Mohiniyattam"The Hindu। ২৯ জানুয়ারি ২০০৬। ১৪ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  10. "Dance of peace"The Hindu। ২৮ নভেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  11. VENKATACHALAM, JYOTHI (আগস্ট ২০০৭)। "DR. KANAK RELE IS A DISTINGUISHED DANCER-SCHOLAR" 
  12. "Dance-Drama by Dr Kanak Rele at Lionel Wendt"Daily News। ৬ আগস্ট ২০১২। ৯ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  13. "Padma Awards"। pib। ২৯ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৩