এ্যাঙ্গুইলায় ইসলাম

অ্যাঙ্গুইলা ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত যু্ক্তরাজ্যের একটি বিদেশী অঞ্চল। ২০১৭ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, সেখানে প্রায় ১৭,০০০ জন লোক বসবাস করে এবং তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১,০০০ জন লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী।[১][২] অ্যাঙ্গুইলায় মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশীয় আমলে আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত দাসদের মাধ্যমে ইসলামের আগমন ঘটে।[৩] ব্রিটিশরা তাদের বিভিন্ন আফ্রিকীয় উপনিবেশ থেকে অনেক লোককে কাজ করানোর জন্য দাস হিসেবে দ্বীপটিতে নিয়ে আসে। তাদের মাঝে কিছু মুসলমানও ছিল না।[৪] উপনিবেশ আমল শেষে অধিকাংশ নিজ নিজ দেশে চলে গেলেও কিছু সংখ্যক মানুষ সেখানে থেকে যায়।[৫] তাদের বংশধররা এবং পরবর্তীতে দ্বীপটিতে অভিবাসন গ্রহণ করা মুসলিমরাই বর্তমান অ্যাঙ্গুইলার মুসলিম জনসংখ্যা গঠন করেছে।

অ্যাঙ্গুইলায় ইসলাম
মোট জনসংখ্যা
১০০০ (২০২১)
ধর্ম
সুন্নি ইসলাম
ধর্মগ্রন্থ
কুরআন, হাদিস, ফিকহ
ভাষা
ইংরেজি, আরবি, উর্দু

ইতিহাস সম্পাদনা

অ্যাঙ্গুইলা সর্বপ্রথম আমেরিন্ডিরীয় আদিবাসীরা বসতি স্থাপন করে। তাঁরা দক্ষিন আমেরিকা হতে সেখানে গিয়েছিল।[৫] ধারণা করা হয় যে, ১৪৯৩ সালে কলম্বাস তার দ্বিতীয় সমুদ্রাভিযানের সময় এটি প্রথম দেখেন। এরপর ১৬৫০ সালের প্রথমার্ধে ইংরেজ অভিবাসী সেইন্ট কিটসের মাধ্যমে অ্যাঙ্গুইলায় প্রথম উপনিবেশ স্থাপিত হয়।[৬] ঐতিহাসিক হিসাব অনুসারে ১৬৫০ সালের প্রথমার্ধে ইংরেজ অভিবাসী সেইন্ট কিটস এর দ্বারা অ্যাংগুইলা প্রথম উপনিবেশিত হয়।[৭] ১৬৬৬ সালে সাময়িক সময়ের জন্য ফরাসিরা দ্বীপটির অধিগ্রহণ নিয়ে নেয় কিন্তু পরবর্তী বছরই ট্রিটি অফ ব্রেডা এর শর্তানুসারে ফ্রেঞ্চরা দ্বীপটিকে আবার ইংরেজ অধীনে ফিরিয়ে দেয়।[৭]

এরপর প্রথমদিকের ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা তাঁদের সাথে আফ্রিকীয় দাসদের নিয়ে আসে। ১৬০০ সালের মাঝামাঝিতে সেনেগাল হতে ধরে নিয়ে আসা দাসেরা সেন্ট কিটসে বসবাস শুরু করে। ১৬৭২ সাল পর্যন্ত নেভিস দ্বীপে আফ্রিকীয়দের একটি ঘাটি তৈরি হয়। আফ্রিকীয়দের অ্যাঙ্গুইলা আসার সময়কালে সেখান ভালোভাবে বসবাস করা খুবই কঠিনই ছিল। কাগজকলমের প্রমাণ অনুযায়ী ১৬৮৩ সালে সেখানে কমপক্ষে ১০০ দাস বাস করত এবং অনুমান করা হয় যে, তাদের মধ্য আফ্রিকা কিংবা পশ্চিম আফ্রিকা হতে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল।

দাসদের চিনি গাছ ও তামাক লাগাতে বাধ্য করা হতো। পরবর্তীতে তামাকের ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হলে তখন তামাকই অ্যাঙ্গুইলার প্রধান শস্যে পরিণত হয়। সময়ের পরিবর্তনে আফ্রিকীয় দাসেরা এবং তাঁদের বংশধরের সংখ্যা দ্বীপটিতে বেড়ে যায় এবং আফ্রিকীয়দের সংখ্যা সাদা ঔপনিবেশিকদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। ১৮০৭ সালে ব্রিটিশ সম্রাজ্যে আফ্রিকীয় দাস ব্যবসার সমাপ্তি হয়ে যায় এবং ১৮৩৪ সালে পরিপূর্ণভাবে দাসেদের পক্ষে এটা আইনে রুপান্তরিত হয়। তখন অধিকাংশ তামাক চাষী সব বিক্রি করে দেয় কিংবা দ্বীপটি ছেড়ে চলে যায়। এরপর অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ১৮৯০ এর কতিপয় খরার খারাপ প্রভাবের কারণে অসংখ্য অ্যাঙ্গুলীয় দেশত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়।[৫]

ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা সে সকল দাসদের মধ্যে মুসলিমরা বাধা সত্ত্বে নিজেদের ইসলামি পরিচয় বজায় রেখে চলেছিল। ধীরে ধীরে তাদের বংশধারা বৃদ্ধি পেতে থাকে। উপনিবেশ শেষে অনেকে নিজ দেশ বা অন্যত্র চলে গেলেও কিছু সংখ্যক সেখানে থেকে। এরপর ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে কিছু মুসলমান সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করে। সবমিলিয়ে অ্যাঙ্গুইলায় বর্তমান ১,০০০ জনের মত মুসলমান বসবাস করে। সম্প্রতি দেশটিতে ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র ও মসজিদ খোলা হয়েছে।[৮]

মসজিদ সম্পাদনা

অ্যাঙ্গুইলায় আন নুর নামে একটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার আছে। এখানে নিয়মিত নামাজজুমার নামাজের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সাপ্তাহিক ধর্মীয় আলোচনাসহ ইসলাম ও মুসলমান নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। ফেসবুকে "Islamic Center of Anguilla- Masjid An Nur" নামে একটি পেইজও রয়েছে। সেখানে ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদে অনুষ্ঠিত সকল প্রোগ্রামের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Anguilla"The World Factbook (ইংরেজি ভাষায়)। Central Intelligence Agency। ২০২২-১০-২৫। 
  2. "দেশ অনুযায়ী ইসলাম"উইকিপিডিয়া। ২০২২-০৮-০৫। 
  3. "Islam by country"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১১-০৫। 
  4. Hubbard, Vincent K. (২০০২)। A History of St Kitts: The Sweet Trade (ইংরেজি ভাষায়)। Macmillan। আইএসবিএন 978-0-333-74760-5 
  5. "Anguilla | island, West Indies | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১০ 
  6. "Anguilla"web.archive.org। ২০০৭-০৯-২৫। Archived from the original on ২০০৭-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১০ 
  7. "অ্যাঙ্গুইলা"উইকিপিডিয়া। ২০২২-১০-১৫। 
  8. Price, Charles (২০০৯-০৯-০১)। Becoming Rasta: Origins of Rastafari Identity in Jamaica (ইংরেজি ভাষায়)। NYU Press। আইএসবিএন 978-0-8147-6768-9 
  9. "The Islamic Center of Anguilla "Masjid An Nur""www.facebook.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১০