উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ার্সন

উইলিয়াম উইনস্টানলি পিয়ার্সন (ইংরেজি: William Winstanley Pearson) ( ৭ মে, ১৮৮১ ― ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪)  ছিলেন একজন ব্রিটিশ ধর্মযাজক, শিক্ষাবিদ এবং রবীন্দ্রসাহিত্যের ইংরাজী অনুবাদক।[১][২][৩]

উইলিয়াম উইনস্টানলি পিয়ার্সন

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

উইলিয়াম পিয়ার্সনের জন্ম ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের বনেদি হুগোনট পরিবারে। পিতা রেভারেন্ড স্যামুয়েল পিয়ার্সন ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মযাজক। তাঁর স্ত্রী ছিলেন বার্থা এলিজা পিয়ার্সন (ক্রশফিল্ড)। [৪] তাঁর পড়াশোনা লণ্ডনে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন। এবং পরে  অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়েও অধ্যয়ন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি লণ্ডন মিশনারি সোসাইটির সদস্যরূপে কলকাতায় ভবানীপুরের লণ্ডন মিশনারি কলেজে উদ্ভিদতেত্ত্বর অধ্যাপক হন। কলকাতায় অবস্থান কালে তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। কলকাতার মিশনারি সমাজের কর্তৃপক্ষের খ্রিস্টান ও অখ্রিস্টান ভেদাভেদে অসন্তুষ্ট হয়ে কলেজের কাজে ইস্তফা দেন এবং গৃহশিক্ষকের কাজ নিয়ে দিল্লি যান। চার্লস ফ্রিয়ার এন্ড্রুজ ছিলেন তাঁর বন্ধু। সেই সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন দর্শন ও শিক্ষাদর্শের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং সেখানে তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ পান। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বোলপুরে আসেন এবং শান্তিনিকেতনের কাজে যোগ দেন। এখানে বেশভূষায়, আচার-আচরণে বাঙালি হয়ে যান। আশ্রমের চারপাশে সাঁওতালপল্লিতে তিনি কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দেবার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা যান। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সচিব হন এবং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে জাপান ভ্রমণের সঙ্গী করেন। জাপান ভ্রমণের সময় কবি তাঁর সাথে পল রিচার্ড ও শ্রীঅরবিন্দের শিষ্যা মীরা রিচার্ড বা মীরা আলফাসার পরবর্তীতে শ্রীমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কবির সঙ্গে প্রত্যাবর্তন না করে তিনি চীন ভ্রমণে যান এবং সেখানে ভারতের সমর্থনে বক্তৃতা করেন। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আন্দোলনের সমর্থনে রচিত তাঁর পুস্তক তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিষিদ্ধ করে। এমনকি তাকে বন্দি করে ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বগৃহে অন্তরীণ রাখে। জাপানে পল ও মীরা রিচার্ডের সাক্ষাৎ তাকে প্রভাবিত করেছিল। মীরা রিচার্ড ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরিতে স্থায়ী হলে পিয়ার্সন শ্রীঅরবিন্দের সাথে সাক্ষাতের জন্য পন্ডিচেরি যান। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় তিনি রবীন্দ্রনাথের ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের সঙ্গী হন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় শান্তিনিকেতনে কাজে যোগ দেন।

রচনাবলী সম্পাদনা

পিয়ার্সন রবীন্দ্রনাথের কিছু কবিতা ও গোরা উপন্যাস ইংরাজীতে অনুবাদ করেন। জাপানে অবস্থাকালে তাঁর লিখিত পুস্তক শান্তি নিকেতনের স্মৃতি পৃথিবীর বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে। অন্যান্য গ্রন্থ-

জীবনাবসান সম্পাদনা

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে পিয়ার্সন স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য ইউরোপ ভ্রমণে গেলে ২৪শে সেপ্টেম্বর এক দুর্ঘটনায় ইতালিতে তাঁর মৃত্যু হয়।

সূত্র সম্পাদনা

  • নাটল। গ্রন্থপঞ্জি। ইন্ডিয়ান লাইটের। / জেনারেল সংস্করণ বিএস কেশবন ; ভিওয়াই কুলকার্নি, 1962, ভলিউম 1, পৃষ্ঠা। 339

আরো পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট  ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩৯২,৩৯৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. French National Library
  3. visvabharati.ac.in
  4. Gupta, Uma Das (২০১৬)। "Pearson, William Winstanley [Willie]"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/107431  (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)