ওয়াটার পোলো
ওয়াটার পোলো বা ওয়াটার বল (ইংরেজি: Water polo, Water ball, Water rugby) এক ধরনের জলক্রীড়া যা বল সহযোগে দলগতভাবে জলে খেলা হয়। প্রতিটি দলে ৬ জন মাঠ পর্যায়ের খেলোয়াড় ও ১ জন গোলরক্ষক থাকে। সহায়ক ক্রীড়া পোলো অনুসরণে এ ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও এটি ভূমিতে অনুষ্ঠিত দলগত হ্যান্ডবল ক্রীড়ার সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। খেলায় সাঁতার, এগবিটার কিক যা পায়ের তলায় চাপ প্রয়োগের সাহায্যে পানির উপরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বল ধরা কিংবা বিপক্ষের গোলি বা গোলরক্ষককে পাশ কাটিয়ে জালে প্রবেশ করা এ খেলার অন্তর্ভুক্ত। খেলোয়াড়েরা বিপক্ষের জালে বল ঢুকিয়ে সর্বাধিক গোল করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায়। প্রতিপক্ষের জালে ঢোকানোর সর্বাধিক গোল করার মাধ্যমে খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হয়।
সর্বোচ্চ ক্রীড়া পরিচালনা সংস্থা | ফিনা |
---|---|
উপনাম | পোলো, ওপো |
উৎপত্তি | ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে |
বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
শারীরিক সংস্পর্শ | হ্যাঁ |
দলের সদস্য | ৭ (৬ জন মাঠ খেলোয়াড় এবং ১ জন গোলরক্ষক) |
ধরন | ইনডোর বা আউটডোর, জলক্রীড়া |
খেলার সরঞ্জাম | ওয়াটার পোলো বল, ওয়াটার পোলো গোল, ওয়াটার পোলো টুপি |
ভেন্যু | ওয়াটার পোলো পুল ২০১২ অলিম্পিক: ওয়াটার পোলো এরিনা |
প্রচলন | |
অলিম্পিক | ১৯০০ |
ইতিহাস
সম্পাদনাঊনবিংশ শতকে ইংল্যান্ডে ওয়াটার রাগবি নামে ওয়াটার পোলো দলগত ক্রীড়া হিসেবে উৎপত্তি ঘটে। ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়গণ নিজ নিজ শক্তিমত্তা, সাঁতারে দক্ষতাকে প্রদর্শন করান। এতে জলক্রীড়া এবং সাঁতারের প্রদর্শনীতে নিজ নিজ কাউন্টির মেলা ও উৎসবকে প্রদর্শনী আকারে তুলে ধরা হয়েছিল।[১][২] তখনকার যুগে এ খেলাটি বর্তমানের ন্যায় শান্তিপূর্ণ ছিল না; বরং আগ্রাসীমূলক ও হিংস্রাত্মক ক্রীড়া হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের মাধ্যমে ওয়াটার পোলো দলগত ক্রীড়ারূপে অলিম্পিকে প্রথম অন্তর্ভুক্তি ঘটে। উইলিয়াম উইলসন নামীয় স্কটিশ ক্রীড়াব্যক্তিত্ব জলক্রীড়ার পথিকৃৎ ও উদ্ভাবক হিসেবে ওয়াটার পোলো ক্রীড়ার জন্যে সর্বপ্রথম নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করেন। বর্তমানে এ খেলাটি বিশ্বের প্রায় সকল দেশে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ক্রীড়া। তবে ইউরোপ মহাদেশের - হাঙ্গেরী, ইতালি, গ্রেট ব্রিটেন, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া, সুইডেন, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো, ক্রোয়েশিয়া, গ্রীস, সাবেক পশ্চিম জার্মানি ওয়াটার পোলো খেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
বিবরণ
সম্পাদনাওয়াটার পোলো এক প্রকার দলগত ক্রীড়া। দুই দলের মধ্যে এ খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। প্রত্যেক খেলার মোট সময়কে চারটি সমান অংশে বিভক্ত করা হয়। সাধারণতঃ প্রত্যেক অংশ ৫ থেকে ৮ মিনিটের মধ্যে হয়ে থাকে। এ সময়ের মধ্যে খেলার নিয়মভঙ্গতাজনিত অপরাধ কিংবা বাইরে বল চলে যাবার ফলে অতিরিক্ত কোন সময় যুক্ত করা হয় না।
প্রত্যেক দলে ৪ জন ড্রাইভার, ১ জন ফ্লোটার ব্যাক ও ১ জন ফ্লোটারসহ ৬ জন মাঠ খেলোয়াড় এবং ১ জন গোলরক্ষকসহ সর্বমোট ৭ জন খেলোয়াড় অংশ নিয়ে থাকেন। যেহেতু জলক্রীড়া, তাই প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ভাল সাঁতারু এবং বল হাতে রাখতে আত্মস্থ হতে হয়। তাদেরকে ভাল পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। খেলা চলাকালে খেলোয়াড়কে অবশ্যই জলে ভাসমান অবস্থায় থাকতে হয়। তারা পুল বা ক্ষুদ্র জলাশয়ে দাঁড়াতে পারবে না। জলের গভীরতা ২ মিটারের ঊর্ধ্বে, দৈর্ঘ্যে ৩০ মিটারএবং প্রস্থে ২০ মিটার হতে হবে।
সরঞ্জামাদি
সম্পাদনাওয়াটার পোলো খেলার জন্যে খেলোয়াড়কে অবশ্যই সাঁতারের পোশাক, টুপি, মুখবন্ধনী থাকতে হবে। টুপির নকশা একই হতে হবে যা মাথা ও কানকে সুরক্ষিত রাখবে। পাশাপাশি একটি বল এবং গোলপোস্টেরও প্রয়োজন রয়েছে।
নিয়মভঙ্গতা
সম্পাদনাখেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু নিয়ম রেফারী প্রতিপালন করেন। তন্মধ্যে নিম্নলিখিত কারণে খেলায় নিয়মভঙ্গতাজনিত অপরাধ হয় -
- আক্রমণভাগের খেলোয়াড় বলকে পানির নিচে রাখতে পারবেন না। রক্ষণভাগের কোন খেলোয়াড় এ জাতীয় কোন অপরাধ করলে তিনি ২০ সেকেন্ডের জন্যে মাঠের বাইরে চলে যাবেন।
- বল ডুবিয়ে রাখলে।
- বল বহনকারী খেলোয়াড়ের পোশাক টেনে ধরলে।
- দুই হাতে বল স্পর্শ করলে।
- বল নিক্ষেপকালে উভয় হাত তুলে ধরলে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Encyclopaedia Britannica, 11th Edition (1911): "Water Polo" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ আগস্ট ২০০৬ তারিখে Retrieved 7 August 2006
- ↑ Barr, David (১৯৮১)। A Guide to Water Polo। Sterling Publishing (London)। আইএসবিএন 0-8069-9164-X।