কং এর পর্বতমালা ১৭৯৮ থেকে ১৮৮০ দশকের শেষদিক পর্যন্ত আফ্রিকার মানচিত্রের একটি অস্তিত্বহীন পর্বতশ্রেণী ছিল। [১] একসময় মনে করা হত পাহাড়গুলি পশ্চিম আফ্রিকাতে হাইল্যান্ডের (ভূগোল) নিকটবর্তী হতে শুরু করে গিনিতে টেমবাকাউন্ডার নিকটে নাইজার নদীউঁচুভূমির উৎস; এছাড়া কিংবদন্তি মধ্য আফ্রিকান চাঁদের পর্বতমালা(আফ্রিকা), যেখানে সাদা নীলনদ এর উৎস ছিল বলে মনে করা হতো, এর পূর্ব দিকে অবধি বিস্তৃত ছিল।

১৮০৫ সালে জন ক্যারি দ্বারা নির্মিত আফ্রিকার একটি মানচিত্র, যা কং এর পর্বতমালাকে চাঁদের পর্বতমালার পূর্ব দিকে বিস্তৃত দেখায়।
১৮৩৯ সালে একটি পশ্চিম আফ্রিকান মানচিত্রে কং এর পর্বতমালা

ইতিহাস সম্পাদনা

১৭৯৮ সালে মুনগো পার্ক (অভিযাত্রী) দ্বারা অঞ্চলটির অনুসন্ধানের ফলে প্রাপ্ত মানচিত্রটি[২] প্রথমবারের মতো এই পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্বতমালার অংশটিকে দেখিয়েছে। এ মানচিত্রটি তৈরি করেছিলেন ইংরেজ কার্টোগ্রাফার জেমস রেনেল[১] যিনি ওয়াংগারা, বুরকিনা ফাসো -তে নাইজার বাষ্পায়ন অভ্যন্ততরস্থল দেখাতে পেরেছেন। [২]

জার্মান মানচিত্র নির্মাতা জোহান রেইনেকে ১৮০৪ সালের মানচিত্রে পর্বতমালাটিকে জেবুর্গ কং নামে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। [১] ১৮০৫ সালে লন্ডনের খোদাইকারী জন ক্যারি প্রথমবার চাঁদের পর্বতমালার সাথে এর সংযোগ স্থাপন করে মানচিত্রে প্রদর্শন করেন।[১]

উনিশ শতকে পশ্চিম আফ্রিকার বহু অভিযাত্রী অঞ্চলটি অন্বেষণের পরে যে মানচিত্র তৈরি করেছিলেন বা তৈরির নির্দেশনা করেছিলেন, তার মধ্যে এ অঞ্চলের পরিসীমাও অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে রয়েছেন ফরাসি অভিযাত্রী রেনে কেইলি, যিনি নাইজারের উৎসের নিকটে ফুটা জালান এলাকায় গিনির উঁচু অঞ্চলগুলি অনুসন্ধান করেছিলেন; কর্নিশ অভিযাত্রী রিচার্ড লেমন ল্যান্ডার এবং তার ছোট ভাই জন ল্যান্ডার, এবং স্কটিশ অভিযাত্রী হিউ ক্ল্যাপারটন, যিনি নাইজার নদীর উপরের অংশেও খোঁজ করেছেন।[১]ঐতিহাসিক টমাস বাসেট এবং ফিলিপ পোর্টার ১৭৯৮ থেকে ১৮৯২ এর মধ্যে প্রকাশিত, পর্বতগুলিকে দেখানো চল্লিশটি মানচিত্র চিহ্নিত করেছেন[১][৩]

পরবর্তীকালের অভিযাত্রীদের এই অঞ্চলটি শনাক্ত করতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও, এটি উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত মানচিত্রে পাওয়া যায়।[৪]

ফরাসি অভিযাত্রী লুই গুস্তেভ বিঞ্জার তার ১৮৮৭-৮৯ সালের গিনি উপসাগরীয় অঞ্চলে কোট ডি'ভায়ারের মধ্য দিয়ে নাইজার নদীর উৎসমুখ খোঁজার ও গতিপথ নির্ধারণের অভিযানে কং পর্বতমালাকে কাল্পনিক বলে যে মত দেন, তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে কার্টোগ্রাফাররা ম্যাপে একে অন্তর্ভুক্ত করা বন্ধ করে দেন। [১]

এরপরও ১৯২৮ সালে বার্থোলিমেউর অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড এটলাস তাদের সূচীতে ৮° ৪০' উত্তর, ৫° ০' পশ্চিম অক্ষাংশে কং পর্বতমালাকে অন্তর্ভুক্ত করেন।[১] এমনকি পরবর্তীকালেও পাহাড়গুলো ১৯৯৫ সালের গুডি'স ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে ভুলভাবে দেখা যায়।[৫]

সম্পর্কিত নামকরণ সম্পাদনা

আইভরি কোস্টের দ্বাদশ শতকের কং নামক শহরটি এই পর্বতমালার নাম ধারণ করে।এটি সপ্তদশ শতাব্দীতে ক্ষমতায় আরোহণ করে কং সাম্রাজ্য গঠন করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে চলে যায়।

কং হিল নামে পরিচিত পাহাড়ি এলাকা উপকূলের অঞ্চলগুলি থেকে পশ্চিম আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ সমভূমিকে পৃথক করে, যা উঁচু ভূমির এলাকার অংশ। সাধারণত পাহাড়ের চূড়াগুলি ৬১০ মিটারের (২০০০ ফুট) বেশি উঁচু হয় না ও সমতল হতে ২১৫ মিটারের(৭০০ ফুট) চেয়ে উঁচু হয় না। [৬]

মানচিত্রের গ্যালারি সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Delaney, John, curator। "Evolution of the Map of Central, East & West Africa"To the Mountains of the Moon: Mapping African Exploration, 1541-1880। Princeton University। ২০০৮-০৮-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-০৪ 
  2. Garfield, Simon, On The map, Chapter 11, The Legendary Mountains of Kong, 2012, Profile Books. আইএসবিএন ৯৭৮১৮৪৬৬৮৫১০১
  3. Thomas J. Bassett and Philip W. Porter, “From the Best Authorities’: The Mountains of Kong in the Cartography of West Africa,” The Journal of African History 32, No. 1, 1991, 368.
  4. Stock, Robert (২০০৪)। Africa South of the Sahara: A Geographical Interpretation। The Guilford Press। আইএসবিএন 1-57230-868-0 
  5. Jennings, Ken (২০১১)। Maphead । Scribner। পৃষ্ঠা 85আইএসবিএন 978-1-4391-6717-5 
  6. Kong 1911 Encyclopædia Britannica