এএফসি এশিয়ান কাপ

(এএফসি এশীয় কাপ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

এএফসি এশিয়ান কাপ একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা যার আয়োজন করে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন। এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী দল এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গণ্য হয় এবং পূর্বে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ খেলার যোগ্যতা লাভ করত। এই প্রতিযোগিতার পরের আসর পশ্চিম এশীয় রাষ্ট্র কাতারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যারা ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজনে সক্ষম হয়েছিল।[১]

এএফসি এশিয়ান কাপ
প্রতিষ্ঠিত১৯৫৬; ৬৮ বছর আগে (1956)
অঞ্চলএশিয়া (এএফসি)
দলের সংখ্যা২৪
সম্পর্কিত
প্রতিযোগিতা
ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতার
(২য় শিরোপা)
সবচেয়ে সফল দল জাপান (৪টি শিরোপা)
ওয়েবসাইটঅফিশিয়াল ওয়েবসাইট
২০২৩ এএফসি এশিয়ান কাপ

১৯৫৬ সাল থেকে এশিয়ান কাপ চার বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০৪ সালের আসর পর্যন্ত এইভাবেই চলে। যেহেতু একই বছরে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা ও ইউরো অনুষ্ঠিত হয় তাই এশিয়ান কাপের সময়সূচী কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপ ২০০৭ সালে শুরু হয় এবং এরপর আবার চার বছর পর পর এটি চলছে।

এশিয়ান কাপ এশিয়ার শীর্ষ দলগুলো দখল করে রেখেছে। জাপান, কোরিয়া, ইরান, কুয়েত ও সৌদি আরবের জাতীয় দলগুলো প্রায় প্রতিবছর ফাইনালে ওঠে।তবে এই ফেডারেশনের নতুন সদস্য অস্ট্রেলিয়া এশিয়ার পরাশক্তি হয়ে উঠেছে।

ফলাফল সম্পাদনা

২০১৯ সালের টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান নির্ধারক খেলা হয়নি।

মরসুম বছর আয়োজক ফাইনাল তৃতীয় স্থান নির্ধারক বা সেমি-ফাইনালে পরাজিত দলসংখ্যা
বিজয়ী ফলাফল রানার্স-আপ তৃতীয় স্থান ফলাফল চতুর্থ স্থান
১৯৫৬   হংকং  
দক্ষিণ কোরিয়া
রাউন্ড-রবিন  
ইসরায়েল
 
হংকং
রাউন্ড-রবিন  
দক্ষিণ ভিয়েতনাম
১৯৬০   দক্ষিণ কোরিয়া  
দক্ষিণ কোরিয়া
রাউন্ড-রবিন  
ইসরায়েল
 
প্রজাতন্ত্রী চীন
রাউন্ড-রবিন  
দক্ষিণ ভিয়েতনাম
১৯৬৪   ইসরায়েল  
ইসরায়েল
রাউন্ড-রবিন  
ভারত
 
দক্ষিণ কোরিয়া
রাউন্ড-রবিন  
হংকং
১৯৬৮   ইরান  
ইরান
রাউন্ড-রবিন  
বার্মা
 
ইসরায়েল
রাউন্ড-রবিন  
প্রজাতন্ত্রী চীন
১৯৭২   থাইল্যান্ড  
ইরান
২–১ (অ.স.প.)
জাতীয় স্টেডিয়াম, ব্যাংকক
 
দক্ষিণ কোরিয়া
 
থাইল্যান্ড
২–২ (অ.স.প.)
(৫–৩ পে.)
জাতীয় স্টেডিয়াম, ব্যাংকক
 
খ্‌মের প্রজাতন্ত্র
১৯৭৬   ইরান  
ইরান
১–০
আর্যমেহের স্টেডিয়াম, তেহরান
 
কুয়েত
 
গণচীন
১–০
আর্যমেহের স্টেডিয়াম, তেহরান
 
ইরাক
১৯৮০   কুয়েত  
কুয়েত
৩–০
সাবাহ আল সালেম স্টেডিয়াম, কুয়েত সিটি
 
দক্ষিণ কোরিয়া
 
ইরান
৩–০
সাবাহ আল সালেম স্টেডিয়াম, কুয়েত সিটি
 
উত্তর কোরিয়া
১০
১৯৮৪   সিঙ্গাপুর  
সৌদি আরব
২–০
জাতীয় স্টেডিয়াম, সিঙ্গাপুর
 
গণচীন
 
কুয়েত
১–১ (অ.স.প.)
(৫–৩ পে.)
জাতীয় স্টেডিয়াম, সিঙ্গাপুর
 
ইরান
১০
১৯৮৮   কাতার  
সৌদি আরব
০–০ (অ.স.প.)
(৪–৩ পে.)
আল-আহলি স্টেডিয়াম, দোহা
 
দক্ষিণ কোরিয়া
 
ইরান
০–০ (অ.স.প.)
(৩–০ পে.)
আল-আহলি স্টেডিয়াম, দোহা
 
গণচীন
১০
১০ ১৯৯২   জাপান  
জাপান
১–০
হিরোশিমা বিগ আর্ক, হিরোশিমা
 
সৌদি আরব
 
গণচীন
১–১ (অ.স.প.)
(৪–৩ পে.)
হিরোশিমা বিগ আর্ক, হিরোশিমা
 
সংযুক্ত আরব আমিরাত
১১ ১৯৯৬   সংযুক্ত আরব আমিরাত  
সৌদি আরব
০–০ (অ.স.প.)
(৪–২ পে.)
শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম, আবুধাবি
 
সংযুক্ত আরব আমিরাত
 
ইরান
১–১ (অ.স.প.)
(৩–২ পে.)
শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম, আবুধাবি
 
কুয়েত
১২
১২ ২০০০   লেবানন  
জাপান
১–০
স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম, বেইরুট
 
সৌদি আরব
 
দক্ষিণ কোরিয়া
১–০
স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম, বেইরুট
 
গণচীন
১২
১৩ ২০০৪   চীন  
জাপান
৩–১
ওয়ার্কার্স স্টেডিয়াম, বেজিং
 
গণচীন
 
ইরান
৪–২
ওয়ার্কার্স স্টেডিয়াম, বেজিং
 
বাহরাইন
১৬
১৪ ২০০৭   ইন্দোনেশিয়া
  মালয়েশিয়া
  থাইল্যান্ড
  ভিয়েতনাম
 
ইরাক
১–০
গেলোরা বুং কার্নো স্টেডিয়াম, জাকার্তা
 
সৌদি আরব
 
দক্ষিণ কোরিয়া
০–০ (অ.স.প.)
(৬–৫ পে.)
গেলোরা শ্রীবিজয়া স্টেডিয়াম, প্যালেমবাং
 
জাপান
১৬
১৫ ২০১১   কাতার  
জাপান
১–০ (অ.স.প.)
খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, দোহা
 
অস্ট্রেলিয়া
 
দক্ষিণ কোরিয়া
৩–২
জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়াম, দোহা
 
উজবেকিস্তান
১৬
১৬ ২০১৫   অস্ট্রেলিয়া  
অস্ট্রেলিয়া
২–১ (অ.স.প.)
স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়া, সিডনি
 
দক্ষিণ কোরিয়া
 
সংযুক্ত আরব আমিরাত
৩–২
নিউক্যাসেল স্টেডিয়াম, নিউক্যাসেল
 
ইরাক
১৬
১৭ ২০১৯   সংযুক্ত আরব আমিরাত  
কাতার
৩–১
জায়েদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম, আবুধাবি
 
জাপান
  ইরান
  সংযুক্ত আরব আমিরাত
২৪
১৮ ২০২৩   কাতার[ক]  
কাতার
৩–১
লুসাইল স্টেডিয়াম, লুসাইল
 
জর্ডান
  দক্ষিণ কোরিয়া
  ইরান
২৪
১৯ ২০২৭   সৌদি আরব ২৪
  1. পূর্বে চীনকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হলেও কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য চীন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরিসংখ্যান সম্পাদনা

 

পুরস্কার সম্পাদনা

বর্তমানে প্রতিযোগিতা শেষে ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হয়:

  • আসরের সেরা খেলোয়াড়
  • সর্বোচ্চ গোলদাতা খেলোয়াড়
  • সেরা গোলকিপার
  • প্রতিযোগিতার সেরা একাদশ
  • ফেয়ার প্লে পুরস্কার

বিতর্ক সম্পাদনা

বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে পুরোনো মহাদেশীয় আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতাকেও কম বিতর্ক সহ্য করতে হয়নি।[২][৩][৪] এএফসি এশিয়ান কাপের বিপুল উপস্থিতি আকর্ষণ করতে অক্ষমতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, এএফসি সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভ্রমণের উচ্চ খরচ এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির সমালোচনা এশিয়ান কাপে তুলে ধরা হয়েছিল।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পাদনা

এএফসি এশিয়ান কাপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে চিহ্নিত। এর মধ্যে একটি ছিল ইসরায়েলের ক্ষেত্রে, যেহেতু দলটি এএফসি-এর সদস্য ছিল কিন্তু ইয়োম কিপপুর যুদ্ধের পরে এবং আরব এএফসি সদস্যদের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান শত্রুতার কারণে, ১৯৭৪ সালে ইসরাইলকে এএফসি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং ১৯৯০ সালে উয়েফা সদস্যপদ দেওয়া পর্যন্ত তাকে ওএফসি-তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল।[৫]

এদিকে, সৌদি আরবইরানের মতো অন্যান্য এএফসি টুর্নামেন্টেও একই ধরনের ঘটনা বিদ্যমান। ইরানে সৌদি কূটনৈতিক মিশনে ২০১৬ সালের হামলার পর, সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং এমনকি প্রত্যাহার করার হুমকিও দিয়েছিল, পরে আন্তর্জাতিক স্তরে বিষয়টি গড়িয়ে দিয়েছিল।[৬]

২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ-এর জন্য যোগ্যতা অর্জনের সময় দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা উত্তর কোরিয়াকে দক্ষিণ কোরিয়ার দলের হোস্টিং থেকে প্রত্যাহার করে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা প্রদর্শন এবং তাদের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো অস্বীকার করে। ফলস্বরূপ, উত্তর কোরিয়ার হোম ম্যাচগুলি সাংহাইতে স্থানান্তরিত হয়।[৭]

নিম্নগামী দর্শকসংখ্যা সম্পাদনা

কম দর্শক ও এএফসি এশিয়ান কাপের আরেকটি সমস্যা। ২০১১ এএফসি এশিয়ান কাপ চলাকালীন, ফুটবলের সামান্য আগ্রহ এবং এশিয়ান দেশগুলির মধ্যে ভ্রমণের উচ্চ খরচের কারণে ভিড়ের কম রেকর্ড নিয়ে উদ্বেগ ছিল যার ফলে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন কোচ হোলগার ওসিয়েক দাবি করেছিলেন যে স্টেডিয়ামগুলি পূরণ করতে কাতার সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল। কেবল নান্দনিকতার জন্য, অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক ব্রেট হলম্যান মন্তব্য করেছেন, "বিশ্বব্যাপী এটি একটি ভাল টুর্নামেন্ট হিসাবে স্বীকৃত নয়"।[৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. FIFA.com। "Who We Are - News - FIFA Council votes for the introduction of a revamped FIFA Club World Cup - FIFA.com"www.fifa.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১১ 
  2. "Iran's success reflects the failures of Asian football"The Economist। ১৪ জুন ২০১৭। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  3. Panja, Tariq (১৭ জানুয়ারি ২০১৯)। "Politics Looms Over Empty Seats as Saudi Arabia Faces Qatar in Asian Cup"The New York Times। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  4. Paraskevas, Chris। "Asian Cup 2011 Comment: Empty Stadiums Hurting Asian Football And Qatar"www.goal.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. Conor Heffernan (২০ নভেম্বর ২০১৪)। "The Controversial Case of Israel & International Football"punditarena.com। Pundit Arena। ২৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৮ 
  6. "Saudi-Iranian Tension Extends To Sports – Saudi Arabian Football Federation Announces: We Will Not Play In Iran"memri.org। The Middle East Media Research Institute। ৬ জানুয়ারি ২০১৬। ২৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৮ 
  7. Mark Ledsom (৭ মার্চ ২০০৮)। "Koreas match moved to Shanghai after anthem row"Reuters। ২৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা