ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী

ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী (১৮৩২ - ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৫) ছিলেন একজন ব্রিটিশ ভারতের বাংলার একজন শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, লেখক। সমাজ সংস্কারক সৈয়দ আমির আলি ছিলেন তার ছাত্র।[১]

ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী
জন্ম১৮৩২
মৃত্যু৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৫
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা মাদ্রাসা
পেশাঅধ্যাপনা
প্রতিষ্ঠানমোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি,
সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশন,
বেঙ্গল সোশ্যাল সায়েন্স এসোসিয়েশন
উল্লেখযোগ্য কর্ম
লুববুল আরব
দস্তর-ই-পার্সি আমুজ
মিফতাহুল আদাব
মোহামেডান এডুকেশন ইন বেঙ্গল
এবং অন্যান্য
সন্তানআবদুল্লাহ আল-মামুন সোহ্‌রাওয়ার্দী (পুত্র),
হাসান সোহরাওয়ার্দী (পুত্র),
খুজিস্তা আখতার বানু (কন্যা)
আত্মীয়হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী‌ (দৌহিত্র)
পুরস্কারবাহারুল উলুম

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী ১৮৩২ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মেদিনীপুর জেলার চিতওয়া গ্রামের সুপরিচিত সোহরাওয়ার্দী‌ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি বাড়িতে আরবিফারসি ভাষা শেখেন। নিজ চেষ্টায় তিনি ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন। তিনি কলকাতা মাদ্রাসা থেকে ১৮৫৭ সালে ফাইনাল সেন্ট্রাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কলকাতায় টিপু সুলতানের পৌত্র শাহজাদা জালালউদ্দিনের অধীনে চাকরি নেন। এরপর গভর্নর জেনারেলের আইনসভার অনুবাদ বিভাগে মুনশি হিসেবে যোগ দেন। ১৮৬৫ সালে হুগলি মুহসিন কলেজে অ্যাংলো-আরবি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে সৈয়দ আমির আলি তার ছাত্র ছিলেন। ১৮৭৪ সালে তিনি মোহসীনিয়া মাদ্রাসার (ঢাকা মাদ্রাসা) প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এই পদে বহাল থাকেন। তিনি আলিগড়ে স্থাপিত মোহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন।[১]

সংগঠন সম্পাদনা

তিনি নবাব আবদুল লতিফসৈয়দ আহমদ খানের চিন্তানুসারী ছিলেন। মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি, সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশন, বেঙ্গল সোশ্যাল সায়েন্স এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি ১৮৭৯ সালে সমাজ সম্মিলনী নামে একটি সংগঠন স্থাপন করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে গঠিত ঢাকা মুসলমান সুহৃদ সম্মিলনী তার অনুসারীরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেন।[১]

রচনাবলী সম্পাদনা

তিনি একজন বহুভাষায় পারদর্শী পণ্ডিত ছিলেন। আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজিতে তার একাধিক মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উর্দু দিওয়ান (১৮৮০), ফারসি দিওয়ান (১৮৮৬), ফারসি ব্যকরণ দস্তর-ই-পার্সি আমুজ, আরবি ব্যকরণ লুববুল আরব, উর্দু ব্যকরণ মিফতাহুল আদাব, ফারসিতে রচিত পদার্থবিদ্যা বিষয়ক দবিস্তান-ই-দানিশ আমুস, ফারসিতে রচিত ছন্দ ও অলঙ্কার বিষয়ক দস্তর-ই-ফারসি-আমুস, ফারসিতে রচিত আত্মজীবনী দস্তান-ই-ইবরাতবার, মোহামেডান এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৮৬৭)।[১]

১৮৬৭ সালে সৈয়দ আমির আলির সহায়তায় তিনি সৈয়দ কেরামত আলি রচিত মখজুল উলুম গ্রন্থটি তিনি এ ট্রিটিজ অন দ্য সায়েন্স শিরোনামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। রামমোহন রায়ের লেখা তুহফাতুল মুওয়াহেদীন গ্রন্থ ১৮৮৪ সালে তিনি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন।[১]

সম্মাননা ও স্মরণ সম্পাদনা

জ্ঞান, শিক্ষা ও সমাজের ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে বাহার-উল-উলুম (জ্ঞানের সাগর) খেতাব প্রদান করে। তার প্রতি সম্মান হিসেবে আচার্য হরিনাথ দে তার একটি তেলচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে বাহার-উ-উলুম ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী‌ পদক প্রবর্তন করা হয়েছে।[১]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

তার বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন সোহরাওয়ার্দী শিক্ষাক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার আরেক ছেলে হাসান সোহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ।[১] তার মেয়ে খুসিস্তা আখতার বানু উর্দু সাহিত্যের একজন কবি ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী‌ তার দৌহিত্র ছিলেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী‌ ১৮৮৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা