উলুবেড়িয়া
উলুবেড়িয়া হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার অন্তর্গত একটি শহর ও পুরসভাধীন এলাকা। এটি উলুবেড়িয়া মহকুমার সদর দফতর। শহরটি কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) আওতাধীন অঞ্চলের একটি অংশ। উলুবেড়িয়া তার শিল্প-বলয় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় সমৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত। ব্যাডমিন্টন শাটল কক উৎপাদনে উলুবেড়িয়া ভারতশ্রেষ্ঠ।
উলুবেড়িয়া উলুবেড়িয়া | |
---|---|
মহকুমা শহর | |
![]() শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা উৎসব, উলুবেড়িয়া | |
ডাকনাম: স্বাস্থ্যনগরী | |
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে উলুবেড়িয়ার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°২৮′ উত্তর ৮৮°০৭′ পূর্ব / ২২.৪৭° উত্তর ৮৮.১১° পূর্ব | |
দেশ | ![]() |
রাজ্য | ![]() |
জেলা | হাওড়া |
মহকুমা | উলুবেড়িয়া |
সরকার | |
• ধরন | পুরসভা |
• শাসক | উলুবেড়িয়া পুরসভা |
উচ্চতা | ১ মিটার (৩ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ২,০২,০৯৫ |
বিশেষণ | উলুবেড়িয়াবাসী |
ভাষাসমূহ | |
• সরকারি | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিনকোড | ৭১১৩XX |
টেলিফোন কোড | +৯১ ০৩৩ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি/WB |
লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্র | উলুবেড়িয়া |
বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র | উলুবেড়িয়া পূর্ব |
ওয়েবসাইট | uluberiamunicipality |
ভৌগোলিক উপাত্তসম্পাদনা
ভৌগোলিক দিক থেকে উলুবেড়িয়ার অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৪৭° উত্তর ৮৮.১১° পূর্ব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই নগরের গড় উচ্চতা হল ৩৩ ফুট।
জনসংখ্যার উপাত্তসম্পাদনা
ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, উলুবেড়িয়া শহরের জনসংখ্যা হল ২০২,০৯৫ জন।[১] এর মধ্যে পুরুষ ৫২% এবং নারী ৪৮%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৬৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭০% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৫৮%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে উলুবেড়িয়া-র সাক্ষরতার হার বেশি।
এই শহরের জনসংখ্যার ১৩% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সি। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ৩৩.৭২ বর্গ/কিমি এলাকায় ২ লক্ষ ৩২ হাজার ২৯০ জন (সেনসাস, ২০১১) জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত উলুবেড়িয়া পুরসভা। উক্ত জনসংখ্যার মধ্যে বার্ধক্য ভাতা পান ৬৪৮৭ জন (এর মধ্যে ৫৮৫ জন ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে), বিধবা ভাতা পান ২৮০১ জন এবং প্রতিবন্ধী ভাতা পান ২৬৩ জন মানুষ। মোট ৯৫৫১ জন বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পান উলুবেড়িয়া পুরসভা থেকে।
শিক্ষাসম্পাদনা
প্রাচীনকাল, অর্থাৎ উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কাল পর্যন্তও উলুবেড়িয়া শিক্ষা ও সংস্কৃতিগত দিক থেকে সেই অর্থে বিশেষ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী ছিল না। এই অঞ্চলে বসবাস করতেন মূলত কৃষি ও মৎস্যজীবী শ্রেণির মানুষেরা। তবে, পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাতে শুরু করে এই শতকের শেষার্ধ থেকে। শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ১৮৮৪ (মতান্তরে ১৮৭৯) খ্রিস্টাব্দে এই জনপদে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম উচ্চ বিদ্যালয় উলুবেড়িয়া হাই স্কুল। এবং তার পরবর্তী সময়কাল থেকেই এখানকার শিক্ষাগত পরিবেশ ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আচার্য হরিপদ ঘোষাল-এর উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয় উলুবেড়িয়া কলেজ। স্নাতকস্তরীয় শিক্ষার পাশাপাশি এই কলেজে চালু হয় শিক্ষক-শিক্ষণ বিভাগও; পরবর্তীতে যা সমগ্র হাওড়া জেলার মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠানের রূপ নেয়।
সমগ্র উলুবেড়িয়াতে ১০০টিরও অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রায় ১৫টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৬-৭টির মতো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সরকারির পাশাপাশি বর্তমানে অসংখ্য বেসরকারি ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে এ শহরজুড়ে। উলুবেড়িয়া পুর-অঞ্চলে অবস্থিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল:
❑ কলেজ
- উলুবেড়িয়া কলেজ
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ
- দ্য ক্যালকাটা ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি
- ভারত টেকনোলজি (বি টি) কলেজ
❑ বিদ্যালয়
- উলুবেড়িয়া হাই স্কুল (উঃ মাঃ)
- উলুবেড়িয়া বীণাপাণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (উঃ মাঃ)
- নোনা হাই স্কুল (উঃ মাঃ)
চিকিৎসা ব্যবস্থাসম্পাদনা
চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উন্নতির নিরিখে উলুবেড়িয়া পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম অগ্ৰগণ্য এবং হাওড়ার জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ শহর। এই শহরে অবস্থিত প্রধান তথা বৃহৎ দুই সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হল, উলুবেড়িয়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল (মহকুমা হাসপাতাল) এবং উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতাল। পুর-এলাকার নাগরিকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য-পরিষেবা লাভ করে থাকেন পুরসভা কর্তৃক পরিচালিত মাতৃসদন থেকে। উলুবেড়িয়ায় রয়েছে অসংখ্য প্রথম সারির নির্ভরযোগ্য বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম।
পরিবহণ ব্যবস্থাসম্পাদনা
সড়ক, রেল ও জলপথ— পরিবহণের তিন মাধ্যমেই সমৃদ্ধ এই শহর।
সড়কপথসম্পাদনা
উলুবেড়িয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। এবং শহরের মধ্য দিয়ে চলে গিয়েছে ও.টি. রোড; যা এই নগরের প্রধান সড়ক বা রাজপথ হিসেবে পরিচিত।
রেলপথসম্পাদনা
এখানে অবস্থান করছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে জোন। উলুবেড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন এবং আংশিকভাবে ফুলেশ্বর স্টেশন দ্বারা শহরটি রেল-পরিষেবাপ্রাপ্ত।
জলপথসম্পাদনা
গঙ্গা নদীবক্ষে আধুনিক ফেরি পরিষেবার মাধ্যমে জলপথ পরিবহণের সুবিধা রয়েছে।
আকাশপথসম্পাদনা
উলুবেড়িয়া থেকে নিকটতম বিমানবন্দর কলকাতা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট-এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
ক্রীড়াসম্পাদনা
ক্রীড়াক্ষেত্রে বরারই উলুবেড়িয়ার বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। এখানকার বহু ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও দল জেলা, রাজ্য এমনকি জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্ৰহণ করে থাকে। এ শহরের প্রধান ক্রীড়াঙ্গন হল, উলুবেড়িয়া স্টেডিয়াম। এ ছাড়াও, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার অধীনে একাধিক আধুনিক মানের স্পোর্টস অ্যাকাডেমি ও কোর্ট রয়েছে।
অর্থনীতিসম্পাদনা
উলুবেড়িয়া একটি আধুনিক শিল্প-শহর। অর্থনৈতিক দিক থেকে উলুবেড়িয়া বর্তমানে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট জনপদ। মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প-কলকারখানা এখানকার অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার ‘সেলিম গ্ৰুপ’ এখানে একটি মোটরসাইকেল কারখানায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগের জন্য পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু, বিবিধ কারণে পরবর্তীতে তা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।
শিল্পকলাসম্পাদনা
উলুবেড়িয়া বাদ্যযন্ত্র ক্লাস্টার
উলুবেড়িয়ার ধুলাসিমলা, রংমহল, মইখালি এবং দাদপুর— এই চারটি গ্রামজুড়ে গড়ে ওঠা বাদ্যযন্ত্রের ক্লাস্টারটি বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম বাদ্যযন্ত্র ক্লাস্টার। এটির উৎপত্তি হয়েছিল স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েই; অর্থাৎ প্রায় ৭০ বছর পূর্বে। সেতার, সরোদ, গিটার, তানপুরা- সহ প্রায় সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্রের ক্লাস্টারটির সূক্ষ্ম গুণমানের জন্য দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে উচ্চ চাহিদা রয়েছে। বহু বিদগ্ধ সঙ্গীতজ্ঞ এই এলাকা থেকে সংগ্রহ করা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে পণ্ডিত রবিশঙ্কর অন্যতম। উলুবেড়িয়ার এই ক্লাস্টারটি প্রজন্মের পর প্রজন্মব্যাপী সঞ্চিত দক্ষতা এবং কারুকার্যের ভান্ডার।
চিত্রশালাসম্পাদনা
বিখ্যাত ব্যক্তিত্বসম্পাদনা
হিরণ চট্টোপাধ্যায় - চলচ্চিত্রাভিনেতা ও রাজনীতিক
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি"। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |