এ কে এম রফিকুল হক

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

এ কে এম রফিকুল হক (জন্ম: অজানা ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

এ কে এম রফিকুল হক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও কর্মজীবন সম্পাদনা

করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম রফিকুল হক বীর প্রতীকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের পুরাতন কোর্ট রোডে অবস্থিত জোনাকী নীড়। তাঁর জন্ম ১৯৫৩ সালের জুন মাসের ৮ তারিখে। মাতার নাম হাসিনা হক ও পিতার নাম এ কে এম নূরুল হক। তিনি যুদ্ধশেষে সোনালী ব্যাংকে চাকরি জীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ তারিখে সোনালী ব্যাংকে ক্লার্ক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় যোগদান করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি এ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা, প্রিন্সিপাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন ডিভিশনে কাজ করেছেন। সর্বশেষ ৬ জুলাই ২০১২ তারিখে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে প্রধান কার্যালয়ের গভ: একাউন্টস এন্ড সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন থেকে অবসর গ্রহন করেন।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

তিনি ঢাকা বোর্ডের অধীনে যথাক্রমে ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে বিজ্ঞান বিষয়ে এসএসসি ও মানবিক বিষয়ে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে ১৯৮০ সালে বি এ (সম্মান) ও ১৯৮১ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধের সময় এ কে এম রফিকুল হকের বয়স ছিলো ১৮ বছর। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জ থেকে ভারতে গিয়ে প্রথমে একটি শিবিরে আশ্রয় নেন। কিছুদিন পর তাকে মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়। আসামের ইন্দ্রনগরে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ চলাকালেই তিনি ৩০ জনের একটি দলের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে প্রথম অপারেশনে অংশ নেন। তারা সেদিন সিলেটের বড়লেখা চা-বাগানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের ওপর আক্রমণ করে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে রফিকুল হককে ৪ নম্বর সেক্টরের অধীন গণবাহিনীর (মুক্তিযোদ্ধা) একটি দলের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জুন মাসে তারা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের একটি সেতু এবং সিলেটের লাতু রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী রেলসেতু বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করেন। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে তাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরিত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি জিপ ধ্বংস হয়। ওই বিস্ফোরণে পাকিস্তানি এক ক্যাপ্টেন ও দুই সেনাও নিহত হয়। এরপর তারা কালীগঞ্জ বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ করে ১৭টি রাইফেল ছিনিয়ে নেন। ২১ জুন সরিফপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী রেলসেতু ও বরাক নদীর মাটির বাঁধের অংশবিশেষ বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করেন। এর ফলে সিলেটের সঙ্গে জকিগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২৯ জুন তারা জকিগঞ্জের আটগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। দুজন জীবিত তাদের হাতে ধরা পড়ে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি ৩ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। ডিসেম্বরের শুরুতে তারা মিত্রবাহিনীর সঙ্গে আখাউড়া আসেন। আখাউড়া যুদ্ধে এ কে এম রফিকুল হক সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।[২]

সম্মাননা ও স্বীকৃতি সম্পাদনা

যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য তিনি বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  2. দৈনিক প্রথম আলো[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা