পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা

সরীসৃপের প্রজাতি
(ইস্টার্ন গ্রিন মাম্বা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (বৈজ্ঞানিক নাম: Dendroaspis angusticeps(Smith)) এলাপিড পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এরা কমন মাম্বা, পূর্ব আফ্রিকার সবুজ মাম্বা বা সবুজ মাম্বা বা সাদা মুখযুক্ত মাম্বা নামেও পরিচিত। মাম্বা গোত্রীয় এই গ্রিন মাম্বা প্রজাতির সাপ দীর্ঘাকার, বৃক্ষবাসী এবং উচ্চমাত্রায় বিষধর হয়। পূর্নবয়স্ক স্ত্রী গ্রিন মাম্বার আনুমানিক গড় দৈর্ঘ্য ২.০ মিটার (৬.৬ ফু) হয় তবে পুরুষদের দৈর্ঘ্য সামান্য কম হয়। ১৮৪৯ সালে একজন স্কটিশ শল্যচিকিৎসক তথা প্রানীবিদ সর্বপ্রথম এই প্রজাতির সাপের বর্ণনা দেন। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বসবাস মূলত পূর্ব আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। এরা পূর্ণবয়স্ক পাখী, ডিম, বাদুড় শিকার করে খায়, এছাড়াও ইঁদুর, ছোট ইঁদুর, গারবিলাস জাতীয় তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণীরাও পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার শিকার তালিকার অন্তর্ভুক্ত। এই এলাপিড পরিবারভুক্ত সাপটি লাজুক স্বভাবের ও পলায়নপর এবং গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বৃক্ষবাসী জীবন ও শরীরের গুপ্ত রঙ এর কারণে এদেরকে পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ করার সুযোগ খুব কম মেলে। অন্যান্য প্রজাতির মাম্বার তুলনায় গ্রিন মাম্বা অনেকাংশেই নিষ্ক্রিয় ও স্থির। এই অতি-নিষ্ক্রিয়তার কারণ হল, খাবার বা শিকারের সন্ধানে এরা এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে থাকে। এই নিষ্ক্রিয়তা এবং একস্থানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার অভ্যাসই পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখে। সর্প বিশারদ মাইকেল অ্যানগিলাট্টা কেনিয়ার জেড বা জিম্বার উপকূলবর্তী জঙ্গলে টানা ২৭ দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দুটি মাত্র পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার সন্ধান পেয়েছিলেন। এই তথ্য পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয় যে অধিকাংশ ভাইপেরিডির মত দীর্ঘ অপেক্ষা এবং নিজের অস্তিত্ব গোপন রেখে আগত শিকারের উপর ভরসা রেখেই এরা চলে।

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা
(Eastern green mamba)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: Vertebrata
শ্রেণী: Reptilia
বর্গ: Squamata
উপবর্গ: Serpentes
পরিবার: Elapidae
উপপরিবার: Elapinae
গণ: Dendroaspis
প্রজাতি: D. angusticeps
দ্বিপদী নাম
Dendroaspis angusticeps
(A. Smith, 1849)[১]
Eastern green mamba geographic range
প্রতিশব্দ[২]
  • Naja angusticeps
    Smith, 1849
  • Naja angusticeps
    Duméril & Bibron, 1854
  • Dendraphis angusticeps
    Günther, 1858
  • Dendrospis [sic] angusticeps
    Boulenger, 1897
  • Dendroaspis sjöstedti
    Lönnberg, 1910
  • Dendraspis [sic] angusticeps
    Sternfeld, 1910
  • Dendroaspis angusticeps
    Razetti & Msuya, 2002

মাম্বা বর্গের অন্যান্য প্রজাতির সাপের মত, পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাও ভয়ানক বিষধর। বিষথলি পূর্ণ অবস্থায় এর একটি কামড় যে পরিমাণ বিষ নির্গত করে তা অনেক মানুষের একসাথে মৃত্যু ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট। গ্রিন মাম্বার বিষের গঠনগত বিশ্লেষণে প্রি-সাইন্যাপ্টিক এবং পোস্ট-সাইন্যাপ্টিক নিউরোটক্সিন (ডেনড্রোটক্সিন), কার্ডিও টক্সিন, ক্যাকিক্লুডিন, এবং ফাস্কিক্লুডিন ইত্যাদি যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়। এই বিষ নিম্ন আণবিক ভর সম্পন্ন হওয়ায় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে মিশে যায় এবং অতি সক্রিয় ভাবে দেহতন্তুর মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষ স্নায়ুতন্ত্র,হৃৎপিণ্ড এবং দেহকলার উপর একসাথে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, তাই পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার কামড় খাওয়া ব্যক্তির পক্ষে বেঁচে থাকার লড়াই চালানো নিতান্তই অসম্ভব। সমস্ত মাম্বা প্রজাতির সাপের ড্রেনডোয়সপিস বিষেই ডেনড্রোটক্সিনের উপস্থিতি রয়েছে যা সবচেয়ে দ্রুত ক্রিয়াশীল সাপের বিষ হিসাবে পরিচিত। ডেনড্রোটক্সিনের সর্বপ্রধান বিশেষত্ব হল, এই বিষ দেহে প্রবেশ করা মাত্রই একের পর এক প্রাণঘাতী লক্ষণ প্রকাশ পায় যথা-দংশন স্থান ফুলে ওঠা, প্রবল ঝিমুনি, বমি বমি ভাব, শ্বাস কার্যে এবং ঢোঁক গিলতে কষ্ট হওয়া, হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া দ্রুত অচল হয়ে পড়া। এই তীব্র বিষক্রিয়া এতটাই প্রাণঘাতী যে সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রিন মাম্বার কামড়ে ৩০মিনিটের মধ্যেই আক্রান্ত প্রজাতির মৃত্যু হয়। যদিও গ্রিন মাম্বা উগ্রমেজাজী ও অতিসক্রিয় সাপের দলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আফ্রিকাতে এই সাপের কামড়ে আক্রান্তের হার খুবই কম, তবুও এর কামড়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি কারণ এদের বিষ অর্থাৎ ডেনড্রোটক্সিন অতি দ্রুত ক্রিয়াশীল ও অতি সক্রিয় মারণ-বিষ, চিকিৎসার সময়টুকু দেয় না।

শ্রেণিবিন্যাস সম্পাদনা

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা এলাপিডি পরিবার এবং ডেন্ড্রোয়াস্পিস বর্গের অন্তর্ভুক্ত। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (Dendroaspis angusticeps) প্রথম বর্ণিত হয় ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে শল্য চিকিৎসক ও প্রানীবিদ ডাঃ অ্যান্ড্রু স্মিথ[৩] এর দ্বারা। এই মাম্বার বর্গগত নাম ডেন্ড্রোয়াস্পিস-এর ব্যুৎপত্তি প্রাচীন গ্রিক - ডেন্ড্র (Dendro) অর্থাৎ বৃক্ষ বা গাছ[৪] এবং আসপিস (ασπίς) অথবা আস্প যার অর্থ ঢাল। আসপিস-এর অপর একটি অর্থ হল কোবরা বা সাপ। প্রাচীন গ্রন্থাদিতে আসপিস অথবা আস্প কথার অর্থ হল নাজা হাজে[৫] অর্থাৎ সাপের ফণা; যা ঢালের মত। সুতরাং ডেন্ড্রোয়াস্পিস এর আক্ষরিক অর্থ বৃক্ষবাসী সাপ, যারা এই বর্গভুক্ত অধিকাংশ সর্প প্রজাতি বৃক্ষবাসী স্বভাবের পরিচায়ক। অ্যনগুস্টিসেপ্স কথাটি ল্যাটিন শব্দ অ্যানগুসটাস থেকে আগত যার অর্থ হল সরু বা সংকীর্ণ [৬] এবং সেফ্‌স (-ceps) এই ল্যাটিন অণুসর্গটি সেফালিকাস শব্দ থেকে আগত; যার অর্থ মাথা বা মাথা সংক্রান্ত[৭] ইহা গ্রিন মাম্বা প্রজাতির সাপের লম্বা এবং সরু মাথার ইঙ্গিত করে। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা নামের পাশাপাশি এই সর্প প্রজাতিকে কমন গ্রিন মাম্বা,ইস্ট আফ্রিকান গ্রিন মাম্বা বা শুধুমাত্র গ্রিন মাম্বা বা হোয়াইট মাউথ মাম্বা নামেও পরিচিত।

মাম্বা বর্গীয় সাপের প্রথম বিবরণ দেন জার্মান পক্ষীবিষারদ এবং হারপেটোলজিস্ট হারমান শ্লেগেল (১৮৪৮)[৮] স্লোন্সকি (১৯৯৭) নির্দেশ করেছেন যে আফ্রিকান বর্গের ডেন্ড্রোয়াস্পিস-এর মধ্যে সম্পর্ক সমস্যাজর্জরিত বা সমস্যাপূর্ণ। [৯] যাই হোক, প্রত্যক্ষ প্রমাণে দেখা গেছে ডেন্ড্রোয়াস্পিস, ওফিওফাগাস, বুনগারাস, হেমিবুনগারাস কোরাল স্নেক গড়ে তুলেছে।[১০]

বর্ণনা সম্পাদনা

 
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা একটি বৃহৎ, সামান্য চাপা, খুব সরু দেহ বিশিষ্ট এবং মাঝারি ও মোটামুটি দীর্ঘ ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া লেজযুক্ত সাপ। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ সাপের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৮ মিটার(৫.৯ ফুট) এবং স্ত্রী সাপের গড় দৈর্ঘ্য ২ মিটার(৬.৬ ফুট)। এদের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য লেজের দৈর্ঘ্যের ৪ অথবা ৪.৩ গুন বেশি হয়।[১১][১২] এদের মাথা সরু, লম্বাটে এবং কফিন-আকৃতিবিশিষ্ট। ভয় পেলে বা কোনও ভাবে এদের জাগিয়ে বা চাগিয়ে তুললে আত্মরক্ষার্থে এদের ঘাড়ের অংশ চ্যাপ্টা হয়ে প্রসারিত হয়। যদিও সত্যিকারের ফণা মেলে ধরা বলতে যা বোঝায় সেই আকৃতির গঠন পরিলক্ষিত হয় না। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার সামনের বিষ দাঁত দুটি অপেক্ষাকৃত লম্বা হয়। এই বিষদাঁত গুলি উপরের চোয়ালের ম্যাক্সিলার একদম সামনে ম্যাক্সিলারী হাড়ের প্রসেডিয়ামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এবং যেগুলি অগ্রবর্তী হাড়ের সাথে আক্ষরিক ভাবে ঘুরতে পারে। ফলত, এই প্রজাতির সাপদের বিষদাঁতের নড়াচড়া ও প্রয়োগের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ থাকে যা অন্যান্য এলাপিডিদের মধ্যে দেখা যায় না। এদের নিচের চোয়ালে একজোড়া লম্বা, বক্র বিষদাঁত সদৃশ শক্ত (ফাঁপা নয়) দাঁত থাকে। এছাড়াও অসংখ্য ছোটো দাঁত থাকে যাদের মধ্যে সুবিন্যস্ত ফাঁক লক্ষ্য করা যায়। এদের চোখ দুটি মাঝারি আকারের গোল তারারন্ধ্র যুক্ত।[১৩]

আঁশের বিন্যাস সম্পাদনা

পৃষ্ঠদেশীয় আঁশগুলি তেরচা, মসৃণ এবং সরু। এদের পৃষ্ঠদেশের বর্ণ উজ্জ্বল সবুজ ও উদরদেশের বর্ণ হলদেটে সবুজ। কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে পবার্শদেশে কিছু উজ্জ্বল হলুদ আঁশের বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়। শিশু অবস্থায় এদের বর্ণ নীলচে সবুজ থাকে এবং বড় হওয়ার সাথে সাথে তা সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে উজ্জ্বল সবুজ বর্ণে পরিবর্তন হয়। গ্রিন মাম্বা প্রজাতির সাপের অধিকাংশের ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৈর্ঘ্যের ৬০ সেন্টিমিটার (২৪ ইঞ্চি)-এর বেশি অংশে পরিপূর্ণ পূর্নবয়স্ক রঙের বিন্যাস দেখা যায়, তবে কিছু পূর্নবয়স্ক সাপের ক্ষেত্রে এমনকি শৈশবের নীলচে সবুজ বর্ণ ফিরে আসে। চোখের তারারন্ধ্রের সীমানায় সরু উজ্জ্বল গৈরিক বর্ণের বিন্যাস দেখা যায়।চোখের মনির পিছনদিকে উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের দাগ দেখা যেতে পারে। মুখের ভিতরের অংশ সাদা অথবা নীলচে সাদা রঙের হয়। পুরুষদের উদরদেশে স্বভাবত স্ত্রীদের তুলনায় কম আঁশ থাকে।[১৩]

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার মাথা, দেহ এবং লেজের আঁশবিন্যাস নিম্ন্রূপঃ- [১৪]

প্রজনন সম্পাদনা

মিলন এবং প্রসবকাল ব্যতীত, পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা মূলত একাকী জীবন-যাপন করে। এই মিলনঋতু ও প্রসবকালে গ্রিন মাম্বাদের সর্বাপেক্ষা সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। একদিকে পুরুষগুলি একে অন্যের লড়াই এ ব্যস্ত থাকে; অন্যদিকে স্ত্রী এবং পুরুষে মিলন চলে। গর্ভিণী স্ত্রী সাপেরা একস্থানে স্থির অবস্থান করে; অপরপক্ষে পুরুষগুলি সক্রিয়ভাবে সঙ্গিনীর সন্ধানে তৎপর হয়ে ওঠে এবং মিলনের প্রয়াস চালায় দীর্ঘ বর্ষাকাল ধরে (এপ্রিল-জুন)। এই সময়ে, পুরুষগুলির মধ্যে একপ্রকার ক্ষিপ্ত এবং আক্রমণাত্মক ভাব লক্ষ্য করা যায় এবং সঙ্গিনীর সাথে মিলনের সম্ভাবনা ও সুযোগ উপলক্ষে অথবা আঞ্চলিক প্রাধান্য (dominance hierarchy) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একজন পুরুষ লড়াইটা শুরু করে অন্যজনের উথলিত দেহ ও মাথার উপর নিজের দেহ এবং মাথা তুলে অন্যকে দাবিয়ে দেবার ক্রমাগত চেষ্টা করে। এর সাথে চলে অহরহঃ জিহ্বা নির্গমন। এরপর দুটি সাপ তাদের দেহ ও গলা পরস্পর পেঁচিয়ে একে অপরকে ঠেলতে থাকে এবং একে অন্যের মাথা বারবার মাটিতে পেড়ে ফেলার বা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করে যায়। দুই-পুরুষে এই ধুন্ধুমার লড়াই বেশ কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী চলতে পারে; তবে এতে ছোবল দেবার ঘটনা কখনো ঘটেনা। গ্রিন মাম্বা প্রজাতির পুরুষদের লড়াইয়ের সময় কাঊই একে অপরকে ছোবল মারে না। ব্ল্যাক মাম্বা প্রজাতির পুরুষদের লড়াইয়ে সর্বদাই যে আক্রমণাত্মক এবং হিংস্র ভাব লক্ষ্য করা যায়, তা এদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। স্ত্রী গ্রিন মাম্বা চলার পথে বরাবর সুগণ্ধ ছড়িয়ে যায় (scent trail) যার সাহায্যে পুরুষরা সেই পথ অণুসরণ করে সর্পিণীর অবস্থান নির্ণয় করে। মিলনের ইচ্ছায় পুরুষ সাপটি নিজের দেহ স্ত্রী সাপটির দেহ বরাবর উপরে রাখে এবং ক্রমাগত জিহ্বা নির্গমন করে চলে। মিলনের বিষয়টি সর্পিণীর ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সর্পিণী মিলনিচ্ছুক হলে, তার লেজটিকে উপরে তোলে এবং তারপর সল্প সময়ের মধ্যেই একে অন্যের দেহ পেঁচিয়ে সহবস্থান শুরু করে। মিলনেচ্ছা নিবেদন এবং মিলন সাধারণত গাছেই সম্পন্ন হয় কারণ এই প্রজাতির সাপেরা বৃক্ষবাসী। অতঃপর অক্টোবর-নভেম্বর [১৫] এর উষ্ণ মাসগুলিতে সর্পিণী কোন একখানে ৪ থেকে ১৭টি ডিম পাড়ে (গড়ে ১০-১৫টি ডিম)। ডিমগুলি সাদা বর্ণের এবং লম্বাটে ধরনের হয়; আয়তনে ৬৫x৩৫ বর্গ মিলিমিটার[১১]। স্ত্রী পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা ডিমগুলি পাড়ে ফাঁপা গাছের কুঠুরিতে অথবা কোঠরে, শুকনো ও পচে যাওয়া গাছপালার ঝোপে ও পাতার ঝাড়ে। ডিম থেকে শিশু সাপ বেড়িয়ে আসতে সময় লাগে ১০-১২ সপ্তাহ। সদ্যোজাত সর্প শিশুর দৈর্ঘ্য হয় আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার (১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি)[১২] (১২-১৬ ইঞ্চি) অথবা গড়ে ৪৪ সেন্টিমিটার (১৭ ইঞ্চি)।[১৫] জন্মলগ্নেই এরা অত্যন্ত বিষধর হয়। এরা দৈর্ঘ্যে ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার (২৪ থেকে ৩০ ইঞ্চি)[১১][১২]-এ পৌঁছালে, এদের দেহে পূর্নবয়স্ক রঙ ধারণ শুরু হয়। প্রথম বছরে এই সর্প শিশুরা ৫০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার (২০ থেকে ৩১ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পায়। এদের বয়স যত বাড়তে থাকে, দৈর্ঘবৃদ্ধি ততই হ্রাস পেতে থাকে, যদিও বৃদ্ধি কখনই সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায় না।[১৫]

জীবনকাল সম্পাদনা

সর্বাপেক্ষা দীর্ঘায়ু পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাটি খাঁচায়বন্দী অবস্থায় ১৮ বছর ৮ মাস বেঁচেছিল।[১৬] অপর একটি খাঁচা বন্দী গ্রিন মাম্বা ১৪ বছর[১৭] বেঁচেছিল বলে জানা যায়। উন্মুক্ত ও বন্যজীবনেও যদিও এদের এত দীর্ঘ আয়ু হওয়া সম্ভব; তবুও ধরে নেওয়া হয় যে খাদক প্রাণীর আক্রমণ,বাসস্থান নষ্ট হওয়া, রোগ এবং অন্যান্য জৈববিঞান সম্মত ও পরিবেশগত কারণে এদের আয়ুষ্কাল সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়।

বিতরণ এবং বাসস্থান সম্পাদনা

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার অধিকাংশ উপকূলবর্তী অঞ্চল জাত। এদের বাসস্থান আফ্রিকা ছাড়িয়ে দক্ষিণ কেনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল অঞ্চলের মধ্যবর্তী তানজেনিয়া, মোজাম্বিক, মালয়, পূর্ব জিম্বাবুয়ে, পূর্ব জাম্বিয়া, নাটাল-এর দক্ষিণ অংশ ও উত্তর পন্ডোল্যান্ড-এ এদের বসবাস রয়েছে। জাঞ্জিবারেও গ্রিন মাম্বার দর্শন মেলে। এই সমস্ত অঞ্চলে এই সর্প প্রজাতির একটানা বা নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি আছে বলে মনে করা হয়, যদিও এদের দেখা পাওয়ার বিষয়ে প্রাপ্ত বর্ণনার সংখ্যা খুব কম; কারণ এদের খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।[১১][১৩]

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা মূলত বৃক্ষবাসী সাপ; কদাচিৎ এদের মাটিতে নামতে বা ঘুরতে দেখা যায়। গাছের পাতা এবং কচি ডালের সাথে এদের গায়ের উজ্জ্বল রঙ মিশে থাকে, তাই গাছ এবং ঝোপের মধ্যে এরা খুব সহজেই ক্যামোফ্লাজ করতে পারে ফলে এদের খুঁজে পাওয়া দোষ্কর হয়ে ওঠে। কোনও কোনও হারপেটোলগিস্ট বা সরীসৃপ ও উভচরবিদ মনে করেন যে উপকূলবর্তী নিচু জমিতে[১৫] অবস্থিত ক্রান্তীয় রেইনফরেস্টে গ্রিন মাম্বা প্রজাতির সাপের উপস্থিতি খুবই সীমাবদ্ধ অর্থাৎ সংখ্যায় খুবই কম। যাইহোক, অন্যান্য বিশেষকদের মতে উপকূলবর্তী ঝোপঝাড়ে সমুদ্রতীরবর্তী বালিয়াড়িগুলিতে এবং মনটান (montane forest) বনাঞ্চলে এই সর্প প্রজাতিকে দেখা যেতে পারে।[১৭] একই মাম্বা প্রজাতির ব্ল্যাক মাম্বাদের সাথে এদের বাসস্থানের প্রভূত অমিল। ব্ল্যাক মাম্বা (Dendroaspis polylepis)র মত পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাকে কদাচিৎ খোলা বা উন্মুক্ত প্রান্তরে ঘুরতে বা থাকতে দেখা যায়; বরং এরা অপেক্ষাকৃত ঘন ও ছায়াযুক্ত গাছপালা এবং ঝোপঝাড়ে থাকতে পছন্দ করে। বনভূমিতে বসবাসের পাশাপাশি গ্রিন মাম্বা প্রজাতির লোকালয়বর্তী ঘন ঝোপঝাড় এবং বাগানের লেবু জাতীয় গাছ, আম, নারকেলকাজু ইত্যাদি গাছেও বাস করতে দেখা যায়। বিবরণ থেকে জানা গেছে যে উপকূলবর্তী পশ্চিম আফ্রিকায় এই প্রজাতির সাপেরা বাড়ির আনাচে কানাচে তে ঘুরে বেড়ায় এবং খড় ও পাতায় ছাওয়া ছাদের মধ্যে বাসা বাঁধে। এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৫০০ মিটার (৪,৯০০ ফু) উচ্চতায়ও পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার সন্ধান পাওয়া গেছে। [১২]

সংরক্ষণ পর্যায় সম্পাদনা

২৬জুন,২০১১ তারিখে পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার সংরক্ষণের বিষয়টি আইসিইউএন-এর বিচার্য হিসাবে গৃহীত হয়নি; কারণ গ্রিন মাম্বা একটি সাধারণ প্রজাতির সাপ এবং ইহার সুদীর্ঘ ভৌগোলিক অবস্থান পরিধির মধ্যে এর সংখ্যা এবং অস্তিত্ব যথেষ্ট সুস্থির বলে বিবেচনা করা হয়। একটি প্রামাণ্য তথ্যে একটি মাত্র গাছেই একসাথে ৫টি গ্রিন মাম্বাকে দেখা গেছে। উপকূলবর্তী কেনিয়া ও দক্ষিণ তানজানিয়ায় হেক্টর প্রতি ২-৩টি গ্রিন মাম্বার অস্তিত্ব নথিভুক্ত হয়েছে। সুতরাং অস্তিত্ব সংরক্ষণের কোনও প্রয়োজন বর্তমানেওএদের নেই। তবে বাসস্থান ধ্বংস, বৃক্ষচ্ছেদন ও বন্সংকোচন ইত্যাদি ক্রমবর্ধ্মান কারণে এদের অস্তিত্বের উপর বিপন্নতার কালো ছায়া নেমে আসতেই পারে।[১২]

আচরণ এবং বাস্তুসংস্থান সম্পাদনা

 
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা জার্মানির সর্প সংগ্রহশালায়

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা বৃক্ষবাসী এবং গোপনচারী সর্প প্রজাতি। প্রধানত দিনের বেলাতেই এদের দেখা যায়। এরা অধিকাংশ সময় কাটায় মাটি থেকে উপরে অপেক্ষাকৃত ঘন ঝোপঝাড় ও ডালপালায় যেখানে ঘন সবুজের ঘেরাটোপে ক্যামোফ্লেজড করতে সুবিধা হয়।[১২] এই প্রজাতির সাপদের সচরাচর মাটিতে দেখা যায় না, যদি না এরা তৃষ্ণা মেটাতে, শিকার ধরতে বা রোদ পোয়াতে,[১৮] সেইসময় মাটিতে নামতে বাধ্য হয়। গ্রিন মাম্বা খুব সচকিত ও ভীতু ধরনের সাপ। অতি ক্ষিপ্র চলন এবং গাছে চড়ায় এরা দারুণ পারদর্শী। রাতে ঘুমানোর জন্য এরা গাছের ফাঁপা কোটরের পরিবর্তে পাতার স্তূপের মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুতে পছন্দ করে।[১৩] যদিও গাছের কোটরীদের কখনো সখনো ঘুমাতে দেখা যায়। এই প্রজাতির চলন-গমনের ধারা লক্ষ করা উদ্দেশ্যে, দুটি পূর্নবয়স্ক পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা সাপকে নিয়ে ২৭দিনের বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষকরা খেয়াল করে দেখেছেন যে সক্রিয় ভাবে শিকার ধরার বদলে এরা গোপনে লুকিয়ে শিকার ধরে। তাই এদের চলাফেরা ও নড়াচড়া খুব সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই বিষয়টি অন্যান্য মাম্বা গোষ্ঠীর অথবা অধিকাংশ এলাপিডি প্রজাতির চরিত্রবিরোধী কারণ এরা সক্রিয়ভাবে শিকার ধরে বা শিকারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। গবেষকদের এই সমীক্ষায় প্রাথমিক যে প্রমাণগুলি পাওয়া যায় তা গ্রিন মাম্বার শিকার ধরার পদ্ধতির উপর আলোকপাত করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এক জায়গায় বসে অপেক্ষা করে শিকারের জন্য ওঁত পেতে থাকার অভ্যাস ছাড়াও কোনও কোনও ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাকে শিকারের সন্ধানে বেরিয়ে শিকার ধরতেও দেখা যায়। উইলিয়াম ইয়র্ক[১৯] এর বর্ণিত শিকার সন্ধানী গ্রিন মাম্বার ঘুমন্ত বাদুরকে শিকারের বর্ণনা এই তথ্যকে জোরদার করে। খাদ্য সংগ্রহ ও নতুন বাসস্থানের সন্ধানে গ্রিন মাম্বার পরিযায়ীটার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। বাস্তবিক পক্ষে, একই স্থানে বসবাস করাই এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। গ্রিন মাম্বা গড়ে দৈনিক প্রায় ৫.৪ মিটার (১৮ ফুট)[১৫][১৯] চলাফেরা করে। এদের দীর্ঘতর নিকটাত্মীয় ব্যাক মাম্বার তুলনায় এরা লাজুক এবং অপেক্ষাকৃত অনেক কম আক্রমণাত্মক ও ভয়াবহ। চরিত্রগত ভাবে এরা মানুষ ও অন্যান্য খাদক প্রাণীর উপস্থিতি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে। নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার বা ভয় দেখানোর চাইতে এরা গুপ্ত থাকা ও পলায়নপরটাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। গ্রিন মাম্বা প্রজাতিরা অন্যান্য মাম্বার মতই দ্রুতগামী এবং ঘণ্টায় ৭ মেইল পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। বিপদ বা বাধার সম্মুখীন হলে এরা সাধারণত ছোবল মারে না, কিন্তু ক্রমাগত বাধা বা বিপত্তির সম্মুখীন হলে এদের কখনো দ্রুত এবং বারবার ছোবল দিতে দেখা যায়। [১৮]

খাদ্য সম্পাদনা

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা মূলত পাখি, বাদুড় এবং তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী যথা ইঁদুর ইত্যাদি শিকার করে। পাখির ডিমও এরা খায়। বৃক্ষবাসী গিরগিটিরাও এদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়, যদিও এর সপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।[১১][১২][১৭] তবে গ্রিন মাম্বার ঘুমন্ত বাদুড় শিকারের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।[১৯] আবার পাখীর বাসায় এদের হানা দেওয়ার কথাও শোনা যায়।[২০] পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাদের এক স্থানে বসে শিকারের জন্য ওঁত পেতে থাকার কৌশল কার্যকরী হওয়ার কারণ পাখী ও তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণীরা ভীষণভাবে সচল ও সর্বদাই একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিচরণ করে। এদের শিকার তালিকায় সোমব্রে গ্রিনবুল-এর অন্তর্ভুক্তির তথ্য প্রমাণ রয়েছে কেনিয়ার উপকূলবর্তী যেসব অঞ্চলে ঘন প্রাকৃতিক ও চাষ করা গাছপালার অস্তিত্ব রয়েছে। আয়োনিডাস ও পিটম্যান-এর বিবরণ অনুযায়ী (১৯৬৫) তানজানিয়াতে গ্রিন মাম্বার পাকস্থলীতে বিশাল আকারের ভুসভেদ গারবিল-এর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। যদিও ভুসভেদ গারবিল কেনিয়াতে দেখা যায় না। এই অঞ্চলে গ্রিন মাম্বার গারবিলের সাতটি প্রজাতির শিকার করার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।[১৯]

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা শিকারীগণ সম্পাদনা

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার দ্বারা যারা শিকার হয় তারা হল মানুষ, বেজী, স্নেক ঈগল এবং গণ্ধগোকুল জাতীয় প্রাণী। হর্নবিল এবং অন্যান্য সাপেরা শিশু গ্রিন মাম্বাদের শিকার করে।[১৯]

বিষ সম্পাদনা

 
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা হল উচ্চমাত্রায় বিষধর

পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা এর বিশেষপ্রকার অত্যন্ত বিষধর সাপ। এদের বিষের গঠনগত বিশ্লেষণে প্রি-সাইন্যাপ্টিক এবং পোস্ট-সাইন্যাপ্টিক নিউরোটক্সিন, ডেনড্রোটক্সিন, কার্ডিও টক্সিন, ক্যাকিক্লুডিন, এবং ফাস্কিক্লুডিন ইত্যাদি যৌগ পাওয়া যায়। অ্যাঙ্গেলম্যান এবং ওবস্ট এর গবেষণা অনুযায়ী (১৯৮১)[২১] এই সর্প প্রজাতির কামড়ে ৮০ মিলিগ্রাম বিষ নির্গত হয়। ১৯৭৪ সাথে মিনটন-এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে, এক ছোবলে নির্গত বিষের পরিমাণ ৬০-৯৫ মিলিগ্রাম (শুষ্ক ওজন)।[১৩] সাবকিউটেনিয়াস LD50 হল ১.৩ মিগ্রা/কেজি।[১২] ইঁদুরদের ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন এলডি50 ০.৪৫মিগ্রা/কেজি পরিমাপে দেওয়া হয়।[২২] অন্যান্য মাম্বা প্রজাতির মত গ্রিন মাম্বার বিষাক্তটার পরিমাণ ভীষনভবে ভিন্নরূপ হয় এবং এই ব্যাপারটি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর যেমন- ভৌগোলিক অবস্থান, বয়স, ঋতুকালিন পার্থক্য, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির উপর। এমনকি কামড়ের স্থান ফুলে ওঠার মাত্রাও ভিন্ন হয় এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে কামড়ের স্থানে কোনও ফোলা ভাবই লক্ষ্য করা যায় না। যাইহোক, সাধারণত গ্রিন মাম্বার কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সমগ্র অঙ্গটি ফুলে ওঠে এবং হিমোস্ট্যাটিক সমস্যা দেখা যায়। আঙ্গুলে কামড় অথবা খুব শক্তভাবে বাধন দেবার[২৩] দেওয়ার কারণে স্থানীয় কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা কদাচিৎ ঘটে। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার কামড় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী। এই সাপের কামড়ের পর চিকিৎসা না করার ক্ষেত্রে মৃত্যু হার কতটা তা এখনো অজানা তবে অণুমান করা হয় যে মৃত্যু হার[১৩] অনেক বেশি কারণ ডেনড্রোটক্সিন হল প্রাণঘাতী বিষ। এই সর্প প্রজাতির দংশনের সর্বপ্রধান বিশেষত্ব হল অতি দ্রুত এবং একের পর এক প্রাণঘাতী দংশন স্থান ফুলে ওঠা, প্রবল ঝিমুনি, বমি বমি ভাব, শ্বাস কার্যে এবং ঢোঁক গিলতে কষ্ট হওয়া, হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া দ্রুত অচল হয়ে পড়া। এই তীব্র বিষক্রিয়া এতটাই প্রাণঘাতী যে, সমীক্ষা অনুসারে, ৩০ মিনিটের মধ্যেই দংশিত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য।[১২]

সংগৃহীত চিত্র সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Dendroaspis angusticeps"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম 
  2. "Dendroaspis angusticeps (SMITH, 1849)"The Reptile Database 
  3. Smith, Andrew (১৮৪৮)। Illustrations of the zoology of South Africa, Reptilia.। London: Smith, Elder and Co.। 
  4. "dendro-"Collins English Dictionary - Complete & Unabridged 10th Edition। HarperCollins Publishers। 
  5. "aspis, asp"Dictionary.com Unabridged। Random House। 
  6. "Definition of "angustus""Numen - The LatinLexiconhttp://latinlexicon.org/index.php।  |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  7. "Definition of "-ceps""Numen - The Latin Lexiconhttp://latinlexicon.org/index.php।  |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  8. "Dendroaspis"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম 
  9. Slowinski, JB; Knight, A; Rooney, AP (ডিসেম্বর ১৯৯৭)। "Inferring species trees from gene trees: A phylogenetic analysis of the Elapidae (Serpentes) based on the amino acid sequences of venom proteins"। Molecular Phylogenetics and Evolution8 (3): 349–62। ডিওআই:10.1006/mpev.1997.0434পিএমআইডি 9417893 
  10. Castoe, TA; Smith, EN; Brown, RM; Parkinson, CL.। "Higher-level phylogeny of Asian and American coralsnakes, their placement within the Elapidae (Squamata), and the systematic affinities of the enigmatic Asian coral snake Hemibungarus calligaster (Wiegmann, 1834)" (পিডিএফ)Zoological Journal of Linnean Society151: 809–831। 
  11. Broadley, D. (১৯৮৩)। "9"। Fitzsimmons, VFM। Fitzsimmons' Snakes of Southern Africa (Reprint, revised সংস্করণ)। Johannesburg, South Africa: Delta Books, LTD। আইএসবিএন 978-0-908387-04-5 
  12. Spawls, S., Branch, B. (১৯৯৫)। The Dangerous Snakes of Africa। Blandford। পৃষ্ঠা 49–51। আইএসবিএন 978-0-88359-029-4 
  13. "Dendroaspis angusticeps - General Details, Taxonomy and Biology, Venom, Clinical Effects, Treatment, First Aid, Antivenoms"WCH Clinical Toxinology Resource। University of Adelaide। ১৬ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৫ 
  14. Marais, J (২০০৪)। A Complete Guide to Snakes of Southern Africa। Cape Town: Random House Struik Publishers। পৃষ্ঠা 98–99। আইএসবিএন 978-1-8-6872-932-6 
  15. Haagner, GV; Morgan, DR (জানুয়ারি ১৯৮৯)। "The captive propagation of the Eastern green mamba Dendroaspis angusticeps"। International Zoo Yearbook28 (1): 195–199। ডিওআই:10.1111/j.1748-1090.1989.tb03280.x 
  16. "AnAge entry for Dendroaspis angusticeps"AnAge:The Animal Ageing and Longevity Database। Human Ageing Genomic Resources। 
  17. Branch, B. (১৯৮৮)। Branch's Field Guide Snakes Reptiles Southern Africa। Curtis Publishing, Ralph। আইএসবিএন 978-0-88359-023-2 
  18. O'Shea, Mark (১২ সেপ্টেম্বর ২০০৫)। Venomous Snakes of the World। New Jersey, USA: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-12436-1 
  19. Angilletta, MJ. (১৯৯৪)। "Sedentary behaviors by Green Mambas Dendroaspis angusticeps" (পিডিএফ)Herpetological Natural History2 (2): 105–111। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৫ 
  20. Phelps, T. (১৯৮৯)। Poisonous Snakes। London: Blandford। পৃষ্ঠা 272। আইএসবিএন 978-0-71-372114-0 
  21. Engelmann, Wolf-Eberhard (১৯৮১)। Snakes: Biology, Behavior, and Relationship to Man। Leipzig; English version NY, USA: Leipzig Publishing; English version published by Exeter Books (1982)। পৃষ্ঠা 51আইএসবিএন 0-89673-110-3 
  22. Department of the Navy Bureau of Medicine and Surgery (২০১৩)। Venomous Snakes of the World: A Manual for Use by U.S. Amphibious Forces। Skyhorse Publishing। পৃষ্ঠা 93। আইএসবিএন 978-1-62087-623-7 
  23. "WHO - Guidelines for the Prevention and Clinical Management of Snakebite in Africa"WHO Regional Office for Africa। World Health Organization। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা