ওয়াহশি ইবনে হারব

সাহাবী

ওয়াহশি ইবনে হারব ছিলেন ইথিওপিয় বংশোদ্ভূত একজন দাস। তার মনিবের নাম ছিল জুবায়ের ইবনে মুতিমওয়াহশি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেন। অমুসলিম থাকাবস্থায় উহুদের যুদ্ধে তিনি মুহাম্মদ(সা) এর চাচা মুসলিম সেনাপতি হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ভন্ড নবী মুসাইলিমাকে হত্যা করেন।

উহুদের যুদ্ধের সময় সম্পাদনা

বদরের যুদ্ধে নিজ পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে হত্যার শর্তে হিন্দ বিনতে উতবা ওয়াহশিকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, "উহুদের দিন আমি হামযাকে অনুসরণ করি। তিনি ক্ষিপ্ত সিংহের মত সেনাবাহিনীর মধ্যভাগে আক্রমণ করছিলেন। তিনি তার সামনে যাকে পাচ্ছিলেন তাকেই হত্যা করছিলেন। আমি গাছ ও পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিই যাতে তিনি আমাকে দেখতে না পান। তিনি যুদ্ধে খুব বেশি নিয়োজিত ছিলেন। আমি আড়াল থেকে বের হয়ে আসি। ইথিওপিয়ান হিসেবে আমি ইথিওপিয়ানদের মত বর্শা নিক্ষেপে সক্ষম ছিলাম এবং আমার কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না। তাই আমি কিছুদুর অগ্রসর হয়ে আমার বর্শা তার দিকে নিক্ষেপ করি। আমার বর্শা তাকে ভেদ করে দু পায়ের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে। তিনি আমাকে আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু যন্ত্রণার কারণে সক্ষম হননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই অবস্থায় ছিলেন। এরপর আমি সতর্কভাবে অগ্রসর হই এবং তার শরীর থেকে অস্ত্র বের করে কুরাইশ সেনাদের কাছে ফিরে আসি এবং স্বাধীনতার অপেক্ষায় থাকি।"

ইসলাম গ্রহণ সম্পাদনা

পরবর্তীতে ওয়াহশি ইসলাম গ্রহণ করেন। ৬৩৪ সালে ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি ভন্ড মুসাইলিমাকে হত্যা করেন। তার ধর্মান্তরের ব্যাপারে তিনি বলেন,

"উহুদের যুদ্ধের পর আমি মক্কায় বসবাস করতে থাকি। মুসলিমরা মক্কা বিজয় করলে আমি তাইফে পালিয়ে যাই, কিন্তু শীঘ্রই সেখানেও ইসলাম দ্রুত পৌছে যায়। আমি শুনেছিলাম যে মানুষের পাপ যত বড়ই হোক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করেন। আমি তাই মুহাম্মদ এর কাছে যাই এবং শাহাদাত উচ্চারণ করি।[১] মুহাম্মদ আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি কী সেই ইথিওপিয় ওয়াহশি?" আমি হ্যাঁসূচক উত্তর দিই। এরপর তিনি বলেন, "কীভাবে তুমি হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে হত্যা করেছ?" আমি এরপর ঘটনার বর্ণনা দিই। তিনি সরে যান এবং বলেন, "আমি পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত তোমার চেহারা দেখব না, কারণ আমার চাচার হৃদয় বিদারক অবস্থা তোমার হাতেই সংঘটিত হয়েছে।" উল্লেখ্য এটা ওয়াহশির প্রতি তার ব্যক্তিগত আক্রোশ নয় বরং ওয়াহশিকে দেখলে তার মনে ক্রোধ জন্মাতে পারে আশঙ্কায় এমনটা করা হয়েছিল।

ওয়াহশি বলেন, "যতদিন মুহাম্মদ বেঁচে ছিলেন আমি নিজেকে তার থেকে আড়াল করে রাখি। তার মৃত্যুর পর মুসাইলিমার সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আমি মুসলিম বাহিনীতে যোগ দিই। মুসাইলিমার বিরুদ্ধে আমি একই অস্ত্র ব্যবহার করি এবং একজন আনসারের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করতে সক্ষম হই। যদি আমি এই অস্ত্র দিয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে (হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব) হত্যা করে থাকি, তবে নিকৃষ্ট ব্যক্তিটিও এর ভয়াবহতা থেকে রেহাই পায়নি।"[২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Shahadatayn refers to the Kalimah or recitation of the two Islamic declarations of faith, "There is no god but Allah and Muhammad is the messenger of Allah; the first of the Five Pillars of Islam. Shahada is accepted as the declaration of acceptance of Islam by a convert
  2. The life of the Prophet (Arabic: Al-Sirah al-Nabawiyyah) - Ibn Ishaq and Ibn Hisham; Cairo, Mustafà al-Bābī al-Halabī