উনা জর্নাতা পার্তিকোলারে

উনা জনার্তা পার্তিকোলারে ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ইতালীয় চলচ্চিত্র। এত্তোরে স্কোলা ছবিটি পরিচালনা করেছেন এবং শ্রেষ্ঠাংশে রয়েছেন সোফিয়া লরেন, মারচেল্লো মাস্ত্রোইয়ান্নিজন ভার্নন। ১৯৩৮ সালের রোমে ছবিটির কাহিনীর প্রেক্ষাপট ফুটে ওঠেছে। অ্যাডলফ হিটলার যেদিন বেনিতো মুসোলিনির সাথে দেখা করেন, এটি সেদিন এক নারী ও তার প্রতিবেশির আখ্যান। ইতালি ও কানাডার যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হয়।

উনা জর্নাতা পার্তিকোলারে
Film poster
পরিচালকএত্তোরে স্কোলা
প্রযোজককার্লো পোন্তি
রচয়িতামরিজিও কোস্তানজো
রাগগেরো মাক্কারি
এত্তোরে স্কোলা
শ্রেষ্ঠাংশেসোফিয়া লরেন
মারচেল্লো মাস্ত্রোইয়ান্নি
জন ভার্নন
সুরকারআর্মান্দো ত্রোভাজোলি
চিত্রগ্রাহকপাসকালিনো দি সান্তিস
সম্পাদকরাইমোন্দো ক্রোচিয়ানি
পরিবেশকসার্ফ ফিল্ম
মুক্তি
স্থিতিকাল১০৬ মিনিট
দেশইতালি
ভাষাইতালীয়

লিঙ্গগত ভূমিকা, ফ্যাসিবাদ ও মুসোলিনি সরকারের অধীনে সমকামী নিপীড়নের চিত্র এখানে ফুটে ওঠেছে। এটি সেরা বিদেশি চলচ্চিত্র বিভাগে সিজার পুরস্কারগোল্ডেন গ্লোব লাভ করে। ১৯৭৮ সালে ছবিটি একাডেমি পুরস্কারের জন্য দুইটি মনোনয়ন লাভ করে।

কাহিনীসংক্ষেপ সম্পাদনা

১৯৩৮ সালের ৬ মে অ্যাডলফ হিটলার বেনিতো মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঐদিন আন্তোইনেতা নামে একজন সহজ-সরল, আবেগপ্রবণ ও অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত গৃহিণী বাসায় অবস্থান করে। তার ফ্যাসিবাদী স্বামী ইমানুয়েল বিপথে যাওয়া ছয় সন্তান নিয়ে শোভাযাত্রায় যান। কাছের ভবনটিতে তত্ত্বাবধায়ক ও গ্যাব্রিয়েল নামের এক চমৎকার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ নেই। গ্যাব্রিয়েল ইতোপূর্বে রেডিওতে সম্প্রচারকারী হিসেবে কাজ করত, কিন্তু সম্প্রতি সে চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে এবং তাকে সার্দিনিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হবে। তার সমকামিতা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানই এর জন্য দায়ী। আন্তোইনেতাদের ময়না পালিয়ে জানালা দিয়ে গ্যাব্রিয়েলের ভাষায় প্রবেশ করে। আন্তোইনেতা তখন তার বাসায় আসে। গ্যাব্রিয়েল তখন আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু আন্তোইনেতার আগমনে তার চেষ্টায় ছেদ পড়ে। সে ময়নাকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে উড়ে পালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। আন্তোইনেত্তা গ্যাব্রিয়েলের ব্যবহারে খুশি হয়। গ্যাব্রিয়েলের সাথে সে হাস্য-পরিহাস শুরু করে এবং রাম্বা নাচে অংশ নেয়।

পরস্পর পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গ্যাব্রিয়েল ও আন্তোইনেত্তার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তত্ত্বাবধায়ক আন্তোইনেত্তাকে সতর্ক করে দেয়, গ্যাব্রিয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী। গ্যাব্রিয়েল একসময় আন্তোইনেত্তার কাছে সত্য প্রকাশ করে বলে, সে সমকামী হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আবার আন্তোইনেত্তা বলে, তার স্বামী উদ্ধত। তার সাধুতা নিয়েও সে প্রশ্ন উত্থাপন করে। আন্তোইনেত্তার মতে, ইমানুয়েল বর্তমানে একজন শিক্ষিত নারীর প্রতি আসক্ত। পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়া ও বার্তালাপের মাধ্যমে তারা অনুধাবন করে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তাদের দুজনকে উৎপীড়নের সম্মুখীন করেছে। তাদের মধ্যে একসময় দৈহিক মিলন ঘটে। কিন্তু এ মিলনের ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। গ্যাব্রিয়েল ও আন্তোইনেত্তা উভয়ই সম্মত হয়, এতে কিছুই পরিবর্তিত হবে না। মিলনের সমাপ্তি ঘটার কিছুক্ষণ পরেই গ্যাব্রিয়েলকে ফ্যাসিবাদী পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আন্তোইনেত্তার পরিবারও বাড়ি ফিরে আসে। জানালার ধারে বসে আন্তোইনেত্তা গ্যাব্রিয়েলের উপহার দেওয়া বই দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স পড়তে শুরু করে। বিছানায় তার স্বামী সপ্তম সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, যার নাম সে "আদোলফো" দিতে চায়।

ভাবধারা সম্পাদনা

লৈঙ্গিক ভূমিকা ও ফ্যাসিবাদী ইতালিতে পৌরুষের ভূমিকা এ ছবির অন্যতম আলোচ্য বিষয়। ছবিতে আন্তোইনেত্তা ছয় সন্তানের জন্ম দিয়ে মায়ের ভূমিকা পালন করছেন। আরেকটি সন্তানের জন্ম দিলে তিনি সরকার থেকে বিশেষ অর্থ লাভ করবেন। [১] ফ্যাসিবাদী সরকার সমকামিতাকে জনসংখ্যাহীনতার সাথে তুলনা করে। গ্যাব্রিয়েলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। [১] ১৯২৬ সালে এ জন্য কুমার কর আরোপ করা হয়, যা গ্যাব্রিয়েলকেও পরিশোধ করতে হয়। সমকামী পুরুষ ও গৃহিণী মা উভয়ই ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট। পরস্পরের মধ্যে তারা সহানুভূতি খুঁজে পায়। [২] চলচ্চিত্রের অন্তে দেখা যায়,জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলবে, কিন্তু ফ্যাসিবাদের অবসানের পালা শুরু হয়ে গেছে।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Reich, Jacqueline (2008). "Stars, Gender and Nation: Marcello Mastroianni and Italian Masculinity". Screening Genders. Rutgers University Press
  2. Ponzanesi, Sandra (1 January 2014). "Queering European Sexualities Through Italy's Fascist Past: Colonialism, Homosexuality, and Masculinities". What's Queer about Europe?: Productive Encounters and Re-enchanting Paradigms. Fordham University Press
  3. Young, Deborah (১৫ অক্টোবর ২০১৫)। "A Special Day: Small Victories"The Criterion Collection। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা