উম্মে কুলসুম বিনতে মুহাম্মাদ

উম্মে কুলসুম বিনতে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস্সাল্লাম (আরবি: أم كلثوم‎‎) ছিলেন মুহাম্মাদ এবং তার প্রথম স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদের তৃতীয় কন্যা। যিনি উসমানের স্ত্রী ছিলেন।

উম্মে কুলসুম বিনতে মুহাম্মাদ
أم كلثوم بنت محمد
জন্ম	৬০৩ অব্দ মক্কা, হেজাজ, আরব
মৃত্যু	নভেম্বর, ৬৩০ (২৭ বছর বয়সী) মদিনা, হেজাজ, আরব
দাম্পত্য সঙ্গী	উসমান ইবন আফ্‌ফান
পিতা-মাতা	মুহাম্মাদ (পিতা) খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (মাতা)

জন্ম ও পরিচয়

মুহাম্মাদের নবুয়তের ৬ বছর পূর্বে উম্মে কুলসুমের মক্কাতে জন্ম হয়। উম্মে কুলসুম মুহাম্মাদের তৃতীয় মেয়ে। তবে এ ব্যাপারে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে, ইমাম আয যাহাবী তাকে মুহাম্মাদের চতুর্থ সন্তান বলেছেন। যুবাইর ইবনে বাককার বলেছেন, উম্মে কুলসুম রুকাইয়া ও ফাতিমা থেকেও বড়। কিন্তু অধিকাংশ মত এটাই যে, উম্মে কুলসুম রুকাইয়ার ছোট। আত তাবারি মুহাম্মাদের মেয়েদের জন্মের ক্রমধারা উল্লেখ করেছেন যথাক্রমে, যায়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা। রুকাইয়া ছিলেন উসমানের স্ত্রী, ২য় হিজরিতে রমজান মাসে রুকাইয়া মারা গেলে, মুহাম্মাদ পুনরায় উসমানের সাথে আরেক কন্যা উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেন। যদি উম্মে কুলসুম রুকাইয়ার বড় হতো তাহলে, উসমানের সাথে উম্মে কুলসুমের বিয়ে আগে হতো।

মুহাম্মাদ এবং খাদিজার কন্যা সন্তানসমূহ

মুহাম্মাদের মেয়েগণঃ

1. জয়নব বিনতে মুহাম্মাদ, তার মাতৃক চাচাত ভাই "আবুল আস ইবনে রাবিকে" বিয়ে করেন
2. রুকাইয়াহ বিনতে মুহাম্মাদ, প্রথমে উতবাহ ইবনে আবু লাহাব এবং তারপর "উসমান ইবনে আফফান"কে বিয়ে করেছিলেন
3. উম্মে কুলসুম বিনতে মুহাম্মাদ, প্রথম তার বোন রুকাইয়াহ্ মৃত্যুর পর "উসমান ইবনে আফফান" এবং উতাইবাহ ইবনে আবু লাহাব" বিয়ে করেছিলেন
4. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ, আলী ইবনে আবি তালিব বিয়ে করেছিলেন।

বিখ্যাত সুন্নি পণ্ডিত ইউসুফ ইবনে আব্দুল বার বলেছেন: "খাদিজার বংশে তার সন্তানদের চারটি কন্যা আছে; যে বিষয়ে মতামতের কোনো পার্থক্য নেই"।

প্রথম বিবাহ

মুহাম্মাদ নবুওয়াত লাভের পূর্বে আবু লাহাবের প্রথম পুত্র উতবাহর সাথে রুকাইয়ার এবং তার দ্বিতীয় পুত্র ‘উতাইবার সাথে উম্মে কুলসুমের বিয়ে দেন। মুহাম্মাদ নবুওয়াত লাভের পর যখন আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর নিন্দায় সুরা লাহাব নাযিল হলো, তখন আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর চাপে, মক্কার কুরাইশদের চাপ ও প্রলোভনে আবু লাহাব তার দুই পুত্র দিয়ে মুহাম্মাদের দুই মেয়েকেই তালাক প্রদান করেন। এবং তালাক দেওয়ার পরে উতাইবাহ এসে মুহাম্মাদের সাথে খারাপ আচরণ করে।

দ্বিতীয় বিবাহ

২য় হিজরিতে রুকাইয়া মৃত্যুবরণ করলে উসমান স্ত্রীর শোকে বিষন্ন ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এছাড়া মুহাম্মাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলো দেখে তিনি কষ্ট পেতে লাগলেন। এরপর মুহাম্মাদ তার ৩য় মেয়ে উম্মে কুলসুমকে রুকাইয়ার সম পরিমাণ দেনমোহর দিয়ে উসমানের সাথে বিয়ে দিলেন। ৩য় হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে উসমানের সাথে উম্মে কুলসুমের বিবাহের চুক্তি সম্পন্ন হয়। এর দুই মাস পরে জমাদিউস সানি মাসে তিনি স্বামী গৃহে গমন করেন। হযরত উম্মু কুলছূম কোন সন্তানের মা হননি।

একটি বর্ণনায় এসছে, রুকাইয়ার ইনতিকালের পর উমার ইবন খাত্তাব তার মেয়ে হাফসাকে উসমানের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুহাম্মাদ, উমর ও উসমান পরামর্শ করে, হাফসাকে মুহাম্মাদের সাথে আর উম্মে কুলসুমকে উসমানের সাথে বিবাহ দেন।

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত

উম্মে কুলসুম তার মা উম্মুল মুমিনিন খাদিজা ও তার বড় আপু জয়নবের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে অন্য বোনদের সাথে মুহাম্মাদের হাতে বাইআত হন। এবং মুহাম্মাদ মদিনায় হিজরতের পর উম্মে কুলসুম পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মদিনায় হিজরাত করেন।

মৃত্যু

স্বামী উসমানের সাথে ৬ বছর কাটানোর পর ৯ম হিজরির শা’বান মাসে উম্মে কুলসুম ইনতিকাল করেন। উম্মে আতিয়া সহ আনসারী মহিলারা তাকে গোসল দেন। মুহাম্মাদ তার জানাযার নামায পড়ান। আবু তালহা, আলি ইবনে আবি তালিব, ফাদল ইবনে আব্বাস ও উসামা ইবনে যায়েদ লাশ কবরে নামান।

“ উম্মে কুলসুমের মৃত্যুর পর মুহাম্মাদ বলেন, আমার যদি ১০টি মেয়ে থাকতো তাহলে একের পর এক তাদের সকলকে উসমানের সাথেই বিয়ে দিতাম। ” — মুহাম্মাদ

আরও দেখুন

• সাহাবীদের তালিকা