এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড

বাংলাদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান

এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড হচ্ছে একটি বাংলাদেশী বহুমুখী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এটি ইস্পাহানি গ্রুপ নামেও পরিচিত।[১] প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর চট্টগ্রামে অবস্থিত। ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান[২] এটি ইস্পাহানি পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এই গ্রুপটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চা সংস্থার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বড় বড় ব্র্যান্ডের মালিক। এছাড়াও তাদের শিপিং, রিয়েল এস্টেট, পাট হোটেল এবং টেক্সটাইল ব্যবসা রয়েছে।[৩] এই সামষ্টিক বাণিজ্য গোষ্ঠীটি ২০০৩ সালে মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত হয়েছিল। দ্য ডেইলি স্টারের মতে, এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম সর্বাধিক সম্মানিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।[৪][৫]

ইস্পাহানি গ্রুপ
ধরনব্যক্তিগত
শিল্পসমষ্টিগত
প্রতিষ্ঠাকাল১৮২০
প্রতিষ্ঠাতামির্জা মুহাম্মদ ইস্পাহানি
সদরদপ্তর,
প্রধান ব্যক্তি
মির্জা সালমান ইস্পাহানি, চেয়ারম্যান
পণ্যসমূহচা, খাদ্য, টেক্সটাইল, সুতা, পাট, মাল পরিবহন, আবাসন, আইএসপি
মালিকইস্পাহানি পরিবার
অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানএম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড
ইস্পাহানি ফুডস লিমিটেড
পাহাড়তলী টেক্সটাইল অ্যান্ড হোসিয়ারি মিলস
ব্রড ব্যান্ড টেলিকম সার্ভিসেস লিমিটেড
সাউথ ইস্ট ট্রেডিং লিমিটেড
ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজ
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট
ইস্পাহানি চা ওয়েবসাইট

ইতিহাস সম্পাদনা

১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এম. এম. ইসপাহানি লিমিটেড বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলেও এটির গোড়াপত্তন বোম্বেতে ঘটেছিল।[২] ১৮২০ সালে, হাজী মোহাম্মদ হাশেম পারস্যেইস্পাহান থেকে বোম্বেতে এসে এই কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করেন। মির্জা মোহাম্মদ ইস্পাহানির জ্যেষ্ঠ পুত্র মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি (১৮৯৮-১৯৮৬) ১৯১৮ সালে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। একইবছর তিনি তাঁর ছোট ভাই মির্জা আবুল হাসান ইস্পাহানিকে নিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করেন, এসময় প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘এম.এম. ইস্পাহানি লিমিটেড’ করা হয়। ভারত বিভাগের আগে কলকাতায় সদর দপ্তর ছিল। ১৯৪৭ সালে সদর দপ্তর কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়।[২] বর্তমানে কোম্পানিটির সদর দপ্তর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত।

ব্যবসার খাত সম্পাদনা

চা উৎপাদন সম্পাদনা

এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড এককভাবে চা ব্যবসায়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান।[২] ১৯৪৮ সালে মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সেচ্ছা অব্যাহতি নেওয়ার পর তার পুত্র মির্জা মেহদী ইস্পাহানি এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেডের প্রধান হয়ে কোম্পানির মালিকানাধীন সিলেট অঞ্চলের চা বাগান গুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে চা শিল্পে এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড ঈর্ষনীয় সফলতা অর্জন করে। বৃহত্তর সিলেটে তাদের রয়েছে মির্জাপুর, গাজীপুর ও জেরিন নামক তিনটি বৃহৎ বাগান এবং চট্টগ্রামে আছে নেপচুন নামক অন্য একটি বাগান। তাদের মালিকানাধীন মির্জাপুর, জেরিন ও গাজীপুর চা বাগান বাংলাদেশের ১০টি শীর্ষস্থানীয় চা বাগানের অন্তর্ভুক্ত।[৬] এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।[৭]

পাট শিল্প সম্পাদনা

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড ছিল ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তৎকালীন সময়ে পূর্ববঙ্গের পাট শিল্পে তারা ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিল। এই কোম্পানি কলকাতায় "ভিক্টরী জুট প্রোডাক্টস লিমিটেড" নামক একটি পাটকল প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তা চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে ইস্পাহানি গ্রুপ চট্টগ্রামে "চিটাগাং জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিজেএমসিএল)" নামে আরেকটি পাটকল প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল বেসরকারি খাতে দেশের সর্ববৃহৎ পাটকল।[৬]

খাদ্য উৎপাদন শিল্প সম্পাদনা

সাম্প্রতিক সময়ে ইস্পাহানী ফুডস লিমিটেড খুলে এবং এখানে শুরু হয় বিস্কুট চিপস টোস্ট কেক ইত্যাদি বেকারি শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম যা ব্যাপকভাবে শুরু হয় ২০১৯ থেকে।

ব্যক্তিমালিকানাধীন বিমানসেবা সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব ফ্রন্টে জাপানিদের মোকাবেলা করতে ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় বিমান বাহিনী ঢাকার তেজগাঁওয়ে একটি রানওয়ে তৈরি করে। যুদ্ধ শেষ হলে শেষ হলে সরকার রানওয়েটিতে বেসামরিক বিমান পরিবহনের কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেডের তৎকালীন প্রধান মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি কলকাতায় ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল পূর্ববাংলার প্রথম ও একমাত্র বেসামরিক বিমান পরিবহন কোম্পানি। এই পরিষেবা মাত্র দু ধরনের অর্থাৎ সি-৩ (ড্যাকোটা) ও ডিএইচসি-৬ (টুইন ওটার) বিমান ব্যবহার করে শুধুমাত্র ঢাকাকরাচির মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করত। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) গঠনের মাধ্যমে বিমান পরিবহন খাত সম্পূর্ণভাবে সরকারি মালিকানাধীন করার ফলে তা পিআইএ-র সাথে একীভূত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।[৬]

অন্যান্য সম্পাদনা

টেক্সটাইল

১৯৫৪ সালে ইস্পাহানি গ্রুপ চট্টগ্রামে পাহাড়তলী হোসিয়ারি মিলস (পিটিএইচএম) প্রতিষ্ঠা করে। এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি পূর্ববঙ্গের টেক্সটাইল শিল্পের একটি পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।[৬]

জাহাজ শিল্প

বাংলাদেশের জাহাজ শিল্পের অন্যতম পুরনো প্রতিষ্ঠান হলো ইস্পাহানি পরিবারের প্রতিষ্ঠিত এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই ইস্পাহানি গ্রুপ এদেশে বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত শিপিং কোম্পানির পক্ষে কাজ করে আসছে। এছাড়াও তারা বাংলাদেশে নন ভেসেল অপারেটিং কমন ক্যারিয়ার্স-এর স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে শিপিং খাতে ভূমিকা আছে।[৬]

পুরস্কার সম্পাদনা

  • ২০০৩ - বছরের সেরা উদ্যোগ - বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস
  • ২০০৪ - বিজনেস এক্সিকিউটিভ অফ দ্য ইয়ার (ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা সালমান ইস্পাহানির জন্য) - আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশ[৮]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Behrouze Ispahani passes away"Prothom Alo (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-২৯ 
  2. হাসান, সাদ (২০১৬-১২-২৬)। "ইস্পাহানি :সবচেয়ে পুরনো, সবচেয়ে গতিময়"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০২১-১২-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-৩০ 
  3. "Ispahani Group boss Mirza Ali Behrouze Ispahani passes away"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-২৯ 
  4. "The Daily Star Web Edition Vol. 4 Num 288"। Archive.thedailystar.net। ২০০৪-০৩-২০। ২০১৭-০১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৪ 
  5. "Company profile"। ২০০৯-০৪-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৬ 
  6. হোসাইন, আশফাক। "ইস্পাহানি পরিবার"bn.banglapedia.orgবাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি (বাংলাপিডিয়া)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৪ 
  7. Rob, GMF Abdur। "Remembering MA Ispahani"archive.thedailystar.netদ্য ডেইলি স্টার। ২০১৮-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৬ 
  8. "Salman Ispahani, Citibank win AmCham business awards"The Daily Star। ২০০৬-০২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-১০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা