এম সদর উদ্দিন

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

এম সদর উদ্দিন (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

এম সদর উদ্দিন
জাতীয়তা পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

এম সদর উদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার বাইরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম সাদাত হোসেন এবং মায়ের নাম আবেদা আকতার। তার স্ত্রীর নাম নাসরিন জাহান। তাদের এক মেয়ে, দুই ছেলে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

এম সদর উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা এয়ার বেসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ঢাকা বেসে কর্মরত আরও কয়েকজনের সঙ্গে ১০ মে পালিয়ে যান। ১৪ মে ভারতে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে ভজনপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত থাকেন। ১৯৭৮ সালে তিনি এয়ার ভাইস মার্শাল পদে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে প্রবাসী।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধকালে অমরখানা ও জগদলহাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ছিল মুখোমুখি অবস্থানে। জুলাই মাস থেকে প্রায় দিন এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কখনো পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের, কখনো মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করতেন। তখন দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হতো। তবে কেউ কাউকে নিজেদের অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। এভাবে যুদ্ধ চলে নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধি হয়। তখন এম সদর উদ্দিনের নেতৃত্বে এক দল (প্রায় তিন কোম্পানি) মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি অবস্থানে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। ২২ নভেম্বর রাতে তারা সমবেত হন চাওয়াই নদীর পূর্ব তীরে। রাত দুইটায় তারা আক্রমণ চালান। এমন আক্রমণের জন্য পাকিস্তানিরা প্রস্তুতই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে তাদের আর্টিলারি। শুরু হয় নিরাপদ বাংকার থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ। এম সদর উদ্দিনের নেতৃতে মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার মধ্যে ঢুকে পড়েন। এক নাগাড়ে দুই-আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা অমরখানা থেকে জগদলহাটে পালিয়ে যায়। ভোরের আগেই মুক্ত হয়ে যায় অমরখানা। পঞ্চগড় জেলার উত্তর দিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অমরখানা। এর দক্ষিণে তালমা নদীর পাড়ে জগদলহাট। পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া সড়ক এর পাশ দিয়ে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অমরখানা এবং জগদলহাটে ঘাঁটি স্থাপন করে। এ এলাকা ছিল মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাব-সেক্টরের অধীন। অমরখানা দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি নেন জগদলহাট আক্রমণের। সেখানে তারা আক্রমণ চালান। এ যুদ্ধে রিইনফোর্সমেন্ট হিসেবে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম। তিনি তার বইয়ে লিখেছেন, ‘সকাল নটার দিকে এলেন সদরুদ্দিন সাহেব। একটা জিপে চড়ে। চোখ লাল। অবিন্যস্ত অগোছালো চেহারা। কাঁধে স্টেনগান। বোঝাই যায় সারা রাত ঘুমাননি। ফ্রন্ট আর রেয়ার, সম্ভবত এই নিয়েই কেটেছে তার সারা রাত।

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৭-১০-২০১২"। ২০১৫-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449