ও’নিল সিলিন্ডার বা ও’নিল উপনিবেশ (ইংরেজি: O'Neill cylinder বা O'Neill colony) হল মার্কিন পদার্থবিদ গেরার্ড কে. ও’নিল কর্তৃক প্রস্তাবিত এক মহাকাশ বসতির নকশা। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত দ্য হাই ফ্রন্টিয়ার: হিউম্যান কলোনিজ ইন স্পেস গ্রন্থে তিনি এই নকশাটি প্রস্তাব করেন।[১] ও’নিল চাঁদ থেকে এবং পরে গ্রহাণু থেকে উপাদান আহরণ করে ২১শ শতাব্দীতে মহাকাশে উপনিবেশ স্থাপনের প্রস্তাব রেখেছিলেন।[২]

শিল্পীর কল্পনায় এক জোড়া ও’নিল সিলিন্ডারের দৃশ্য
ও’নিল সিলিন্ডারের আভ্যন্তরীণ দৃশ্য, পর্যায়ান্বিত ভূমিখণ্ড ও জানলার ডোরা দেখা যাচ্ছে।

একটি ও’নিল সিলিন্ডারের প্রস্তাবিত মডেল পরস্পরের বিপরীতক্রমে আবর্তনশীল দু-টি সিলিন্ডার নিয়ে গঠিত। গাইরোস্কোপিক প্রভাব কাটানোর জন্য সিলিন্ডারগুলিকে পরস্পরের বিপরীতে আবর্তন জরুরি। অন্যথায় এগুলি সূর্যের দিকে লক্ষ্য স্থির রাখতে সমস্যায় পড়বে। প্রতিটি সিলিন্ডারের ব্যাস হবে ৫ মাইল (৮.০ কিমি) এবং দৈর্ঘ্য হবে ২০ মাইল (৩২ কিমি)। দু-টি সিলিন্ডার একটি বেয়ারিং ব্যবস্থার সাহায্যে একটি রড দ্বারা যুক্ত থাকবে। এ দু-টি এমনভাবে আবর্তিত যাবে যাতে এগুলির আভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠে কেন্দ্রাতিগ বলের সাহায্যে কৃত্রিম অভিকর্ষ সৃষ্টি হতে পারে।[১]

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

 
শিল্পীর কল্পনায় ও’নিল সিলিন্ডারের অভ্যন্তরভাগ, আভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠদেশের বক্রতা দেখা যাচ্ছে।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরের পদার্থবিদ্যা পড়ানোর সময় ও’নিল তার ছাত্রছাত্রীদের বহিরাকাশে এমন একটি বিরাট আকারের নির্মানের নকশা করার কাজ দেন যেখানে মানুষের বসবার সম্ভবপর হবে। মানব বসতির উপযোগী বেশ কয়েকটি নির্মাণের নকশা পাওয়া যায়। এই সমবায় ফলাফল সিলিন্ডারের ধারণাটির অনুপ্রেরণা জোগায়। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ও’নিল সেই ধারণাটির কথা প্রথম ফিজিক্স টুডে পত্রিকায় নিবন্ধ আকারে প্রকাশ করেন।[৩]

ও’নিলের প্রকল্পটির কোনও পূর্বসূরি নেই, এমন নয়। ১৯৫৪ সালে জার্মান বিজ্ঞানী হেরমান ওবারথ তার মেনসচেন ইম ওয়েলট্রাউম – নিয়েউ প্রোজেক্টে ফার রাকেটেন – আন্ড রাউম্ফারট (মহাকাশে মানুষ – রকেট ও মহাকাশ ভ্রমণের নতুন প্রকল্পসমূহ) গ্রন্থে মহাকাশ ভ্রমণের জন্য দৈত্যাকার বাসযোগ্য সিলিন্ডারের বিবরণ দিয়েছিলেন।

আইল্যান্ড সম্পাদনা

ও’নিল তিনটি সহায়ক মডেলের বর্ণনা দেন। তিনি এগুলির নাম দেন "আইল্যান্ড" বা দ্বীপ:

  1. আইল্যান্ড ওয়ান হল একটি আবর্তনশীল গোলক। এটির পরিধি এক মাইল (১.৬ কিমি) (১,৬৮১ ফুট (৫১২ মি) ব্যাস)। মানুষ সেখানে বাস করবে বিষুবীয় অঞ্চলে (বার্নাল গোলক দেখুন)। পরবর্তীকালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নাসা/অ্যামেস পর্যালোচনার মাধ্যমে আইল্যান্ড ওয়ানের একটি বিকল্প সংস্করণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। স্ট্যানফোর্ট টরাস নামে পরিচিত এই মডেলটি ১,৬০০ ফুট (৪৯০ মি) ব্যাসের এবং অর্ধবৃত্তাকার আকৃতির।[৪]
  1. আইল্যান্ড টু-ও গোলকাকার এবং এটির ব্যাস ৫,২০০ ফুট (১,৬০০ মি)।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. O'Neill, Gerard K. (১৯৭৭)। The High Frontier: Human Colonies in Space। New York: William Morrow & Company। আইএসবিএন 0-688-03133-1 
  2. "SPACE RESOURCES and SPACE SETTLEMENTS,1977 Summer Study at NASA Ames Research Center"। ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২০, ২০১২ 
  3. O'Neill, Gerard K. (সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)। "The Colonization of Space" (PDF (subscriber only))Physics Today27 (9): 32–40। আইএসএসএন 0031-9228ডিওআই:10.1063/1.3128863বিবকোড:1974PhT....27i..32O। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; SSA1977 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • T. A., Heppenheimer (২০০৭) [1977]। Colonies in Space (online book সংস্করণ)। National Space Society। আইএসবিএন 0-8117-0397-5। ২০০৯-০৩-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা