কার্যত অধিকাংশ ওমানিরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী; যাদের তিন-চতুর্থাংশ আবদ-আল্লাহ ইবন ইবাদের ইবাদি নিয়ম অনুসরণ করে।[১] ইবাদবাদ খারিজিবাদের একমাত্র অবশিষ্ট গুন উপস্থাপন করে, যা ৬৫৭ সাল থেকে ইসলামে প্রথম দিকের বিভেদগুলোর মধ্যে একটির ফলস্বরূপ বিকশিত হয়েছিল।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
ঐতিহ্যবাহী পোষাকে ওমানীরা

ওমানে ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক ইরাকের বসরা থেকে পালিয়ে আসার পরে ইবাদ সম্প্রদায় এই অঞ্চলে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।[৩][৪]

খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা ঐতিহাসিকভাবে ওমানে তাদের নিজস্ব ধর্মের চর্চা করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজ সহনশীল ছিল; যদিও, তখনকার সমাজে শ্রেণিবিন্যাসের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে। ইবাদি সম্প্রদায়ে ঐতিহ্যবাহী আরবের কফি প্রথমে মুসলমানদের দেওয়া হয়। তারপর, খ্রিস্টানদের সাথে দরিদ্র মুসলমানদের কফি পরিবেশন করা হয়। সুন্নি সম্প্রদায়ে, খ্রিস্টান অতিথি আসলে সম্মানিত মুসলিম নেতা এবং আলেমদেরকে আগে পরিবেশন করা হয়।[৩]

সম্প্রদায় সম্পাদনা

ইবাদবাদ সম্পাদনা

অনেক লোক[কে?] বিশ্বাস করে ইবাদবাদ খারিজিদের আন্দোলনের ফল, ৬৩২ সালে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পরে প্রধান মুসলিমদের অংশ থেকে পৃথক হওয়া একটি সম্প্রদায়ের বংশধরের দ্বারা ইসলামের বিভিন্ন রূপ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ইবাদিরা এ-ধারণাটিকে নিজেদের পরিনাম হিসেবে বিবেচনা করতে অস্বীকার করে, যারা যাবির ইবনে জায়েদের অনুসারী (তাবেয়ি)। ইবাদিরা মুহাম্মদ গোত্রের কুরাইশের পূর্বসূরিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং দৃঢ়ভাবে দাবি করে যে, আধ্যাত্মিক এবং ব্যক্তিগত গুণাবলীর অধিকারী যারা আছে, সেই প্রার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দ্বারা নির্বাচিত ইমামের দ্বারা ইসলামের নেতৃত্বের মনোনীত করা উচিত। ইবাদিদের নেতৃত্ব একজন ইমামের উপর ন্যস্ত, যিনি একমাত্র বৈধ নেতা হিসাবে গণ্য হয়ে থাকেন। এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সমন্বয় সাধন করে থাকেন। ইমাম বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বা শায়েখদের কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত হন। ওমানে ঐতিহাসিক বিচ্ছিন্নতার অংশ হিসাবে ইবাদবাদকে মেনে চলা হয়। ইবাদিদের কখনই তাদের প্রতিবেশীদের সাথে একীভূত হওয়ার ঝোঁক ছিল না। কারণ, সুন্নি মুসলিমদের বেশিরভাগই ইবাদবাদকে ইসলামের একটি বৈধ রূপ হিসাবে বিবেচনা করে।

ইবাদবাদের কঠোর, পবিত্রতাবাদী প্রকৃতি ওমানে ইসলামের চর্চাকে প্রভাবিত করেছে। ওমানের মসজিদগুলি খুব সাধারণ, জানালা ছাড়া প্রায় কোনও সাজসজ্জা নেই এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো ওমানের মসজিদগুলোতে সাধারণত মিনারের অপ্রাযুর্য রয়েছে।[৩][৫] মরোক্কোর পরিব্রাজক ইবন বতুতা ওমানি মসজিদগুলির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, পুরো সম্প্রদায় খাদ্য আহরণের জন্য সমবেত হলে, প্রতিটি ব্যক্তিকে তাদের নিজেদের খাবার নিজেদেরকেই আনতে হয়।[৫] এই সম্প্রদায় গান গাওয়া ও নৃত্য সমর্থন করে না।[৩][৫] সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে শরিয়াহ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং রক্ষণশীল ইবাদবাদে ওমানের অনুগতির ফলে মধ্য প্রাচ্যের বাকি অংশ থেকে ওমানে ঐতিহাসিক বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়।[৫]

ওমানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ হল প্রধান মুফতি। বর্তমানে ওমানের প্রধান মুফতি হলেন আহমদ বিন হামাদ আল-খালিলি

শিয়াবাদ সম্পাদনা

ওমানের শিয়া সম্প্রদায় আল বাতিনা এবং মাস্কাট উপকূলে বাস করে। মাস্কাটে কমপক্ষে সাতটি টোলেভার শিয়া মসজিদ রয়েছে।[৬]

সুন্নিবাদ সম্পাদনা

১৮০০-এর শতকে, জালানের বনু বু আলী গোত্র সৌদি ওয়াহাবি আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল, এটি সুন্নিবাদের একটি নিবিড় রূপ। তারা বিক্ষিপ্তভাবে ইবাদি সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই করেছিল। তবে ওমানের সামগ্রিক ধর্মীয় জনসংখ্যার উপর এটি তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতিসমূহ সম্পাদনা

  1. "Oman"। CIA – The World Factbook। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১১ 
  2. Common, Richard K.। "Barriers To Developing 'Leadership' In The Sultanate Of Oman" (পিডিএফ)। International Journal of Leadership Studies। ৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৯ 
  3. Diana Darke, Oman: The Bradt Travel Guide, pg. 27. Guilford: Brandt Travel Guides, 2010.. আইএসবিএন ৯৭৮১৮৪১৬২৩৩২০
  4. Donald Hawley, Oman, pg. 199. Jubilee edition. Kensington: Stacey International, 1995. আইএসবিএন ০৯০৫৭৪৩৬৩৬
  5. Donald Hawley, Oman, page 201.
  6. "মাস্কাট শিয়া মসজিদ"muscatshia.com। muscatshia। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা